নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মনের আনন্দে লিখতে থাকি; আনন্দ শেষ, তো লেখাও শেষ! সবাইকে শুভেচ্ছা

এই সব দিন রাত্রি

মনের আনন্দে লিখতে থাকি, আনন্দ শেষ তো লেখাও শেষ! কেও না পড়লেও কোন অসুবিধে নেই! সবাইকে শুভেচ্ছা!

এই সব দিন রাত্রি › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পঃ একটি অবান্তর গল্প

২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৩ ভোর ৬:৪১

একজন অলস সরকারী মাছিমারা কেরানীর জন্য সবচেয়ে কষ্টের দিন কোনটা জানেন? ছুটির দিন, ছুটির দিন গুলো আমার জন্যে বিশাল যন্ত্রণার। অন্যান্য দিন সকালে উঠেই অফিসে পালিয়ে বাঁচি। ফাইলের স্তূপের মাঝে মাথা গুজে হালকা ঘুম, আহা! কি সুখ। ছুটির দিনে সেই সুযোগ নেই। বাসার সব টুকিটাকি কাজ গুল আমার বউ এইদিন আমাকে দিয়ে করিয়ে নেয়। বাসায় একটা ধেড়ে বাঁদর আছে, আমার বড় ছেলে, সেটাকে কোন ভাবেই কোন কাজে লাগানো যায় না। পিছলে যায় কেমন করে যেন। আজকেও তার ব্যতিক্রম হল না। সকাল সকাল আমার বউয়ের মিষ্টি কথায় ভুলে ঘুম থেকে জেগে উঠেই হল বিপত্তি! বাজারের লিস্টি আর চটের ব্যাগ খানা হাতে তাই রওনা হলাম বাজার অভিমুখে!

সকাল থেকে আকাশে মেঘ জমে আছে। বৃষ্টির মেঘ, কিন্তু বৃষ্টি নেই। এমন দিন গুলোতে অসহ্য রকমের গরম পড়ে। হাঁসফাঁস লাগতে থাকে সব কিছু। আদিম কালের শরীফ ছাতা বগলে নিয়ে আমার যেয়ে রূপ খুলেছে, তাতে ৮০র দশকে আমাকে ঘটকের রোল মডেল হিসেবে বাংলা নাটকে ঢুকিয়ে দেয়া যেত! আবুল হায়াতের বেশীর ভাগ নাটকেই তিনি এই ভাবে ঘটক সাজতেন। আমার বউ আমাকে বার বার বলেছিল একটু আধুনিক হও! বাজারে সুইচ টিপে বের করা ছাতা থাকতে তুমি কোন দুঃখে এই ছাতা কিনতে গেলে? আমি তৎক্ষণাৎ ‘সনাতন ছাতার উপকারিতা’ বুঝাতে বিশাল এক বক্তৃতা দিতে গিয়ে তার রক্ত চক্ষুর আগুনে প্রায় ভস্ম হলাম।

-এই ছাতা নিয়ে তুমি আমার সাথে কখনও বের হবে না, বুঝেছ?

আমি মাথা কাঁত করে কোঁত করে গিলে ফেললাম আমার আঁতলামো মার্কা বক্তৃতার বাকি অংশ টুকু। আমি একটু আদিম যুগেই থাকি আসলে; টেলিফোন বলতে এখনও বুঝি গ্রাহাম বেলের আবিস্কার করা ক্রিং ক্রিং। মোবাইল আমার কাছে এক বিশাল রহস্যময়য় বস্তু। তাই প্রতি মাসে অনেক টাকার ভূতুড়ে বিল গুনেও আমি একটি টেলিফোন পুষছি। আমার বউএর যন্ত্রণায় একটা মোবাইল তাকে কিনে দিতে হয়েছে। তবে আমি কথা বলি আমার পোষা টেলিফোনে। আমার ছোট মেয়ের বান্ধবি বাসায় এসে সেটা দেখে আনন্দে চিৎকার করে বলে উঠেছিল, ওমা, কি সুইট শোপিস!

