নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আজবছেলে

আমি সত্যিই আজব ছেলে

আজবছেলে › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমি কলেজ জীবন যেরকম আশা করেছিলাম, সেটা ঠিক সে রকম হল না ! [সসার ক্লাবঃ অধ্যায়-১]

২৪ শে মে, ২০১৪ সকাল ৮:৫৬





আগের পর্ব



মাঠের এক কোনায় বসে আছি। আমার সাথে বাকী পাচজনও বসে আছে। এখন টিফিন পিরিয়ড চলছে। মাঠের এদিকে ছাত্র-ছাত্রীদের আনাগোনা খুবই কম। গতকাল তাদের লম্ফজম্প করার কারনে তাদের ক্লাবে যোগ দিই, মানে বাধ্য হই। এখন সেটা নিয়া আলোচনা হচ্ছে। কি ধরনের ক্লবা খোলা হবে সেটা নিয়ে। প্রথম পিরিয়ডের দিকে আমার কিছুটা কৌতুহল হয়েছিল যে কি ধরনের ক্লাব খোলা হবে। আমি রুপাকে সেটা নিয়ে জিজ্ঞেশ করেছিলাম। রুপার সাফ কথায় জানিয়ে দিয়েছে সেটা সম্পর্কের তার কোনো ধারনা নাই!



এটা শোনার পর আমার মাথায় বজ্রপাত পড়া মত হয়। তারা এখন ঠিক করেনি কি ধরনের ক্লাব খুলবে তার আগে আমাকে দলে নেয়ার জন্য যে নাটক করল। আমি তখন সুমনার খোজে এদিক ওদিকে তাকালাম। তার ছায়াও দেখতে পেলাম না। অবশ্য ল্যাব ক্লাসে তার দেখা পেলেও কথা বলতে পারিনি বায়োলজি ম্যাডাম আমার দিকে শকুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকার কারনে। কি কারনে আমার দিকে তিনি এই শকুনি নজর দিচ্ছেন সেটা আমার বোধগম্য হচ্ছে না!



“তা আমরা কি ধরনের ক্লাব খুলব?” সজল সমুচা চিবুতে চিবুতে জিজ্ঞেশ করে উঠল।



এই প্রশ্ন আমার মাথায় অনেক আগে থেকেই ঘুরছিল করি করি করে করা হয় নাই। অবশ্য তাদের সাথে কথা বলার ইচ্ছা যে ছিল তা না কিন্তু সুমনা আজকে কেন যেন আমাকে এড়িয়ে চলেছে। আমি তার হাত খানেক কাছাকাছি গেলেই সে তার আগের পাথরের মত মুখ করে থাকে। তাখন আর কথা বলার আগ্রহ থাকে না।



“কি ধরনের ক্লাব খুলব সেটা নিয়েই তো আমরা এখন আলোচনায় বসলাম,” রুপা বলে উঠল।



রুপার এই উত্তর শুনে সজলের সমুচা চিবানো বন্ধ হয়ে গেল। তাহলে তারও আমার মত অবস্থা। লও ঠেলা এবার, লাফাও ওদের সাথে, নিজেতো ডুবেছে সাথে আমাকে নিয়েই ডুবেছে!



“কোনো আইডিয়া না নিয়েই তোমরা ক্লাব খুলবে? আমাকে এত সব বললে না!”



“জানিনা খোলার ইচ্ছা ছিল তাই খুললাম, আর সুমনা আমাকে বলেছিল তার মাথায় একটা ক্লাব খোলার কথা, আর সবতো রানাই বলেছে।”



এখন সব দোষ আমার!



আমি রুপার দিকে কড়া চোখে তাকালাম, “আমার দোষ কোথায় এখানে, আমিতো এই ক্লাব নিয়ে কোনো মাথা ঘামায়নি। আমাকে তোমরা জোর করে ক্লাবে নিলে, এখন দেখছি সে ক্লাবের কোনো অস্তিত্ব নাই।”



এটা বলার পর বড়সড় একটা নিশ্বাস নিলাম। একদমে কথা বলা অনেক কষ্টকর। মেয়েরা পারে কেমনে এক দমে কথা শেষ করতে!



“সুমনা বলল তুমিই নাকি ক্লাবের কথা তুলেছ,” নুশরাত এবার বলে উঠল, “সে আমাকে প্রথমে বলেছিল, আমলে নেই নাই।”



আমি সুমনার দিকে তাকালাম, সে দেখছি অন্যমনস্ক হয়ে আছে। এর আবার কি হল। আজকে সকালে আমাকে পাত্তা দিল না আর এখন দেখি মুড অফ করে বসে আছে।



“কিছু হয়েছে?” আমি জিজ্ঞেশ করে উঠলাম।



সুমনা মাথা নাড়াল, “কিছু না, কালকে রাতে একটা বই পড়েছিলাম সেটা নিয়ে চিন্তা করছিলাম।”



“কি বই নিয়ে…”



“রানা তুমি এখানে আর তোমাকে আমি খুজে বেড়াচ্ছি।”



আমি আমার কথা শেষ না করতেই দেখি মাশফিয়া হাজির। মাশফিয়ার পিছনে রাতুল আর হৃদি দাঁড়িয়ে আছে। হৃদি মেয়েটা দেখছি রাতুলের সাথে ভালই মিশে গেছে। যদিও ওর সাথে ঘুরে মেয়েটার কোনো লাভ হবে না। দেখি পরে হৃদিকে বলে দিবনে।



“তোমার ভাগ্নে খুবই ব্রাইট, সে ঠিকই ধারনা করেছে তুমি এখানে থাকবে।”



মাশফিয়া আপুর এই কথা শোনার পর আমি রাতুলের দিকে অগ্নিদৃষ্টি হানলাম। সে সেটাকে তেমন আমলে আনল না।



“তা তোমরা কি নিয়ে আলোচনা করছিলে?” মাশফিয়া আপু জিজ্ঞেশ করে উঠল।



“ক্লাব নিয়ে।” সুমনা কাট কাট গলায় বলে উঠল।



“ও তাই নাকি তা আমি কি তোমাদের সাথে বসতে পারি?”



