নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

লেখালেখি

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম › বিস্তারিত পোস্টঃ

রসরচনাঃ চুল নিয়ে চুলচেরা

১৬ ই জুন, ২০১৪ সকাল ৭:৫৩

( ব্লগার বন্ধুদের মধ্যে যাদের মাথায় চুল নেই, এই লেখাটি তাদের উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করলাম )



সম্প্রতি সাদাকালো (মানে কাঁচাপাকা) ও রঙিন (মানে ডাই করা) চুল নিয়ে চারদিকে বেশ কথাবার্তা হচ্ছে। একটি পত্রিকার শিরোনাম দেখলাম, ‘রাজনীতিতে চুলাচুলি।’ ফেবুতে একটা কমেন্ট দেখলাম, ‘যাদের মাথায় চুল নেই, তারা কী করবে?’ খুব গুরুতর প্রশ্ন।

আমার নিজের মাথায় যে ক’টা চুল আছে, তা’ গুনে শেষ করতে পনের বিশ মিনিটের বেশি লাগার কথা নয়। এ অবস্থায় আমিই বা কী করবো? আমার কাজ হলো লেখালেখি করা। কিন্তু এমন বিরল কেশ মানুষের পক্ষে চুল নিয়ে লেখালেখি করা অনেকটা অনধিকার চর্চার মতো। তারপরেও এক ব্লগার বন্ধুর অনুরোধে আজ ঢেঁকি গিলতে বসে গেলাম।

চুল-দু’ অক্ষরের একটা ছোট্ট শব্দ। অথচ এর ব্যঞ্জনা (Figurative mode of expression) অনেক। সাধারনতঃ মেয়েদের ক্ষেত্রে এই Figurative mode of expression বেশি লক্ষ্যনীয়। তবে আজকাল শ্যাম্পু, জেল, ডাই, কন্ডিশনার ইত্যাদি ব্যবহারের ক্ষেত্রে ছেলে মেয়ের মধ্যে পার্থক্য অনেক কমে এসেছে। আমাদের যুগে (মানে আমরা যখন ছেলে মেয়ে ছিলাম) এসব তো দূরের কথা, টয়লেট সাবান না থাকলে কাপড় কাচার হুইল সাবান দিয়ে মাথার চুল পরিস্কার করেও আমরা ক্লাসে গেছি। এখনকার ছেলেমেয়েরা এ কথা শুনলে নির্ঘাত আঁতকে উঠবে।

তবে ব্যাতিক্রম যে সে যুগে ছিল না, তা’ নয়। যেমন, আমার বন্ধু আফতাব। স্বাধীনতার আগে থেকেই আমরা তাকে চুল নিয়ে নানা কসরত করতে দেখে আসছি। নাইন টেনে পড়ার সময় সে চুলে জবজবে করে শর্ষের তেল মেখে পরিপাটি করে আঁচড়ে ক্লাসে আসতো। তার দুই চিপ গড়িয়ে শর্ষের তেল চুঁয়ে গালের ওপর এসে পড়তো। অংক টিচার জামীল স্যারের একটা বদভ্যাস ছিল। ক্লাসের কোন ছাত্র অংক না পারলে শাস্তি স্বরূপ তার চিপ ধরে তিনি টেনে তুলতেন। আফতাবের বেলায় তাঁর হাতের আঙ্গুল বার বার পিছলে যেতো।

দেশ স্বাধীন হবার পর আফতাবের চুল বদলে গেল। সে চুলে শর্ষের তেল মাখা বন্ধ করলো এবং মুক্তিযোদ্ধা না হয়েও যুদ্ধফেরত মুক্তিযোদ্ধাদের মতো বাবরি চুল রাখা শুরু করে দিল। এই ফ্যাশনটা কয়েক বছর কন্টিনিউ করার পর তার বাবরি চুলে অরুচি হলো। তখনকার জনপ্রিয় সুইডিশ ব্যান্ড ‘বনি এম’-এর এক সদস্যের অনুকরণে সে সেলুনে গিয়ে চুলের ছাঁট বদলে ফেললো। মাথার মাঝখানে ঘাড় থেকে কপাল পর্যন্ত লম্বা ও দুই ইঞ্চি চওড়া সজারুর কাঁটার মতো এক গোছা চুল রেখে দু’পাশে চেঁছে ফেললো। আমরা অবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে থাকলে সে বললো, ‘এটা পাঙ্ক।’ ইউরোপে এই পাঙ্ক নাকি লেটেস্ট ফ্যাশন।

