নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

একে৪৭

জানি না!

একে৪৭

মনে প্রাণে মানি আমাদের পরিবর্তন দরকার। জানি এমনটা আরও লক্ষ কোটি মানুষ ভাবেন। আর সবাই ভাবেন বলেই আমরা বড্ড বিক্ষিপ্ত। তাই বিশ্বাস করি একজনই পারেন আমাদের পথ দেখাতে, বিক্ষিপ্ত আমাদের একত্রিত করতে। সেই একজন হতে না পারলেও তাকে অন্তত দেখে যেতে চাই।

একে৪৭ › বিস্তারিত পোস্টঃ

খরগোশ হত্যায় জঙ্গলিয় প্রতিক্রিয়া

১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৩:০৪

আজও একটা খরগোশ মৃত্যু! গর্ত থেকে কিছু দুরেই পাওয়া গেল রক্তে ভরা গেছের শেকড় আর কিছু লোম, জানোয়ারটা এখানে বসেই খেয়েছে নিরীহ সুন্দর খরগোশটাকে!!!

কিন্তু এভাবে আর কতদিন?! আর কত খরগোশ এভাবে অকালে জীবন দিবে??? জানোয়ার শেয়ালগুলো বড্ড বাড় বেড়েছে! এর একটা প্রতিকার হওয়া উচিৎ।
প্রতিকারের উপায় খুজতে কমিটি গঠিত হল, সভার আয়োজন করা হল, শেয়াল, খরগোশ দু-দলের প্রতিনিধিই সভায় অংশগ্রহন করলো।

কমিটির সভাপতি আলফা দলের বড় নেতা, যিনি একাধারে জঙ্গলসেবক, পশুদরদী জনাব খেকশেয়াল কালু সর্দার। সাথে অংশগ্রহন করেছেন তার কিছু কালা শিষ্য। যদিও সবাই জানে খেকশেয়ালের শিষ্যরা এমনকি খেকশায়ল নিজেও নিয়মিত খরগোশ ভক্ষন করেন। কিন্তু আজ অন্তত এই সভায় ওনাদের যথেষ্ট ডিসেন্ট মনে হচ্ছে। না মেনেও উপায় নেই, ইচ্ছায় হোক আর অনিচ্ছায়, পেপার টিভিতে ওনাদের বেশ কদর। সময়টা যে ওনাদেরই!

সঞ্চালকের ভূমিকায়া রয়েছেন সুন্দরী সাদাখরগোশ জেরীন। বারাবরের মতো আজও একটু বেশীই সেজেছেন! ধবধবে সাদা লোম, ঠোঁটে লাল লিপস্টিক ও মুখের কাছে হালকা গোলাপী শেড তাকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে। সুঠাম মাংসল রানের সাথে পেটের কাছে লাগানো লাল বেল্ট! কি যে সুন্দর লাগছে! রুচির প্রশংসা না করলেই না! পেছনে থাকা ফ্যানের বাতাসে গায়ের সৌরভ এসে নাকে লাগছে যা সহ্য করা প্রায় অসম্ভব! কি পারফিউম ইউজ করেছে কে জানে! জিব বের করে তাই ভাবছিল এক শেয়াল শিষ্য।

কালু সর্দারও বার বার ফিরে ফিরে তাকাচ্ছিল, জিহ্বাটা বেড় হয়ে আসছিল বৈকি, চতুরতার সাথে সামলে নিচ্ছেন। সুন্দরের কদরতো করতেই হয়! অত্যান্ত নম্র-ভদ্র চোখেই দেখছেন তার সর্দার, এক খরগোশকে তাই বোঝাচ্ছিলেন খেকশেয়ালের আরেক শিষ্য। উনি আবার খরগোশের জীবন রক্ষার্থে বদ্ধপরিকর।

কালু সর্দার ইশারাতে ডাকলেন এক শিষ্যকে। ক্ষুদা লাগছে... রাতে একটা ব্যবস্থা রাখিস... শাহী মশলায়...
-ওস্তাদ আমরা খাবোনা???
তোদেরটা তোরা যেখান থেকে পারস খা গিয়া, যেই মশলায় ইচ্ছা সেই মশলায়, কখনো না করছি??
শিষ্য মাথা ঝাকিয়ে চলে গেল।

