নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আজবছেলে

আমি সত্যিই আজব ছেলে

আজবছেলে › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমি কলেজ জীবন যেরকম আশা করেছিলাম, সেটা ঠিক সে রকম হল না ! [এসো একটা ক্লাব খুলি! অধ্যায়-২]

২২ শে মে, ২০১৪ সকাল ৯:১১



আগের পর্ব





বাসায় বসে টিভি দেখছিলাম আর একটু পরপর ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছিলাম। আপা ঘন্টাদুই আগে ফোন দিয়েছিল রাতুল নাকি ঢাকার কাছাকাছি এসে পড়েছে, যেকোনো সময় আমাদের এখানে এসে পড়তে পারে। আপা কিভাবে আপিকে রাজী করালো সেটা এখনো আমার মাথায় আসছে না। আমার ধারনা লায়লা আপুর হাত ছিল,নাইলে আপি জীবনে রাতুলকে নিজের বাসায় রাখতে রাজী হত না। এদিকে গতকাল আবার আপুও ফোন দিয়েছিল, আপু মানে আমার মেজবোন, সানজিদা হক। সে রাজশাহী থাকে এবং উনার জামাই মানে আমার দুলাভাই হচ্ছে ভার্সিটির শিক্ষক।



আপার কাছ থেকেই শুনেছিলাম আপুর নাকি বাচ্চা হবে। সেটা ভালো খবর, অন্তত আরেকটা ভাগ্নে নাইলে একটা ভাগ্নি পাব। তবে আমি ভাগ্নিই চাই, যে বান্দর মার্কা ভাগ্নে আছে এরপর যদি আরেকটা যোগ হয় তাহলে আমার অবস্থা কেরোসিন হতে সময় লাগবে না। তা যাই হোক, আপু ফোন দিয়ে বলল, “কিরে বান্দরটা বলে তোদের সাথে থাকছে।”



“ওই বান্দর কিন্তু তোমার বোনের একমাত্র ছেলে,” আমি বললাম।



“তা যাই হোক বান্দরতো বান্দর,” তারপর একটু থেমে বলল, “শুনেছিস তো আমি মা হতে চলেছি।”



“হ্যা আপা বলেছে তারপর গতকালও আম্মাও বলেছে।”



আপুর বয়স তিরিশের উপর। এতদিন কি কারনে যেন উনি মা হতে পারিছিল না, দেশের কোনো পীর-ফকিরকে তিনি বাদ দেননি এই মা হবার জন্য। দুলাভাই অবশ্য এইসব পীর-ফকির তেমন বিশ্বাস করেন না কিন্তু আপির ঠেলায় আমার সেকেন্ড দুলাভাই রাজী হন।



“তোর কি মনে হয় ছেলে হবে নাকি মেয়ে?”



আজিব ব্যাপার আমি জানব কিভাবে, কিন্তু কিছুতো বলে বুঝাতে হবে, “মনে হয় মেয়ে।”



“কারন কি? নাকি আন্দাজে ঢিল মারলি?”



এবার কিছুটা বিপদে পড়লাম, আন্দাজেই ঢিল মেরেছিলাম। এখন কারন চেয়ে বসল, “তুমি সুন্দরী এক মহিলা আর দুলাইভাইয়ের চেহারাও খারাপ না…”



“তো? তেল মারা হচ্ছে নাকি ?”



“আরে না, আমি কোন এক পেপারে পড়েছিলাম সুদর্শন দম্পতিদের মেয়ে জন্ম দেয়ার পরিমান বেশী।”



“ওমা, তাই নাকি, জানতাম না তো, এদিকে তোর দুলাভাইও মেয়ে হবে বলে ধরে রেখেছে।”



“ভালই একটা ভাগ্নি হলে ভালো হয়, যে বান্দর মার্কা ভাগ্নে আছে, একন একটা ভাগ্নি না হলে হয় না,” আমি বললাম।



“হুম, অই বান্দরের কথা মনে করিয়ে দিলি, আপা তো আমাদের এখানে পাঠিয়ে দিতে বলেছিল। আমি না করে দিয়েছি,” আপা এবার একটু গরম গলায় বলল, “তোর দুলাভাই ওর নাম শুনলেই তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে।”



উঠারই কথা, যার এত সাধের গোফটা অর্ধেক করে দিয়েছে তার উপর যে কেউই ক্ষেপা থাকবে। আর যতটুকু শুনেছি দুলাভাই নাকি এখন আর গোফ রাখেন না।



“না কালকে আসবে শুনেছি।”



“তাই নাকি, আচ্ছা তাহলে দেখে শুনে রাখিস, আপার কারনে পুরো বিগড়ে গেছে ছেলেটা।”



আমিও কিছুটা সায় দিলাম। আপার কারনে রাতুল কিছুটা বিগড়ে গেছে, এমনিতেই ছেলেটা কিন্তু খুবই বুদ্ধিমান। সবকিছু তাড়াতাড়ি ধরে ফেলতে পারে। কিন্তু অধিকাংশ সময় এমন কাজ কারবার করে যার কারনে অনেকেই তার বুদ্ধিমত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে। ভাবছি আপির সাথে থাকলে ওর কি অবস্থা হবে কে জানে?



ওর কথা ভাবতে ভাবতেই ফোন এল, “মামা আমি তোমার বাসা নিচে।”



“দাড়া আসছি,” এই বলে আমি নিচের দিকে গেলাম।



নিচে গিয়ে দেখলাম রাতুল দাড়িয়ে আছে, হাসি মুখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি ওর কাছে যেতেই সে আমাকে জড়িয়ে ধরল। ছেলেটা আগের চেয়ে কিছুটা লম্বা হয়েছে। আমার দিকে তাকিয়ে বলল, “মামা তুমি দেখছি অনেক চেঞ্জ হয়ে গেছ।”



“তাই নাকি ভিতরে আয়, অনেক দূর থেকে এসেছিস।”



“তা ঠিক, ভালো কথা তুমি যেগুলা আনতে বলেছিলে আমি এনে দিয়েছি।” এই বলে সে ব্যাকসিটের দিকে আঙ্গুল তাক করল।



সেখানে মাদারবোর্ড, প্রসেসর আর একটা গ্রাফিক্স কার্ড আছে। আমি সেগুলোর দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিলাম। আপা তাহলে পাঠিয়েছে এইগুলা।



“মামা হার্ডডিস্কের কথা বললে না কেন।”



“ওটা ব্যাবস্থা করে ফেলব, আমারগুলো বিক্রি করে দিলে কিছু টাকা আসবে, সেখান থেকে কিনব।”



“বলো কি আমিতো তোমার জন্য এক টেরাবাইটের হার্ডডিস্ক নিয়ে এসছি,” রাতুল বলল।



“আমি কি আনতে বলেছিলাম নাকি? আমার লিষ্ট কি আপা পড়ে দেখেনি।”



“না সবই ঠিক ছিল আমি মনে করেছিলাম তুমি হার্ডডিস্কের কথা বলতে বলে গিয়েছ নাইলে মা ভুল করেছে,” আস্তে আস্তে বলল, “আর জানোইতো মা কি কি রকম ভুল করে এইসব ব্যাপারে।”



কথা সে মিথ্যে বলে নাই। আপা আবার এইসব টেকনিকাল বিষয়ে খুবই দুর্বল। তার হাতে ইলেক্ট্রিক কোনো জিনিষ বেশীদিন থাকে না, শুধু মাত্র মোবাইল আর টিভি ছাড়া। আর বড় দুলাভাইয়ের কাষ্টম অফিসে অনেক পরিচিত লোক আছে। তাদের মাধ্যমে উনি এইসব ইলেক্ট্রিকাল জিনিষ-পত্র ম্যানেজ করেন। তাই উনাদের এত সমস্যা হয় না। আপাকে ধরে দুলাভাইয়ের মাধ্যমে আমি আমার পিসিটাকে আপডেট করে ফেললাম।



আমি রাতুলের দিকে ভাল করে তাকালাম। আপা বলেছিল, তার নাকি মজনু রোগে ধরেছে কিন্তু এখনো তার কোনো আলামত পেলাম না। আগের মতই তো আছে আমার কাছে মনে হল। জিনিষ-পত্র নিয়ে আমি উপরে উঠতে লাগল। বেশী কিছু নাই দুইটা ব্যাগ খালি। আপা আসবাব পত্র পাঠাতে চেয়েছিল। আপি না করে দিয়েছে, বলেছে একটা খাট আর একটা টেবিল বেশী আছে তাই দরকার হবে না। এর আগে আমার এক খালা আর লায়লা আপু একসাথে থাকত আপির সাথে। খালা চলে গেছে আর আমি আসব শুনে লায়লা আপুও থাকেনি।



বাসায় এসে ব্যাগগুলো রাখতেই আমার মোবাইল কেপে উঠল, মনে হয় কেউ ফোন দিয়েছে, আপারই দেবার সম্ভাবনা বেশী। কিন্তু স্ক্রিনে দেখলাম আরকজনের নাম উঠে এসেছে, আমাদের উপরতলার মঞ্জু হায়দার, রিসিভ বাটন টিপ দিতেই, “ হ্যা রানা বাসায় আছ?”



