নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আজবছেলে

আমি সত্যিই আজব ছেলে

আজবছেলে › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমি কলেজ জীবন যেরকম আশা করেছিলাম, সেটা ঠিক সে রকম হল না ! [এসো একটা ক্লাব খুলি! অধ্যায়-৩]

২৩ শে মে, ২০১৪ সকাল ৮:৫৮



আগের পর্ব





লাইব্রেরীতে গম্ভীরভাবে বসে আছি। হাতে একটা বই থাকলেও সেই বইয়ে আমার মনোযোগ তেমন নাই। আমার সামনে সজল তখন চুপচাপ করে বসে আছে আর বারবার আমার দিকে তাকিয়ে মিটমিটিয়ে হাসছে। ব্যাপারটা আমার কাছে বিরক্তিকর লাগছে কিন্তু কিছু করার নাই। চেহার মধ্যে একটু বিরক্তিভাব ফুটালেই সে ঝেকে ধরবে আমাকে।



গত দুই দিন ধরে এই তিনজন মানে রুপা, সুমনা আর সজল আমার পিছনে লেগেছে। আমি মুখ ফস্কে বলে ফেলেছিলাম একটা ক্লাব খোলা দরকার, এটা শোনার পর রুপা আর সুমনা খুবই উত্তেজিত হয়ে সিদ্ধান্ত নেয় তারা একটা ক্লাব খুলবে। আমাকে দলে আনার অনেক চেষ্টা করেছিল তারা এবং সেটা এখনো চলছে। মাঝখানে সজল শুনে ফেলে কথা তারপর ওদের দলে যোগ দেয় সে। নুশরাত আর নির্জন এক ধরনের মৌনতা পালন করছে। নির্জনের কাছে সেটা মানা যায় কিন্তু নুশরাত কি কারনে চুপ করে আছে সেটা এখনো বের করতে পারিনি।



নুশরাতে কথা ভাবতে না ভাবতেই ও এসে হাজির। নাহ, মেয়েটা অনেক দিন বাচবে।



“কি খবর তোমার?” জিজ্ঞেশ করে উঠলাম।



“হুম,ভাল,” এই বলে সে বসে পড়ল, “যা ধারনা করেছিলাম, তুমি লাইব্রেরিতে থাকবে। ওরা দুজন মনে হয় একটু পরে তোমাকে খুজতে বের হবে।”



এটা শোনার পর আমি কিছুটা হলেও বিরক্তিবোধ করলাম। কিছু বললাম না, বইয়ের দিকে মুখ গোজ করে রইলাম।



“আচ্ছা সুমনার কিন্তু অনেক পরিবর্তন হয়েছে,” সজল বলে উঠল।



“খেয়াল করেছ তাহলে,” নুশরাত বলল।



“হ্যা আগের মত গম্ভীর হয়ে থাকে না সে।”



তাদের দুজনের এই কথা শোনার পর, আমার বিষয়টি খেয়ালে আসল। এর আগে চোখে পড়েনি তা না তবে সেটা নিয়ে আমি মাথা তেমন ঘামায় নি। তবে সজল কথাটা ঠিক বলেছে সুমনা আর আগের মত গম্ভীর হয়ে থাকেনা। হয়তো বা তা চেহারায় গম্ভীরভাব কোনো কালেই ছিলনা। সে আগে যেভাবে চুলে বেণী করে আসত এবং দাদী টাইপের চশমা পড়ত তাতে যে কেউ তাকে গম্ভীর মেয়ে বলে মনে করবে।



“তবে রাগ এখনো কমে নাই, আগের মত আছে,” সজল বলল, “এইতো কালকে ক্লাসে তমালের উপর রেগে গেছে। রুপা না থাকলে খবর ছিল। এর আগেতো টমেটো উৎপাদন করে ছিল গতকাল নাহয় আলু উৎপাদন করত।”



এই বলে সজল আমার দিকে তাকাল। বেশ কয়েকদিন আগে সুমনা আমার নাক বরাবর বোতল ছুড়ে মারার কারনে আমার নাক টমেটোর মত ফুলে গিয়েছিল। সজলের কথা শুনে আরেকটা কথা মাথায় আসল। সুমনাতো ইদানিং রুপার সাথে ভালই চলছে সেটার কারনে নুশরাত একটু হলেও কি হিংসাবোধ করছে না!



“রানা কিছু বলতে চাও নাকি ?”



