নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
১৯৮৭ সালে আইনজীবী হিসাবে ময়মনসিংহ বারে এবং পরে ঢাকা বারে যোগদান করি। ১৯৯২ সালে সুপ্রিম কোর্ট বারে যোগ দেই।
অনেক দিন আগে চট্টগ্রামে একজন হীরার ব্যবসায়ী বাস করতেন। তার তিন ছেলে ছিল, তারাও বড় ব্যবসায়ী ছিল। প্রত্যেকেই বিয়ে-শাদি করে আলাদা আলাদা বাসায় বাস করতো।
বৃদ্ধ বয়সে হীরার ব্যবসায়ী মারা গেলে, মৃত্যু সংবাদ শুনে ছেলেরা এবং অন্যান্য আত্মীয় স্বজন তার বাড়িতে আসে। ছেলেরা দাবি করে দাফন-কাফন করার আগেই তাদের আব্বার সব সম্পত্তি তাদের মধ্যে সমান ভাবে ভাগ করে দিতে হবে। তাদের দাবি মত মৃতের সব সম্পত্তি ছেলেদের মাঝে সমান ভাবে ভাগ করে দেয়া হয়। ছেলেরা এতে সন্তুষ্ট হয়। কিন্তু মেঝো ছেলে একটা আপত্তি করে, তার আব্বার হাতে একটা হীরার মূল্যবান আংটি আছে, সেটাও তিন ভাইয়ের মাঝে সমান ভাবে ভাগ করে দিতে হবে।
মেঝো ছেলের পীড়াপীড়িতে মৃতের কাফন খোলা হয়, কিন্তু মৃতের হাতে কোন আংটি পাওয়া যায় নাই। এই অবস্থায় সবাই সবাইকে সন্দেহ করতে থাকে। এরমধ্যে মেঝো ছেলে ঘোষণা করে, তার আব্বার আংটি কে চুরি করেছে সেটা বের না করা পর্যন্ত দাফন কাজ বন্ধ থাকবে।
আত্মীয়-স্বজনরা যখন এই সমস্যার সমাধান করতে হিমশিম খাচ্ছে তখন একজন বৃদ্ধ আত্মীয় প্রস্তাব করলেন, কর্ণফুলী নদীর পারে একটা বটগাছ আছে। তার নিচে নবতিপর বৃদ্ধ একজন মানুষ বসে থাকে। তার কাছে জিজ্ঞেস করলে হয়তো সে একটা সমাধান দিতে পারবে।
বটগাছের নিচ থেকে সেই নবতিপর বৃদ্ধকে নিয়ে আসা হল। তাকে সমস্যার কথা বিস্তারিত জানানো হল।
ওই বাড়ির বিশাল হল ঘরে সবাইকে আসতে বলা হল। নবতিপর বৃদ্ধ ঘোষণা করলেন, অপ্রাপ্ত বয়স্করা ছাড়া বাকি সব ব্যক্তি এই হল ঘরে থাকবে। সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত কেউ এই হল ঘরের বাইরে যেতে পারবে না। তিনি আরো বললেন, সমস্যাটা জটিল কিন্তু তিনি সব ধরণের চেষ্টাই করবেন অপরাধীকে ধরার জন্য।
তিনি বললেন, তিন একটা অনেক পুরাতন গল্প বলবেন। উপস্থিত কেউ টু শব্দ করতে পারবে না। মনোযোগ দিয়ে শুনতে হবে। খুব মজার গল্প।
তিনি গল্প বলতে শুরু করলেন ---
অনেক অনেক দিন আগে চট্টগ্রাম শহরতলীর কাছে এক গ্রামে এক তাঁতি বাস করতো। হঠাৎ করে তার আব্বা মারা যাওয়ার পর সে পাশের গ্রামের খুব সুন্দরী একটা মেয়েকে বিয়ে করে। বাসর রাতে নব-বধূ ঘোমটায় মুখ ঢেকে বসে আছে। বর ঘোমটা সরিয়ে নব-বধূর মুখ দেখতে চাইলে, সে বলল, "আমার একটা ইচ্ছা পুরা করলেই তুমি আমার মুখ দেখতে পাবে। তার আগে কোন অবস্থাতেই দেখতে পাবে না।"
এই অদ্ভুত কথা শুনে বরটি চুপ করে রইল। বুঝতে পারছে না সে কি বলবে। বধূটি আবার তার আগের শর্তের কথা বলল। গভীর রাত, চারিদিক নির্জন, নিস্তব্ধ, মাঝে মাঝে কুকুর ডাকছে। উপায়ন্তর না দেখে সে রাজি হল।