কোনো হাই হ্যালো নাই, এটাই উনার বৈশিষ্ট্য।



“জ্বি বাসায় আছি, কেন কোনো কিছুর দরকার নাকি?”



“হ্যা আমার কম্পিউটার কি সমস্যা হচ্ছে বুঝতে পারছি না, একটু দেখে যাবে।”



লোকটা আমাকে কম্পিউটার বিশেষজ্ঞ মনে করে আমাকে। যদিও আমি কয়েকটা সফটওয়ার ইনিস্টল করে দেয়া ছাড়া আর কিছুই করি নাই।



“আচ্ছা আমি আসছি,” এই বলে আমি রাতুলের দিকে তাকালাম, “ওই রাতুল আমি উপরের তলা থেকে আসছি, তুই বাসায় থাক।”



“কেন উপরের তলায় কেন?”



“আরে উনার পিসিতে কি সমস্যা দেখা দিয়েছে সেটা দেখার জন্য।”



এটা শোনার পর দেখালাম রাতুল সটান খাড়া হয়ে গেল, “কি বললে? তাই নাকি, তাহলে আমিও যাব।”



যাক এখনো তাহলে কম্পিউটারের প্রতি আগ্রহটা আছে, আমি তার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলাম। সারাদিন জার্নি করে আসার কারনে চেহারায় একধরনের ক্লান্তভাব এসে পড়েছিল তার মধ্যে কিন্তু এখন কম্পিউটারের কথা শোনার পর তার মধ্যে সে ক্লান্তভাবটা আর নেই।











“হুম,” এই বলে মাথা ঝাকাল রাতুল তারপর আমার দিকে তাকাল। আমিও পরিষ্কার বুঝতে পারলাম কি সমস্যা। উনার এই কম্পিউটার ঠিক হবার না। ভিতর দিকে দিয়ে একদম ম্যাসাকার অবস্থা। মাদারবোর্ড তো গেছেই আমার ধারনা হার্ডডিস্কও গেছে।



আমি আমার ধারনা মঞ্জু সাহেবের কাছে বললাম, “আপনার পিসির মাদারবোর্ড নষ্ট হয়ে গিয়েছে,এর সাথে মনে হয় হার্ডডিস্কও নষ্ট হয়ে যেতে পারে।”



মঞ্জু সাহবে একটু দূরে বসে আছেন, মধ্যবয়স্ক এক লোক চেহারার মধ্যে এক ধরনের নমনীয় ভাব আছে, তিনি কি কাজ করেন সেটা জানি না তবে সারাদিন দেখি তিনি বাসায় বসে থাকেন, তিনি আমার দিকে তাকিয়ে বললেন ,“কোনোভাবে ঠিক করা যায় না।”



“না, নতুন মাদারবোর্ড লাগাতে হবে। তা না হলে হবেনা।”



“ও আচ্ছা, দেখি,” তারপর একটু থেমে বললেন, “আসলে আমার ভাগ্নির জন্য পিসিটা ঠিক করেছিলাম। এখনতো নষ্ট হয়ে গেল।”



ভাগ্নি মানে সুমনার জন্য, তা সে এই মান্ধাতার আমলের কম্পিউটার দিতে কি করবে।



“এরতো অনেক বয়স সে কি করবে, এই কম্পিউটার দিয়ে?”



“তুমি ওকে চেন নাকি?” মঞ্জু সাহেব জিজ্ঞেশ করলেন আমাকে।



হ্যা! সুমনা তাহলে কিছু বলে নি নাকি উনাকে?



“সুমনা আর আমি একই ক্লাসে পড়ি,” এটা বলার পর আমি রাতুলের দিকে আড় চোখে তাকালাম, সে কান খাড়া করে সব শুনছে।



“ও, আচ্ছা আমাকে সে বলে নি, হ্যা সে আমার কাছ থেকে এই কম্পিউটার কিনবে।”



“আপনি উনার মামা হন, সে আপনার কাছ থেক কিনবে কেন?”



আমার এই প্রশ্ন শুনে তিনি হেসে উঠলেন, হাসলে মঞ্জু সাহেবকে খুবই মানায়, তিনি বললেন,“তুমি তো দেখেছ, ওর মধ্যে কেমন আত্মসম্মান বোধ। আমি এমনিতেই দিতে চেয়েছিলাম, কিন্তু সে নিবে না, তাই… ”



“জ্বি, বুঝতে পেরেছি, কিন্তু এখনতো এটা নষ্ট হয়ে গেল কি করবেন?”



“দেখি কেউ বিক্রি করবে কিনা…”



“আরে মামার কাছেই তো আছে,” রাতুল মাঝখান দিয়ে বলে উঠল।



“তাই নাকি?” এই বলে মঞ্জু সাহেব আমার দিকে তাকালেন।



“জ্বি, আমার ভাগ্নে রাতুল সে আজকে নতুন পার্টস নিয়ে এসেছে, ভাবছিলাম পুরোন গুলো বিক্রি করে দিব।”



“তাহলে তো ভালই হল, আমার কাছে বিক্রি করে দাও, মানে সুমনার কাছে।”



“মনে হয় না সে আমার কাছে থেকে নিবে,” আমি মাথা চুলকে বললাম।



“আমি ম্যানেজ করে নিব,” মঞ্জু সাহবে বলল, “তা কত পড়বে,” তারপর আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন।



আমি হিসেব করলাম, আমার কাছে এখন যা আছে তা সব মিলিয়ে হিসেব করলে প্রায় বারো হাজারের কাছাকাছি যায়।



“আট হাজার,” আমি বলে উঠলাম। এটা শুনে রাতুল চোখ গোল করে আমার দিকে তাকাল। আমি সেদিকে পাত্তা দিলাম না, “মনিটর ছাড়া।”



“মনিটার লাগবে না, আমার কাছে একটা আছে, বছরখানেক হবে মনে হয় কিনেছি,” তারপর আমার দিকে তাকিয়ে, “ডিল তাহলে রেডি।”



“হ্যা রেডি,” এই বলে আমি উনার দিকে তাকিয়ে হাসলাম।











আমি বাসায় মঞ্জু সাহেবের সিপিউ বক্সটা নিয়ে আসলাম। ভিতরের যা অবস্থা দেখলাম তাতে তো এই কম্পিউটার অনেক দিন টিকে আছে সেটাইতো অনেক। ভিতরে অনেক ধুলা-বালি জমে আছে। পরিষ্কার করতে হবে। তবে এর আগে আমার কম্পিউটারের ব্যাবস্থা করতে হয়। আমি সিপিউটা নিজের রুমে নিয়ে যাওয়ার সময় রাতুল বলে উঠল, “মামা এত কম দামে পিসিটা ছাড়লে কেন?”



“কই কম দামে ছেড়েছি?”



“এর দাম বারো হাজারের মত পড়বে, তুমি কিনা চার হাজার টাকা কম বলেছ।”



“এত টাকা রাখব কই? আপি যদি দেখে তাহলে নিয়ে যাবে।”



“তোমার কি ব্যাংক একাউন্ট নাই?”



“না, নাই।”



“তাহলে নানা টাকা পাঠায় কিভাবে?”



“আপি কে দেয় আর আপি আমাকে দেয়,” একটু থেমে বললাম, “সব দেয় না মাসে দেড় হাজার টাকা দেয় হাত খরচ।”



“বুঝতে পারছি মামা তুমি কি কষ্টের মধ্যে আছ, ওই চুরাইলের কাছে সবাই কষ্টের মধ্যে থাকবে,” বুড়ো মানুষের মত মাথা ঝাকাতে ঝাকাতে বলল রাতুল।



“আমার সামনে যা বলার বলেছিস, আপির সামনে বললে চামড়া ছিড়ে নিবে,” আমি সাবধান করে দিলাম।



“তা আর বলতে,” আমার দিকে বৃদ্ধা আগুল তুলে বলল।



“শোন আমাকে একটু সাহায্য কর।”



“কি করতে হবে?”



“আমার হার্ডডিস্কে সব ফাইল নতুনটাতে পাঠিয়ে দে, তারপর ফরম্যাট করে দে।”



“ওকে মামা, তবে সব ফাইল?”



“হ্যা,” এই বলে আমি একটু রান্না ঘরে ঢুকলাম। রাতের খাবারের জন্য কি ব্যাবস্থা করা যায় যায় দেখা যাক।



আমি রান্না ঘর হতে বের হতেই রাতুল ড্রইং রুমে বস টিভি দেখছে।



“কিরে কাজ শেষ নাকি?”



“নাহ, আরো বিশ-পচিশ মিনিট রাখবে, আর তোমার পিসির ট্রান্সফার রেট অনেক স্পীড।”



আমি তার দিকে তাকিয়ে হাসলাম। রাতুল আমার দিকে তাকিয়ে, “তা মামা চশঅমা পড়া শুরু করলে কবে?”



“এইতো মাস দুই হবে।”



“ ‘ছোটখা’ কই?”



