নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি ময়মনসিংহ জেলা স্কুল থেকে ১৯৭৭ সালে এস.এস.সি এবং আনন্দ মোহন কলেজ থেকে ১৯৭৯ সালে এইচ.এস.সি পাশ করেছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮৪ সালে এলএল.বি (সম্মান) এবং ১৯৮৫ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএল.এম পাশ করি।

মোহাম্মদ আলী আকন্দ

১৯৮৭ সালে আইনজীবী হিসাবে ময়মনসিংহ বারে এবং পরে ঢাকা বারে যোগদান করি। ১৯৯২ সালে সুপ্রিম কোর্ট বারে যোগ দেই।

মোহাম্মদ আলী আকন্দ › বিস্তারিত পোস্টঃ

শুধু দুটি জিনিস আছে। সত্য এবং মিথ্যা। সত্য অবিভাজ্য, তাই এটি নিজেকে চিনতে পারে না; যদি কেউ এটিকে চিনতে চায় তাহলে এটাকে মিথ্যা হতে হবে।

২২ শে জানুয়ারি, ২০২৪ রাত ৮:২১



There are only two things. Truth and lies. Truth is indivisible, hence it cannot recognize itself; anyone who wants to recognize it has to be a lie.

এটা ফ্রাঞ্জ কাফকার একটি বিখ্যাত উক্তি। এই কথার দ্বারা তিনি সত্যের প্রকৃতি এবং মানুষের অভিজ্ঞতার সাথে সত্যের সম্পর্কের একটি গভীর এবং রহস্যময় ধারণা দিয়েছেন।

কাফকার এই কথাটির অন্তর্নিহিত অর্থের আরও গভীরে অনুসন্ধান করা যাক:

১. সত্য ও মিথ্যার দ্বৈততা:

কাফকা প্রথমেই সত্য এবং মিথ্যার মধ্যে একটি সম্পূর্ণ বৈসাদৃশ্য স্পষ্ট করে উল্লেখ করেন। বাস্তবতাকে দ্বৈত সত্তা হিসাবে দেখান। তিনি সত্যকে পরম এবং একক হিসাবে উপস্থাপন করেন। পক্ষান্তরে মিথ্যা সত্যের বিপরীত। এতে তিনি বুঝাতে চান যে বাস্তবতার ধরণ হচ্ছে বহুমুখী এবং ছলনাময়ী।

২. সত্যের অবিভাজ্যতা:

সত্য অবিভাজ্য। সত্য একটি একীভূত সমগ্র। সত্য একটি সম্পূর্ণ এবং অখণ্ডিত বাস্তবতা হিসাবে বিদ্যমান। সত্যকে কোন ছোট অংশে বিভক্ত বা পৃথক করে বিশ্লেষণ করা যায় না।

৩. সত্যের নিজেকে চিনতে অক্ষমতা:

সত্য নিজেকে চিনতে পারে না। এইখানে কাফকা একটি প্যারাডক্সিকাল ধারণার অবতারণা করেন। সত্য পরম হওয়া সত্ত্বেও এটার আত্ম-সচেতনতার অভাব রয়েছে। সত্য একটি বিশুদ্ধ রূপ হিসাবে বিদ্যমান কিন্তু এটি স্বাধীনভাবে তার নিজের অস্তিত্ব যাচাই করতে পারে না।

৪. সত্যকে চিনতে মিথ্যার ভূমিকা:

কাফকার এই ধারণাটি সবচেয়ে কৌতূহলোদ্দীপক অংশ। কাফকা মনে করেন যে সত্যের স্বীকৃতির জন্য কিছু পরিমাণ মিথ্যার প্রয়োজন আছে। এর দ্বারা তিনি বুঝাতে চেয়েছেন যে সত্যকে বোঝার জন্য একটি রেফারেন্সের ফ্রেম প্রয়োজন হয়। সত্যকে এমন কিছুর সাথে তুলনা করতে হবে যা সত্য নয়। অর্থাৎ মিথ্যার সাথে সত্যকে তুলনা করলে সত্য প্রকাশিত হয়। তাই মিথ্যা সত্যের প্রকৃতি প্রকাশ ও স্বীকৃতির ক্ষেত্রে অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে



অর্থ ও ব্যাখ্যা:

