নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

লেখালেখি

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম › বিস্তারিত পোস্টঃ

সরি!

২৮ শে মার্চ, ২০১৪ রাত ১০:৪৬

ভাগ্নি রত্নাকে ফোন করলো মামা বদরুল। বললো, ‘তোর মা বাবা আবার কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছে।’

‘মামা, তুমি যে কি না! এটা ফোন করে বলার মতো কোন কথা হলো?’

আসলেই এটা ফোন করে বলার মতো কোন ঘটনা নয়। পঁয়ত্রিশ বছরের দাম্পত্য জীবনে মিস্টার খলিল রেগে গেলে স্ত্রীর সাথে কথা বলা বন্ধ করে দেন এবং বাসার কাঁচের বাসনপত্র ভাংচুর করেন। স্ত্রীর সাথে এক বিছানায় না শুয়ে ড্রইংরুমের সোফায় শুয়ে রাত কাটান তিনি।

কথাবার্তা বন্ধের এই মেয়াদ কয়েক ঘণ্টা থেকে শুরু করে কয়েকদিন পর্যন্ত বলবৎ থাকে। তারপর কিভাবে কিভাবে যেন তাদের মধ্যে আবার কথাবার্তা শুরু হয়। তাদের একমাত্র সন্তান রত্না ছোটবেলা থেকেই এমন ঘটনা দেখে আসছে। বিশেষ করে চাকরি থেকে খলিল সাহেবের অবসর গ্রহণ ও রত্নার বিয়ে হয়ে যাবার পর থেকে এমন ঘটনা বেড়ে গেছে। তাই বাবা মা পরস্পরের সাথে কথা বলছেন না, এটা রত্নার কাছে কোন খবরই নয়। বাবার কোন কিছুর প্রয়োজন হলে কাজের বুয়া ফাতেমার মাকে ডেকে বলেন, ‘এই, রত্নার মাকে বল আলমারি থেকে আমার সবুজ রঙের পাঞ্জাবিটা খুঁজে দিতে।’ অথবা মা হয়তো ফাতেমার মাকে ডেকে বলেন, ‘রত্নার বাবাকে বাজার থেকে সজনের ডাঁটা আনতে বলিস।’

প্রতি মাসে এভাবে তিন চার দফা মিডলওম্যান হিসেবে বুয়া ফাতেমার মা নিষ্ঠার সাথে খলিল সাহেব ও তার স্ত্রীর মধ্যে বাক্য বিনিময়ের এই গুরু দায়িত্ব পালন করে আসছে। তাই মামার ফোন পেয়ে রত্না মহা বিরক্ত। রত্না তখন তার চার বছরের ছেলে সুমনকে বাথরুমে নিয়ে সাবান দিয়ে গোসল করাতে ব্যস্ত ছিল। খুবই চঞ্চল প্রকৃতির ছেলেকে গোসল করাতে গিয়ে সে এমনিতেই পেরেশান। ঠিক এই সময় মামার ফোন। বিরক্ত মুখে মোবাইলের সংযোগ কেটে দিয়ে সে বাথরুমে ঢুকে দেখলো, শাওয়ারের কল ফুল ফোর্সে ছেড়ে দিয়ে সুমন ন্যাংটো হয়ে আনন্দে লাফালাফি করছে। ছেলেটা এখনই পা পিছলে পড়বে আর চিৎকার করে বাড়ি মাথায় তুলবে। রত্না গিয়ে তাকে ধরার আগেই সেটা ঘটে গেল। ছেলের পিঠে ধুম ধাম দুটো ঘা বসিয়ে দিয়ে রত্না তার আর্ত চিৎকার ফুল ভলিউমে তুলে দিল। এরপর টাওয়েল দিয়ে জড়িয়ে ওকে নিয়ে বাথরুম থেকে বেরতেই আবার ফোন এল। আবার মামার কল। বিরক্তি আর কাকে বলে?

‘কি হলো? বার বার ফোন করছ কেন?’

‘রত্না, এবার কিন্তু ব্যাপারটা সিরিয়াস হয়ে গেছে রে। তোর বাবা রেগে বেডরুমের জানালার কাঁচ ঘুষি মেরে ভেঙ্গে ফেলেছে। তার হাত কেটে রক্ত ঝরছে। এ বাড়িতে থাকলে তুই বুঝতে পারতি।’

‘আমার বোঝার দরকার নেই। বাবাকে স্যাভলন দিয়ে ধুয়ে হাত ব্যান্ডেজ করে নিতে বল।’

‘সে তো করা হয়েছে। তা’ তোর ছেলে কাঁদছে কেন?’