অবশ্য পাঙ্কও বেশিদিন টিকলো না। সম্ভবতঃ ১৯৭৮ সালের দিকে আফতাবসহ আমরা কয়েক বন্ধু গর্দানি পাসপোর্টে ভারতে গেলাম হিন্দি সিনেমা দেখতে। জানেনই তো, সেই সময় বাংলাদেশে হিন্দি সিনেমা দেখার কোন সুযোগ ছিল না। তো এই গর্দানি পাসপোর্টটা কী? এই পাসপোর্টের শানে নজুল হলো, এটা আসলে কোন পাসপোর্টই নয়। সীমান্তের এপারে বিডিআরকে কুড়ি টাকা আর ওপারে বিএসএফকে দশ রুপী নজরানা দিলে তারা আমাদের ঘাড়ে (মানে গর্দানে) ধাক্কা দিয়ে ভারতীয় ভূখণ্ডে ঢুকিয়ে দিত। আবার ভারত থেকে ফেরত আসার সময় আমরা একই পদ্ধতিতে বাংলাদেশ ভূখণ্ডে ঢুকে পড়তাম। ভারতে যাতায়াতের এই চমৎকার সিস্টেমকে আমরা গর্দানি পাসপোর্টে যাতায়াত বলে অভিহিত করতাম। এই পাসপোর্টে আমরা সেই সময় অনেকবার ভারতে যাতায়াত করেছি।

তো সেবার ভারতে গিয়ে হিন্দি ছবি ‘শোলে’ দেখার পর আমাদের আফতাব হয়ে গেল অমিতাভ। মাথা ভর্তি চুলের মাঝ বরাবর সিঁথি কেটে সে অমিতাভ বচ্চনের হাঁটা চলা রপ্ত করে ফেললো। বন্ধুদের মধ্যে সে তুলনামুলক লম্বা ছিল বলে আমরা তাকে খেতাব দিলাম ‘বাংলার অমিতাভ’। কেউ কেউ বলতো, ‘গরীবের অমিতাভ’।

কিন্তু এই খেতাবও সে বেশি দিন ধরে রাখতে পারলো না। আশির দশকে ‘ডিসকো ড্যান্সার’ ছবি দেখার পর সে নায়ক মিঠুন চক্রবর্তীর অনুকরণে কানের ওপর থেকে দুই চিপ চেঁছে উধাও করে দিল এবং শীত গ্রীষ্ম সব মৌসুমে গলায় মাফলার জড়িয়ে চলাফেরা করতে লাগলো।

বিয়ে করার পর বউয়ের গুঁতো খেয়ে সে মাফলার খুলে ফেললো বটে, কিন্তু তার চুলের মিঠুন কাট থেকে গেল। ১৯৮৫ সালের দিকে সে তার বন বিভাগের চাকরিতে বদলী হয়ে চলে গেল বান্দরবান। ঈদ পালা পার্বণে বাড়ি এলে দেখতাম, তার চুলে আর মিঠুন কাট নেই। পরিবর্তে নতুন ফ্যাশন ডাই। চুলের এখানে কালো, ওখানে লাল, এমনকি হলদেটে সাদাও। তবে বয়সের কারণে তার মাথা ভর্তি চুল অনেকটাই পাতলা হয়ে এসেছে।

এরপর গত বছর ঈদের সময় দেখা হলো আফতাবের সাথে। জীবনে এই প্রথম দেখলাম, ওর চুলে কোন ফ্যাশন নেই। মাথায় চুলই নেই তো ফ্যাশন হবে কোত্থেকে? ওর বউয়ের কাছে শুনলাম, কিছুদিন সে নাকি উইগ (পরচুলা) পরে চলাফেরা করেছে। পরে ছেলেমেয়েদের ধমক খেয়ে উইগ খুলে ফেলেছে।