এটা বলার পর মাশফিয়া আপু সুমনার দিকে তাকিয়ে রইল, সুমনাও তার দৃষ্টি নামাল না। পরিস্থিত অন্য দিকে মোড় দিতে যাচ্ছে মনে হয়।



রুপা তাদের মাঝখানে গিয়ে বলল, “অবশ্যই, বসে পড়, দল যত ভারী হবে তত ভাল হবে।”



“ঠিক আছে,” এই বলে মাশফিয়া আপু বসে পড়ল। আমি তখন উঠে দাড়ালাম বলে উঠলাম, “তেষ্টা পেয়েছে জুস খাব, তোমরা কেউ খাবে নাকি?”



“কেন কি মনে করে খাওয়াবি তুই?” সজল জিজ্ঞেশ করে উঠল।



“পকেট গরম তাই।”



“ক্যান্টিনে মনে হয় ম্যাংগো জুস ছাড়া আর কিছু নাই।”



“তাহলে সবার জন্য জুস,” এই বলে আমি ক্যান্টিনের দিকে হাটা শুরু করলাম।







টিফিন পিরিয়ড শেষ। সব ছাত্র-ছাত্রী ক্লাসরুমের দিকে যাচ্ছে। এরপর আমাদের বাংলা ক্লাস, সেটা করতে ইচ্ছে করছিল না। যারা অধিক পরিমানে বই পড়ে তাদের কাছে বাংলা তেমন একটা বিষয় না। বাংলা বইয়ের সব গল্প আর কবিতা আমার পড়া তাই সেটা নিয়ে আমার এত চিন্তা নাই। ভাবছি লাইব্রেরীতে গিয়ে বই পড়ব তখনই আমি সুমনাকে দেখতে পেলাম। তার টিফিন বক্স নিয়ে ক্লাসরুমের দিকে যাচ্ছে।



“কি ব্যাপার একা কেন? নুশরাত আর রুপা গেছে কোথায়?”



আমার প্রশ্ন শুনে সে আমার দিকে তাকাল, কিন্তু কিছু বলল না।



“কোনো সমস্যা, সকাল থেকে দেখছি কি বিষয় নিয়ে চিন্তা করছ।”



কোনো কথা নেই। সমস্যা কি মেয়েটার!



“আচ্ছা ওয়েবক্যাম কোথায় পাওয়া যায়?”



“হাহ?”



সুমনার আচমকা প্রশ্নে আমি কিছুটা অবাক হলাম।



“ওয়েবক্যাম? সেটা কম্পিউটারের দোকানে পাওয়া যায়।”



“চেন? আমার একটা কেনা দরকার।”



“হুম শুক্রবার দিন ফোন দিও নাহলে আমার বাসায় এস কিনে দিব।”



“ধন্যবাদ।”



আমি কথা বলার সময় টের পেয়েছিলাম সুমনার টিফিন বক্সে কিছু একটা আছে। আমি জিজ্ঞেশ করলাম, “তোমার টিফিন বক্সে কিছু আছে নাকি?”



“হ্যা, সেদ্ধ ডিম, আমি এই সেদ্ধ ডিম পছন্দ করিনা। ফেলে দিব ভাবছি।”



“নির্জনকে দিলে হয় না।”



“না সে ফুপিকে বলে দিবে।”



“তাহলে তোমার যদি সমস্যা না হয় তাহলে ডিমটা আমাকে দিয়ে দাও, আমার ডিম খুব পছন্দ।”



সুমনা আমার দিকে গোলগোল চোখ করে তাকাল যেন এমন অদ্ভুত কথা সে জীবনে শুনেনি। সে টিফিন বক্স থেকে ডিমটা বের করল, “ফেলে দিতে চাচ্ছিলাম, তুম যখন চাইছ তখন দিয়ে দিলাম,” তারপর টিফিন বক্স বন্ধ করতে করতে, “তোমার মত সোসা একটাও দেখি নাই।”



এই ডিমের জন্য আমি তাকে মাফ করে দিলাম, নাইলে সোসা বলার জন্য তার খবর ছিল। ডিমে একটা কামড় বসাতে বসাতে বললাম, “ডিম আমার সবচেয়ে প্রিয়, এটার জন্য আমি অনেক কিছু করতে পারি। আর তুমি ডিম দিয়ে যা রান্না করবে তাই আমি খাব।”



“তোমার জন্য রান্না করতে যাব কেন আমি?”



