![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আগের দুই পর্ব
ভুমিকা
প্রথম দিন: অধ্যায়-১
প্রথম দিনঃ অধ্যায়-২
দুই হাত পা ছড়িয়ে বসে আছি, আর বাকী সব ছাত্র-ছাত্রীদের দিকে তাকাচ্ছি। সবাই কথা বলছে। কয়েকজন অবশ্য আমার দিকে তাকাচ্ছে। আমি তাদের দৃষ্টির দিকে সেইরকম ভাবে পাত্তা দিলাম না। আমি কলেজের দুই বছর শান্তি এবং নির্বিঘ্নে কাটাতে চাই। আমি কলেজে আসব সময়মত পালাব আর মাঝে মাঝে লাইব্রেরীতে ঘুরে আসব।
হা! ভুলে গেছি আমার না লাইব্রেরী খুজতে যাওয়ার কথা। সোজা হয়ে বসলাম। তখনই আমার দিকে একটা ছেলে আসল, হাসিখুশি চেহারার এক ছেলে।
আমার কাছে এসে আমার পিঠে চাপড় মেরে বলল, “বস, স্যাররেতো পুরা ফাটিয়ে দিলা।”
আমি কিছু বললাম না ছেলেটার দিকে তাকিয়ে রইলাম। ছেলেটা তার কথা চালিয়ে যেতে লাগল, “সত্যি কথা আমি পুরা অবাক স্যারের সাথে এভাবে মক ফাইট করা…”
“কই এখানে তো কোনো মক ফাইট হয় নাই।”, তার কথা আমি শেষ করতে দিলাম না।
“আরে যেটাই হোক স্যারকে তো বোল্ড আউট করা মুখে কথা না, কলিজা লাগে। তোমার সেই কলিজা আছে। এক বড় ভাইয়ের কাছে এই স্যারের অনেক বদনাম শুনেছি। খালি উলটা ভাব নেয়।”, সে আমার কথা কান না দিয়ে এক নিশ্বাসে নিজের কথাটা শেষ করে।
আরে আমিতো পরিচয় না দিয়ে কথা বলা শুরু করছি, এই বলে সে তার ঘাড়ের পিছনে হাত বুলাতো লাগল। আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল, “আমার নাম মনিরুল ইসলাম সজল।”
“আমি রেদোয়ান…”
“আমি জানি তোমার রানা, একটু আগেই তো বললে, আমাকে সজল বলে ডাকলেই হুশি হব।”
“সজল তাই না, পরিচিত হয়ে খুশি হলাম।”, আমি এবার এই কথা বলে তার বাড়ানো হাতে দিকে নিজের হাত বাড়িয়ে দিলাম।
“হুম, রানা তোমার সাথে কথা বলে মজা পাওয়া যাবে।”, এই বলে সে আমার পাশে এসে বসল। তারপর আমার কানের কাছে মুখ এনে বলল, “প্রথম দিনেইতো তুমি দেখছি বাজীমাত করে ফেলেছ।”
“আরে বাপ আমি তো বলেছি স্যারের সাথে…” , সে আমার কথা পুরা শেষ হতে দিল না।
“ না না, আমি স্যার না দেখ ওই মেয়েদুটোর কথা বলছি। বারবার তোমার দিকে তাকাচ্ছে। ”, সে এবার নুশরাত ও তার পাশের মেয়ের দিকে ইঙ্গিত করে বলল। “একজন তো তোমাকে রজার মুরের সাথে তুলনা দিয়েছে।” সজল হাসি মুখে বলল।
ভ্রু কুচকে আমি তার দিকে তাকালাম, না চেহারার মধ্যে কোনরকম জেলাস ভাব নেই। আমার সাথে মজা করার জন্য এইভাবে বলেছে।
আমি তখন বললাম, “রজার মুর বা আর কারো সাথে তুলনা না দিলে আমি খুশি হই। আমি আমার মত থাকতে চাই।”
জানিনা সজল আমার দিকে তাকিয়ে কি দেখল, তারপর বলল, “হুম, যেটা ভাল মনে কর। আচ্ছা তোমাকে তুই করে বললে কোন সমস্যা হবে।”
“না, কোন সমস্যা হবে না।”, আমি উত্তর দিলাম। বোঝাই যাচ্ছে ছেলেটা খুবই মিশুক টাইপের।
“তাহলে মেইন টপিকে আসি।”, সজল বলা শুরু করল।
“কিসের মেইন টপিক।”, আমি জিজ্ঞেশ করলাম।
“আমার মনে হয় ঐ শ্যামলা মেয়েটা তোকে পছন্দ করে।”
“অসম্ভব। তার বয়ফ্রেন্ড আছে কিংবা বিবাহিত।”
আমার এই কথা শুনে সজল অবাক হল, বলল, “ তোরা কি আগে থেকেই পরিচিত নাকি ? ”
এত তাড়াতাড়ি তুই-তোকারিতে ! তাহলে আমিও শুরু করে দেই।
“ না, তার চেহারা দেখেই বোঝা যায়।” আমি বললাম।
“আমার ক্ষেত্রে ?”