সভায় জঙ্গলের কতিপয় অসাধু শেয়ালের বিরদ্ধে তীব্র ঘৃনা প্রদর্শন করা হল। একচিত্তে সবাই অঙ্গীকার করলো আর কেউ খরগোশ বক্ষন করবে না। তার বদলে তারা মাছ খাবে। আর যদি কেউ এই ঘৃণ্য কাজ করে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির আঙ্গিকারও করে ফেললেন দয়ালু এই খেকশেয়াল নেতা। মৃত খরগোশের রক্তমাখা স্থানে একটি আকর্ষনিয় প্রতিকৃতি ও সেখানে পুষ্পস্তবক অর্পন করার মাধ্যমে সভার সমাপ্তি ঘটলো।

জঙ্গলটিভি ১৭:
উপস্থাপকঃ দেখছেন জঙ্গলনিউজ... আসছি একটা বিজ্ঞাপন বিরতির পর...
বিজ্ঞাপন ১: ব্যবহার করুন গোলাপের সৌরভযুক্ত ম্যাক্স সাবান আর হয়ে উঠুন সুন্দর নাদুস-নুদুস আকর্ষণীয় খরগোশ, যা দেখে ছুঁয়ে বা চেটে দেখার লোভ সামলাতে পারবেনা কোন শেয়াল! এখন আরও ২টাকা কমে!
বিজ্ঞাপন ২: কাবিলা শাহী মশলা, মাছকে করুন খরগোশের মাংশের মতোই সুস্বাদু! আর হয়ে জিতে নিন সেরা রাধুনির খেতাব!
বিজ্ঞাপন এন: ঘাসফরিঙ এয়ারলাইন্স! শুধুমাত্র নিরাপদ যাত্রা নয়, সাথে পাচ্ছেন খরগোশের আন্তরিক সার্ভিস! সাথে আছে ২৫রকমের রেসিপিতে সুস্বাদু খরগোশের টেস্টে মাছের স্বাদ!

উপস্থাপকঃ জঙ্গলনিউজে আরও একবার স্বাগতম। আবারও ঘটলো খরগোশ হত্যার ঘটনা। মামা বাড়িতে বেড়াতে এসে দুষ্ট শেয়ালের মজাদার খাদ্য হয়ে প্রান হারান এই অল্পবয়ষ্ক খরগোশ। কি দোষ ছিল এই নিরীহ খরগোশটির??? বাড়ির পাশে খেলতে গিয়েছিল বাচ্চা এই খরগোশটি, তাই বলে কি তাকে এভাবে প্রান হারাতে হবে? আমার কান্না পাচ্ছে! আর কত সুন্দর খরগোশ প্রান হারাবে! এ ব্যপারে আলোচনার জন্য আমাদের পাশে উপস্থিত আছেন সনামধন্য নাট্য বিজ্ঞানি, বড় নেতা, সমাজসেবক, খরগোশ হত্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদি কন্ঠস্বর, জ্ঞানের ভুর কালু সর্দার। স্যার আমি আসছি আপনার কাছে, তার আগে একটা ক্লিপ দেখে নেই।

আগুন্তুককে প্রশ্নঃ কেন বাড়ছে এসব ভক্ষনের ঘটনা, আপনি কি মনে করেন?
আগুন্তুকঃ আমার মনে হয় খরগোশদের নিজেকে অত্যেন্ত আকর্ষনিয় করে দেখানো, টিভি, বিজ্ঞাপন, নাটক সিনেমা, বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান ইত্যাদিতে তাদের আকর্ষনিয় খাদ্যের বস্তুর মত প্রদর্শন করা,
এসব করে শেয়ালদের লোভ বৃদ্ধি করা হচ্ছে, বা যে শেয়ালের খরগোশের মাংস ভক্ষনের ইচ্ছে এখনো জাগেনি, তার ভেতরও খরগোশের মাংশের লোভ তৈরী করে দেয়া হচ্ছে, এসব বন্ধ করা উচিৎ।
তাছাড়া রাজনৈতিক পরিচয়ে প্রশ্রয় ও ওইসকল কর্মকান্ডের বিচারহিনতাই এইসব ঘটনা বৃদ্ধির কারন।

উপস্থাপকঃ স্যার খেখশেয়াল, আপনি দেখলেন এই ক্লিপে একজন টিভি, নাটক, সিনেমা, বিজ্ঞাপন ও আমাদের খরগোশ সমাজের রান দেখানোর অধিকার কে দুষলেন, আপনার কি মত?