নুশরাতের প্রশ্নে চমক কাটল। আমি তার দিকে তাকিয়ে চিন্তা করছিলাম। সে সেটা মনে হয় ধরে ফেলেছে।



“আচ্ছা, সুমনা কিসের জন্য কম্পিউটার কিনেছে সেটা জান?”



নুশরাতের এহেন প্রশ্নের আমি কিছুটা হলেও অবাক হলাম। আমি মাথা নেড়ে জানালাম, না।



“হুমম।”



আমি কিছু না বলে আবার বইয়ের দিকে নজর দিলাম।



“আচ্ছা সুমনা আর রুপার যে ক্লাব খুলছে সেটাতে তোমার মত কি?” সজল নুশরাতের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেশ করল।



এটা শোনার পর আমি আর থাকতে পারলাম না, বলে উঠলাম, “এমনিতেই ওই দুইটা হচ্ছে নাচুনে বুড়ি, তার উপর তুই দিতেছিস ঢোলের বাড়ি। এটা নিয়ে না আলোচনা করলে হয় না?”



“আরে সুন্দর প্রবাদতো, কোথা থেকে শিখলি?”



“যেখান থেকেই হোক, ক্লাবের কথা ভুলে যা।”



“কিভাবে ভুলি, দুইটা মেয়ে এত কষ্ট করছে ক্লাব খোলার জন্য। তাদেরকে না করতেও তো কষ্ট হয় আমিতো এত পাষান নারে।”



মনে হল সজলরে ধইরা দুটা ঘুষি মারতে পারতাম তাহলে কিছুটা শান্তি পেতাম। আমি কিছু না বলে বইয়ের দিকে আবার নজর দিতে গেলাম, তখন খেয়াল হল দুটো মেয়ের একটা আমার দিকে তাকিয়ে আছে ড্যাবড্যাব করে। আমি সেটা না ভ্রুক্ষেপ করে বইয়ের দিকে তাকালাম।







*



সুমনা খাতাপত্র গোছাতে গোছাতে পিছনের দিকে একবার তাকাল। যাকে খুজছে তার চেহারা কি ছায়াও পর্যন্ত নাই। গত দুইদিন ধরে রানা বলতে গেলে তাকে এড়িয়ে যাচ্ছে। তবে সুমনাও হাল ছেড়ে দেয়নি। রানা একবার উধাও হয়ে গেলে তাকে খুজে পাওয়া অনেক কঠিন হয়ে যায়, কখন সে ক্লাসরুম থেকে বের হয়ে যায় সেটা সহজে টেরও পাওয়া যায় না।



রুপা তার সামনে এসে দাড়ালে সুমনা জিজ্ঞেশ করে উঠে, “রানা কোনো খোজ খবর?”



“না, নাই। উধাও হইয়ে গেছে,” রুপা ক্লাসরুমের চারিদিকে তাকাল, রানার ছায়াও নাই, “গেল কই,” বিড়বিড় করে বলল।



“মনে হয় লাইব্রেরী গিয়েছে,” সুমনা অনুমান করে বলল।



“সম্ভাবনা কম, কারন আগে কয়েকবার লাইব্রেরীতে গিয়ে তাকে পাওয়া যায় নি।”



“তা ঠিক,” রুপার এই কথা শুনে সুমনা মাথা ঝাকাল।



“কই লুকায় সে সেটাই দেখছি আরেকটা রহস্য।”



রুপার এই কথাতেও সায় দিল সুমনা।



“এটাতো সহজ সে লাইবেরীতে আছে,” রুপা আর সুমনার মাঝখান দিয়ে বলে উঠল নির্জন।



সুমনার কাছে এটা নিত্যকার ব্যাপার হলেও এটা রুপার কাছে না, সে চমকে উঠল এবং বুকে থুতু থুতু দিতে দেরী করল না।



“নির্জন একটা সিগন্যাল দিয়েতো আসবা,” রুপা হালকা ঝাঝের সাথে বলে উঠল, “একেবারে হার্ট অ্যাটাক করে দিবে দেখছি এই বয়সে।”



“ভুল হয়ে গেছে,” রোবটের মত করে উত্তর দিল নির্জন।



রুপার কাছে মনে হয় নির্জন আসলে একটা রোবট। যে কিনা মানুষের রুপ ধরে আছে। সে সুমনার কাছে এই ব্যাপার নিয়ে জিজ্ঞেশ করবে ভেবেছিল কিন্তু করি করি করেও আর করা হয় নাই। সে কড়া চোখে নির্জনের দিকে তাকিয়ে বলল, “তুমি বলতে চাও রানা এখন লাইব্রেরীতে আছে।”



“এখন আছে।”



“আমি পনের মিনিট আগে লাইব্রেরীতে ঢু মেরে এসেছি তখন তো তাকে দেখি নাই।”



“তখন ছিল না এখন আছে।”



“মানে?”