‘ওর নানা নানির বুড়ো বয়সে ভীমরতি হয়েছে তাই।’

‘এই শোন, শোন।’

মামার কথা শুনবে, নাকি ছেলের কান্না থামাবে? রত্না ফোনের সংযোগ কেটে দিয়ে সুমনের কান্না থামানোর জন্য ওর পিঠে আরও দুটো ঘা বসিয়ে দিল। সুমন কিন্তু এবার সত্যি সত্যিই থেমে গেল। সে ছোট হলেও মায়ের রাগ ঠিকই বুঝতে পারে। তখন কান্না থামিয়ে সে শুধু ফোঁস ফোঁস করে। কাঁদলে মায়ের হাতে আবার মার খেতে হবে, এটা সে বেশ বোঝে।

ছেলের গা মাথা মুছে ভাত খাইয়ে বিছানায় শুইয়ে ঘুম পাড়াচ্ছিল রত্না। সুমনের বাবা ফিরোজ লাঞ্চ করতে বাসায় এল। ঘরে ঢুকে শার্ট খুলে হ্যাঙ্গারে রাখার পর ফিরোজ দেখলো, রত্নার মোবাইলে কল এসেছে। টেবিলের ওপর থেকে ফোনটা তুলে রত্নার হাতে দিয়ে সে বললো, ‘কথা বলো। তোমার মামার ফোন।’

রত্না ফোন রিসিভ করে কানে ধরতেই শুনল মামার উদ্বিগ্ন কণ্ঠস্বর। ‘রত্না, ফোনটা রাখিস না মা। আমার কথা শোন। ফাতেমার মা দুই সপ্তাহ ছুটি নিয়ে গ্রামের বাড়িতে গেছে। এদিকে তোর মা বাবা কথা বন্ধ করে বসে আছে। ফাতেমার মায়ের ডিউটি এখন আমাকে করতে হচ্ছে। বুয়া না থাকায় তোর মায়ের মেজাজ ভীষণ গরম। আমাকে যা’ তা’ বলছে। দুলাভাইও আমার সাথে ভালো ব্যবহার করছে না। তুই তো জানিস, তোর বাবা কখনো আমার পুরো নাম ধরে ডাকে না। নামের প্রথম অংশ বদ বলে ডাকে। সেসব না হয় সহ্য করা গেল। কিন্তু আমি তো ঢাকায় এসেছি দুই দিনের জন্য। বায়িং হাউসে আমার একটা ইন্টারভিউ আছে। সেটা হয়ে গেলে আমি আবার গ্রামের বাড়ি চলে যাবো। তখন কি হবে, বল?’

রত্না রাগে থর থর করে কাঁপছিল। সে শুধু ‘রাবিশ’ বলে মোবাইল সেটটা ড্রেসিং টেবিল লক্ষ্য করে ছুঁড়ে মারলো। আয়নার কাঁচ ভাঙ্গার সঙ্গে সঙ্গে মোবাইলটা কয়েক টুকরা হয়ে ছড়িয়ে গেল মেঝেতে। ফিরোজ হতভম্ব হয়ে বললো, ‘এটা কি করলে?’

‘যা করা উচিত, তাই করলাম।’

ফিরোজ আমতা আমতা করে বললো, ‘এটা নিয়ে কিন্তু তোমার তিনটা ফোন ভাঙ্গা হলো’

ঘরের ভেতর এত সব কাণ্ডেও সুমনের ঘুম ভাঙ্গেনি। মায়ের হাতে মার খেলে সেদিন তার ভালো ঘুম হয়। ফিরোজের সাথে ডাইনিং টেবিলে খেতে বসে রত্না বললো, ‘আমার মামা একজন অতি বিরক্তিকর মানুষ। আমি তার সঙ্গে কথা বলতে চাই না। তুমি তোমার ফোন থেকে মামাকে কল দিয়ে বলো, তার বায়িং হাউসের ইন্টারভিউ হয়ে গেলে যেন এক মুহূর্ত দেরি না করে সে গ্রামের বাড়ি চলে যায়।’

খাওয়া শেষে মামাশ্বশুরকে ফোন করলো ফিরোজ। রত্নার বক্তব্য তাকে জানিয়ে দিল সে। বদরুল বললো, ‘ফোনটা ওকে দাও তো। একটু কথা বলি।’

‘আপনার সঙ্গে তো সে কথা বলতে চাচ্ছে না, মামা।’

