নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আজব গোয়েন্দা

আমি লেখক নই তবু চেষ্টা করি লিখতে, লেখা পরিনত হয়েছে আমার নেশাতে। খুব ভাল লিখতে পারি তা না, যখন একাকি থাকি একাকি অনুভব করি নিজের একাকিত্ব ভুলে থাকার চেষ্টা করি লেখার মাধ্যমে। মনে হয় লেখাতেই যেন সব সুখ লেখার মাঝেই দিতে পারি নিজের দুঃখ গুলোকে নতুন রুপ। তাই আমি লিখতে ভালবাসি লেখা যেমন আমার নেশা লেখায় ভালবাসা

আজব গোয়েন্দা › বিস্তারিত পোস্টঃ

রোহান ও তিথির অল্প দিনের সল্প বন্ধুত্বের গল্প

২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১২:২১

২০০২ কিংবা ২০০৩ এর দিকে তখন রোহান খুব ছোট, তখন সে প্রথম বার তার কাজিনের সাথে ওনার খালার বাসায় লম্বা ছুটি কাটাতে চিটাগাং শহরে গিয়েছিল । রোহানের তখন শহরে কোন আত্বীয় না থাকায় এর আগে সে কখনো শহরে যায়নি। সে শহরে গিয়ে পৌছল, নতুন নতুন এক রকমই লাগছিল, কাউকে ছিনে না অচেনা নগরি। কাজিনকে বলল আপু এখানে কি আমার সাথে খেলা করার কি কেউ নেই?? একদম ভাল লাগছে না এখানে। আপু বলল থাকবে না কেন তিথি আছে না?? আয় আমার সাথে, সেও আপুর পিছু পিছু গেল এবং আপু তিথির সাথে রোহানের বন্ধুত্ব করিয়ে দিল। ওরা অনেক খেলা করল, রোহান গ্রাম থেকে যে খেলা গুলো শিখেছিল তিথিকে তা শিখিয়ে দিল এবং তিথিও কিছু নতুন খেলা রোহানকে শিখালো, অল্প সময়ে তাদের বন্ধুত্বটা দারুন জমে উঠল।



তাদের মাঝে একটাই সমস্যা ছিল আর সেটা রোহানের কারণেই, রোহান তখন সাধু ভাষায় ভালভাবে কথা বলতে পারত না। মানে ১০০% এর ৭০% পারত বাকীগুলো পারত না, কারণ আগে গ্রামে বাচ্চাদের সাথে ফ্যামিলি কিংবা বাসা-বাড়ীর কেউ সাধু ভাষায় কথা বলত না, এখন তো গ্রামে প্রতিটি ঘরের মায়েরা এবং ফ্যামিলির সবাই সাধু ভাষাই কথা বলে বাচ্চাদের সাথে। রোহানের তো সাধু ভাষার হাতে খরি হয় স্কুলে, সে সাধু ভাষা শিখেছিল স্কুলে গিয়ে, তাও আবার স্যাররা প্রায় কথা বলত চাঁটগাইয়া ভাষায় যার কারণে এই দশা।

কিন্তু সমস্যার সামাধান রোহান নিজেই বের করল, সে তিথিকে বলল তুমি কি চাঁটগাইয়া বুঝ?? ও বলল হ্যাঁ! । রোহান নিসংকোচে বলল, দেখ আমি ভালভাবে সাধু ভাষা বলতে পারি না, তাই যে গুলো আমি সাধু ভাষায় বলতে পারব না সেগুলো চাঁটগাইয়াতে বলব ঠিক আছে??, ও বলল আচ্ছা ঠিক আছে। শুরু হল রোহারে সাধুচাঁট ভাষায় কথা বলা, কথা গুলো মনে করে ওর এখনো হাঁসি পায়। তিথি রোহানকে রোহানি ডাকত এবং রোহানের নাম দিয়ে একটা সুন্দর ছড়া বানিয়েছিল, ছড়াটা বললেই রোহান ক্ষেপে যেত।



তারপর কয়েকদিন পর রোহান ওখান থেকে চলে আসে। শহর থেকে যখন গ্রামে আসল রোহানের আপু করল কি! সবাই কে বলল রোহানের তিথি নামের বান্ধবী আছে শহরে! প্রতিটা মূহুর্ত মেয়েটার সাথে থেকেছে, খেলেছে ইত্যাদি। এবার সবাই রোহানকে রোহান নামে কম,তিথি নামেই ডাকতে শুরু করেছে কি বিপদরে বাবা! রোহান তখন ক্ষেপে যেত, এত ছোট বয়সে এর দ্বারা কি বুঝত আল্লাহ তায়ালা জানেন।!