“তখন ছিল না, এখন আছে।”



রুপার ইচ্ছে হল একটা বাশ দিয়ে তার মাথাটা ফাটিয়ে দেয়। একটু মুখ খুলে কথা বলতে কি দোষ! সে সুমনার দিকে তাকাল। সুমনাই এই কাজে দক্ষ হবে, রুপার ধারনা। সে সুমনার দিকে তাকাল, চোখের ইশারায় বলতে চাইল, তুই সামলা ওকে!



“সে যখন ক্লাসে থাকেনে তখন সে কোথায় থাকে?” সুমনা জিজ্ঞেশ করে উঠল।



“টয়লেটে।”



“মানে আমরা যখন লাইব্রেরীতে যাই সে তখন টয়লেটে থাকে?”



নির্জন মাথা ঝাকাল। সত্যিই এই ছেলেটা কথা কম বলে।



হঠাৎ করেই রুপার মাথায় আসল। রুপা ভুলে গিয়েছিল যে রানা একটা ধুরন্ধর টাইপের ছেলে। সে জানত প্রতিক্লাস শেষ হবার পর পাচ মিনিটের একটা বিরতি থাকে। সে আর সুমনা ওই পাচ মিনিটের বিরতিতে লাইব্রেরীতে ঢু মারত, রানা আছে কিনা দেখার জন্য। রানা ওই সময়টাতে টয়লেটে থাকত আর টয়লেটতো লাইব্রেরীর কাছেই। তারা চলে গেলে সে তার গর্তের কাছ থেকে বের হয়ে আসত।



“ওর চামড়া ছিলা উচিত,” রুপা বলে উঠল, “দাড়াও ওরে ধরতাসি আমি।”



“দরকার নাই, আমি সেই ব্যাবস্থা করে রেখেছি,” নির্জন বলে উঠল, “তাকে এখন লাইব্রেরীতে পাওয়া যাবে।”



রুপা আর সুমনা এটা শোনার পর দেরী করল না লাইব্রেরীর দিকে ছুটে গেল।



*



লাইজু লাইব্রেরীতে তেমন একটা আসে না। সে লাইব্রেরীতে এসেছে তার বান্ধবীর কারনে। ইশরাত আবার বই পড়তে খবই ভালবাসে। বই বলতে সে পাগল। যেকোনো এক বই পেলেই হয়েছে সে সেটা গিলে খাবে। তবে ইশরাত দিনে দিনে যেন মনমরা হয়ে যাচ্ছে। এটা মাসখানেক আগে থেকে শুরু হয়েছে। লাইজু প্রথম প্রথম তাকে জিজ্ঞেশ করত, কি হয়েছে তার?



ইশরাত কিছুই বলত না চুপ করে থাকত। সে মনে করেছিল বয়ফ্রেন্ডের সাথে কোনো ঝগড়াঝাটি করেছে। লাইজু ভেবেছিল সে ইশরাতের বয়ফ্রেন্ডকে ধরবে কি হয়েছে জানার জন্য। অবাক করা ব্যাপার হল, ইশরাতের বয়ফ্রেন্ড লাইজুকেই ধরে বলল, ইশরাত তার সাথে যোগাযোগ করছে না। এমনকি তার সাথে দেখা করাও বন্ধ করে দিয়েছে। এটা শোনার পর লাইজু একটু হলেও ধন্ধে পড়ে গিয়েছে।



লাইজু চিন্তা করতে লাগল কি সমস্যায় পড়ল তার বান্ধবী, সে ইশারাতের খোজে এদিক ওদিক তাকাতেই সে ওই ছেলেটাকে দেখতে পেল। এইতো বেশ কয়েকদিন আগে এই ছেলেই তার দিকে হাত নাড়াতেই কানমলা খেলেছিল। ছেলেটা তার সামনে বসা একটা মেয়ে আর একটা ছেলের সাথে কথা বলছিল। কি কথা শুনতে না পেলেও ছেলেটা যে তাদের উপর খুশি না সে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছিল। এই সময় সে ইশরাতকে দেখতে পেল বই খুজতে খুজতে সে ওই ছেলের টেবিলের কাছে চলে গেল। এই সুযোগ! লাইজু ইশরাতের কাছে গেল।