সুমনার এই প্রশ্নের জবা আমি দিলাম না। সহজ কথা আমি সেটাকে পাত্তা দিলাম না।



“আচ্ছা ক্লাবের কি করবে, কি ধরনের ক্লাব সেটাতো এখনো জানলামনা।”



“এই কয়দিন তো পারব না, দেখি আগামী শনিবার আরেকটা মিটিংয়ে বসব।”



আজকে মঙ্গলবার, শনিবার মানে তিনদিন পর। সমস্যা নাই তাহলে এই তিনদিন একটু হলেও নিশ্চিন্তে থাকব। সুমনা সামনে দিকে এগোতে লাগল আমি একটু দাড়িয়ে রইলাম। সে আমার দিকে ফিরে তাকাল, জিজ্ঞেশ করল, “কি ব্যাপার ক্লাসে যাবে না?”



“একটু টয়লেটে থেকে আসছি,” এই বলে টয়লেটের দিকে ছুটদিলাম। গন্তব্য আমার এখন টয়লেটের দিকে হলেও আসল লক্ষ্য আমার লাইব্রেরীতে।



*



আমি আর রাতুল একসাথে বাসায় যাচ্ছি। আমাদের দুজনের হাতেই আইসক্রিম। ইদানিং আমার পকেট বলে গেলে গরম। কম্পিউটার বিক্রির কিছু টাকা এখন আমার পকেটে। গতকাল রাতে অনেক ধানাই পানাই করে আপির কাছে থেকে উদ্ধার করেছি এই টাকা গুলা। সব দেয়নি তিনহাজারের মত দিয়েছে। সেটা আমার জন্য এখন অনেক, নিজেকে কিছুটা বড়লোক বড়লোক লাগছে।



আমি রাতুলের দিকে তাকালাম। সে মহানন্দে আইসক্রিমে কামড় বসাচ্ছে। এই গাধার কারনেই আমার টাকাগুলি আপি নিয়ে গিয়েছিল। যেদিন আমি সুমনার কাছে কম্পিউটারটা বিক্রি করেছিলাম তারপরের দিন,আমরা রাতে খাবারের টেবিলে বসে ছিলাম।



“তা মামা কেমন চলেছে নতুন মাদারবোর্ড আর গ্রাফিক্স কার্ড,” মুরগীর রানে জোরেসড়ে একটা কামড় বসাতে বসাতে রাতুল বলে উঠল।



রাতুলের এই কথা শোনার পর আমার গলায় ভাত আটকে গেল। আপি মোবাইল টিপতে টিপতে ভাত খাচ্ছিল। রাতুলের কথা শোনার পর তার কান খাড়া হয়ে গেল, “নতুন গ্রাফিক্স কার্ড আর মাদারবোর্ড মানে ?”



আপি আমাদের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। সে রাতুলের দিকে একবার চাইতেই সে কেচোর মত কুকড়ে গেল। এরপর আপি শুধু একটা কথা বলল, “তাড়াতাড়ি খাওয়া শেষ কর কথা আছে।”



এরপর আর কি মুদি যেভাবে পিপড়ে টিপে গুড় বের করে তেমনি আপিও আমাদের দুজনের পেট থেকে কথা বের করলেন। তবে সুমনার কথা এড়িয়ে গেলাম। আপিকে এটা শুধু বললাম মঞ্জু সাহেবের ভাগ্নি কম্পিউটারটা নিয়ে গেছে। আমি যে তার বাসায় গিয়ে পৌছে দিয়েছি সেটা বলি নাই। তাহলে আর ঘন্টাখানেক রিমান্ডে থাকতে হত মনে হয়।



এরপর অনেক কষ্ট করে, ধানাই পানি করে সেই টাকার কিছু অংশ উদ্ধার করি। আপিকে বলেছিলাম আমার কিছু জামা কাপড় কেনড় দরকার। তখন কিছুটা নরম হয়ে সে আমাকে টাকার কিছু অংশ দেয়। ভাবছি নিউমার্কেট যাব। সেখানে শুনেছি জামা-কাপড়ের দাম কিছুটা কম আর এর খুব কাছেই নীলক্ষেত বলতে গেলে দুটো লাফ দিয়ে যাওয়া যায় নিউমার্কেট থেক। সহজকথা এক ঢিলে দুই পাখি মারা যাবে।







আমি আইসক্রিমে কামড় দিয়ে বললাম, “হৃদির সাথে দেখছি ভালই চলাফেরা করছিস দেখছি।”



আমার এই কথা শোনার পর রাতুল এমন একটা মুখভঙ্গি করল যেন সে আইসক্রিম না একটা নিম পাতায় কামড় বসিয়ে দিয়েছে। তারপর কিছু হয় নাই এমন একটা ভাব করে হাটতে লাগল। ব্যাপারটা আমার কাছে ভাল লাগল না।



“দেখিস আপি কে বলে দিব,” আমি হুমকির স্বরে বললাম।



“ছোটখালাকে বলে লাভ নাই তুমিই ফেসে যাবে।”



“মানে?”