নব-বধূটি বলল, তার প্রেমিক মহেশখালী নদীর পারে তার জন্য অপেক্ষা করছে। সে তাকে কথা দিয়েছে, বিয়ের রাতে সে তার সাথে শেষ বারের মত দেখা করবে। আজ রাত তিনটা মধ্যে সে যদি তার সাথে দেখা না করে, তা হলে তার প্রেমিক নদীতে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করবে। আর এই মৃত্যুর জন্য সে দায়ী থাকবে।
সে আরো বলল, "আমার হাতে সময় নেই। আমাকে এখনই যেতে হবে এবং অবশ্যই একা যেতে হবে।"
মহেশখালী নদী বাড়ি থেকে খুব কাছেই। মাত্র কয়েক মিনিটের পথ।
নব-বধূ যখন জঙ্গলের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তখন এক ডাকাত তার পথ রোধ করে দাঁড়াল।
নব-বধূ পরিষ্কার ভাবে জানতে চাইল, "কি ব্যাপার? কেন আমাকে থামালে? তোমার উদ্দেশ্যটা কি?"
ডাকাত তো অবাক! সারা জীবন সে অনেক ডাকাতি করেছে, অনেক মানুষ দেখেছে কিন্তু এমন সাহসী মানুষ তো দেখেনি। তার উপর আবার মহিলা।
ডাকাত নব-বধূটির মতোই পরিষ্কার করে বলল, আল্লাহ তার দিকে মুখ তুলে চেয়েছেন। মহিলার শরীরে এত গহনা। এইগুলি আজকে নিতে পারলে সারা জীবন আর ডাকাতি করতে হবে না। বসে বসে খেতে পারবে।
বধূটি ডাকতে বলল, "আমার এত সময় নেই, তোমার এই ফালতু কথা শোনার। বরং তুমি আমার কথা শুনো। আমার কথায় তুমি সন্তুষ্ট না হলে, তোমার যা ইচ্ছা তাই করো। আমি একজন বিবাহিত মহিলা। আমার প্রেমিক নদীর পারে আমার সাথে দেখা করার জন্য অপেক্ষা করছে। রাত তিনটা বাজার আগেই তার সাথে আমার দেখা করতে হবে। আমার স্বামী আমাকে অনুমতি দিয়েছে তার সাথে দেখা করার। তার সাথে দেখা করেই আমি ফিরে আসব। আমি যদি সময় মত পৌঁছতে না পারি, তা হলে সে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে আত্ম হত্যা করবে। বুঝতেই পারছ, তার জীবন মৃত্যুর ঝুঁকির মধ্যে আছে। আমি তোমাকে কথা দিচ্ছি, প্রেমিকের সাথে দেখা করে ফিরার পথে আমার সব গয়নাগাটি তোমাকে দিয়ে যাব।"
এই কথা শুনে ডাকাতের মন মোমের মত গোলে গেল। সে বধূটিকে বলল, "বোন, তাড়াতাড়ি তোমার প্রেমিকের কাছে যাও। তার জীবন বাঁচাও।"
সে যেয়ে দেখে তার প্রেমিক তার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। সে তার প্রেমিকের হাত ধরে বলল, "শত অসুবিধা সত্ত্বেও আমি আমরা কথা রেখেছি।
এখন তুমি কথা দাও, তুমি আমাকে ভুলে যাবে। এবং কোন মেয়েকে বিয়ে করে সুখে জীবন কাটাবে। আমি এখন একজনের বিবাহিতা স্ত্রী। সামাজিক রীতিনীতি এবং ধর্মীয় বিধান মতে আমি আমার স্বামীর প্রতি বিশ্বস্ত থাকব, তার কথা মত চলব, তাকে সুখী করার চেষ্টা করব। আমার স্বামীই আমার কাছে সব কিছু।"
বৃদ্ধ ব্যক্তিটি এই পর্যন্ত বলে থামলেন। এরপর উপস্থিত লোকদেরকে উদ্দেশ্য করে জিজ্ঞেস করলেন, "কেউ কি বলতে পারেন, স্বামীটি, ডাকাতি এবং প্রেমিকটির মধ্যে কে শ্রেষ্ঠ?"