“কি হলো কোনো বই পাচ্ছিস না?” লিয়াজু ইশারাতের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেশ করল।



ইশরাত কিছু বলল না। সে বইয়ের তাকের দিকে তাকাতে লাগল। লাইজু আড়চোখে ছেলেটার দিকে তাকাল। দেখল ছেলেটার ভ্রু কিছুটা কুচকে গেছে।



“না, তেমন ভাল বই পাচ্ছি না,” এই বলে ইশরাত নিচু হয়ে বসল। নিচের তাকের দিকে হয়তো ভাল বই পাওয়া যেতে পারে এই আশায়।



“এই তাকে সব প্রবন্ধের বই।”



ছেলেটার কথা শুনে লাইজু আর ইশরাত চমকে উঠল।



“দুঃখিত চমকে দেবার জন্য,” এই বলে ছেলেটা একটা তাকের দিকে আঙ্গুল তাক করে বলল, “ ওই তাকে অনেক ভাল বই আছে, পড়ে দেখ মজা পাবে।”



লাইজু ছেলেটার হাতে যে বই আছে সেটার দিকে তাকাল। বেশ মোটা একটা বই। এত মোটা বই পড়ে কিভাবে মানুষ! মনে মনে এটা ভাবতে লাগল লাইজু।



ইশরাত একবার লাইজুর দিকে দিকে তাকাল তারপর তাকাল ছেলেটা দিকে। সে চিনতে পেরেছে এই ছেলেকে। তাদের পাশের কলেজে পড়ে পড়ে। এইতো বেশ কয়েকদিন আগে লাইজুর দিকে তাকিয়ে হাত নাড়িয়েছিল এর পড়েই তো সে কোন এক ম্যাডামের হাতে কান মলা খায়। এটা মনে হতেই সে মুচকি হাসল। সে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে, “ধন্যবাদ ভাইয়া, তা ভাইয়া আপনার নাম জনাতে পারি?”



ছেলেটা তার দিকে তাকিয়ে কি যেন ভাবল তারপর বলে উঠল, “রেদোয়ান।”



“ওকে ধন্যবাদ ভাই সাহায্য করার জন্য,”এই বলে সে লাইজুর হাত ধরে টেনে নিয়ে চলল সেই তাকের দিকে।



“তা ওই ছেলের দিকে নজর গেল তোর,” ইশরাত ফিসফিস করে বলে উঠল।



“না,”লাইজু জোর গলায় বলে উঠল,“ওইদিন আমি ফাইজলামি করে দিয়েছিলাম সেও মনে হয় ফাইজলামি করে হাত নাড়িয়েছে।”



“চেহারা কিন্তু খারাপ না।”



“জানি কিন্তু সে আমার টাইপের না,” লাইজু বলল, “আমার দরকার নরম টাইপের যে আমার কথায় উঠবে বসবে, কিন্তু সে এই টাইপের না সেটা দেখলে বোঝা যায়।”



“তাই নাকি?”



“হ্যা, এখন কি বই নিবি সেটা দেখ ক্লাসের সময় হয়ে যাচ্ছে।”



লাইজুর তাগদা দেয়াতে ইশরাত বইয়ের তাকের দিকে তাকাল।







*



আমার চিবুক বেয়ে ঘাম ঝড়তে লাগল। প্রচন্ড গরমে কিংবা ক্লান্তিতে নয়। আমার সামনে বসে আছে রুপা আর সুমনা। বাম পাশে সজল আর ডান পাশে নুশরাত পিছনে নির্জন। সবাই বলতে গেলে আমাকে ঘিরে ধরেছে। সবাই আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে, এই ব্যাপারটা আমার কাছে অস্বস্তিজনক। এই কারনে আমার চিবুক বেয়ে ঘাম ঝড়ছে।



“তো কিছু বলার আছে নাকি?” আমি জিজ্ঞেশ করে উঠলাম।



“আমরা একটা ক্লাব খোলার প্ল্যানে আছি।”



“ভাল কথা তা আমার পিছনে লেগেছ কেন?” আমি জিজ্ঞেশ করে উঠলাম।



আমার এই প্রশ্ন করার পর সুমনা চুপ হয়ে গেল।



“কারন তোমার মাথা অনেক পরিষ্কার, সহজেই অনেক কিছু বুঝতে পার,” রুপা এবার বলে উঠল।



“আমার কোনো আগ্রহ নেই,”



আমার এই কথা শুনে আমার আশেপাশের সবাই কিছুটা হলেও অবাক হল। আমি সুমনার দিকে তাকিয়ে বললাম, “তুমি যা করার করছ, তার মধ্যে আমাকে কেন টেনে আনছ, মানুষের ইচ্ছের বিরুদ্ধে কাজ করানো কি তোমার স্বভাব?”