ছাতাটা সবসময়কার সঙ্গী আমার। শীত, গ্রীষ্ম বর্ষায় আমার ছাতা হাতে বের হওয়া দেখে আমার বউ প্রথম প্রথম ঝাড়ি দিত। এখন আর কিছু বলে না। ছাতাটা বেশ বড়ই আসলে এবং বেশ ওজনদার। বাজারটা হাটা পথে বেশ খানিকটা দূরে। ঘেমে ভিজে উঠেছে আমার পিঠ। একটা খালি রিকশা পেতে উঠে পড়লাম তাতে। এই প্রথম কোন রিকশাওয়ালা যে ভাড়া বললাম তাতেই রাজি হল। আসলে সেটাই ছিল আমার জন্যে সতর্ক হবার সংকেত। ঢাকায় থাকতে হলে বিশাল একটা ট্রেনিং সেশনের প্রয়োজন। হানিফ সংকেতের ইত্যাদিতে একবার এরকম একটা কোচিং সেন্টারের ক্লিপ ছিল। খুব হেসেছিলাম, এখন বুঝছি ভদ্রলোক সময়ের দাবী ভালই বোঝেন! একটু দূর যেতেই একটা গলির ভেতর রিকশা ঢুকিয়ে তার সহযোগীদের কাছে আমাকে হস্তান্তর করে সে আবার শিকারের খোঁজে বের হল বোধ হয়।

আমার ছেলের বয়সী তিনটা ছেলে, খোঁচা খোঁচা দাড়ি মুখে। বেশ উত্তেজিত মাঝখানের জন। আমার বেশভূষা দেখেই সে বুঝে গেছে মাল বেশি নাই সাথে। একারনেই সে বিরক্ত। সমানে গালি দিচ্ছে তার রিকশাওয়ালা সহযোগীকে। এরা মনে হয় মলম পার্টি। একজনের হাতে বেশ লম্বা একটা ছোড়া। কিন্তু যেভাবে ধরে আছে, তাতে বোঝা যাচ্ছে সে আসলে অভ্যস্ত নয় ওটা ব্যবহার করে।

-আঙ্কেল, যা আছে বাইর করেন।

-বাজারের লিস্টি আর ৫০০ টাকার একটা নোট আছে, ওতে তোমাদের পোষাবে?

-আঙ্কেল, এত কম টাকা নিয়া রাস্তায় বাইর হইসেন, আপনার কি জানের মায়া নাই।

-তোমাদের চয়েস খুবই খারাপ, এই লাইনে বেশি শাইন করতে পারবা না।

-বেশি চ্যাটাং চ্যাটাং কথা বলতেসেন, ভুঁড়ি নামাইয়া দিমু কইলাম।



ছুড়ি ওয়ালার আগ্রাসী মনভাব দেখে মাঝখানের ছেলেটা ওকে আটকাল এবার। কি শুকনো ছেলে গুলো! চোখ গুল গর্তের ভেতরে বসা। নেশার ঘোরে থাকে সবসময় মনে হয়। অপারেশন শেষ করেই নেশার জিনিস কিনতে ছুটবে। বেশ মায়া হল বাচ্চা ছেলেগুলার জন্যে।



- তোমরা এই কাজটা কেন করতেস বাবারা?

- আবার কথা কয়, চোপ শালা!

- আমি তোমাদের বাবার বয়সী, ভদ্রভাবে কথা বলো!

- ভদ্রতা শিখাইতে আইসেন!



মাঝখানের নেতা গোছের ছেলেটা হটাত হেসে দিল।



“আঙ্কেলের আইজকা দিন খারাপ মনে হইতেসে, মার শালারে!”



কিছু বুঝে ওঠার আগেই দেখি চাকু হাতের বাচ্চা ছেলেটা সিনেমার স্টাইলে অ্যাঁ অ্যাঁ করতে করতে তেড়ে আসছে। হটাত করে ফ্ল্যাশ ব্যাকে চলে গেলাম, ঠিক এইভাবেই তেড়ে এসেছিল বেয়োনেট হাতে একজন! সেই কবেকার কথা! আইনস্টাইনের সময়ের আপেক্ষিকতার বাস্তব উদাহরণ পেতে শুরু করলাম;



বাচ্চা ছেলেটাতাএকহাত দূরে;



আমি দেখছি কালো পাকানো গোফের সেই সেনাটাকে! চোখে মৃত্যুর ছায়া। আমি পড়ে আছি মেঝেতে, রক্তে ভেসে গেছে আমার চারপাশ! একটা বুলেট আমার কাঁধের কিছু মাংস চিঁরে বের হয়ে গেছে।