‘ছোটখা’ মানে ছোটো খালা, রাতুল আপিকে এইভাবেই ডাকে। অবশ্যই সামনা-সামনি ডাকেনা। ডাকলে খবর আছে।



“তোর কি বাচা ইচ্ছে আছে?” আমি জিজ্ঞেশ করলাম।



“কেন কি হয়েছে?”রাতুল আমাকে পালটা জিজ্ঞেশ করল।



“তুই তো জানিস আপিকে ওই নামে ডাকলে ক্ষেপে যায়, তারপরেও ডাকিস কেন, আর আপি যদি শোনে তাহলে তোর চাপা অক্ষত রাখবে না।”



“দূর আমি বড় হয়ে গেছি না, আর ডরাই না আমি ওই মহিলারে,” বুকের উপর দুই হাত ভাজ করে নাক উচু করে বলল।



তখনই কলিং বেল বেজে উঠল, রাতুল দেখলাম কিছুটা ঘাবড়ে গেল। সে মনে করেছে আপি এসেছে। আমি ঘড়ির দিকে তাকালাম আপির আসার সময় এখনো হয় নাই। তাহলে কে এসেছে। রাতুলকে দেখলাম বাথরুমের দিকে দৌড় দিতে। আমি দরজার খুলে দেখলাম সুমনা দাঁড়িয়ে আছে।



“ভিতরে আসো,” আমি বললাম।



“মামা বলল কম্পিউটার তোমার কাছে আছে,” সুমনা বলে উঠল।



“হ্যা যে অবস্থা, পরিষ্কার করতে হবে অনেক, ভিতরে আস।”



“বাসায় কি কেউ নাই নাকি?”



“না আজকে আমার ভাগ্নে এসেছে আর আপি অফিসে।”



“ও আচ্ছা,” এই বলে সে ব্যাগ থেকে আগাথা ক্রিষ্টির বইটা বের দিল, “পড়া শেষ।”



“আচ্ছা ভাল,” আমি বই নিয়ে আমার রুমে গেলাম। আর সুমনা আমার পিছনে পিছনে আসতে লাগল।



আমি আমার রুমে গিয়ে দেখলাম, ফাইল ট্রান্সফারের কাজ শেষ। আমি তখন আমার পিসির পুরান পার্টস খুলে নতুনগুলি লাগাতে লাগলাম, সুমনা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখতে লাগল। আমি বলে উঠলাম, “তুমি বুক শেলফে গিয়ে বই দেখতে পার। আমার সময় লাগবে।”



“ঠিক আছে,” এই বলে সে আমার রুম থেকে বের হয়ে গেল।



আমি আমার কম্পিউটারের কাজ শেষ করে মঞ্জু সাহেবের কম্পিউটার মানে সিপিউ বক্সের দিকে নজর দিলাম। একে আগে পরিষ্কার করতে হবে। আমি সিপিউ বক্সটাকে বারান্দায় নিয়ে যেতেই দেখলাম সুমনা সোফায় বসে একটা বই পড়েছে, আমাকে দেখে সে উঠে দাড়াল।



“এটাকে আগে পরিষ্কার করতে হবে,” আমি বলে উঠলাম, “তাই বারান্দায় নিয়ে যাচ্ছি।”



“ও, তাহলে আমিও আসি,” এই বলে সে আমার পিছে পিছে আসল।



“তুমি মনে হয় এইসব কাজে ওস্তাদ,” সুমনা বলে উঠল।



“এই হালকা পাতলা পারি আরকি।”



“আর যে বাথরুমে গান গাইছে সে কি তোমার ভাগ্নে?”



ও তাহলে রাতুল যে সেই সময় বাথরুমের দিকে দৌড় দিয়েছে এখনো বের হয় নাই। মনে হয় সে এখন গোসল করছে।



“হ্যা কেন?”



সুমনা হালকা হেসে বলল, “মনে হয় সে খুবই রোমান্টিক।”



কথাটা সে মিথ্যে বলে নাই। এদিকে আমার কাজও শেষ হয়ে গেল, “উইন্ডোজ সেটাপ দিতে পারো?” জিজ্ঞেশ করলাম।



“হাহ… না…”



জানতাম সুমনা পারবে না, তখন আমি বললাম, “হুম তাহলে আমিই দিয়ে দিব, একটু সময় লাগবে, সন্ধ্যা পার হয়ে যেতে পারে।”



“তাই নাকি, তাহলে তো সমস্যা।”



অবশ্যই এটা সমস্যার, সন্ধার পর কোনো মেয়ে বাইরে থাকবে এটা অনেকেই মেনে নিতে পারবে না। সিপিউ বক্সের কাজ তো শেষ, এখন শুধু আমার পুরোনো হার্ডডিস্ক থেকে নতুন হার্ডডিস্কে কিছু জিনিষ আছে সেগুলো তো নিয়ে নিয়েছি এখন শুধু ফরম্যাট দিয়ে আবার উইন্ডোজ সেটআপ দিতে হবে। কিছু সময়তো লাগবেই। এদিকে সুর্য মামা আবার জানিয়ে দিচ্ছে বিকাল প্রায় শেষ হতে যাচ্ছে। সুমনা এবার তার মোবাইল ফোন বের করল, মনে হচ্ছে বাসায় ফোন দিবে।



“Who is this lovely lady?”



আমরা পিছনে ফিরে তাকালাম, দেখলাম রাতুল দাঁড়িয়ে আছে। কোমড়ে শুধু একটা টাওয়েল পড়া। এইটা দেখছি মারাত্মক রকমের বেয়াদব হয়ে গিয়েছে। একটা মেয়ের সামনে টাওয়েল পড়ে দাঁড়িয়ে আছে।



“ওই এইটা কি পড়ে আছিস?”



“কেন কানা হয়ে গেলে নাকি ? এটা টাওয়েল।” সে এমন ভাবে বলল যেন আমি একটা অবান্তর প্রশ্ন করেছি। তারপর রাতুল সুমনার দিকে তাকিয়ে, “আপনাকে দেখে খুব ভালো লাগল, আপনার নাম জানতে পারি?”



“সুমনা,” এই বলে সুমনা রাতুলের দিকে তাকিয়ে রইল, কিছু যেন বুঝার চেষ্টা করছে।



“সু…ম…না,” রাতুল থেমে থেমে বলল, তারপর সে দরজার দিকে হাতে ভর দিয়ে দাড়ালো আর কোমরে আরেকটা হাত রাখল, যেভাবে সিনেমার নায়কেরা রাখে, “কি সুন্দর নাম, আর আমি যতটুকু ধারনা করেতে পারছি আপনার কোনো বয়ফ্রেন্ড নাই।”



সুমনা ভ্রু নাচিয়ে, “কিভাবে বুঝলে, খোকা।”



রাতুল ঝট করে দাঁড়িয়ে, “আমি খোকা নই, ক্লাস সিক্সে পড়ি আমি,” এরপর সুমনার দিকে আঙ্গুল তাক করে, “কারন আপনার মধ্যে কোনো ড্রেস সেন্স নাই, যেটা পড়ে আছেন যে কেউ আপনাকে গার্মেন্টস কর্মী বলে ভুল করবে।”



রাতুল সুমনার চেহারার পরিবর্তন খেয়াল করল না। আমি তাদের থামাতে চাইলাম, কিন্তু আমার আগেই সুমনা বলে উঠল, “তাই নাকি?”



“হ্যা, আর আপনার চেহারা সুন্দর হলেও একধরনের ‘লুজার’ ভাব আছে।” তারপর আমাদের দিকে তাকিয়ে , “ভুল বলেছি।”



না ভুল বলো নাই, তবে ‘মাইন ফিল্ড’ নামক এক ভয়ানক জায়গায় প্রবেশ করেছ।



“তবে চিন্তা নাই, আমি আছি আপনার সাথে, লুজার টাইপ মেয়েদের সাহায্য করার জন্য আমি এক পায়ে খাড়া।”



আমি কিছু বলে থামাতে যাব কিন্তু সুমনা দেখে থেমে গেলাম। আমি যদি এখন কিছু বলতে যাই তাহলে মনে হয় সেটা আমার জীবনের শেষ কথা বলা হবে।



রাতুল তার কথা চালিয়ে যেতে লাগল, “আর নয় কান্না, আপর জন্য হাজির হবে এই বান্দা… ঈয়াআআআআ~”



রাতুলের কথা শেষ হল না, সুমনা তার উপর ঝাপিয়ে পড়ল, যেভাবে কোনো বাঘ একটা হরিণের উপর ঝাপিয়ে পড়ে। আমি ভাবলাম এই বুঝি রাতুলের গালে কয়েকটা চড় থাপড় পড়ল, কিন্তু সুমনা যে আক্রমন করল সেটা ছিলা আমার কল্পনার বাইরে।



সে একটানে রাতুলের টাওয়েলটা টেনে আনল।



রাতুল চেচিয়ে উলটো দৌড় দিল, সে আমার রুমের কাছে পৌছে বলল, “বাজে মেয়ে ছেলে, বাচ্চা ছেলেদের ইজ্জত নিয়ে টানাটানি।”



“খেলাতো তো মাত্র শুরু বাছা…”



“ডাইনী নির্ঘাত ডাইনী এই মেয়ে,” রাতুল চেচিয়ে বলে আমার রুমের ভিতর ঢুকে দরজা আটকিয়ে দিল।