সুমনা কিছু বলল না, সে মাথা নিচু করে বসে রইল। একধরনের নিরবতা বিরাজ করছে।



“আসলে আমি মনে করেছিলাম তুমি থাকলে আরো ভাল হত, আর ক্লাবের কথা মনে হতেই তোমার কথা প্রথমে মনে এসেছিল,” সে মাথা নিচু করেই এই কথা গুলো বলতে লাগল।



“দুঃখিত আমার কোনো ইচ্ছা নাই ক্লাবে ঢোকার…”



“তাহলে ওইদিন কেন ক্লাবের কথা তুললে?”



আমার কথা শেষ হবার আগেই রুপার বলে উঠল। আমি এটার জবাব দিলাম না। সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি চুপ করে রইলাম। আবার নিরবতা বিরাজ করল আমাদের মাঝে। সবাই দেখছি ক্লাব নিয়ে সিরিয়াস হয়ে আছে।



সুমনা এবার মাথা তুলল, আমার চোখের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেশ করল, “তাহলে কি তুমি সত্যিই আমাদের ক্লাবে যোগ দিবে না।”



“না।”



“তাহলে ধন্যবাদ।”



এই বলে সুমনা উঠে গেল। রুপাও তার পিছনে পিছনে চলে গেল। আমার সাথে সজল আর নুশরাত বসে আছে। দুজনই চুপচাপ তবে তাদের ভাবভঙ্গি দেখে মনে হচ্ছে তারা কিছু জিজ্ঞেশ করতে চায়। আমি চুপ করে থাকার কারনে তারা সেটা করতে পারছেনা। আমি সেদিকে নজর না দিয়ে বইয়ের দিকে নজর দেয়ার চেষ্টা করতে লাগলাম। সেদিকেও আমার মন বসতে লাগনা।



তার কি ক্লাব খুলতে চায় সেটা সম্পর্কে আমার তেমন কোনো ধারনা নাই। হয়তোবা তার কোনো গোয়েন্দা ক্লাব বা অদ্ভুত ধরনের ক্লাব খুলতে চায়। একটা কলেজে সে ধরনের ক্লাব খোলা এত সহজ না যেখানে কিনা একটা সংস্কৃতি ক্লাবও পর্যন্ত নাই!



“সত্যিই কি তুমি ওদের ক্লাবে যোগ দিবে না?” নুশরাত আর জিজ্ঞেশ না করে পারল না।



“ওরা যেভাবে চালাচ্ছে সেভাবে গেলে হবে না, আর বললাম একটা ক্লাব খুলে ফেললাম সেটাতো কখনো হয় না। আর এত সময় কই?”



“কথা ঠিক এত সময় কই !, কলেজ শেষ হলে কোচিংয়ে দৌড় তারপর বাসায় গিয়ে বই নিয়ে বসা। ক্লাব-টাব করার সময় কই? ”



নুশরাতের গলার মধ্যে একধরনের তিক্ততা লুকিয়ে ছিল। আমি তার দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। এছাড়া আমার কি করার আছে।



“আচ্ছা রানা ছোটকালে কি হতে চেয়েছিলে?”



“মানে?” নুশরাতের এহেন প্রশ্নের আমি কিছুটা ভেবড়ে গেলাম।



“মানে তোমার কি কোনো স্বপ্ন ছিল না?”



প্রশ্নটা কোন দিকে থেকে আসছে সেটা আমি বুঝতে পারলাম না। তবে নুশরাতের প্রশ্ন আমার মনে একটা ধাক্কা দিল। স্বপ্ন? আমার কোনো স্বপ্ন আছে নাকি? জীবনে বড় হয়ে কি হতে চাই সেটা নিয়ে কোনোদিনে ভেবেছিলাম নাকি?