এবার এধরনের প্রশ্ন, আমি কি জোত্যিষি নাকি! তারপরেও আমি তার প্রশ্নের জবাব দিলাম।
“কাপোল, তোর গার্লফ্রেন্ড আছে।”
“…”
কিছুক্ষন নির্বাক হয়ে আমার দিকে গোলগোল চোখে তাকাল।
“শালা তুই একটা চীজ, কেমন বললি।” আমার পিঠে হাল্কা চাপড় মেরে বলল।
“ইন্সটিঙ্ক।” আমি হেসে জবাব দিলাম।
যাক এই ছেলে মানে সজলের সাথে আমার বনবে ভাল। এখন আমার মত ক্লাস পালানোয় মত থাকলেই বলা যায় সোনায় সোহাগা।
আমি বললাম, “চল পুরো কলেজটা একবার ট্যুর দিয়ে আসি।”
“ট্যুর মানে ?” সে এবার একটু থতমত হয়ে বলে।
“মানে চল কলজেটা একবার ঘুরে আসি।”
“স্যার আসবে তো। একটু পরে গাইড টিচাররা আসবে কে কার গাইড টিচার হবে সে জানতে হবে না।”
“আরে কলেজটা তো ছোট, বেশীক্ষন লাগবে না।”
“আরে ভাই …”
সজলের কথাটা শেষ করতে দিলাম না,আমি উঠে দাড়ালাম। সজলের দিকে তাকিয়ে বললাম, “আরে চল, বসে থাকতে থাকতে শরীরের জং ধরে গেছে।”
সজল আরো কিছু বলতে চাইল, কিন্তু আমি তার আগেই ক্লাসরুমের বাইরে চলে গেলাম। সেও আমার পিছে পিছে এসে পড়ল।
*
আমি লাইব্রেরী থেকে বের হয়ে বললাম, “এই কলেজ সম্পর্কে দেখছি তুই অনেক জানিস।”
এই কথা বলার কারন আছে, সেই আমাকে পুরো কলেজটা ঘুরিয়ে দেখিয়েছে সে। আগেই বলেছি কলেজটা বেশী বড়না, তাই ঘুরে ফিরে দেখতে পনের মিনিটের বেশী লাগলনা।
“হুম, আমি পাশের স্কুলে পড়তাম।”, সজল বলল।
“কলেজের স্যার-ম্যাডামরা কেমন ?”, জিজ্ঞেশ করলাম।
“মোটামুটি।”, সংক্ষেপ উত্তর।
“মোটামুটি মানে ?”