“হৃদি আমার মামী হবার ইচ্ছা পোষন করেছে,” সে আইসক্রিমটা শেষ করে তার কাঠি দূরে ছুড়ে মারল।



“মামী মানে…”



আমি কথা শেষ করলাম না। আমিও চুপ মেরে গেলাম। আমিও আইসক্রিমটা শেষ করে কাঠিটা দুরে ছুড়ে মারলাম।







*



সুমনার অপেক্ষায় দাড়িয়ে আছি ছোট একটা বাস স্টেশন এর সামনে। বিভিন্ন লোকাল বাস গুলোর আসা যাওয়া দেখছি। সাড়ে নয়টার দিকে তার আসার কথা। নিজের হাত ঘড়ির দিকে তাকালাম, প্রায় সাড়ে নয়টা বাজে। সে আসতে আসতে এক কাপ চা খেয়ে নিব নাকি? আমার একটু পিছনেই একটা টং দোকান আছে। চায়ের কাপের সাথে চামচের বাড়ির টুং টাং আওয়াজ পাচ্ছি। মনে হয় তার আরো দেরী হতে পারে। এই ভেবে আমি টং দোকানে ঢুকতে যাব তখনই সুমনা হাজির।



সত্যি কথা আমি এই দ্বিতীয়বার ভিমড়ি খেলাম বা বিমোহিত হলাম বা অবাক হলাম বা আরো কিছু। সুমনা আমার কাছে এসে দাড়ালো, বলল, “একদম সময়মত এসে গেছি দেখছি।”



মেয়েটা মনে হয় গতবারের কথা মনে রেখেছে। সাদা কালোর সংমিশ্রনে সেলোয়ার কামিজ পড়েছে সে এবং এত তাকে ভালই মানিয়েছে। কলেজে সে চুল অনেকটা পনিটেইলের মত করে রাখত, কিভাবে রাখত সেটা আমার কাছে আশ্চর্যের বিষয় কিন্তু আজকে সে চুল খোলা রেখে এসেছে। এই বাসস্ট্যান্ড এ সে পা দেবার পর অনেকেই তার দিকে তাকিয়ে ছিল। সুমনা সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে আমার কাছে এসে দাড়াল তারপর নিজের হাতঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলল, “যাক ঠিক সময়মত এসে পড়েছি।”



“তুমি কি একাই এসেছ নাকি?”



“হ্যা।”



“বাসা থেকে একা ছাড়ল!”



“না, কথা ছিল আমার এক কাজিন যাবে কিন্তু আজকে সে তার বয়ফ্রেন্ডের সাথে ডেটিং এ যাবে। তাই সে তার মত করে বের হয়েছে আর আমি আমার মত।”



“ও, আচ্ছা।”



এই বলে আমি রাস্তার দিকে তাকালাম, বাসের অপেক্ষায় আছি।



“আচ্ছা কোন বাসে যাবে সেটা চেনতো ? নাকি চিনিয়ে দেয়া লাগবে?”



তার কথাটা আমার গায়ে যেন আগুন ধরিয়ে দিল। হোক আমি খুলনার ছেলে, ঢাকায় নতুন এসেছি তাই বলে যে আমি ঢাকা শহরে যে হারিয়ে যাব সেটাতো হবে না। আমি কিছু বললাম না, চুপ করে রাস্তার দিকে তাকিয়ে থাকলাম। একটু পরেই একটা বাস আসল।



ঢাকা শহরে বাসে উঠা আর যুদ্ধ করা একই কথা। কে কার আগে উঠবে সেটা নিয়ে হুড়োহুড়ি লেগে যায়। এমনকি বুড়োরাও কম যায় না, আর মহিলাদের কথা বাদই দিলাম। আজকে শুক্রবার, ছুটির দিন, এখনো মনে হয় বিছানা ছাড়েনি তাই আজকে বাসে উঠতে এত কষ্ট হল না। আমি আর সুমনা নির্বিঘ্নে বাসে উঠে গেলাম।



বাসে উঠে আমি জানালার পাশে বসতে যাব তখন সুমনা বলে উঠল, “আমি জানালার পাশে বসব।”



এটা শোনার পর কি আর করা আমি তাকে জানালার পাশে বসতে দিলাম। সে বসে জানালার দিকে তাকিয়ে থাকল, আমি সেদিকে একবার তাকিয়ে নিজের মোবাইল বের করে গেমস খেলতে লাগলাম। গেমস খেলতে খেলতে হঠাৎ করেই নাকে একটা সুবাস আসল। বেলী ফুলে সুবাস। আমি একটু এদিক ওদিক ঘাড় ঘুরাতেই বুঝতে পারলাম এই সুবাসের মালিক কে। লেখক কিংবা কবি যারাই হোক তারা সব সময় সুন্দরী মেয়েদের গায়ের গন্ধকে তুলনা দেন বেলী ফুলের সুবাসের সাথে। কথাটা মনে হয় তারা মিথ্যে বলেন নি।



“কি ব্যাপার অন্যমনস্ক হয়ে আছ যে ?”



সুমনার প্রশ্নে আমার হুশ আসল। আমি তার দিকে তাকিয়ে পালটা প্রশ্ন করলাম, “তাই নাকি?”



“তাই তো মনে হল।”



“হুম।”



“আচ্ছা ভাল কথা, আমরা কোথায় যাচ্ছি?”



এতক্ষনে আপনি জিজ্ঞেশ করলেন, মনে মনে বলে উঠলাম।



“আগারগাও, আইডিবি তে, সেখানে কম্পিউটার থেকে এর পার্টস সব বিক্রি হয়।”



“ও আচ্ছা,” এই বলে সে আবার জানালার দিকে মুখ ফিরালো।



আমি বলে উঠলাম, “বাসায় যদি জানতে পারে যে তুমি একটা অচেনা ছেলের সাথে বের হয়েছ তাহলে কি হবে?”