না ভাবা হয় নি আমার, আসলে প্রয়োজনবোধ কর নাই কোনোদিন।



“আমি গায়িকা হতে চেয়েছিলাম,” আমার দিকে তাকিয়ে মলিনভাবে হেসে নুশরাত বলে উঠল, “আমার বাবা-মা রাজী হননি। তারা বলেছিলেন গায়িকা হবার চেয়ে একজন ভাল রাধুনী হওয়া অনেক ভাল। ভাল ঘরে সংসার করতে পারব।”



আমি চুপ করে রইলাম, কি বলব বুঝে উঠতে পারছি না।



“ফরিদও চেয়েছিল আমি যেন গায়িকা হই, কিন্তু ওর পরিবার থেকেও রাজী হয় নাই, খুবই ধার্মিক পরিবার ওরা। ওরা যে তাদের ঘরের বউ করে নিয়েছে সেটাই এখন আমার কাছে অনেক।”



“আমার ইচ্ছা ছিল ক্রিকেটার হওয়া,” নুশরাতের কথা শেষ হতেই সজল বলে উঠল, “আমার আব্বু-আম্মুও এর বিরুদ্ধে উঠে পড়ে লেগেছিলেন। আমার মামা তাদেরকে অনেক বুঝানো চেষ্টা করে ছিলেন তার রাজী হননি। হলে হয়তো আমি এখন বিকেএসপি তে থাকতাম।”



“তাই নাকি?” নুশরাত বলে উঠল।



“হ্যা, মামা এইতো দুইদিন আগে বলেছিলেন আন্ডার নাইটিন বিশ্বকাপে আমার নাম উঠানোর জন্য। তার কথায় আমি নাকি ক্রিকেট প্রডিজি। কিন্তু আব্বা-আম্মার এক কথা তারা ছেলেকে ইঞ্জিনিয়ার বানাবেন। এতে নাকি ভবিষৎ উজ্জ্বল হবে। আমি কিছু বলতে গেলে তারা বলে উঠে তারা নাকি আমার ভালোর জন্যই এটা করছে।”



“তুই কি খুশী হবি নাকি?” আমি জিজ্ঞেশ করে উঠলাম।



“আব্বু-আম্মু অমতে যাই কিভাবে?” আমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেশ করল। এরপর আমার উত্তরের অপেক্ষা না করেই বলে উঠল, “তার খুশী থাকলেই হল, আমাদেরটা যায় আসে না। তারা এখনো বাচ্চা মনে করে। মনে করে নতুন জামা আর ভাল খাবার আর কোথাও ঘুরতে নিয়ে গেলেই হল।”



সজলের কথা কিছুটা হলেও ঠিক। আমাদের অভিবাবকরা মনে করে আমার এখনও বাচ্চা আছি। আমরা আমাদের সিদ্ধান্ত নিজে থেকে নিতে পারি না। এটা ঠিক আমরা বয়সে এখনো কাচা আছি কিন্তু আমাদেরও তো একটা সত্ত্বা আছে, যা কিনা নিজের ইচ্ছেগুলি কে কিছুটা পেতে যায়। নতুন কিছুর স্বাদ নিতে চায়। আমাদের অভিবাকদের উচিত এই স্বাদগুলোকে আস্বাদন করতে সাহায্য করা। ভালগুলোর পক্ষে উৎসাহ দাওয়া আর খারাপ গুলো থেকে নিরুৎসাহিত করা। কিন্তু সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে আমাদের সমাজের অধিকাংশ অভিবাবকদের কোনো ধারনাই নাই যে কোনগুলো ভাল আর কোনগুলো খারাপ আমাদের জন্য।



“মাঝে মধ্যে মনে হয় আমি আব্বু-আম্মুর ছেলে না, একটা পুতুল মাত্র,” এই বলার পর রাতুল উঠে গেল।



রাতুলের কথায় আমার চিন্তার জাল ছুটে গেল। আমি কিছু বললাম না রাতুলের গমন পথের দিকে তাকিয়ে থাকলাম। নুশরাতও কিছু না বলে চলে গেল। লাইব্রেরীতে আমি একাই বসে রইলাম।



*



সুমনা রানার উপর কিছুটা হলেও বিরক্ত। তবে সবচেয়ে বেশী বিরক্ত হচ্ছে নিজের উপর। তার কাছে মনে হয়েছিল সে যদি রানাকে বলে ক্লাবের কথা তাহলে রানা রাজী হয়ে যাবে। এছাড়া তার কাছে এই ব্যাপারেও মাথায় এসেছিল যে রানা ছাড়া তারা এই ক্লাব খুলতে পারবে না। যদিও সেটা আন্ডারগ্রাউন্ড ক্লাব, রুপার কথা মতে।