সুমনা এবার দিকে তাকিয়ে বলল, “যাক একটা ঝামেলা গেছে, এখনতো আমার কম্পিউটারের ব্যাবস্থা করা হোক।” তার চেহারা দেখে মনে হচ্ছে হাজার ওয়াটের বাতি জ্বলছে।



আমি নিজের গাল চুলকাতে চুলকাতে বললাম, “পিসির সব পার্টস আমার রুমে, আর রাতুল আমার রুমে ঢুকে বসে আছে।”



“অ্যা…” এই বলে আমার দিকে সে তাকিয়ে থাকল।











আমি সুমনার বাসার নিচে দাঁড়িয়ে আছি। তার বাসা বনানীর ভেতর। কম্পিউটার সব ঠিক করতে করতে সন্ধ্যে হয়ে যায়। সুমনা প্রথমে একাই যেতে চাচ্ছিল, কিন্তু সন্ধ্যার দিকে কপিউটার হাতে নিয়ে একা যেতে আমার মন সায় দিচ্ছিল না, তাই অনেকটা জোর করে আমি আসলাম ওর সাথে। ওর সাথে আসাতে ভালই হয়েছে। আমাদের বাসা থেকে ওর বাসা রিকশায় করে যেতে দশ-পনের মিনিটের বেশী লাগল। রিকশা বিদায় করে আমরা দুজন বাসার নিচে দাঁড়িয়ে রইলাম।



“নির্জন বাসায় নাই?” আমি বলে উঠলাম। এর মাধ্যমে আমাদের মধ্যে দীর্ঘ নিরবতাটা ভঙ্গ হল। রিকাশায় উঠার পর আমাদের মাঝে আর কোনো কথা হয় নাই।



“না, আমাদের এক চাচার বাসায় গিয়েছে,” সে বলল।



আমি তাদের অ্যাপার্টমেন্টের দিকে তাকালাম। এককথায় বলা যায়, ‘হাই-ফাই’ এরিয়ায় থাকে সে। তাদের এই জায়গাকে অনেকেই অভিজাত এরিয়া বলে।



“তো কাউকে ডাক দাও, এই সিপিউ বক্স কেউ নিয়ে যাক।”



“বাসায় আসবে না?”



“না প্রায় রাত হয়ে গেছে।”



সত্যি সন্ধ্যা পার হয়ে রাত হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আমার কেন যেন মনে হল আমি তার বাসায় যেতে না রাজী হওয়ায় তার চেহারায় কিছুটা স্বস্তির ভাব দেখা গেল। জানি না সন্ধ্যার শেষের দিক, ভুল দেখতেও পারি।



সুমনা বাসার নিচে একজন মধ্যবয়স্ক লোক বসে ছিল, সে উনাকে ডাক দিয়ে বলল, এই সিপিউ বক্সটা বাসায় নিয়ে যেতে। লোকটা আমার হাত থেকে সেটা নিয়ে গেল। লোকটা চলে যেতেই, “চল তোমাকে ট্রিট দিই।”



“কিসের জন্য?”



“এত কম দামে আমাকে কম্পিউটারটা দেয়ার জন্য।”



“আরে দুর কি যে বল না, এটার দাম ঠিকই ছিল,” আমি মাছি তাড়ানোর ভঙ্গিতে বলতে লাগলাম।



“আমাকে কি বোকা পেয়েছ নাকি? আমি কম্পিউটার কেনার আগে সব চেক করে নিয়েছি,” তারপর একটা বড়সড় নিশ্বাস ফেলে, “কোনটার দাম কি রকম হতে পারে সেটা সম্পর্কে আমার মোটামুটি ধারনা আছে।”



আমি তার দিকে তাকিয়ে হাসলাম, “ঠিক আছে, তবে হালকা কিছু খাব।”



“আচ্ছা,” এই বলে সে হাটতে শুরু করল। আমিও তার পাশে হাটতে লাগলাম, “আচ্ছা আমার ড্রেস সেন্স কি খুবই খারাপ।”



“সত্যি কথা বলব।”



“হ্যা বল।”



“হ্যা খুবই খারাপ, আর গোলাপীতে তোমাকে মানায় না,”



সে দেখলাম চুপ করে গেল। আমি বলে উঠলাম, “তুমিই কিন্তু বলেছিলে সত্যি কথা বলতে।”



“তাহলে কি মনে হয়, আমাকে কোন কালারের জামা পড়লে আমাকে মানাবে?”



“কি জানি, আমার আবার ফ্যাশন সেন্স খুবই খারাপ।”



“মিথ্যুক, তুমি এখন যা পড়ে আছ তাতে তোমাকে খুব ভাল মানিয়েছে।”



তাই নাকি, জানতাম নাতো। আমি এত ভাবনা চিন্তা করে জামা-কাপড় পড়িনা। সামনে যেটা পাই সেটাই পড়ি। আমরা একটা ছোট ফাস্টফুড দোকানের সামনে আসলাম। আজকাল দেখছি ফাস্টফুড জিনিষটা খুবই জনপ্রিয় হয়ে যাচ্ছে। সুমনা ফাস্টফুড দোকানের সামনে থামল না। সে সামনে হাটতে লাগল। আমি সুমনাকে ডাক দিলাম, “এই সুমনা এইখানেই ঢুকি আমরা।”



“এখানেই?”



“কেন অন্য জায়গায় যাবে নাকি?”



“না এটা নতুন খুলেছে তাই…”



“এটাতেই ঢুকি,” এই বলে আমি দোকানের ভিতর ঢুকতে লাগলাম, সুমনাও আমার পিছে পিছে আসল। নতুন খুললেও দেখতে খারাপ না। আমরা একটা টেবিলে বসে পড়লাম।



“কি খাবে?” সুমনা আমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেশ করল।



“একটা রোল এর বেশী না।”



“ব্যাস এই।”



“হ্যা।”



“আরে এত লজ্জা করতে হয় না,” সে বলে উঠল।



“এই খাব নাইলে উঠে গেলাম,” আমি উঠতে গেলাম।



তখন সে তাড়াতাড়ি করে বলল, “আরে আরে, ঠিক আছে আমি রাজী।”



এই বলে সে কাউন্টারের দিকে গেল একটু পরেই সে খাবারের ট্রে হাতে নিয়ে আসল। দুই প্লেটে তিনটা করে রোল কাচের বোতলে সেভেন-আপ। পেটের দিকে তাকিয়ে আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। আমি রোল খাব কিন্তু কয়টা খাব সেটাতো বলি নাই, তাই সে বেশী করে নিয়ে এসেছে।



আচ্ছা সে কি আমাকে রাক্ষস মনে করে নাকি?



“নাও শুরু কর,” এই বলে সে নিজের রোলে কামড় বসাল। তারপর ফিচেল মার্কা হাসি দিল।



আমার আর কি করা আমি প্লেটটা নিজের দিকে নিয়ে আসলাম। সে চিকেন বা বীফ রোল নিয়ে এসেছে। আমি অবশ্য ভেজিটেবল রোল বেশী পছন্দ করি। সে যখন এনেছে তখন আর কি করা রোল এক্টার কিছু অংশ মুখে নিয়ে নিলাম।



“সজলের কাছে শুনলাম তুমি নাকি মানুষের চেহারা দেখে সব কিছু বলে দিতে পারো।”



আমি এবারো মাছি তাড়ানোর ভঙ্গিতে বললাম, “সেটা ভুল কথা, শুধু ধারনা করি আর সেটাই লেগে যায়।”



“তাহলে নুশরাতের ব্যাপারটা, তুমি বুঝলে কি ভাবে? আর আমার চশমার ব্যাপারেও,” সুমনা একটু সামনে ঝুকে জিজ্ঞেশ করল।



“আরে এটাতো সহজ জিনিষ, নুশরাত ওইদিন তো নাক ফুল পড়ে এসেছিল, আর বিবাহিত মেয়েরাই নাক ফুল পড়ে, আপু এটা আমাকে বলেছিল।”



“তোমার আপু বলেছিল?”



“হ্যা,” সেভেন-আপের বোতলে চুমুক দিয়ে বললাম, “যদিও আপি আপুর ওই কথায় একমত ছিল না।”



“আপু আর আপি মানে কি?”



আচ্ছা আমি কি রিমান্ডে আছি? বারবার প্রশ্ন করে যাচ্ছে আমাকে।



“আমি বড় বোনকে আপা, মেজ বোনকে আপু আর ছোট বোনকে আপি বলে ডাকি।”



“তাই নাকি?” এই বলে সুমনা নিজের সেভেন-আপের বোতলে চুমুক দিল, “আচ্ছা, এটাতো বুঝলাম তবে আমার চশমার ব্যাপারটা।”



“আন্দাজে ঢিল মেরেছিলাম।”



এটা শোনার পর সে নিজেই চুপ মেরে গেল। কি কথা বলে উঠবে সেটা সে বুঝে উঠতে পারছে না। আমি এবার বলে উঠলাম, “তোমার মামা আজকে আমাকে একটা মিথ্যে কথা বলেছেন।”



“হুম… মানে।”



“মানে আরকি, উনি বলছেনে উনি জানতেন না তুমি আর আমি একই কলেজে পড়ি,” আমি সুমনার দিকে তাকিয়ে বললাম, “কিন্তু আমি নিশ্চিত তুমি তোমার মামাকে এটানা বলে থাকতে পার না, আমি কি ঠিক বলেছি?”