আফতাবের চা, পান, বিড়ি-সিগারেট কোন কিছুরই নেশা ছিল না। পোশাক আশাকেও সে যে খুব ধোপ দুরস্ত ছিল, এমন নয়। তার একটাই শখ ছিল চুলের ফ্যাশন করা। শেষ বয়সে এসে চুলের অভাবে তার সেই শখটাও গেল। এই কারণেই কী না জানিনা, চুলকে বলা হয় মীর জাফর। বুড়ো বয়সে, যখন মাথায় রোদ বৃষ্টি সহ্য হয়না, তখনই নাকি সে ফাঁকি দিয়ে পালায়। সারা জীবন তার যত্ন আত্যির কথা একটুও মনে রাখে না।

রচনাঃ ২৩/০৮/২০১৩

**********************************************

মন্তব্য ২৭ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (২৭) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই জুন, ২০১৪ সকাল ৯:৫৭

আম্মানসুরা বলেছেন: মজা পেলাম। তবে বর্তমানে সবাই যে চুলের খুব যত্ন করে তা নয়। যেমন আমি। আমি আগে মাথা ডিটারজেন্ট পাউডার দিয়ে পরিষ্কার করতাম। উদ্দেশ্য কিছু চুল যেন পরে যায়। মাথায় অনেক চুল থাকাতে এমন টা করতাম। তবে বিয়ের পরে স্বামীর প্যাদানিতে এই আচরণ বদলাতে হয়েছে।

১৬ ই জুন, ২০১৪ দুপুর ১২:০০

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: স্বামীর প্যাদানিতে? হাঃ হাঃ হাঃ। রসরচনায় রসমন্তব্য।

ধন্যবাদ, আম্মানসুরা।

২| ১৬ ই জুন, ২০১৪ সকাল ১০:০৩

ইখতামিন বলেছেন:
আমার অনেক চুল পড়ে
কিন্তু চুল গজায় তার চেয়ে বেশি

আমি চাই আমার মাথায় চুল শুধু গজাবে, পড়বে না
কিন্তু তা পারি না

:P :P :P

১৬ ই জুন, ২০১৪ দুপুর ১২:০৩

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: চুল শুধু গজাবে, পড়বে না- সায়েন্টিফিক্যালি এটা সম্ভব নয় ভাই।

ধন্যবাদ, ইখতামিন।

৩| ১৬ ই জুন, ২০১৪ সকাল ১০:৩৮

গোঁফওয়ালা বলেছেন: প্রাঞ্জল বর্ননায় চমৎকার এক রসরচনা। খুবই আনন্দ নিয়ে পড়লাম।

১৬ ই জুন, ২০১৪ দুপুর ১২:০৪

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ, গোঁফওয়ালা।

৪| ১৬ ই জুন, ২০১৪ সকাল ১১:২৫

হাসান বিন নজরুল বলেছেন: আপনার বন্ধু আফতাবের চুলের বর্ণনায় মজা পেলাম :)

আসলেই সবাই মীরজাফর একদিন আত্মাও মীরজাফর হয়ে দেহত্যাগ করে চলে যাবে :(

১৬ ই জুন, ২০১৪ দুপুর ১২:০৫

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ, ভাই হাসান বিন নজরুল।

৫| ১৬ ই জুন, ২০১৪ সকাল ১১:৫৬

শুঁটকি মাছ বলেছেন: হাহাহহাহাহা!!!!!!!!!
বেচারা!!!!!!!!!!!!!!!!

১৬ ই জুন, ২০১৪ দুপুর ১২:০৬

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ, শুঁটকি মাছ।

৬| ১৬ ই জুন, ২০১৪ দুপুর ১২:১৪

মোঃ সাইফুল্লাহ শামীম বলেছেন: আপনার রসরচনা পড়া শেষ করে নিজের মাথায় হাত দিয়ে দেখলাম চুল গুলো ঠিক আছে কিনা।

১৬ ই জুন, ২০১৪ দুপুর ১:৪৪

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: ঠিক আছে কী? হাঃ হাঃ হাঃ।
ধন্যবাদ, ভাই সাইফুল্লাহ শামীম।