‘কি মুশকিল! কথা না বললে কি করে হবে? ফাতেমার মা দুই সপ্তাহ ছুটি নিয়ে বাড়ি চলে গেছে। তোমার শ্বশুর শাশুড়ি কথাবার্তা বন্ধ করে বসে আছে। আমি তো মহা বিপদে পড়লাম দেখছি।’

ফিরোজ মোবাইলের নিচের অংশটা হাত দিয়ে চেপে ধরে রত্নাকে বললো, ‘ফাতেমার মা দুই সপ্তাহ ছুটি নিয়ে বাড়ি গেছে। তোমার বাবা মা কথা বলা বন্ধ করে বসে আছে।’

‘তাতে কি হয়েছে? আমার বাবা মাকে আমি চিনি না? মামার কাছ থেকে চিনতে হবে? মামা চলে গেলে তারা ঠিকই কথা বলা শুরু করবে। মামাকে অহেতুক হই চই করতে নিষেধ করো।’

ফিরোজ বললো, ‘মামা, আপনি চলে গেলে ওনারা ঠিকই কথা বলা শুরু করবেন। আপনি অহেতুক হই চই করবেন না।’

‘তোমরা বুঝতে পারছ না মামা। এবারের পরিস্থিতি আগের মতো নয়। দুলাভাই বলেছেন, আজরাইল এসে ডাক দিলেও তিনি বুবুর কাছে এক গ্লাস পানি চেয়ে খাবেন না। খুব কঠিন অবস্থা।’

ফিরোজ আবার ফোনের নিচের অংশ চেপে ধরে রত্নাকে ফিস ফিস করে বললো, ‘আজরাইল এসে ডাক দিলেও বাবা নাকি মায়ের কাছে এক গ্লাস পানি চেয়ে খাবেন না। খুব কঠিন অবস্থা।’ রত্না বিরক্ত হয়ে বললো, ‘দেখ, বাবার এসব হুমকি ধামকি জীবনে অনেক শুনেছি। তুমি মামাকে বলো ফালতু ব্যাপারে মাথা না ঘামিয়ে কাজ শেষে তিনি যেন বাড়ি চলে যান।’

ফিরোজ তার মামা শ্বশুরকে বললো, ‘মামা, আপনার কাজ শেষ হয়ে গেলে বাড়ি চলে যান। আমার শ্বশুরের এমন হুমকি ধামকি জীবনে আমরা অনেক শুনেছি। এটা কোন ব্যাপার না।’

উপায়ান্তর না দেখে বদরুল শেষে তাই করলো। ইন্টারভিউ শেষ করে অশ্রুসজল চোখে বোন দুলাভাইয়ের কাছে বিদায় নিয়ে সে গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়ায় চলে গেল। তবে যাবার আগে সে গোপনে তার দুলাভাইয়ের কানে কানে কিছু কথা বলে গেল। শুনে খলিল সাহেব বললেন, ‘শালা বদের মাথায় বুদ্ধি কত! এত বুদ্ধি নিয়ে তুই ডিগ্রী পরীক্ষায় ফেল করিস কিভাবে?’

ঘটনার এক সপ্তাহ পর খলিল সাহেব জামাইকে ফোন করে বললেন, ‘কি ব্যাপার, রত্নার ফোন সব সময় বন্ধ থাকে কেন? বার বার ট্রাই করেও কল যাচ্ছে না। এদিকে সুমনের নানি সুমন সুমন করে অস্থির হয়ে গেছে। কাল তো তোমার অফিস ছুটি। একবার তোমরা আসো না বাবা। পরিবাগ থেকে মগবাজার আর কত দূর? ছুটির দিন রাস্তায় জ্যাম থাকবে না।’

ফিরোজ বললো, ‘আচ্ছা, রত্নাকে বলে দেখি।’

রত্নার যাওয়ার ইচ্ছা নেই। তবু ফিরোজের প্রস্তাবে সে রাজি হলো। শুধু বললো, ‘তুমি যে চিন্তা করে যেতে চাচ্ছ তা’ ঠিক নয়। গিয়ে দেখবে সব ঠিক হয়ে গেছে। বুয়ার অভাবে মায়ের একটু কষ্ট হচ্ছে, এই যা।’

রত্নার কথা অক্ষরে অক্ষরে ফলে গেল। মিস্টার ও মিসেস খলিল পরদিন সকালে ফ্ল্যাটের দোতলায় দক্ষিণমুখি বারান্দায় বসে চা খেতে খেতে গল্প করছিলেন। গেট দিয়ে রত্নাদের গাড়ি ঢুকতে দেখে দুজনেই উঠে দাঁড়ালেন। খলিল সাহেব তড়িঘড়ি করে নিচে নেমে নাতি সুমনকে ছোঁ মেরে ওর মায়ের কোল থেকে ছিনিয়ে নিয়ে ওপরে চলে এলেন। স্ত্রীকে বললেন, ‘সুমন সুমন করছিলে, এই নাও সুমন সাহেব নিজেই এসে হাজির।’