বাচ্চা ছেলেটা আধ হাত দূরে;



বেয়োনেটটা আমার শরীর স্পর্শ করলো বলে, হাটাৎ মনে হল একটা দেয়ালে ধাক্কা খেয়ে উলটে পড়ল সেনাটা। খুব কাছ থেকে করা গুলিটা একদম মাথায় লেগেছে, রক্তের ছিটে লাগল আমার মুখে।



বাচ্চা ছেলেটা চাকু চালাতে আনাড়ি, সে আমার ভুঁড়ি টার্গেট করে আসছিল! অনেকদিন আগের সেই রিফ্লেক্সটার একটা ঝালাই হয়ে গেল! একেবারে মোক্ষম সময়ে আমার উন্মুক্ত শরীফ ছাতায় আঁটকে গেল ছুড়িটা! পরের কয়েকটা মুহূর্ত দিক্বিদিক জ্ঞ্যান শূন্যের মত মেরে চললাম। বহুদিনের পুরনো একটা নেশা, এতদিন স্তিমিত ছিল! রক্তের নেশা! রক্তে একেকজনের মুখ চেনা যাচ্ছেনা। আর্তচিৎকার করছে বাচ্চা ছেলে গুলো। আমার বেশ মজা লাগছে এখন, মায়া জাগছেনা একটুও, ঠিক যেমনটা ছিলাম যুদ্ধের দিনগুলিতে।

এবং যুদ্ধের পরের দিনগুলিতেও!

অস্থির সময় তখন, শত্রু নেই সব, ভেগেছে। কিন্তু মানুষখেকো বাঘ রক্তের স্বাদ পেলে কি সহজে ফেরে আর! হাতে অস্ত্র, দুনিয়া তো আমারই! বেঁছে বেঁছে নিতে হবে শোধ।

সেই সময় থেকে আজকের এই মাছিমারা কেরানীতে রূপান্তর বেশ কষ্টের ছিল! সেই হিংস্রতা চাপা ছিল, আগ্নেয়গিরির মত! আজ এই বাচ্চা ছেলে গুলো আবার সেই মানুষটাকে বের করে আনল।



ছাতাটা গুটিয়ে বের হয়ে আসলাম গলির ভেতর থেকে। বাজারের রাস্তা ধরলাম আবার। বাজার ছাড়া বাসায় ফেরা অসম্ভব! বাচ্চা তিনটে ছেলের জন্যে আবার মায়া লাগছে। ওদের তো কোন দোষ নেই, দোষ আমাদের; ৯ মাসে যুদ্ধ শেষ হয়নি! ওটা যুদ্ধের শুরু ছিল। আমরা খুব দ্রুতই ময়দান ছেড়ে বের হয়ে এসেছিলাম! টাইম মেশিনে ফেরত যেতে পারলে অনেক কিছুই ‘লিস্ট’ করে করতাম হয়ত! আপাতত বাজারের লিস্টিই সই!

মন্তব্য ২৪ টি রেটিং +৭/-০

মন্তব্য (২৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৩ ভোর ৬:৫২

খেয়া ঘাট বলেছেন: খুব ভালো লাগলো । খুব খুব।

২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১২:৪৯

এই সব দিন রাত্রি বলেছেন: ধন্যবাদ খেয়া ঘাট! ভালো থাকবেন।

২| ২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৩ ভোর ৬:৫৯

পাতি রাইটার বলেছেন: শুভ সকাল। দারুণ হয়েছে। প্লাস !!!

২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১২:৫০

এই সব দিন রাত্রি বলেছেন: শুভসকাল আপনাকেও। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে পড়ার জন্যে।

৩| ২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ৭:০২

মুহাম্মদ আরীফ হোসাইন বলেছেন: http://www.somewhereinblog.net/blog/arif83du

২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১২:৫১

এই সব দিন রাত্রি বলেছেন: :)

৪| ২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ৯:১১

মনে নাই বলেছেন: বেশ সুন্দর হয়েছে। অনেকগুলো প্লাস থাকলো আপনার জন্য।

২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১২:৫১

এই সব দিন রাত্রি বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ 'মনে নাই' । ভালো থাকবেন