রুপার সুমনার ক্লাবের কথা শুনে চোখ কপালে উঠালেও তাকে না করেনি, বলেছিল, “ভালই হবে, তবে স্যার-ম্যাডামরা সমস্যা করবে। সবচেয়ে বেশী সমস্যা করবে মিজান স্যার।”



সুমনার মাথাতেও এই কথাটা এসেছে। মিজান স্যার সবচেয়ে বেশী সমস্যা করবে। আর মিজান স্যারকে দমানোর সবচেয়ে ভাল ঔষুধ হচ্ছে রানা। তাছাড়া ওর মাথা অনেক ভাল, কিভাবে জানি সব কিছু তাড়াতাড়ি ধরে ফেলতে পারে।



“কিরে কি চিন্তা করছিস?”



রুপার কথায় সুমনার চিন্তার জাল ছিড়ে গেল।



“কিছুনা, এমনেই।”



“রানা কথা ঘুরপাক খাচ্ছে নাকি।”



“না, তবে সে এমনভাবে না করবে সেটা বুঝতে পারি নাই।”



“ও ওইরকম মনে হয়। এই হ্যা তো ওই না,” রুপা এই বলে উপরের সিলিংয়ের দিকে তাকাল আর কি যেন ভাবতে লাগল।



“রানা আবার কোনো সমস্যা করল নাকি,” সুমনা আর রুপার পিছন থেকে লায়লা ম্যাডাম বলে উঠল।



“জ্বি তেমন কিছু করে নাই,” রুপা তাড়াতাড়ি বলে উঠল।



লায়লা ম্যাডাম টিচারস রুম থেকে বের হয়ে কোথায় যেন যাচ্ছিলেন।



“কিছু একটা করেছে, ও কিছু না করার পাবলিক না।”



“ওকে আপনি ভাল করে জানেন নাকি?”



সুমনার এই প্রশ্ন শুনে লায়লা ম্যাডাম নাক উচু করে বলে উঠলেন, “ওকে আমি পিচ্চি কাল থেকে চিনি ও আমার বান্ধবীর ছোট ভাই।”



“ওমা তাই নাকি!” রুপা অবাক হবার ভান করে বলল।



“হ্যা অনেক আগেই থেকেই চিনি। এক কথায় বলা যায় গাধা টাইপ। পানি ঘোলা করে খেতে পছন্দ করে।”



“মানে?”



“মানে প্রথম প্রথম সব কিছুতে গাইগুই করে পরে মাইর দিলে লাইনে এসে পড়ে।”



“তাই নাকি আগে জানতাম না তো,” সুমনা অবাক হয়ে বলল, “আর আপনি অনেক আগে থেকেই তাকে চিনতেন, যাক একটা প্রশ্নের উত্তর পেলাম।”



“কিসের প্রশ্ন আর কিসের উত্তর?”



“কেন সে আপনার নাম বা আপনাকে দেখলে তার মুখ আমসির মত হয়ে যায়।”



“আরে বাবা তুমি দেখছি রানার সব ব্যাপার খেয়াল কর ?”



লায়লা ম্যাডামের এই প্রশ্ন কেন করল সুমনা সেটা বুঝতে পারল না। সে ম্যাডামের দিকে তাকিয়ে কি জবাব দিবে সেটা বুঝে উঠতে পারল না।



“এটা একটা হিন্টস দিলাম, বের করে নিতে পারলে বের করে নাও,” লায়লা ম্যাডাম বলে উঠল, “জানি তোমরা কিছু করার প্ল্যানের আছ। সমস্যা হলে আমার কাছে এস।”



সুমনা আর রুপা লায়লা ম্যাডামের গমন পথের দিকে তাকিয় রইল। রুপা মনে মনে বলে উঠল, ম্যাডাম কি বুঝাতে চাইল, আর হিন্টস কিসের জন্য। একটু মাথা খেলাতেই টং করে হাজার ওয়াটের লাইট জ্বলে উঠল তার মাথায়।



“সুমনা একটা আইডিয়া মাথায় এসেছে!”



“কি আইডিয়া?”