৭| ১৬ ই জুন, ২০১৪ দুপুর ১২:৩৮

মামুন রশিদ বলেছেন: পোস্ট পড়ে বুকের ভেতর দীর্ঘশ্বাসের ঢেউ বয়ে গেল, :|| B:-)

১৬ ই জুন, ২০১৪ দুপুর ১:৪৮

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: দীর্ঘশ্বাসের ঢেউ স্তিমিত হোক, এই কামনা করছি। যা গেছে, তা তো আর ফিরে আসার নয়। হাঃ হাঃ হাঃ

ধন্যবাদ, ভাই মামুন রশিদ।

৮| ১৬ ই জুন, ২০১৪ দুপুর ১:০৩

মিনুল বলেছেন: চুলকে বলা হয় মীরজাফর :P

১৬ ই জুন, ২০১৪ দুপুর ১:৫১

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: কথাটার ব্যাখ্যা কী মনঃপুত হয়েছে? নাকি হয়নি?

ধন্যবাদ, মিনুল।

৯| ১৬ ই জুন, ২০১৪ বিকাল ৩:৩১

হাসান মাহবুব বলেছেন: আপনার বন্ধুর বিভিন্ন স্টাইলের চুলের ছবি দেখতে ইচ্ছা করছে।

সংশোধনী- বনি এম সুইডিশ না জ্যামাইকান ব্যান্ড।

১৬ ই জুন, ২০১৪ বিকাল ৪:০৬

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: ভাই হাসান মাহবুব, আপনাকে ধন্যবাদ। আফতাবের বিভিন্ন স্টাইলের চুলের ছবি তো এখন আর দেখানো সম্ভব নয়। কারণ, সেসব ছবি তুলে রাখা হয়নি। কল্পনায় দেখার চেষ্টা করতে অনুরোধ করছি।
আমার জানা মতে সত্তরের দশকে বনি এম নামে যে ব্যান্ড গানের জগতে বিখ্যাত ছিল, তা' সুইডিশ।
অনেক অনেক ধন্যবাদ, ভাই। ভালো থাকবেন। শুভকামনা রইল।

১০| ১৬ ই জুন, ২০১৪ বিকাল ৩:৩৪

মুহম্মদ ইমাম উদ্দীন বলেছেন: পড়ে মজা পেলাম।
তবে চিন্তার কারন নাই। আপনার বন্ধু আফতাব চাইলে এখন পিটবুল সাহেবের স্টাইল নিতে পারেন। স্টাইলের কি আর শেষ আছে!!!!

১৬ ই জুন, ২০১৪ বিকাল ৪:০৯

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: তা' ঠিক। স্টাইলের কোন শেষ নেই।
ধন্যবাদ, ভাই ইমাম উদ্দিন। ভালো থাকুন। শুভেচ্ছা রইল।

১১| ১৭ ই জুন, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৪৯

একজন সুখীমানুষ বলেছেন: ভালো লাগল।

১৭ ই জুন, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৫০

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ, একজন সুখীমানুষ।

শুভেচ্ছা রইল। ভালো থাকুন।

১২| ১৭ ই জুন, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৫৭

জাফরুল মবীন বলেছেন: “ব্লগার বন্ধুদের মধ্যে যাদের মাথায় চুল নেই, এই লেখাটি তাদের উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করলাম”-তার মানে লেখাটি আমাকে উৎসর্গ করেছেন!আমি আমের দেশের মানুষ।কৃতজ্ঞতায় আম পাঠালাম...

১৭ ই জুন, ২০১৪ রাত ৯:২৬

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: আমিও তো আমের দেশের (রাজশাহীর) মানুষ এবং আমার নিজের মাথায়ও চুল নাই। অতএব আপনি আমার দেশি ভাই (চাঁপাই নবাবগঞ্জের হলেও)।

ধন্যবাদ, ভাই জাফরুল মবীন।

১৩| ২০ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ৯:৩০

মুনতাসির নাসিফ (দ্যা অ্যানোনিমাস) বলেছেন: সংকলনে যাচ্ছে...

২২ শে জুলাই, ২০১৪ সকাল ৯:৪৩

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ, ভাই মুনতাসির নাসিফ।

১৪| ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:১৩

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: দারুন একটা পোস্ট

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.