নানির কোলে চড়ে সুমন বললো, ‘হিসু করবো।’

‘চলো চলো সোনা, বাথরুমে চলো।’ এই বলে সুমনকে বাথরুমে নেয়ার আগেই সুমন ওর নানির শাড়ি ভিজিয়ে দিল। এরপর এক ঘণ্টার মধ্যেই সে সারা বাসা লণ্ডভণ্ড করে ফেললো। একটা ফুলদানি, একটা সিরামিকের মগ আর দুটো চায়ের কাপ ভেঙ্গে ফেললো। ডাইনিং টেবিলে রাখা প্লাস্টিকের জগ উল্টে ফেলে সেই জগের পানিতে টাইলসের মেঝের ওপর পা পিছলে পড়ে চিৎকার করে কাঁদতে লাগলো। মায়ের হাতে মার খাওয়ার ভয়ে ছুটে পালিয়ে গিয়ে সে ড্রইংরুমের কার্পেটের নিচে আশ্রয় নিল। খলিল সাহেব আনন্দে হাততালি দিয়ে তাকে কার্পেটের নিচ থেকে উদ্ধার করে ওর মায়ের ডান বাম দুই হাতের চড় থাপড় থেকে অত্যন্ত দক্ষতার সাথে ওকে রক্ষা করতে লাগলেন। নাতির ভাংচুরের ক্ষমতা দেখে নানা নানি দুজনেই খুশি।

খলিল সাহেব জামাইয়ের জন্য বাজার থেকে বড় আকারের রুই মাছ আর এক নম্বর খাসির মাংসের সিল মারা ভেড়ার মাংস কিনে নিয়ে এলেন। দুপুরে ভরপেট খাওয়া দাওয়া হলো। এরপর বৈকালিক চা-নাস্তা পর্ব চলাকালে রত্না ওর মাকে জিজ্ঞেস করলো, ‘এবার কথাবার্তা বলা বন্ধ ছিল কত দিন?’

‘তোর বাবাকেই জিজ্ঞেস কর।’

খলিল সাহেব জামাইয়ের সামনে একটু লজ্জা লজ্জা করছিলেন। মেয়ের ধমক খেয়ে মিন মিন করে বললেন, ‘না, বেশিদিন না। কাল বিকেল থেকে তোর মা কথা বলছে।’

মিসেস খলিল হতবাক হয়ে বললেন, ‘আমি বলছি না তুমি বলছ?’

রত্না বললো, ‘মামা তো চলে গেছে চার পাঁচদিন আগে। ফাতেমার মাও নেই। তাহলে এই ক’দিন চললো কিভাবে?’

মিস্টার ও মিসেস খলিল দুজনেই চুপ। রত্না হাতের আঙ্গুল গুলো অর্থপূর্ণভাবে নাড়াচাড়া করে দেখিয়ে বললো, ‘ইশারা ইঙ্গিতে?’

খলিল সাহেব বললেন, ‘আরে না।’ মেয়েকে বেডরুমে নিয়ে গেলেন তিনি। তারপর টেবিলের ওপর থেকে নিজের এবং স্ত্রীর মোবাইল সেট দুটো হাতে নিয়ে মেসেজ অপশন বের করে রত্নার হাতে দিয়ে খাটের এক কোনায় অপরাধীর মতো বসে রইলেন। রত্না তার মায়ের মোবাইল সেটের পর্দায় দেখলো ইংরেজি হরফে বাংলা লেখা, আমার কালো স্যান্ডেলটা কোথায়? বাবার সেটে লেখা আছে, জানি না। খুঁজে দেখো। খাটের নিচেই তো ছিল। মায়ের সেটে লেখা আছে, চা দাও। ড্রইংরুমে কয়েল দাও। খুব মশা। এরপর বাবার সেটে লেখা, সয়াবিন তেল শেষ। এক বোতল নিয়ে এসো। উত্তরে মায়ের সেটে লেখা, তেল কম খাও। হাই প্রেশার তো আর এমনি এমনি হয়না! তেল কিনতে কিনতে ফতুর হয়ে গেলাম। এরপর মায়ের সেটে লেখা, আচার আছে? বাবার সেটে লেখা, আমের না জলপাইয়ের? মায়ের সেটে লেখা, আমের।

রত্নার আর পড়ার ধৈর্য হলো না। সে বাবার দিকে তাকিয়ে বললো, ‘এ বুদ্ধি কে দিল তোমাদের?’ খলিল সাহেব লাজুক ভঙ্গিতে বললেন, ‘কে আর দেবে? যাওয়ার আগে তোর ওই বদ মামা শিখিয়ে দিয়ে গেল।’

‘আর তোমরা তাই শিখে মোবাইলে এসএমএস করা শুরু করে দিলে?’