সে আমার দিকে হতবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকল।



“আমি কি ধরে নিব আমি সত্যি বলেছি।”



আমার কথা শুনে তার চমক ভাঙল, সে বলে উঠল, “আমি জানি না মামা আজকে কি বলেছে, তবে এটা ঠিক তোমার কথা আমি আমাকে বলেছিলাম,” তারপর সে তার হাতের বাকী রোল মুখ পুরে বিড়বিড় করে কি যেন বলল।



“আচ্ছা তুমি সেকেন্ড হ্যান্ড কম্পিউটার কিনতে গেলে কেন, তুমি ইচ্ছে করলেই একটা ভাল দেখে কম্পিউটার কিনতে পারতে।”



আসলে সে যে এরিয়ায় থাকে তাদেরকে একদম ধনী বলা না গেলেও, তাদেরকে উচ্চবিত্ত বলা যায়, কারন এখনকার ফ্ল্যাট ভাড়া কমসে কম বিশ-পচিশের নিচে হবে। আন্দাজেই বললাম, কারন ঢাকা শহরের বাড়ি ভাড়া সম্পর্কে আমার কোনো ধারনাই নাই।



“আমার নিজের টিউশনির টাকা দিয়ে কিনলাম তাই,” সে বলে উঠল, “আব্বুর কাছে চাইলেই পেতাম, কিন্তু আমি নিজে চাইছিলাম যে আমার জন্য একটা কম্পিউটার কিনি।”



দেখলাম তার খাওয়া শেষ, আমারতো আগেই শেষ হয়ে গিয়েছিল। সে উঠ গেল, বিল মনে হয় সে আগেই দিয়ে দিয়েছিল। আমরা দুজন বের হয়ে গেলাম। চারিদিকে অন্ধকার হয়ে গেছে। রাস্তার লাইটপোষ্টে লাইট জ্বলে উঠেছে।



“চল তোমাকে বাসা পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে আসি,” আমি বললাম।



“না, না, দরকার নাই এত কিছুর, আমার বাসাতো সামনেই।”



আমি তার কথা কানে নিলাম না। আমি তার পাশে হাটতে লাগলাম। আমাদের মাঝে কোনো কথা হচ্ছিল না। একসময় আমরা তাদের বাসা কাছে এসে পড়লাম। সে গেটে ভিতর ঢুকে গেল, তবে ঢুকার আগে আমার দিকে সে হাত নাড়াতে ভুল করল না।



আমি পকেটে হাত ঢুকিয়ে হাটতে লাগলাম। মামা বিকেলে একটা মিথ্যে কথা বলল আর ভাগ্নী কিছুক্ষন আগে। কি জানি তাদের মনে কি আছে?



তাদের মধ্যে এমন কিছু আছে সেটা হয়তো তারা এখনই জানাতে চায় না। অন্তত বাইরের কাউকে।







*







ক্লাসরুমে ঢুকতেই দেখলাম মিজানুর হায়দার ওরফে মিজান স্যার সবার দিকে তাকিয়ে কি যেন বলছে, আর স্যারের পাশে কয়েকটা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে, তাদের মধ্যে আমি সজলকে দেখতে পেলাম। স্যারকে দেখে আমি বললাম, “স্যার ভিতরে আসতে পারি?”



স্যার আমার দিকে তাকিয়ে বলল, “হ্যা আসো,” তারপর আমার দিকে আঙ্গুল তাক করে বলল, “এই হচ্ছে আদর্শ ছেলের উদাহরন।”



আমি এটা শুনে থমকে দাড়ালাম। আমি একবার স্যারের দিকে আর আরেকবার আমাদের ক্লাসের সবার দিকে তাকালাম। সকাল সকাল হচ্ছেটা কি?



“দেখেছ কি রকম ফিটফাট ছেলে, আবার চুলও ছোট করে কাটা,” এই বলে স্যার আমার দিকে তাকালেন, “একদম স্মার্ট ভঙ্গি, তা তোমার নাম কি ছেলে ?”



আরে স্যার কি আমাকে ভুলে গেল? আমরা না মাস খানেক আগে ধাক্কা খেয়েছিলাম তারপর আমাকে পয়ত্রিশবার পুশ-আপ করতে হল।



“রেদোয়ান হক,”, আমি জবাব দিলাম।



“আঃ… তোমাকে এবার চিনতে পেরেছি, তুমি ‘ফিট বয়’।”



এটা শোনার পর কিছুটা খুশি হলাম। স্যার তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেদের উদ্দেশ্যে বলল, “বুঝেছ, ঠিক এই রকমভাবে চলবে, কলেজে থাকতে হলে এভাবে ফিট হয়ে থাকতে হবে…”



স্যারের কথা শেষ হল না এর মাঝে সজল বলে উঠল, “স্যার রানার বেল্ট বাদামী, কিন্তু আপনিতো কালো রঙের বেল্ট পড়তে বলেছেন, আর আপনি ব্যাগ যেভাবে কাধে ঝুলাতে বলেছেন সে ঠিক সেভাবে ঝুলায়নি।”



“তাই নাকি,” আমার দিকে ভাল করে তাকিয়ে, “রেদোয়ান এটা ঠিক না, কালো বেল্ট পড়ে আসবে আর ব্যাগ বাম কাধে ঝুলাবে।”



আমি ব্যাগ ডান কাধ দিয়ে কোনাকুনি ভাবে ঝুলিয়েছি, এভাবে ব্যাগ বার বার পড়ে যায় না। আমি যে ব্যাগ পড়ে আছি সেটা ‘শোল্ডার ব্যাগ’ বলে, অনেকেই দেখি বলে এক কাধওয়ালা ব্যাগ।



“দুখিত স্যার ভুল হয়ে গেছে, আমার কালো বেল্ট ছিড়ে যাওয়াতে আমি এই বাদামী বেল্ট পড়েছি, আর আমি তো ব্যাগ এইভাবেই নিই স্যার।”



“না, না বেল্টের ব্যাপার না হয় মানলাম কিন্তু তুমি ব্যাগ এখন যেভাবে পড়ে আছ, এভাবে পড়া যাবে না।”



“কেন স্যার?”



“শোন… মনে কর কেউ একজন বিপদে পড়ে গেছে, তাকে তুমি বাচাতে গেলে। কিন্তু তুমি যখন দৌড় দিতে যাবে তাকে বাচাতে তখন দেখবে এই ব্যাগের কারনে তুমি তাকে বাচাতে পারছ না,” একটা লম্বা দম ফেলে স্যার আবার বলে উঠল, “যদি তুমি এখন যেভাবে ব্যাগ কাধে ঝুলিয়েছ, সেভাবে ঝুলালে তোয়ার অনেক আসুবিধে হবে।”



কি বাহারি অজুহাত! যেন আমি ব্যাগ বাম পাশে না ঝুলালে কাউকে বাচাতে পারব না। মাঝে মাঝে দেখছি এই স্যার অনেক স্বার্থপর ধরনের কাজ করে বসে। যখন যা ইচ্ছে হল সেটাই করতে হবে ছাত্র-ছাত্রীদেরকে। এটা কি কলেজ নাকি তার মামার বাড়ি!



“স্যার বাম পাশে ব্যাগ ঝুলানো নিয়ে আমার ট্রমা আছে,” আমি বলে উঠলাম।



“কিসের ট্রমা?” স্যার এবার ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেশ করল।



“স্কুলে থাকতে আমার এক বন্ধু ছিল, নাম রনি। আমার নামের সাথে তার নাম মিল ছিল। আর আমরা একসাথে বসতাম, খেলতাম আর টিফিন করতাম, কিন্তু…” এই বলার পর একটু থামলাম।



“কিন্তু কি হল?” স্যার আগ্রহী হয়ে জিজ্ঞেস করল।



“সে এক্সিডেন্ট করল, এর ফলে তার পা দুটো কেটে ফেলতে হয় এরপর থেকে সে আর স্কুলে আসে নাই, এই থেকে আমার ট্রমা শুরু।”



“এই এক্সিডেন্টের সাথে ট্রমার কি সম্পর্ক এর মাঝে ব্যাগের ব্যাপার আসল কিভাবে?”