৫| ২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ৯:৩৫

পাতা ঝরার দিনে বলেছেন: ভয়ানক ভালো হয়েছে।

২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১:২৮

এই সব দিন রাত্রি বলেছেন: পাতা ঝরার দিনে, আমি গল্প লিখছি আসলে আমার মেয়েদের জন্য। ওরা বড় হতে হতে যদি আমি না থাকি! ভয়ানক ভালো গল্প গুলা ওদেরকে পড়তে দিও! :)

৬| ২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১:৩৭

ইমরাজ কবির মুন বলেছেন:
খুব সুন্দর হৈসে ||

৭| ২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ২:১৬

নিষ্‌কর্মা বলেছেন:
চমৎকার!

৮| ২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ২:২৯

এই সব দিন রাত্রি বলেছেন: ধন্যবাদ মুন ভাই!

৯| ২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ২:৩৩

এই সব দিন রাত্রি বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ নিষ্কর্মা!

১০| ২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৫:৩২

হাসান মাহবুব বলেছেন: চমৎকার। বিশেষ করে ছুরি মারার সময় দৃশ্যটা ফ্রিজ করে দিয়ে প্যারালালি দুইটা কাহিনি দেখানোটা বেশি ভালো লেগেছে।

১১| ২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ৮:৩৯

এই সব দিন রাত্রি বলেছেন: হাসান ভাই, ধন্যবাদ আপনাকে। আপনার নতুন লেখা পড়লাম। অদ্ভুত সুন্দর!

১২| ২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১২:০২

অড়বরই বলেছেন: খুবই ভাল লাগল। উৎসাহজনক একটা পোস্ট। আরও পড়তে চাই। আমার ব্লগেও আসবেন দয়া করে। ধন্যবাদ।

২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৩ ভোর ৪:০৩

এই সব দিন রাত্রি বলেছেন: ধন্যবাদ অড়বড়ই! লিখব হয়ত আরও, পড়ে দেখবেন!

১৩| ২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৩ ভোর ৪:৩০

নোমান নমি বলেছেন: দারুন লাগেছ। অতি সাবলীল ভাষায় চমতকার গল্প

২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৩ ভোর ৪:৩৯

এই সব দিন রাত্রি বলেছেন: ধন্যবাদ নোমান ভাই!

১৪| ৩০ শে জানুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ২:০৭

তোমার গল্পের মৃত রাজকন্যা বলেছেন: আপনার গল্প লেখার হাত ট চমৎকার ভাই!!! মুগ্ধ ...


ভাবি ভালো আছেন? আর বাবুরা ? :) পিচ্ছিদের ছবি দিয়ে একটা পিচ্ছি কথন লিখে ফেলেন ভাই ... :D :D ।। নিশ্চয়ই অনেক সু পাঠ্য হবে :#)


শুভেচ্ছা ...



০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:১০

এই সব দিন রাত্রি বলেছেন: লাইবেরিয়ার ইন্টারনেট বড়ই জ্বালাতন করতেসে! বাচ্চাদের নিয়ে লিখব না বাচ্চাদের জন্যে লিখব তাই ভাবতেসি। অনেক ধন্যবাদ আপু!

১৫| ০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১১:৪৭

তোমার গল্পের মৃত রাজকন্যা বলেছেন: বাচ্চাদের জন্য লিখতে পারেন, ওদের জন্যে দারুন সারপ্রাইজ হবে এটা । যখন বড় হয়ে পড়বে.. বুঝবে বাবা এটা লিখেছিল ওদের কথা ভেবে আর ওদেরকেই নিয়ে লিখলে, সেটা হবে ওদের জন্য বাবার পক্ষ থেকে অনেক দামি একটা গিফট.. সারাজীবন ধরে মনে রাখার মতো ! :) ... ...শুভেচ্ছা !

০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:২৪

এই সব দিন রাত্রি বলেছেন: আপনার প্রস্তাবটা ভাল লেগেছে। আমার বর মেয়েকে নিয়ে অনেক জায়গায় ঘুরেছি আমরা। সেগুলো একেকটা এডভেঞ্চার বৈকি। তবে ৭ মাস বয়সে ছেড়া দ্বীপ দর্শনের কতটুকু অর মনে আঁচর কেটেছে আল্লাহ মালুম। তবে লিখব ভাবতেসি। শুভেচ্ছা আপনাকেও

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.