খলিল সাহেব অসহায়ের মতো হাত নেড়ে বললেন, ‘আরে ওই বদের জন্যেই তো এই ক’দিন এসএমএস করে ফালতু কিছু টাকা খরচ হয়ে গেল। তোর নানা যে ওর নাম বদরুল রেখেছিল সে এমনি এমনি না। বদের গুষ্টি বদ।’

‘আমার নানার গুষ্টি তুলে কথা বোলো না বাবা।’

খলিল সাহেব ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বললেন, ‘সরি!’

ড্রইংরুমের টি টেবিলের ওপর রাখা খলিল সাহেবের চশমার একটা ডাটি ভেঙ্গে ফেলে সেটা দিয়ে একটা পলায়নপর পিঁপড়াকে মারার জন্য ছুটে বেড়াচ্ছিল সুমন। টিভি দেখার জন্য ড্রইংরুমে ঢুকে এই দৃশ্য দেখে রত্না তার বাবার ভাঙ্গা চশমাটা হাতে নিয়ে কপালে হাত দিয়ে সোফায় বসে রইল। এই ছেলের দাদা দাদি, বাবা ফুফু সবাই কত শান্তশিষ্ট। অথচ এই ছেলে এতো ডেঞ্জারাস! খলিল সাহেব নাতির এই নতুন ভাংচুর দেখে মহাখুশি। তিনি আনন্দে গদ গদ হয়ে বললেন, ‘সুমন সাহেব ঠিক আমার মতো হয়েছে। ছোট বেলায় আমিও এ রকম ছিলাম। স্ক্রু ড্রাইভার দিয়ে বাবার রেডিও খুলে ফেলে ভেতরের সব পার্টস এদিক ওদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফেলতাম। বাবার হাতে মার খাওয়ার ভয়ে কতবার যে বাড়ি থেকে পালিয়েছি, তার ঠিক নেই।’

রত্না বললো, ‘তোমার বাবাও নিশ্চয় তার ছোটবেলায় এমনই ছিলেন?’

‘তা’ তো বটেই। তোর দাদার ছেলেবেলার একটা ঘটনা শোন।’

‘আমার শোনার দরকার নেই। আমি বেশ বুঝতে পারছি, আমার ছেলে তার নানার গুষ্টির বদ স্বভাবগুলো সবই পেয়েছে।’

খলিল সাহেব মনঃক্ষুণ্ণ হলেন। বললেন, ‘ওর নানার গুষ্টি তুলে কথা বলা কি ঠিক হচ্ছে, মা?’

রত্না মাথা নিচু করে কিছুক্ষণ বিড় বিড় করলো। তারপর বাবাকে উদ্দেশ্য করে বললো, ‘সরি!’

এই গল্পটি মাসিক মৌচাকে ঢিল পত্রিকার ঈদুল আযহা সংখ্যায় (অক্টোবর/২০১২) প্রকাশিত। ব্লগার বন্ধুরা যারা এটি পড়েননি, তাদের জন্য ব্লগে প্রকাশ করলাম।







মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা এপ্রিল, ২০১৪ রাত ৮:০০

সাদা মনের মানুষ বলেছেন: আগেও পড়া, আবারো পড়লাম। বরাবরই আপনার গল্প আমার খুব ভালো লাগে।

২| ০১ লা এপ্রিল, ২০১৪ রাত ৯:০৮

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ, সাদা মনের মানুষ।

৩| ০১ লা এপ্রিল, ২০১৪ রাত ৯:১৩

মাঈনউদ্দিন মইনুল বলেছেন:
স্বাগতম, প্রিয় গল্পকার :)
ব্লগিং শুভ হোক....

০২ রা এপ্রিল, ২০১৪ সকাল ৯:৪০

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: প্রিয় মইনুল ভাই, আপনাকে ধন্যবাদ। সামু ব্লগে আপনাকে পেয়ে আমিও খুশি। জানাশোনা ব্লগার বন্ধুদের মধ্যে দু'চার জনকে পেলে ব্লগিং করতে ভালো লাগবে। শুভেচ্ছা রইল।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.