“স্যার,” আমি মিজান স্যারের দিকে সিরিয়াস ভঙ্গিতে তাকালাম, “আমার অই বন্ধু বাম পাশে ব্যাগ ঝুলাতো, এই কারনে তার কাধ থেকে ব্যাগ বারবার পড়ে যেত। একদিন রাস্তা পার হবার সময় তার কাধে থেলে ব্যাগ পড়ে যায় আর তখনই…” এই বলার পর আমি থেমে যাই।



পুরো ক্লাস থমথমে হয়ে গেল। মিজান স্যার কি বলবে বুঝে উঠতে পারছে না। তখনই প্রথম ঘন্টার আওয়াজ পেলাম। এই ঘন্টার আওয়াজ স্যারকে বাস্তবে ফিরিয়ে নিয়ে আসল। স্যার আমার কাহিনী শুনে কোথায় যেন হারিয়ে গিয়েছেন।



“হ্যা… যে যার জায়গায় গিয়ে বস ক্লাস একটু পরে শুরু হবে,” এই বলে স্যার আমার দিকে তাকালেন, কি যে বলতে চাইলেন তারপর কিছু না বলে চলে গেলেন।



আমি স্যারের গমন পথের দিকে তাকিয়ে রইলাম। পিছন থেকে কে যেন আমার পিঠে টোকা মারল। আরে আজিব ব্যাপার আমার পিঠ কি কোনো বিশাল দরজা নাকি যে বারবার টোকা মারতে হবে, কিংবা একটা চাটি কষিয়ে দিবে।



যত্তসব!



পিছনে ঘুরতেই দেখলাম সুমনা দাঁড়িয়ে আছে।



“কি হয়েছে?” আমি জিজ্ঞেশ করলাম।



“না, সবাই মিটিংয়ে রাজী হয়েছে। আজকে কলেজ ছুটি হলে সবাই মিটিংয়ে বসবে বলেছে।”



“সব ?”



“হ্যা,” এই বলার পর সুমনা একটু থামল, তারপর জিজ্ঞেশ করল, “এই কিছুর কি দরকার ছিল? আমরা নিজেরাই একটা ক্লাব খুলে ফেলতাম।”



“হ্যা, সহজ হত খোলা, কিন্তু এরপরে সহজে যে ক্লাব খুলতাম সেটা আরো সহজে বন্ধ হয়ে যেত,” আমি মার বেঞ্চের দিকে যেতে যেতে, “আমাদের কলেজের স্যার ম্যাডামরা সহজে সেটা করতে পারবে।”



“তার মানে তুমি চাচ্ছ…”



“যা মনে কর তুমি,” তার কথায় বাধা দিয়ে বললাম।







আমি আমার বেঞ্চে বসে চিন্তা করতে লাগলাম, সহজ কথা গত একমাসে কথা ভাবতে লাগলাম। অবশ্য ক্লাব খোলার চিন্তাটা আমার মাথায় এসেছিল, কিন্তু সেটাকে আমি সেভাবে আমলে আনতে চাই নাই। সুমনা আর নুশরাত আমাকে বাধ্য করেছে, বলতে গেলে। চুপচাপ বসে থাকতে থাকতে গত মাসের কথা গুলো মনে পড়ে গেল, মানে কিভাবে এই ক্লাব খোলার জন্য দৌড়াদৌড়ি করতে হয়েছে আরকি!



তাহলে ফিরে যাই এক মাস আগে (একদম ঠিক এক মাস আগে না।)







দুইদিন হল রাতুল আমাদের বাসায় এসেছে। আর গতকাল থেকে সে স্কুলে আসা শুরু করেছে। জানিনা স্কুলে কি কাজকর্ম করে বেড়াচ্ছে বাসায়তো পুরো ভিকে বিড়ালের মত থাকে। আপিও কিছু বলে না তার ভিজে বিড়ালের মত করে থাকাকে যদিও প্রথম দিনেই তার মোবাইল আপি কব্জা করে ফেলেছে। রাতুল হালকা বাধা দেয়ার চেষ্টা করেছিল, আপি সেটা আমলেই নেয়নি।



রাতুল তখন বলেছিল, “আমার আম্মা যখন তখন ফোন দিয়ে আমার খোজ খবর নিতে পারে।”



“আপা ফোন দিলে তখন আমি তোকে জানাব,” আপি মোবাইল নিজের হাতে নিয়ে সেটা টিপতে লাগল।



“তুমি তো নিজের ফোন ধরনা তাহলে আমার ফোন ধরবে কিভাবে ?”



“আমি নিজের ফোন না ধরলেও তোর ফোন ধরতে আমার কোনো সমস্যা নাই।”



“আর এই ভাবে মোবাইল ঘাটাঘাটি কর না, আমার অনেক পারসোনাল জিনিষ আছে।”



“সেটা তো দেখতেই পাচ্ছি,” তারপর আমারদের দিকে তাকিয়ে বিশেষ করে রাতুলের দিকে তাকিয়ে, “বেশ কয়েকটা মেয়ের নাম্বার পাওয়া গেল, সব ডিলিট।”



“আমার রুম্পার নাম্বার… এত কষ্ট করে তার নাম্বার ম্যানেজ করলাম,”রাতুল বিড়বিড় করে বলতে লাগল। আমি পাশে থাকায় আমি তা শুনতে পারলাম।



আপি বলে উঠল, “কিছু বললে রাতুল?”



“না কিছু না… ‘ছোটখা’।”



‘ছোটখা’ টা সে আস্তে বললেও আমি তা পরিষ্কার শুনতে পেলাম।



সেটা যাই হোক টিফিন পিরিয়ডে তার সাথে দেখা করার দরকার। স্কুলে কোনো অঘটন না ঘটিয়ে থাকলে হল। অবশেষে অপেক্ষার প্রহর শেষ হল, টিফিন পিরিয়ড শুরু হল। খুবই ক্লান্তবোধ করছিলাম আমি। টিফিন পিরিয়ডের আগ পর্যন্ত টানা ক্লাস হয়েছে, মাঝখানে একটা বিরতিও পড়ে নাই। ব্যাপারটা দুঃখজনক!



যাই হোক ক্যান্টনের পথে বিশাল একটা ধাক্কা খেলাম। ধাক্কা খাওয়ার কারন আছে, আমার থেকে কয়েক গজ দূরে দাঁড়িয়ে আছে মাশফিয়া আপু। সে সেকেন্ড ইয়ারে পড়ে এবং কলেজের সবচেয়ে সুন্দরী মেয়ে। শুনেছি অনেকেই তাকে অফার দিয়েছে, মানে ভালবাসার অফার। অবশ্য অফার করার মতই একটা মেয়ে। যেখানে যাবে সেখানেই সে মধ্যমনি হবার ক্ষমতা রাখে।



এই মেয়ে আমার পিছনে লেগেছে। আমি জানিনা মেয়েটা আমার মধ্যে কি দেখেছে। খালি আমার পিছনে ছোক ছোক করে। এই মাশফিয়া আপুর কারনে আমিও মোটামুটি সাওবার নজরে এসে পড়েছি। তবে সেটা ভালো নজরে নয়, এদের যদি চোখের ইশারায় আগুন জ্বালানোর ক্ষমতা থাকত তাহলে আমি অনেক আগেই ছাই হয়ে যেতাম। এই আলোচনা এখন বাদ, কিন্তু আমি এখন কিভাবে এই মেয়ের হাত থেকে বাচব বুঝতে পারছি না। সে এমন জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে, যে ক্যান্টিনের যেতে ওই পথ দিয়ে যেতে হবে, আর কোনো পথ নাই। এদিকে খিদেয় পেটটা গুড়গুড় করছে।



হঠাৎ মনে পড়ল, আমাদের লাইব্রেরীতো স্কুলের সাথে সংযুক্ত। লাইব্রীর মাধ্যমে স্কুল দিয়ে ক্যান্টিনে যাওয়া যায়। কাজটা বিপদজনক, তবে মাশফিয়া আপুর সাথে দেখা হওয়া আরো বিপদজনক। যেই ভাবা সে কাজ, আমি লাইব্রেরীর পথে হাটা দিলাম।



ক্যান্টিন থেকে বাটার বনের প্যাকেট হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। আসলে একটা পিলারের পিছে দাঁড়িয়ে আছি। আমি এখান থেকে স্পষ্ট মাশফিয়া আপুকে দেখতে পারছি। সেও দেখছি বাটার বন হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অপেক্ষায় আছি কখন সে চলে যাবে। কারন লাইব্রেরী দিয়ে দ্বিতীয়বার যাবার সাহস আমার নাই। লাইব্রেরী ম্যাডামকে আমি অনেক নিরীহ মনে করেছিলাম কিন্তু আমি লাইব্রেরী দিয়ে স্কুলে যাবার সময় যেভাবে আমার দিকে তাকিয়ে ছিলেন তাতে মন এহচ্ছিল তিনি আমাকে চিবিয়ে খাবেন।



“আরে মামা তুমি এখানে কি করছ?”