“আয় বলছি, সোজা আঙ্গুলে ঘি না উঠলে আঙ্গুল বাকা করতে হয়,” এই বলে রুপা একটা হাসি দিলে। পুরো সিনেমার ভিলেনের মত হাসি।







*



ক্লাসে ঝিম মেরে বসে আছি। একটু পরে আক্কাস স্যারের ক্লাস। আর যাই হোক আক্কাস স্যারের ক্লাস আমি মিস দেয়ার সাহস করি না। এই স্যারের মধ্যে এক ধরনের আভা আছে, সেটা সব সময় বলে উঠছে, যা ইচ্ছে তাই করতে পার কিন্তু আমার সামনে না। করলে হাড্ডি, মাংস আর চামড়া আলাদা করে ফেলব।



ক্লাসরুমে রুপা বা সুমনার কারোই ছায়া নাই। এই দুইজন কোথায় যেন উধাও হয়ে গেছে। ওদিকে নুশরাত নিজের জায়গায় বসে কোন এক মেয়ের সাথে কথা বলছে আর সজল একদল ছেলের সাথে। তাদেরকে দেখে মনে হচ্ছে কিছুক্ষন আগে লাইব্রেরীতে আমার সাথে সিরিয়াস বিষয় নিয়ে কথা বলেছে। তারা কি এত তাড়াতাড়ি সব ভুলে গেল, নাকি তারা ভুলে যাওয়ার ভান করছে?



সেই যাইহোক বেঞ্চে হেলান দিয়ে আরাম করে বসলাম। মাথাটা ঝিমঝিম করছে। কি করব বুঝে উঠতে পারছি না।



“এই তো পেয়েছি বদমাইশটাকে,” আমার পিছন থেকে কে যেন চেচিয়ে উঠল।



পিছনে তাকাতেই দেখলাম সুমনা রুদ্রমুর্তির রুপ ধারন করেছে। তার পাশে রুপাও আছে তারও এখই অবস্থা। আমি চোখ বড়বড় করে তাদের দিকে তাকালাম। আমি কেন সারা ক্লাস তাদের দিকে তাকিয়ে আছে।



“কি হল তোমাদের?”



“চুপ বেয়াদব আমাদের সাথে ধানাই পানাই করিস, চামড়া একদম তুলে ফেলব।”



রুপা আমার প্রশ্নের জবাব না দিয়ে আমার উপর ধমকে উঠল। আরে বাপ করলাম টা কি আমি ?



“শোন ভাল হয়ে যা,” রুপার আমার দিকে আঙ্গুল তুলে বলল।



“ভালইতো আছি।”



রুপা আমার কলার চেপে ধরল এবং জাম ঝাকানোর মত করে ঝাকাতে লাগল। ব্যাপারটা আমার কাছে কেন যেন পরিচিত মনে হতে লাগল। ডে জ্যাভু এর মত লাগছে তবে সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছেটা কি এখানে। এই দুইজন আমার উপর ক্ষেপে উঠল কেন?



“তুই কি আমাদের ক্লাবে যোগ দিবি?”



“হ্যা ক্লাবের যোগ দেয়ার ইচ্ছা আছে নাকি?”



“এখানে ক্লাবে কি সম্পর্ক?”



“হ্যা অথবা না।”



আমি সুমনার দিকে তাকালাম, তার চোখে কি যেন ছিল সেটা আমি তখন বুঝে বলতে পারব না। আমি তার দিক থেকে চোখ সরিয়ে রুপার রুদ্রমুর্তির দিকে তাকালাম। সে তখনও আমার দিকে কড়া চোখে তাকিয়ে আছে। তারা দুজন যখন এই বিষয় নিয়ে সিরিয়াস তখন নিশ্চয়ই ভাল কিছু মনে হয় হবে। এছাড়া এত করে যখন বলছে তারা গেলে দোষ কি?



“আচ্ছা ঠিক আছে…”



আমার কথা শেষ না হতেই রুপা আমার শার্টের কলার ছেড়ে দিল, বলল, “আচ্ছা তাহলে ওই কথাই রইল। কলেজ শেষে কথা হবে।”



হা! আমি অবাক চোখে রুপার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম। সে নিজের বেঞ্চের দিকে গিয়ে বসল।



আমি সুমনার দিকে তাকাতেই সে তার দুর্লভ হাসি দিয়ে আমার দিকে তাকাল, বলল, “তাহলে এস একটা ক্লাব খুলি।”



আমি সুমনার দিকে শুন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলাম।



মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে মে, ২০১৪ রাত ১০:০৯

রেজওয়ানা আলী তনিমা বলেছেন: চালিয়ে যান।

২| ০৯ ই জুন, ২০১৪ রাত ৯:৪০

হাসান রেজভী বলেছেন: আর পর্ব কই :(

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.