“মোটামুটি মানে… কয়েকজন ভাল আর কয়েক জন খারাপ। শুনেছি কয়েকজন নতুন সির-ম্যাডামও এসছেন।”
“হুম বুঝলাম। তা একটা উদাহরন দে না যে কোন স্যার কাছ থেকে দূরে থাকা উচিত।”
“মিজান স্যার, উনার কাছ থেকে দূরে থাকাই বেটার, খালি ছেলেদের দিয়ে অকাজ করিয়ে বেড়ায়। আর মেয়েদের পিছনেতো ছোক ছোক করেই। ”
“মিজানুর হায়দার ?” আমি জিজ্ঞেশ করলাম।
“হ্যারে ভাই, যারে তুই কড়া বোল্ড আউট করলি। তুই একটু বেশঈ সাবধানে থাকিস, যে একখানভাবে সাইজ করলি তোরে চোখে চোখে রাখবে ওই স্যার।”
“হুম আর দ্বিতীয়জন?”, আমি আবার জিজ্ঞেশ করলাম।
একটু বিরক্ত হয়ে, “আগে ক্লাশে চল, তারপর জানবি। চল ক্লাসে চল, আজকে গাইড টিচার ঠিক হবে চল চল।”
এই বলে আমাকে এবার সে হ্যাচকা টানে আমাকে নিয়ে চলল। আমি বাধা দিলাম না কারন আমার লাইব্রেরীটা কোথায় সেটা জানা দরকার ছিল, এখন জেনে গেছি তাই এত চিন্তা নাই। কালকে আমি লাইব্রেরীর মেম্বার হওয়ার ব্যাবস্থা করছি।
*
গাইড টিচার। একজন স্যার আব ম্যাডামের আন্ডারে কয়েকজন ছাত্র-ছাত্রী থাকবে, স্যার-ম্যাডামরা সেই ছাত্র-ছাত্রীদের অ্যাটেন্ডেন্স তারপর রেজাল্ট এইসব দেখবে এর সাথে অন্যান্য সমস্যাও দেখবে।
সজল আমাকে এই সবই বোঝাচ্ছিল, আমি শুধু মাথা ঝাকাচ্ছিলাম। আমি দেখলাম কাকতালীয়ভাবে সজলের রোল আর আমার রোল কাছাকাছি। দেখা যাক আমরা এক স্যার বা ম্যাডামের গাইডে পড়ি কিনা।
একটা গাইডে পনেরজনের মত করে নিচ্ছে। আমার আমার রোল শেষ পনের মধ্যে পড়ে। তৃতীয় স্যার বের হইয়ে গেলেন। দেখে মনে হচ্ছে এই সেকশনে শুধু স্যাররা গাইড টিচার হিসেবে থাকবেন। কিন্তু আমার ধারনা ভুল প্রমানিত হল। এমনভাবে ভুল প্রমানিত হল যে আমাকে বজ্রাহতের মত পড়ে থাকতে হল। সজল অবশ্য কিছুটা খুশি হল। খুশি হওয়ার কারন আছে। ক্লাসরুমে যে মহিলা ঢুকল… দুঃখিত যে ম্যাডাম ঢুকল সে খুবই সুন্দরী, সব ছেলেরা যে উনার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে সেটা আমি পিছন থেকেই বুঝতে পেরেছি। আমিও একসময় তাকিয়ে থাকতাম।
হ্যা, আমি উনাকে চিনি সে আমার আপির বেষ্ট ফ্রেন্ড লায়লা আফসারিন।
ইচ্ছা হল কপালটাকে বেঞ্চের মধ্যে জোরে ঠুকে দেই, আর পেলনা এই হবে আমার গাইড টিচার। আমার মুখ শুকিয়ে আমসি হয়ে আছে, এটা আমি আয়নায় দিকে না তাকিয়ে বুঝতে পেরেছি। একে একে সবার রোল নাম্বার আর নাম ডাকতে লাগল। একসময় আমার রোল আর নাম আসল, তিনি আমার দিকে তাকালেন। তার মুখ আমাকে দেখে একশ ওয়াটের বাতির মত জ্বলে উঠল কিন্তু কিছু বলল না। স্মনে আসতেই সেই ধারাল চেহারার মেয়েটাকে দেখলাম। আমরা একই গাইড টিচারের সাথে।
হুফ, আস্তে করে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। কিছু করার নেই আমার এখন। যা হবার তা হয়ে গেছে। সজলের দিকে তাকালাম, দেখলাম সে কিছুটা খুশি।
হাহ, বাবা দুইদিন যাক তখন বুঝবে ঠেলা এই মহিলা কেমন জিনিষ।
সে আর আপু ছিল স্কুল, কলেজ এবং ভার্সিটি লাইফের ফ্রেন্ড। দুজনকে সবাই ডাকত ‘রুনা-লায়লা’ বলে। উল্লেখ্য যে আমার আপির ডাক নাম। ঐ ‘রুনা-লায়লা’ তাদের নাম হলেও, গায়িকা রুনা লায়লার মত তারা গান গাওয়ায় বিখ্যাত ছিল না, ছিল পেটাতে। বিশেষ করে হকিস্টিক দিয়ে। সেটা অনেক বড় কাহিনী!