আচমকা প্রশ্নে আমি চমকে গেলাম, সামনে দেখলাম রাতুল দাঁড়িয়ে আছে আর তার পাশে একটা মেয়ে। তার ক্লাসমেট হবে, এত তাড়াতাড়ি সে একটা মেয়ে পটিয়ে ফেলল কিভাবে।



“দাঁড়িয়ে আছি দেখছিস না।”



“হুম তাতো দেখতেই পারছি,” এই বলে সে তার পাশের মেয়ের দিকে তাকাল বলল, “এই হচ্ছে আমার মামা, ওর কথাই এখন বলছিলাম তোমাকে।”



রাতুলের পাশের মেয়েটা আমার দিকে হা হয়ে তাকিয়ে রইল। রাতুল আমার সম্পর্কে কি বলল যে মেয়েটামার দিকে হা হয়ে তাকিয়ে রইল।



“তোমার নাম কি?” আমি জিজ্ঞেশ করলাম।



“হাহ, আমাড়া নাম হৃদি,” মেয়েটা বলে উঠল।



রাতুল আমার সামনে এসে ফিসফিস করে বলল, “মামা আমার নতুন গার্লফ্রেন্ড,” তারপর আমার দিকে একটা হাইক্লাস মার্কা হাসি দিল।



কি হচ্ছে বর্তমান কালের বাচ্চাদের। কেন জানি বেশী বুঝে তারা। এই বয়সে গার্লফেন্ড আর বয়ফ্রেন্ড জিনিষটা কি তারা বুঝে গেছে। আমি গার্লফ্রেন্ড জিনিষটা বুঝেছি ক্লাস এইটে থাকতে, যদিও ওইসবের কথা আমি মনে করতে চাই না।



“তোমার মামা না অনেক গুড লুকিং,” হৃদি আমার দিকে তাকিয়ে বলল। সে এমনভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছে, যেন বাচ্চা শিশু একটা খেলনা বা চকলেটের দিকে তাকিয়ে আছে।



“দেখতে হবে না মামা টা কার?” বুক উচিয়ে রাতুল বলে উঠল।



তারপর রাতুল হৃদির দিকে তাকিয়ে বলল, “চল আগে ক্যান্টিনে যাই, ক্ষিদে পেয়েছে।”



হৃদি নিতান্ত অনিচ্ছার সাথে রাতুলে পিছনে পিছনে গেল। আমি তাদের দুজনের দিকে তাকিয়ে থাকলাম। ভাবছি কোন দুনিয়ায় যাচ্ছে বর্তমান কালের পিচ্চিরা।



পিঠে টোকা পড়ায় বাস্তবে ফিরে আসলাম, দেখলাম ত্রিরত্ন একসাথে দাঁড়িয়ে আছে। ত্রিরত্ন মানে রুপা, নুশরাত আর সুমনা। ইদানিং, মানে বেশ কয়েকদিন হবে দেখছি তারা একসাথে চলেফেরা করে। যদিও তিনজন তিন দিকে বৈশিষ্ট্য বজায় রেখে চলে।



“কি ব্যাপার, সখী কে দাঁড়িয়ে রেখে এখানে বাটার বন খাওয়া হচ্ছে?” রুপা বলে উঠল।



“মাশফিয়া আপু এখনো দাঁড়িয়ে আছে ?”



“আপু?” রুপা এমনভাবে বলল যেন আপু একটা জঘন্য শব্দ, “আরে মাশফিয়া যদি এইটা শোনে তাহলে তো সে হার্টফেল করে মারা যাবে।”



আজিব ব্যাপার! বয়সে বড় একজন মেয়েকে আমি আপু বলে ডাকব না সেটা কিভাবে হয়। আমি বললাম, “কেন সেতো আমার চেয়ে বড় না…”



নিজের কপাল একটা চাপড় মেরে , “হায় কপাল, ছেলেটা মাথায় কি কিছুই নাই, নাকি ইচ্ছে করে সে এইসব করছে।”



মি তেতো মুখ নিয়ে রুপার দিকে তাকালাম তারপর তার পিছে বাকী দুজনের দিকে তাকালাম। সুমনার হাতে টিফিন বক্স আছে। যতটুকু ধারনা আমার সে তাদের সঙ্গ দিতেই এখানে এসেছে। আগে কখনও তাকে আমি ক্যান্টিনে আসতে দেখি নাই।



নুশরাত রুপাকে পিছন থেকে হালকা ধাক্কা দিয়ে বলল, “চল, আজকে আবার কলিজার সিঙ্গারা শেষ হবার আগে কিনতে হবে।”



কলিজার সিঙ্গারা! অনেক দিন হল খাই না। আমাদের খুলনাতে একটা দোকান ছিল সেখানে পুরি, সিঙ্গারা, চপ, বেগুনী বিক্রি করত। সেখানের কলিজার সিঙ্গারা তো বিখ্যাত ছিল, সে বিকালে সিঙ্গারা ভাজত আর সেগুলো সন্ধ্যার মধ্যে শেষ হয়ে যেত। সেই সিঙ্গারার কলিজার স্বাদের মনে আনতেই জ্বিবে পানি এসে গেল।



“ওই, সিঙ্গারার কথা শুনে উদাস হয়ে গেলে নাকি,” আমার দিকে সুমনা হাত নাড়িয়ে বলল।



“না, না কি যে বল,” এই বলার আমি বাটার বনের প্যাকেট ছিড়ে ফেললাম। চিবোতে চিবোতে আমি ভাবতে লাগলাম কাল থেকেই আমি এই কলিজার সিঙ্গারার পিছনে দৌড়াবো।



আমি সুমনার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেশ করলাম, “কম্পিউটার কি চলছে ঠিক মত?”



“হাহ… হ্যা চলছে, আর ধন্যবাদ সফটওয়্যার গুলো দিয়ে দেয়ার জন্য।”



“আরে সেটা কিছু না।”



এরপর আমরা দুজন চুপ করে থাকলাম। একটু পরেই রাতুলের চেহারা দেখতে পেলাম, যেরকম উজ্জ্বল চেহারা নিয়ে ক্যান্টিনে গিয়েছিল ফিরে আসার সময় সেই উজ্জ্বলতা কমলেও তার চেহারার হাসিটা এখনো মলিন হলনা।



আমার দিকে তাকিয়ে বলে উঠল, “মামা শুনছি এখানকার কলিজার সিঙ্গারা নাকি ভাল তাই আজকে কিনলাম,” আমার নাকের সামনে সে প্যাকেট নিয়ে আসল।আহ কি সুন্দর ঘ্রান আসছে।



“খাবেন নাকি?” পিছন থেকে হৃদি এসে জিজ্ঞেশ করল।



পিচ্চিদের নিজের খাবারের ভাগ দিতে হয়, কিন্তু তাদের কাছ থেকে ভাগ নিতে হয় না, এই তত্ত্বে আমি বিশ্বাসী।



“না, ধন্যবাদ,” আমি বলে উঠলাম, “পেট ভরে গেছে। তোমরা খাও।”



রাতুল হঠাৎ করেই হৃদির সামনে এসে দাড়াল তারপর কড়া চোখে সুমনার দিকে তাকাল সে এরপর হৃদির দিকে তাকিয়ে বলল, “এই মেয়ে থেকে থেকে সাবধান হৃদি।”



“কেন কি হয়েছে?” অবাক হয়ে জিজ্ঞেশ করল হৃদি।



সুমনার দিকে আঙ্গুল তাক করে, “এই মেয়ের কাজ হল বাচ্চা ছেলে-মেয়েদের ইজ্জত নিয়ে টানাটানি করা,” একটু থেমে, “দুইদিনআগে আমাকে… আহ বলতে পারছি না।”



কট কট আওয়াজ শুনে আমি পিছনে তাকালাম, সুমনার টিফিন বক্স থেকে এই আওয়াজ বের হচ্ছে। এই মেয়েটার হাতের জোর কত যে একটা টিফিন বয থেকে এমন শব্দ বের করতে পারে।



“বান্দর তুই আজকে…”



সুমনার কথা শেষ হল না তখনই নুশরাত আর রুপা এসে পড়ল, রুপার বলে উঠল, “পিচ্চি দুইটা কে?”



রাতুল একটু হৃদির সামনে দাঁড়িয়ে ছিল সে সুমনার ভয়ংকর মূর্তি দেখে এক ঝটকায় হৃদির পিছনে চলে গিয়েছিল।আরো কিছু ঘটার আগে আমি বলে উঠলাম, “রাতুল, আমার ভাগ্নে, সে চিটাগাং থেকে এসেছে।”



“ও, খুবই কিউট,” এই বলে রুপা রাতুলের গালে আদর করে উঠল।



রুপার আদরে দেখলাম রাতুল একদম গলে গেল। রুপা এবার হৃদির দিকে তাকিয়ে বলে উঠল, “ও কি তোমার গার্লফ্রেন্ড?”



ওই ওই, বাচ্চা ছেলে মেয়েদের সামনে এইসব কি বলা হচ্ছে। ওরা শুধু ভাল বন্ধু হতে পারে। আমি এটা বলতে গেছিলাম তখনই রাতুল লাজুক গলায় বলে উঠল, “আহ… আপনি দেখছি অনেক বুদ্ধিমতী।”



মজনু বান্দর!