“আরকি, চামড়া ছিড়ে ফেলবে,” আমার দিকে ঘুরে বলল, “তবে আমিতো কোনো অচেনা ছেলের সাথে সাথে যাচ্ছি না।”



এরপর আমার আর কিছু বলার থাকে না। আমি আবার মোবাইলে গেমস খেলতে লাগলাম। কিছুক্ষন পরেই আমরা আইডিবিতে পৌছে গেলাম। ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে আমি সুমনাকে বললাম, “তুমি কি একা বাসায় যেতে পারবে, এরপর আমি নিউমার্কেট যাব।”



“হাহ,” সে অবাক হয়ে আমার দিকে তাকাল।



“কোনো সমস্যা,” আমি ভ্রু কুচকে তার দিকে তাকালাম। সে কি চাচ্ছে তাকে আমি বাসায় দিয়ে আসব। সেটা হবেনা। একবার দিয়ে এসে আবার নিউমার্কেট যাওয়া, অসম্ভব!



“আমি ভেবেছিলাম, এরপর আমি নিউমার্কেট যাব, কিছু কেনাকাটা করার দরকার ছিল।”



সুমনার কথা শোনার পর আমিও কিছুটা অবাক হলাম, “ঠিক আছে তাহলে নাহয় একসাথেই যাব,” আমি বললাম।



সুমনা বড়সড় একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, “আচ্ছা ঠিক আছে এক সাথে যাওয়া যাবে, তা ভেতরে চল।”



আমি আর কোনো কথা না বলে ভিতরের দিকে গেলাম। আজকে এমনিতেই সাপ্তাহিক ছুটির দিন। আইডিবির অনেক দোকান এখনো থিক মত খুলেনি। তাই কি আর করার আমরা এদিক সেদিক ঘুরতে লাগলাম। একটা দোকানের সামনে এসে দাড়াল সে, আমি জিজ্ঞেশ করে উঠলাম, “কি হয়েছে?”



“না, এন্টিভাইরাসের প্যাকেটটা দেখে মনে হল একটা এন্টিভাইরাস কেন উচিত।”



“তোমার কম্পিউটারে তো একটা এন্টিভাইসার ইন্সটল করে দিয়েছি সেটাই যথেষ্ট।”



“না শুনেছি ইন্টারনেট থেকে অনেক ভাইরাস আসে কম্পিউটারে।”



“আসে তবে তোমাকে যেটা দিয়েছি সেটা অনেক ভাল কাজ করবে। তবে তোমার কেনার ইচ্ছে হলে কিনতে পার।”



আমার মনে হয়েছিল সে কিনবে কিন্তু সে দোকানের সামনে থেকে সরে গেল। আমিও তার পিছু পিছু হাটতে লাগলাম। আরেকটু ঘোরাঘুরি করার পর আমরা একটা দোকানে ঢুকে গেলাম, সেখান থেকে একটা ওয়েবক্যাম কিনে নিলাম আমরা। আমি ঘড়ির দিকে তাকালাম, প্রায় এগারোটা বাজে। আমি সুমনার দিকে তাকিয়ে বললাম, “চল প্রায় এগারোটা বাজে, আর দেরী করা ঠিক হবে না।”



সুমনা মাথা ঝাকাল। আমরা দুজন বের হয়ে বাসের জন্য দাড়িয়ে রইলাম। এখন মোটামুটি ভিড় হচ্ছে, কিছু লোক দাঁড়িয়ে আছে বাসে উঠার জন্য তবে আমাদের মনে হয় ভাল ছিল আজকে। আমরা যে বাসে উঠলাম সেটাও মোটামুটি খালি ছিল। যথারীতি সুমনা জানালার পাশে বসল।



“তোমার দেখছি কম্পিউটারের দামের উপর ভালই জ্ঞান আছে।”



সুমনা এই প্রশংসায় এত বিগিলিত হলাম না, আমি বললাম, “আরে না এতটা না, আমার যা জ্ঞান তা ওই রাতুলের কল্যানে।”



“মানে ওই বান্দরটা মানে, ওই তোমাকে কম্পিউটার সম্পর্কে শিখিয়েছে?” সুমনা চোখ বড়বড় করে জিজ্ঞেশ করল।



আমি নিজের গাল চুলকাতে চুলকাতে বললাম, “সে যতই বান্দর কিংবা ফাজিল হোক ও আসলেই একটা ট্যালেন্ট একটা ছেলে।”



“তাই নাকি!”



“আপুর কল্যানের তার কিছুটা বারোটা বেজে গেছে, এখন আপি আছে তাকে ঠিক করার জন্য।”



“আপু আর আপি?”



এই প্রশ্ন আমাকে প্রাই শুনতেই হয়, “আমি আমার বড় বোনকে আপু, মেজবোনকে আপা আর ছোট বোনকে আপি বলে ডাকি।”



এটা শোনার পর সে হেসে উঠল, “তিন বোনের এক ভাই নিশ্চয়ই খুব আদর করে।”



“হুম তাতো করেই”



“আমি নিশ্চিত তোমাকে নিয়ে তোমার বোনেরা প্রায় লেগে যেত।”

“হুম, তবে আপি অধিকাংশ সময় জিতত, খুবই জেদি মেয়ে সে।”



“ও, আচ্ছা,” এই বলার পর সে জানালার দিকে উদাস মনে তাকিয়ে রইল।



নিউমার্কেটে ঢোকার পর আমি সুমনার আরেক রুপ দেখতে পেলাম। আমি আগে থেকেই জানতাম যে মেয়েরা কেনাকাটা করায় দক্ষ, আমার তিন বোনই বড় উদাহরণ। তাদের সাথে তর্কে পারে এমন কোনো দোকানী আমার চোখে পড়ে নাই। আজকে সুমনাকে দেখার পর মনে হল সে কেনাকাটা করায় এবং দামাদামি করায় খুবই দক্ষ, বলতে গেলে সে আমার বোনদের পর্যায়ে চলে যায়।



