![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি লেখক নই তবু চেষ্টা করি লিখতে, লেখা পরিনত হয়েছে আমার নেশাতে। খুব ভাল লিখতে পারি তা না, যখন একাকি থাকি একাকি অনুভব করি নিজের একাকিত্ব ভুলে থাকার চেষ্টা করি লেখার মাধ্যমে। মনে হয় লেখাতেই যেন সব সুখ লেখার মাঝেই দিতে পারি নিজের দুঃখ গুলোকে নতুন রুপ। তাই আমি লিখতে ভালবাসি লেখা যেমন আমার নেশা লেখায় ভালবাসা
গীতিকার, সুরকার ও গায়ক এই তিন গুণের অপূর্ব সমারোহের মরমী শিল্পী এম.এন.আখতার ১৯৩১ সালের ১ জুলাই, চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার মোহম্মদপুর গ্রামে জম্মগ্রহন করেন। তিনি বাংলাদেশ বেতারের একজন সুপ্রসিদ্ধ গীতিকার, সুরকার, কন্ঠশিল্পী, সঙ্গীত পরিচালক এবং নাট্যকার।
বিশেষ কারণে তাকে উত্তর বঙ্গের নীলফামারী ও রংপুরে গিয়ে জেনারেল লাইনের পড়াশোনা করতে হয়। হারমোনিয়াম বাজাতে পারতেন, পারদর্শী ছিলেন বাঁশিতেও ওপারে চব্বিশ পরগনা, বশিহাঁট টাউনে সঙ্গীতজ্ঞ বাবু অমল মুখার্জীর কাছে সর্ব প্রথম কিছুটা স্মরলিপি সম্পর্কে অভিজ্ঞতা অর্জন করেন।
এম এন আখতার ১৯৬২ সালে বেতার শিল্পী হিসাবে যোগ দেন। এরপর তিনি আধুনিক, পল্লীগীতি, মুর্শীদি, মারফতি, চট্টগ্রামের আঞ্চলিক গান রচনা ও কণ্ঠ দিয়ে খ্যাতি লাভ করেন। ১৯৮৭ সালে তিনি অবসর নেন। তিনি সংগীত বিষয়ক কয়েকটি গ্রন্থ লিখেছেন। এর মধ্যে মনুআ-১, মনুআ-২ এবং ৩০ দিনে অভিনব সঙ্গীত শিক্ষা উল্লেখযোগ্য।
১৯৫৯ সালে চট্টগ্রামে ফিরে আসেন, ১৯৬২ সাল থেকে চট্টগ্রাম বেতার এবং ১৯৭৯ সাল থেকে বাংলাদেশ টেলিভিশনে শিল্পী, গীতিকা, সুরকার এবং নাট্যকার হিসাবে খ্যাতি অর্জন করেন। ১৯৭৬ সালের ৩০ জুন চট্টগ্রাম নন্দনকানন রিলে টাওয়ার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের গানটির গীতিকার ও সুরকার ছিলেন এম.এন. আখতার।
লেখা ও সুর করার পাশাপাশি এম এন আখতার নিজেও গাইতেন। তিনি ১৯৬২ সালে কালুরঘাট বেতারকেন্দ্রের উদ্বোধনী আধুনিক গানের প্রথম শিল্পী। আঞ্চলিক গানের সম্রাজ্ঞী বলে পরিচিত শিল্পী শেফালী ঘোষের ওস্তাদ ছিলেন তিনি। তাঁর লেখা ও সুর করা গান গেয়ে শ্যামসুন্দর বৈষ্ণব ও শেফালী ঘোষ খ্যাতি পান। তাঁর অনেক গান চলচ্চিত্রেও নেওয়া হয়েছে। ৩৫ বছর আগে গ্রামোফোন রেকর্ডে শিল্পী আখতার ও সাবিনা ইয়াসমিন গেয়েছিলেন ‘কইলজার ভিতর গাঁথি রাইখ্যম তোয়ারে’ গানটি। পরে এই গানটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। তিনি প্রায় পাঁচ হাজারেরও অধিক গান লিখেছেন। পাশাপাশি লিখেছেন অসংখ্য নাটক ও কবিতা। তার লেখা গানের মধ্য থেকে কয়েক হাজার গান নিয়ে ‘এম এন আখতারের গান’ নামে একটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। শুধু আঞ্চলিক গানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেননি তিনি। একুশের গান, দেশাত্ববোধক গান, আধুনিক গান, পল্লীগীতি, ভাবের গান, বিচ্ছেদি গান, হামদ-নাত, পীর-আউলিয়ার গান এবং চট্টগ্রামের হাওলা গানেও তার পদচারণা ছিল। ষাটের দশক থেকে তিনি পূর্ণাঙ্গ আঞ্চলিক ভাষায় আটটি ও শুদ্ধ ভাষায় চারটি গীতিনাট্য রচনা করেন। কালুরঘাট বেতার কেন্দ্রের প্রথম শিল্পীও ছিলেন তিনি। এ পর্যন্ত সংগীত বিষয়ক তাঁর তিনটি বই প্রকাশিত হয়েছে। ২৫টি আধুনিক গান, ২৫টি পল্লীগীতি ও ৫০টি আঞ্চলিক গান নিয়ে ১৯৭৩ প্রকাশিত হয় তাঁর একটি সংকলিত গ্রন্থ। ৬৫৮টি গান নিয়ে "মানব দরদী ও সুর সাধক" নামক গ্রন্থটি প্রকাশিত হয় ২০১০ সালে।
"চুড়িওয়ালা" "সোনার কলসী" "নাতিন জামাই" "কালের ফূল" "লট্টন কইতর"
"চৌধুরী কন্যা" তাঁর রচিত উল্লেখযোগ্য নাটক ও গীতিনক্সা, রাঙ্গাবালির চরে, বৈশাখী মেলাসহ অনেক নাটক লিখেছেন। তাঁর সর্বশেষ রচিত হাসির নাটক ‘রসিক দাদুর স্কুলে মানুষ গড়ার কল’।
যদিও তিনি ১৯৬২ সাল থেকে গান লেখা শুরু করেন তবে "মনুআ" নামক আধুনিক পল্লীগীতি ও আঞ্চলিক গানের প্রকাশনার পর চট্টগ্রাম বেতার তাকে গীতিকার হিসেবে তালিকাভুক্ত করে।
তাঁর রচিত ও সুরারোপিত গান সাবিনা ইয়াসমিন, ফেরদৌসী রহমান, ফেরদৌস আরা, আবদুল জব্বার, আবিদ সুলতানা, আপেল মাহমুদ, সামিনা চৌধুরী, উমা ইসলাম প্রমুখ জাতীয় শিল্পী এবং পাকিস্তানের নিঘাত, মুন্নী বেগম, ভারতের শ্রাবন্তী মজুমদারের কন্ঠে গীত হয়েছে।
প্রয়াত শেফালী ঘোষের কন্ঠে প্রথম আঞ্চলিক গান তাঁরই রচিত।
এম এন আখতারের রচিত অনেক গানের মধ্যে একটি সাড়া জাগানো গান ছিল ‘বকশি হাইট্টা পানের খিলি তারে বানাই খাবাইতাম’। তার রচিত উল্লেখযোগ্য গানের মধ্যে রয়েছে কইলজার ভিতর গাঁথি রাইখ্যম তোয়ারে, যদি সুন্দর একখান মুখ পাইতাম, তুমি যে আমার জীবনের উপহার , ও পরানর তালত ভাই চিডি দিলাম, বাচুরে - জী জী জী, বর্গী এলো দেশে", "মধুমিতা" ,ওরে সাম্পান ওয়ালা, মধু হই হই বিষ কাওয়াইলি, ইত্যাদি জনপ্রিয় কালজয়ী চট্টগ্রামি আঞ্চলিক গান তাঁরই সৃষ্টি। তাঁর নিজ হাতে গড়া আঞ্চলিক গানের দুই দিকপাল প্রয়াত শ্যাম সুন্দর বৈষ্ঞব ও শেফালী ঘোষ মরণোত্তর একুশে পদক পেলেও এখন পর্যন্ত তাঁকে কাজের সরকারী কোন স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। এমন এক অনবদ্য সুরের জাদুকর হওয়া সত্যেও চট্টগ্রামের আঞ্চলিক গানে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার পরও
এখনকার নতুন প্রজম্মের শিল্পীরা এম.এন. আখতার কে চিনে না, চট্টগ্রামের বর্তমানের নতুন প্রজম্মও এম.এন আখতার কে জানেন না ।সরকার তাঁকে কোন স্বীকৃতি দেয়নি এটাই চট্টগ্রামবাসিকে ব্যতিত করে, দুঃখ লাগে এখানেই।
©somewhere in net ltd.