খেকশেয়ালঃ এরা কারা? দেখেন গিয়া নিশ্চই কোন জঙ্গি দলের সদস্য। আমাদের জঙ্গল চেতনার বিরোধি, যারা জঙ্গলকে ডায়নোসরের আমলে নিয়ে যেতে চায়, যেখানে চলতো ডায়নোসরদের রাজত্ব, যেখানে থাকরে আমাদের কোন পাত্তাই থাকতো না।
আমার কথা হচ্ছে ভাই, খরগোশরা সুন্দর, তারা তাদের আকর্ষণীয় করে প্রদর্শন করলে তোমাকে কেন তাদের আকর্ষণীয় লাগবে! তোমাকে কেন খেতে হবে!? খাওয়ার জন্যে মাছতো আছেই! আসলে তাদের অন্তরই নোংরা, তারা খরগোশকে খাদ্যের দৃষ্টি দিয়ে দেখে, এদের ঘরেতো নিজের মা-বোনও নিরাপদ না! শেয়ালের মন থেকে ময়লা দূর করতে হবে। রান দেখানো, নিজেদের খাদ্যের মত উপস্থাপন করা খরগোশদের অধিকার, তারা দেখাবেই, নিজের অন্তরকে পরিষ্কার রাখুন, খরগোশকে খাদ্য নয়, সুন্দর প্রাণী হিসেবে দেখুন, দেখবেন সব ঠিক হয়ে গেছে। বিচার-টিচার বা শাস্তি দিয়ে দিলেই সমাধান হবে না। জ্ঞানিদের বুঝতে হবে।

অন্তরকে পরিষ্কার রাখতে হবে, আপনি অত্যান্ত মূল্যবান কথা বলেছেন বলেছেন স্যার, যদি আপনার মতো এত সুন্দর করে সব শেয়াল ভাবতে পারতো, তাহলে জঙ্গলটা খুব সুন্দর হয়ে যেত, খরগোশরা আরও অনেক অনেক উন্নতি অর্জন করতে পারতো।
যারা খরগোশের দোষ দেয়, তারা কি ভেবে দেখে না, যে খরগোশটাকে নিয়ে কথা হচ্ছে, তার কি দোষ ছিল!? সে তো রান দেখায়নি, তারতো অপরাধ ছিল না! তাদের কথা মতো অন্যের দোষে সে কেন জীবন দিবে? সুতরাং খরগোশরা যেমন খুশি তেমনই সাজবে, রান দেখাবে, আকর্ষণীয় দেখাবে, আপনারা আপনাদের চোখ ঠিক রাখুন। তাদের মাংশপিন্ড নয়, খরগোশ হিসেবে দেখুন।

পাতি খেকশেয়াল ও কতিপয় খরগোশেরাঃ ঠিক ঠিক ঠিক....... ওরা নোংরা, ওরা বদমাশ, ওদের লালা ঝরে... ওরা বর্বর, ওদের হৃদয়ে ময়লা... ওদের ধর... লটকাও... ফাঁসি দাও... জঙ্গল নিরাপদ হয়ে যাবে।

(ওই রাতে কালু সর্দারের শাহী মশলার ডিশে কে উঠেছিল তা অবশ্য জানা যায়নি, বা জঙ্গল মিডিয়াতে আসেনি।)

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৫:০২

সাইফুর রহমান খান বলেছেন: বাহ বাহ,

২| ১২ ই অক্টোবর, ২০১৭ দুপুর ২:২৭

এম আর তালুকদার বলেছেন: বর্তমানে এমনি হচ্ছে। ধন্যবাদ রুপক ভাবে প্রকৃত বিষয় তুলে ধরার জন্য।

১২ ই অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৩:০৭

একে৪৭ বলেছেন: আপনাকেও ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.