আমার কেনাকাটা করা নিয়ে এত চিন্তা করা লাগে না। একটা দোকানে গেলাম জিনিষ পছন্দ হল, হালকা দরদাম করে কিনে নিলাম। আমি কোথায় যেন শুনেছিলাম দোকানদারদের সাথে দরদাম না করলে তারা কিছুটা অপমানিতবোধ করে, তাই তাদের মান সম্মান রাখার জন্য আমি কিছুটা দরদাম করি। অবশ্য এখন শোরুমের কল্যানের দরদামের প্রথা কিছুটা হলেও কমে গেছে।



আমি নিশ্চিত ছিলাম আমার জামা কাপড় কেনাকাটা করতে এত সময় লাগবে না। কিন্তু সুমনার কল্যানে আমার দুইটা প্যান্ট আর তিনটা টী-শার্ট কিনতে প্রায় ঘন্টা দেড়েকের মত লেগে গেল। যদি আমি এক যেতাম তাহলে আধা ঘন্টাও লাগতনা আর এর চেয়ে তিনগুন দামে বেশী দিতে কিনতে হত।



আমার কেনাকাটা শেষ হতেই, সুমনা বলে উঠল, “এবার আমার পালা।”



“হুম, চলো যাই।”



সুমনা আমার কথা শুনে চোখ বড় বড় করে বলল, “না, আমার শপিং আমি নিজেই একা করব।”



“তুমি আমাকে সাহায্য করেছ তাই আমি তোমাকে সাহায্য করি।”



“না, সম্ভব না।”



“কেন, কোনো সমস্যা?”



“আছে, তা তোমার তো কেনাকাটা করা শেষ তাই না?”



“হ্যা, তবে এরপর নীলক্ষেতে যাব বই কিনতে।”



“তাহলে যাও।”



সুমনা দিকে কিছুটা অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকলাম। আসলে তার মাথায় চলছেটা কি? কিছুক্ষন আগেও আমার সাথে ভালভাবে কেনাকাট করল কিন্তু এখন কি কারনে নিজেই একা কেনাকাটা করতে চাইছে। আমি মাথা চুলকাতে চুলকাতে বললাম, “আচ্ছা নীলক্ষেতেও কি নিউমার্কেটের মত অবস্থা, দামাদামি করতে হয়।”



“হ্যা করতে হয়, ওইখানের লোকেরা বলতে গেলে ডাকাত। আমার কাজিনের কাছে শুনেছি তারা একশ টাকার বই পাচশো টাকায় চায়।”



এটা শুনে আমার আমার চোখ কপালে উঠল। এতো দিনে-দুপুরে ডাকাতি!



সুমনা আমার চেহারার দিকে তাকিয়ে বলল, “তুমি এই ব্রীজে অপেক্ষা কর, আমার কাজিন আসছে তারপর না হয় একসাথে নীলক্ষেত যাব।”



সুমনার এই কথায় আমি কিছু বললাম না মাথা ঝাকালাম। সুমনা আবার মার্কেটের দিকে যেতে যেতে বলল, “বেশীক্ষন লাগবে না ঘন্টাখানেকের মত, পারলে এদিক ওদিকে হাটাহাটি করো, এক ঘন্টার মধ্যে এইখানে চলে এস।”



আমি এবারো নিরব থাকলাম। ব্রীজের একপাশে দাঁড়িয়ে রইলাম। সুমনা গমন পথের দিকের তাকিয়ে রইলাম। সজল ঠিকই বলছিল মেয়েটা ধীরে ধীরে পরিবর্তন হচ্ছে। কিছুক্ষন আগে আমি তাকে যেরকম উচ্ছল অবস্থায় দেখলাম, তখন কে বলবে এইতো কয়েকদিন আগেও সে গম্ভীর হয়ে থাকত। সহজে কারো সাথে কথা বলত না, কিন্তু এখন সে দোকানদারের সাথে দামাদামি নিয়ে তর্কাতর্কি করছে। নাকি সে এইরকমই শুধু মাত্র কলেজেই গম্ভীর থাকে? কে জানে?







*



সুমনা মার্কেটে ঢোকার আগে আরেকবার পিছিনের দিকে তাকাল। রানা এখনো দাঁড়িয়ে আছে এই ব্রীজের এখানে। ছেলেটার কি বুদ্ধিশুদ্ধি কি কম নাকি! একটা মেয়ে যখন একা একা মার্কেট করতে যাচ্ছে তখন এর মানে কি হতে পারে?



সে দেখতে পেল দুটো মেয়ে রানার আশেপাশে ঘুরছে, তার দৃষ্টি আকর্ষন করার চেষ্টা করছে। তবে রানা সেটা খেয়াল করছে না। বর্তমান কালের মেয়েদের হচ্ছে টা কি? আগে ছেলেরা মেয়েদের পিছনে ঘুরত আর এখন মেয়েরাও কম যায় না। এটা ঠিক রানার চেহারা খারাপ না, নাহলে কলেজে সেই সিনিয়র আপু তার জন্য পাগল হত না। দুইটা মেয়ের একটা রানার দিকে এগিয়ে গেল, তাকে কি যেন বলল। সুমনার বুকে কিছুটা হলেও খচ করে বিধল। নিজের এই অনুভুতি নিয়ে সে কিছুটা অবাক হল। তার কেন এমন হল? তার তো এই অনুভুতি হবার কথা ছিল না!