এরপর রোহানের ওখানে আর যাওয়া হয়নি, তার প্রায় তিন বছর পর যখন সে একটু বড় হল, সে তখন ক্লাশ ফোর/ফাইভ এর ছাত্র । রোহান একটা অন্ষ্ঠুানে ওর দেখা পায়, কিন্তু রোহান তিথিকে যতই দেখে ততই ওর থেকে দূরে দূরে থাকে , তিথি এদিকে গেলে সে ঐদিকে, তিথি ঐদিকে গেলে সে এইদিকে , ব্যাপারটা তিথি বুঝতে পারল এবং ওর একদল বান্ধবী নিয়ে সেই ছড়াটা বলতে লাগল। রোহানের ভালই লাগছিল তবু চুপ করে থাকল তবু কথা বলেনি সে , কারণ তিন বছর আগে যে, তিথির সাথে সাধু ভাষায় কথা বলতে পারেনি সেই লজ্জায়। তিন বছর আগে তো আর আত্বসম্মানের বোধটাই হয়নি তার, তাই সাধুচাঁট ভাষায় কথা বলেছিল। সেই বার ওখান থেকেও চলে এল, এর পর প্রায় আরো ৯/১০ বছর পর তাদের দেখা হল আরেকটি বিয়েতে তখন দুজনেই বড় হয়ে গিয়েছে, দুজনের মাঝে লজ্জা নামক বস্তুটি গ্রাস করল। তবু রোহান জান গেলেও নিজ থেকে কথা বলবে না, বেচারি রোহানের সামনে অনেক ঘুরল কিন্তু সে লজ্জায় কথা বলতে পারেনি। আবার এটাও মনে আসল যে একটা গাঁয়ে ছেলের সাথে কি ও কথা বলবে?? ছোট বেলার কথা আলাদা। মেহেদির দিন ও একটা শাড়ি পরেছিল, তিথিকে দারুন লাগছিল সেদিন, ঐদিন তাদের আর কথা হয়নি। বিয়ের দিন সকালে রোহান ও তার কাজিনের কাজিন মিলে ফ্লোরে আলপনা আঁকছিল, এমন সময় তিথি এসে পাশে বসল এবং রোহানের কাজিনের কাজিনকে জিজ্ঞেস করল কাল রাতে ক্লাবে কে কত সময় ছিল?? ব্যান্ডে কে কে নাচল ?? ব্লা ব্লা ব্লা। তবু রোহান ঐদিকে কর্ণপাত আর চক্ষুপাত দুটাই করল না, চিনেও না চিনার ভান করে রইল , বেচারি অনেকক্ষন বসে রইল তাদের আলপনা দেখল তার পর উঠে চলে গেল। আল্পনা আঁকা শেষ হলে রোহান গিয়ে গেস্ট রুমে বসল, তারপর ও সেখানেও গেল সোফাতে রোহান পা আড়াআড়ি ভাবে লম্বা করে বসে থাকায় অপর পাশে যেতে পারছিল না তিথি, সে তা খিয়াল করেনি, তিথি কিছুক্ষন দাড়িয়ে থাকার পর বলল একটু দেখি! । রোহান তবু কথা বলতে পারল না লজ্জার জন্য।তার পর থেকে আজ অবদি তিথির সাথে রোহানের আর কোন দেখা হয়নি,কি জানি আবার কবে এরকম অনুষ্ঠানে দেখা হয়ে যায়! , রোহান এবার ঠিক করেছে যে, তখন আর মিস করবে না কথা বলবেই তিথির সাথে । মজার ব্যপার হচ্ছে ওর সাথে রোহানের যতবার দেখা হয়, ততবারই তা হয় কোন না কোন অনুষ্ঠানে। রোহান এখনো তিথিকে খুব মিস করে, কিন্তু সে জানে না কেন মিস করে। হয়ত সে তিথিকে মনে মনে ভালবাসতে শুরু করেছিল, কিন্তু অনেক সময় প্রতিটি গল্পের নায়ক আর নায়িকার মিল হয় না, এখানেও তেমন হয়েছে, রোহানের কাহিনী টা প্রেম কাহিনী বলব নাকি বন্ধুত্বের কাহিনী বলব বুঝতে পারছি না, তবু বলি তাদের কখনো মিল হবে না।



মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.