মৃত ব্যক্তির সর্ব কনিষ্ঠ ছেলেটি আনন্দে চিৎকার করে উত্তর দিল, "ডাকাতটি, ডাকাতটিই এই তিন জনের মধ্যে সবচেয়ে মহৎ ব্যক্তি। "
বৃদ্ধ মৃত ব্যক্তির বড় ছেলেকে বললেন, "তোমার এই ছোট ভাই আংটি চুরির সাথে জড়িত। সে খুব চালাকি করে আংটিটি চুরি করেছিল। এখন জনসমক্ষে ধরা পরে গেল। "
বৃদ্ধ মৃত ব্যক্তির সর্ব কনিষ্ঠ ছেলেটি বললেন, "তাড়াতাড়ি হীরার আংটিটি বের করে দাও। না হলে তোমাকে পুলিশে দিব।"
ছেলেটি কাঁদতে কাঁদতে দোষ স্বীকার করলো এবং কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা চাইল।
১০ ই এপ্রিল, ২০১৯ রাত ৯:৩১
মোহাম্মদ আলী আকন্দ বলেছেন:
গল্পটি যদি আপনার ভাল লেগে থাকে, সেটা আমার জন্য আনন্দের।
একেক জনের কাছে একেক জনকে মহৎ মনে হতে পারে।
২| ১০ ই এপ্রিল, ২০১৯ রাত ১০:১১
সুমন কর বলেছেন: দারুণ। আগে পড়া হয়নি। চমৎকার শেয়ার। +।
১০ ই এপ্রিল, ২০১৯ রাত ১০:২৯
মোহাম্মদ আলী আকন্দ বলেছেন:
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
আগে পড়বেন কি করে?
পোস্ট করলাম কিছুক্ষণ আগে।
৩| ১১ ই এপ্রিল, ২০১৯ সকাল ৯:০১
রাজীব নুর বলেছেন: দূর্দান্ত গল্প।
১১ ই এপ্রিল, ২০১৯ রাত ১০:০৩
মোহাম্মদ আলী আকন্দ বলেছেন:
এটা একটা বিদেশী গল্পের ছায়া অবলম্বনে লেখা।
ফেসবুকে একটা পোষ্টে আমার এক বন্ধু প্রশ্ন করেছিল, মানুষ কেন বলে "Old Is Gold"
এই প্রশ্নের উত্তর দিতে যেয়ে এই গল্পটা বলেছিলাম।
পরে মনে হলো, ফেসবুকে মানুষ গল্প-টল্প পড়ে না।
বরং somewherein এ দিলে দুই/একজন হলেও পড়তে পারে।
গল্পটা পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
ভাল লাগার জন্য ধন্যবাদ।
৪| ০৮ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ১২:২১
মোঃ মঈনুল ইসলামঢ় তুষার বলেছেন: গল্প বলার ধরন কি সুন্দর ,
১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ১:০৭
মোহাম্মদ আলী আকন্দ বলেছেন:
গল্পটা পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
ভাল লাগার জন্য ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১| ১০ ই এপ্রিল, ২০১৯ রাত ৯:২৪
জুন বলেছেন: শিক্ষনীয় গল্প। আমি স্বামীটিকে শ্রেষ্ঠ মনে করি।