সুমনা আবার রানা দিকে তাকাল, সে ওই মেয়েটাকে কিছু বলল। মেয়েটা চেহারা মনে হয় কিছুটা মলিন হল। দূর থেকে দেখছে সুমনা তাই এতটা নিশ্চিত হতে পারলনা, তবে মেয়েটা চলে গেল। সুমনাও আর বেশীক্ষন দাড়াল না মার্কেটের ভিতর ঢুকে গেল।



সুমনার কেনাকাটা প্রায় শেষ পর্যায়ে এসে পড়েছে তখই তার মোবাইল বেজে উঠল, মোবাইলের পর্দায় নাম দেখে সে কলটা রিসিভ করল, “কি শেষ হল নাকি ডেটিং?”



“হ্যা,আর বলিস না খালি প্যাড়া দেয়,” মোবাইলের অপরপ্রান্তে থেকে একটা মেয়ে গলা বলে উঠল, “তা তুই কি এখনো নিউমার্কেটে আছিস।”



“হ্যা আছি, আমার কেনাকাটা বলতে গেলে শেষ, তুমি কোথায়?”



“এইতো মার্কেটের ওভারব্রীজের দিকে উঠছি… আরে একটা কিউট ছেলে দেখছি দাঁড়িয়ে আছে।”



“আপু তোমার না একটা বয়ফ্রেন্ড আছে!”



“আরে আজিব ব্যাপার বয়ফ্রেন্ড থাকলে যে ভাল চেহারার ছেলের দিকে তাকাতা পারবনা সেটা কে বলেছে?”



সুমনা এই প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে গেল, “তুমি দাড়াও, আমি কিছুক্ষনের মধ্যে আসছি।”



“দেরি করলেও কোনো সমস্যা নাই, আমি আমার লক্ষ্য পেয়ে গিয়েছি।”



এই বলার পর সুমনার ফোন কেটে গেল। সুমনাও এবার দোকানদারে দিকে নজর দিল। আসলে সে যখন কেনাকাটা করতে আসে তখন তারমধ্যে কেমন যে একটা উত্তেজনা চলে আসে। সে আগের মত গোমড়া মুখে তাখতে পারে না। দোকানদারের সাথে দামাদামি করতে পারলে তার অনেক ভাল লাগে। দামাদামি করে জামা কাপড় না কিনে সে মজা পায় না। সে যখন বড় বড় শো রুমে যখন সবচেয়ে ভাল কাপড়ের একদাম লেখা থাকে তখন সে আর মজা পায় না কিনে।



তবে আজকে সে অনেক মজা পেয়েছে। আসলে কেউ সাথে থাকলে কেনাকাটা করে মজা অনেক। রানার কথা মনে হতেই সুমনার চোখ বড় বড় হয়ে গেল। সেতো ব্রীজে দাড়িয়েছিল, আর তার কাজিনও তো ব্রীজে দাঁড়ানো এক ছেলের কথা বলছিল। তার কাজিন যে ধরনের সে নিশ্চয়ই রানার সাথে কথা বলার চেষ্টা করবে, কিন্তু রানার যে ধারালো মার্কা কথা সেটা শুনলে তো নিজের মাথা আগুন ধরে যায় সেখানে তার কাজিন কোন ছাড়!



সে তাড়াতাড়ি দাম চুকিয়ে ব্রীজের দিকে দৌড় দিল। তারা দুজন লেগে না গেলেই হল!







*



কিছুক্ষন থেকেই খেয়াল করছি একটা মেয়ে আমার সামনে দিয়ে ঘোরাঘুরি করছে। এইতো ঘন্টা খানেক আগে একটা মেয়ে আমার সাথে কথা বলতে এসেছিল তাকে বলেছি, আমি ব্যাস্ত, ব্যাস। এই বলার পর সেই মেয়েটা আর এদিকেও আসে নি। কিন্ত আমরা সামনে সে ঘোরাঘুরি করছে তাকে কেন যেন শক্ত ধরনের মনে হচ্ছে। দুই একটা ধমক দিলেও যাবে না মনে হচ্ছে। আমি তাকে পাত্তা না দেয়ারই চেষ্টা করলাম। নিজের মোবাইলের দিকে নজর দিলাম।



“হাই,” মেয়েটা আমার কাছে এসে বলল।



আমি চুপ করে রইলাম।



সে আমার দিকে হাত নাড়িয়ে বলল, “হ্যালো।”



আমি সেটা না দেখার ভান করলাম।



“যদি কথা না বলতে পার, তাহলে বল আমি কথা বলতে পারি না।”



“হ্যা, আমি কথা বলতে পারি না।”



“এইতো কি সুন্দর কথা বললে,” আলগা একটা উচ্ছাস নিয়ে বলল মেয়েটা, “আমি মীরা।”



“হুম।”



“তাহলে তোমার নাম, হুম।”



আমি কিছু বললাম না।



“আরে হুম, এত দেমাগ দেখাতে হয় না, আমরা মেয়েরা দেমাগ দেখালে ভাল লাগে কিন্তু ছেলেরা দেখালে সেটা বিশ্রী লাগে।”



“আসলে আমি একজনের অপেক্ষায় আছি,” আমি একটু কড়া গলায় বললাম।



মেয়েটা আমার কড়া গলাকে পাত্তা না দিয়ে বলল, “গার্লফেন্ড?”