“আহ! রানা তুমি এখানে আর আমি তোমার জন্য অপেক্ষে করছিলাম।”



পরিচিত গলার স্বর শুনে আমার শিরদাড়া বরাবর একটা ঠান্ডা শিহরন বয়ে গেল। আমার পিছনে দাঁড়িয়ে আছে মাশফিয়া। হাতে দেখলাম বাটার বনের প্যাকেট। আমার দিকে তাকিয়ে সে হাজার ওয়াটের বাতির মত জ্বলছিল কিন্তু তার চোখ যখন সুমনার দিকে পড়ল তখন সে দ্যুতির কিছু অংশ যেন মলিন হয়ে গেল।



নুশরাত এতক্ষন কোনো কথা বলছিল না, হঠাৎ করেই সে বলে উঠল, “আমার সবাই যখন আছি তখন আস একসাথে টিফিন খাই।”



প্রস্তাবটা আমার পছন্দ হল না। আমি কিছু বলার আগেই রুপা আর রাতুল একসাথে বলে উঠল, “আমরা রাজী।”



“আমারও না নেই,” হৃদি বলে উঠল।



আমি সুমনার দিকে তাকালাম, মুখ কিছু না বললেও সে দেখি রাজী। ব্যাপারটা আমাকে কিছুটা অবাক করল, আমি যতটুকু জানি সে যথাসম্ভব লোকজন এড়িয়ে চলে। আমি এতদিন তাই দেখে এসেছি, সে শুধু নুশরাত আর নির্জন ছাড়া আর কারো সাথে কথা বলে না তেমন। অবশ্য কয়েকদিন যাবত সে রুপার সাথে ভালভাবেই কথা বলছে।



“তাহলে রানা চল,” মাশফিয়া আমার দিকে তাকিইয়ে বলল।



আমি কিছু না বলে তাদের পিছু পিছু চললাম।



নুশরাত আমাদের মাঠের দিকে নিয়ে গেল। আমাদের কলেজের মাঠটা এত বড় না এক পাশে বাস্কেট বল মাঠ আর এর পাশে সবুজ মাঠ। মাঠে কয়েকজন ছাত্র ছাত্রীদের হাটাহাটি করতে দেখলাম। মাঠের এক কোনায় গাছের ছায়ার নিচে আমরা সবাই বসলাম। আমরা সাতজন গোল হয়ে বসলাম। আমার ডান পাশে আর বাম পাশে রুপা বসে পড়ল। মাশফিয়া আপুকে দেখলাম সে আমার বিপরীত দিকে আমার মুখোমুখী হয়ে বসল।



আমরা সবাই যে যার মত খাচ্ছিলাম, অবশ্য আমার প্রায় শেষ। আর সবচেয়ে বড় কথা আমাদের মধ্যে কোনো কথা হচ্ছিল না। এক ধরনের নিরবতা বিরাজ করছিল। সে নিরবতা ভাঙল হৃদি। সে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, “ভাইয়া এখান থেকে একটা সিঙ্গারা নিন।”



“ধন্যবাদ, আমি খাব না পেট ভরে গেছে।”



“সে ভাইয়া না মামা হবে,” রাতুল শুধরে দেবার চেষ্টা করল।



“সে তোমার মামা আমার না, তাই আমার কাছে উনি ভাইয়ার মত।”



মোক্ষম জবাব! এটা শোনার পর রাতুল কিছুটা শামুকের মত গুটলি পাকিয়ে গেল।



“ভাইয়া নিন,” এই বলে হৃদি আমার সামনে একটা সিঙ্গারা বাড়িয়ে দিল। মেয়েটা যখন এত করে খেতে বলছে তখন না কিসের!



আমি সিঙ্গারাতে কামড় দেয়ার পর সিদ্ধান্ত নিলাম, এখন থেকে যেভাবেই হোক এই কলিজার সিঙ্গারা আমাকে খেতেই হবে। সিঙ্গারা চিবোতে চিবোতে আমি সুমনার টিফিন বক্সের দিকে তাকালাম। সেখানে দেখলাম পরোটা আর আলুভাজি আছে।



সুমনা আমার দিকে তাকিয়ে বলে উঠল, “সোসাদের মত করে কি দেখছ?”



এটা শোনার পর রুপা আর হৃদি খিল খিল করে হেসে উঠল। আমি কিছু বলতে যাচ্ছিলাম কিন্তু যখন দেখলাম পরিবেশটা হালকা হয়ে গেছে তখন আর কিছু বললাম না, ঘাসের মাটিতে শুয়ে পড়লাম। আহ কি আরাম, একটা বালিশ পেলে আরামের ঘুম দিতাম।



আমি চোখ বুজে শুয়ে ছিলাম, এরপর হৃদি আমাকে যে প্রশ্ন করল তাতে আমার উপর ব্জ্রপাত পড়ার মত অবস্থা হল।



“আচ্ছা ভাইয়া আপনার কি গার্লফ্রেন্ড আছে ?”



আমি ঝটাক করে উঠে বসলাম, সবাই দেখছি আমার দিকে তাকিয়ে আছে একমাত্র রাতুল বাদে। সে আমার আদ্যপান্ত মোটামুটি জানে।



“কেন হঠাৎ করেই এই প্রশ্ন?”



“না, থাকা স্বাভাবিক নয়, আপনার চেহারা তো খারাপ না।”



হৃদির কথা শোনার পর মাশফিয়া আপুও গলা খাকারি দিয়ে বলে উঠল, “ আমিও জানতে চাই, তুমি ওই দিন বলেছিলে একটা মেয়েকে পছন্দ করে তুমি, এটা বলার পর তুমি কেটে পড়েছ।”



মাশফিয়া আপুর এই কথা শোনার পর সবাই আমার দিকে তাকাল, এমনকি রাতুলও পর্যন্ত যে কিনা এতক্ষন কান চুলকাচ্ছিল।



রুপা বলে উঠল, “তাই নাকি আগে জানতাম না তো,” সে আমার দিকে তাকিয়ে, “কি রানা কথা সত্যি নাকি।”



আমি কিছু বলার আগেই রাতুল বলে উঠল, “ আমার মনে হয় না মামা কাউকে পছন্দ করবে,” সে একটু থেমে বলল, “সে হল গিয়ে বই, গেম আর মুভি ফ্রীক এগুলো ছাড়া তো আর কোনোদিকে তাকাতে দেখলাম না।”



এর পর দেখলাম বাকী চারজন মিলে তর্কাতর্কি তে নেমে গেল। সুমনা তাদের তাকিয়ে চুপচাপ তামাশা দেখছে আর নুশরাত দেখছি একদম চুপ করে বসে আছে। নুশরাতকে কখনো আমি এইরকম চুপচাপ থাকতে দেখি নাই। কিছু একটা হয়েছে মনে হয় তার। কিন্তু এখন এই ঝামেলা থেকে উদ্ধার হতে হবে।



আমার আর কিছু করার লাগল না যা করার ঘন্টার আওয়াজই করে দিল। টিফিন পিরিয়ড শেষ হয়ে গেল। আমরা উঠে পড়লাম। সবাই যে যার মত কথা বলছে। আমি চুপ করে হাটা শুরু করলাম। রুপার হঠাৎ আমার পাশে এসে বলল, “কি ব্যাপার কিসে চিন্তা করছেন।”



“একটা ক্লাব খুললে খারাপ হয় না,” বিড়বিড় করে বলে উঠলাম।



“হাহ… কি বললে? ক্লাব!”



“না কিছু না, ক্লাস শুরু হবার সময় হয়ে গেছে।”



রুপার আমার কথা না শুনে দেখলাম সুমনার কাছে চলে গেল। ওর সাথে কথা বলা শুরু করল।











শেষ ঘন্টাটা যখন বাজল তখন বড় সড় একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেললাম। ক্লাস করতে করতে শরীরের সব শক্তি যেন বের হয়ে গিয়েছে। বড় সড় একটা হাই তুললাম, তাড়াতাড়ি বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হয়ে একটা ঘুম দেয়া উচিত আমার। এবার একটা আড়মোড়ে দিয়ে শরীরের সব জড়তা কাটানোর চেষ্টা করলাম। রুপা আর সুমনা আমার সামনে এসে দাড়াল।



“কি ব্যাপার?” জিজ্ঞেশ করলাম।



“তোমার কথাই ঠিক একটা ক্লাব খোলা দরকার,” রুপার উত্তেজিত স্বরে বলল।



“হ্যা, আমিও একমত,” সুমনাও সায় দিল।



দুজনই দেখলাম ভালই উত্তেজিত হয়ে আছে। হ্যা, টিফিন পিরিয়ডের দিকে বলেছিলাম ক্লাব খোলা দরকার। সেটা ছিল তারা যেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা শুরু করেছিল তা পাশ কাটানোর জন্য। টোপ্টা ঠিক ছিল এবং সেটা তারা গিলেছিল, কিন্তু দেরী করে এবং যখন গিলল তখন পুরো আমাকে নিয়ে গিলল!

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে মে, ২০১৪ সকাল ১০:৩৬

সময়ের ডানায় বলেছেন: ভালালাগা রইল। চালিয়ে যান।

২| ২২ শে মে, ২০১৪ দুপুর ১:০৯

অনন্য দায়িত্বশীল বলেছেন: ভালালাগা রইল। চালিয়ে যান।

৩| ২২ শে মে, ২০১৪ রাত ১০:১৭

ইরফান আহমেদ বর্ষণ বলেছেন: সারাদিন ধইরা পড়লাম পুরা সিরিজ ...... ভালোই লাগলো.... চলুক......

;) শেষ পর্যন্ত কানেক্টেড হইব কার সাথে??? সুমনা না মাশফিয়া!???

২৩ শে মে, ২০১৪ সকাল ৮:১৭

আজবছেলে বলেছেন: সেটার এখনো অনেক দেরী ভাই, B-) ;)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.