আমি ব্যাক্তিগতভাবে এই লায়লা আপুকে বিশেষভাবে পছন্দ করিনা, যদিও সে নজর কাড়া সুন্দরী, আমার আপিকেও সে ছাড়িয়ে গেছে। ছোটখাট গড়নের এই মেয়েকে অনেকেই ভুল বোঝে, মনে করে অসহায় এক হরিণ শিশু আর দুনিয়া সম্পর্কে কোনো ধারনা নাই।
আমি আর বেশী কিছু বলবা না, এইটুকু বলে রাখছি, ভার্সিটি থাকতে সে কোন এক ক্যাডারকে হকিস্টিক দিয়ে দৌড়ানি দিয়েছিল। ধোলাই দিয়েছিল কিনা জানিনা। এরপর থেকে উনার নাম হয়েছিল ‘কাল নাগিনি’ এবং সবাই উনাকে মান্য করে চলত।
তিনি আমারদের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হাসি দিয়ে বললেন, “আমি এখন থেকে তোমাদের গাইড টিচার। তোমাদের ভাল মন্দ দেখার দায়িত্ব আমার …” একটু হেসে, “মানে কলেজে আরকি।”
আমি শিউর লায়লা আপুর এই মিষ্টি হাসি দেখে এই ক্লাসে সব (আমি বাদে) ছেলের মাথা নষ্ট হয়ে গেছে।
আমি চিন্তা করতে লাগলাম আপি কি তাহলে জানত লায়লা আপু এই কলেজের টিচার, তাহলে জানায়নি কেন। আমাকে সারপ্রাইজ দেবার জন্য, তাহলে আমি সারপ্রাইজড, কঠিনভাবে সারপ্রাইজড। আমার এই চেহারা কল্পনা করে আপি মন হয় হেসে লুটোপুটি খাচ্ছে।
মনে মনে আফসোস করা ছাড়া আর কি উপায় আছে আমার, এই দুইজন মিলে যে আমাকে পিচ্চিকালে যে পরিমান যন্ত্রণা দিয়েছে যে এত পরিমান যন্ত্রণা কোন মশা ঘুমন্ত ব্যাক্তিকে দেয় না। মনে করেছিলাম কলজের প্রথম দিন ভালভাবে যাবে, কিন্তু গেল না। সত্যি কথা আমি কলেজ জীবন যে রকম আশা করছি সেটা ঠিক সেইরকম মনে হয় না হবে।
১৮ ই মে, ২০১৪ সকাল ১১:২৮
আজবছেলে বলেছেন: এটা এখনো সম্পুর্ন হয়নি, আমার নিজের ব্লগে এখনো চলছে এটা। তবে প্রথম পর্ব প্রায় শেষ পর্যায়ে এসে পড়েছে।
©somewhere in net ltd.
১|
১৮ ই মে, ২০১৪ সকাল ১১:১৩
is not available বলেছেন: পড়ে ভাল লাগছে সম্পূর্ণটা দিলে ভালো হয়!