“না, ফ্রেন্ড। আমাকে আর বিরক্ত না করলে খুশি হব,” আমি জোরেই বলে উঠলাম, “আপনি আপনার রাস্তা মাপেন, যান।”



“আরে মেয়েদের সাথে এভাবে কথা বললে তো আর জীবনে গার্লফ্রেন্ড পাবে না।”



“দরকার নাই, আর আপনাকে দেখার পর সেটা প্রয়োজনীয়তা আর বোধ করছি না।”



আমার এই কথা শোনার পর মেয়েটার চোখ ধারালো হয়ে গেল, “মানে কি বলতে চাও?”



“আপনার মত আপদ টাইপ মেয়েদের পরিমান বেড়ে গেলে…”



“আমাকে আপদ টাইপে মনে হয়।”



আমার কথা শেষ না করতে দিয়ে মেয়েটা বলে উঠল।



“আপদের বড় বোন মনে হয়,” এটা বলার পর কেন যেন মনে হল আমি একটা ল্যান্ড মাইনে আছি। একটু এদিক ওদিকে আমার খবর হয়ে যাবে।



তখনই উদ্ধারকর্তার মত করে সুমনা হাজির। সে হাপাতে হাপাতে আমার দিকে একবার তাকিয়ে সে মেয়েটার দিকে তাকাল, বলল, “মীরা আপু তুমি কি পরিবর্তন হবে না।”



হাহ, মীরা আপু! এই মেয়েটা তার নাম মীরা বলেছিল, কিন্তু সুমনা একে আপু বলছে, মানেটা কি?



আমার প্রশ্নের উত্তর দিল সুমনা, “এ হচ্ছে আমার কাজিন, মীরা। ঢাকা ইউনিভার্সিটির ফার্ষ্ট ইয়ারে আছে।”



আমি কিছু বললাম না মাথা ঝাকালাম, সুমনা এবার মীরা আপুর দিকে তাকিয়ে বলল, “এ রানা, একই কলেজে পড়ি।”



“এই বেয়াদবটার সাথে তো কি সম্পর্ক?” মীরা আপু সুমনাকে জিজ্ঞেশ করল।



আরে আমি বেয়াদব হয়ে গেলাম কবে, আপনিই তো আমার সাথে গায়েপড়ে কথা বলতে এসেছেন, মনে মনে বললাম।



“আরে আমার ফ্রেন্ড, তো এখন নীলক্ষেতে চল, বই কিনব।”



“বই কিনবি তাহলে চল। কিন্তু এ আমাদের সাথে আসছে কেন,” মীরা আপু আমার দিকে আঙ্গুল তাক করে জিজ্ঞেশ করল।



“কারন আমি বই কিনব,” আমি প্রশ্নের জবাব দিলাম।



“কি বই?”



“ভাল যেকোনো বই।”



এরপর আমাদের মাঝেকথা হল না। আমরা তিনজন একসাথে নীলক্ষেতে দিকে রওনা দিলাম।



নিউমার্কেটে সুমনা দামাদামিতে যেভাবে হতবাক করেছিল, ঠিক সেভাবে মীরাআপু নীলক্ষেতে আমাকে হতবাক করল। সুমনাতো তর্কাতর্কি পর্যায়ে চলে গিয়েছিল, আর মীরা আপু সেখানে প্রায় হাতাহাতি পর্যায়ে চলে গিয়েছিল, তবে সেটা অল্পকয়েকটা দোকানের ক্ষেত্রে। আর আমার বইয়ের পছঅন্দ দেখে মীরা আপু কেমন জানি আমার প্রতি নমনীয় হয়ে গেলেন। কিছু ভাল ভাল বইয়েরও কথা উল্লেখ করে দিলেন।



বই টই সব কেনা শেষ হতেই দেখি প্রায় একটার মত বেজে গেছে। সুমনা আমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেশ করল, “কি জুমার নামাজ পড়বে না?”



“এত কিছু নিয়ে কিভাবে যাব। তা তোমরা এখন কি করবে।”



“আমি মীরা আপুর বাসায় যাব,”



“ও, আচ্ছা তাহলে চলে যাই আমি।”



“আচ্ছা ঠিক আছে, আর কালকে ক্লাব মিটিং হবে ভুলে যেও না যেন।”



ক্লাব, শব্দটা শেলের মত করে বিধল, আমি শুকনো একটা হাসি দিয়ে বললাম, “আচ্ছা ঠিক আছে।”



এরপর আমরা যে যার দিকে চলে যেতে লাগলাম।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে মে, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:১৪

দেব মিত্র বলেছেন: আপনি তো বেশ ভালো লেখেন :)

২৪ শে মে, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৪৩

আজবছেলে বলেছেন: ধন্যবাদ।

২| ২৫ শে মে, ২০১৪ সকাল ৮:১১

মোঃ মাহমুদুর রহমান বলেছেন: আমি প্রতিদিন আপানার লেখার জন্য ওয়েট করি ভাই। আপনার লেখার হাত খুব ভালো।

২৫ শে মে, ২০১৪ সকাল ৮:৫৬

আজবছেলে বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই, এইরকম কথা শুনলে সত্যিই ভালো লাগে, লেখায় উৎসাহ আসে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.