(ক) কাফকার এই কথাটি বেশ কিছু চিন্তা উদ্দীপক প্রশ্ন মনে জাগায়। সত্য কি সত্যিই দ্বৈত সত্তা বিশিষ্ট, নাকি এটি একক সত্তার ভিন্ন ভিন্ন রূপ? কি উপাদান দিয়ে মিথ্যা গঠিত হয়? কিছু মিথ্যা কি মানুষকে সত্যের কাছাকাছি নিয়ে যেতে পারে? সত্য সম্পর্কে বোঝার জন্য কি সবসময় আস্থা, বিশ্বাস, শ্রদ্ধা, ভক্তি বা মনোযোগ প্রয়োজন অথবা ব্যাখ্যার প্রয়োজন হয়?

(খ) এই কথাটি পরম সত্যকে উপলব্ধি করার ক্ষেত্রে মানুষের সীমাবদ্ধতার উদাহরণ হিসাবে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। মানুষ বাস্তবতা বুঝানোর জন্য ভাষা, উপলব্ধি এবং বিষয়গত অভিজ্ঞতার উপর নির্ভর করে। মানুষ এরদ্বারা সহজাতভাবে নিজেদের এবং অবিভাজ্য সত্যের মধ্যে একটি দূরত্ব তৈরি করে।

(গ) এই কথাটিকে জ্ঞান অর্জন এবং বাস্তবতাকে বোঝার জন্য মানুষের প্রচেষ্টার প্রতিফলন হিসাবেও দেখা যেতে পারে। সত্যকে স্বীকৃতি দেওয়া সাথে মিথ্যার মুখোমুখি হওয়া জড়িত, এই ধারণাটি সত্য জ্ঞান অন্বেষণে অন্তর্নিহিত জটিলতা এবং চ্যালেঞ্জগুলির উপর জোর দেন।

(ঘ) সত্য ও মিথ্যা দুটি বিপরীতমুখী ধারণা, যা একে অপরের পরিপূরক। সত্য হল বাস্তবতার যথাযথ প্রতিফলন, অন্যদিকে মিথ্যা হল বাস্তবতার বিকৃত বা অসত্য প্রতিফলন।

(ঙ) সত্য ও মিথ্যা হল দুটি ভিন্ন বাস্তবতা। সত্য হল বাস্তবতার একমাত্র বাস্তবতা, অন্যদিকে মিথ্যা হল একটি অবাস্তবতা। এই ব্যাখ্যা অনুসারে মিথ্যা সত্যকে আড়াল করে বা বিকৃত করে। কিন্তু কাফকার মতে মিথ্যা সত্যকে প্রকাশ করে।

(চ) আরেকটি ব্যাখ্যা হল যে সত্য ও মিথ্যা হল বাস্তবতার দুটি দিক। সত্য হল বাস্তবতার বাহ্যিক দিক, অন্যদিকে মিথ্যা হল বাস্তবতার অন্তর্নিহিত দিক। এই ব্যাখ্যা অনুসারে মিথ্যা সত্যের একটি অপরিহার্য অংশ।

(ছ) ফরাসি দার্শনিক জঁ-পল সার্ত্রে সত্য ও মিথ্যার দ্বৈততাকে একটি জটিল এবং দ্বন্দ্ব পূর্ণ ধারণা হিসেবে দেখেছেন। তিনি বলেছেন যে সত্য ও মিথ্যা হল দুটি "অসম" ধারণা, যা একে অপরের সাথে লড়াই করে। সার্ত্রের মতে, সত্যকে অর্জন করার জন্য আমাদেরকে মিথ্যার সাথে লড়াই করতে হবে।



শেষকথা, কাফকার এই কথাটি সত্য এবং সত্য অনুধাবন সম্পর্কে মানুষের ধারণা নিয়ে প্রশ্নের উদ্রেক করে। এই কথাটির দ্বারা সমালোচনামূলক আত্মবিশ্লেষণকে উৎসাহিত করে এবং মানুষকে বাস্তবতার সূক্ষ্ম এবং প্যারাডক্সিকাল প্রকৃতিকে গ্রহণ করতে অনুপ্রাণিত করে। বাস্তব অবস্থায় সত্য এবং মিথ্যার মধ্যে রেখাগুলি প্রায়শই ঝাপসা হয়ে যায় এবং একে অপরের সাথে জড়িত হয়ে থাকে।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে জানুয়ারি, ২০২৪ রাত ১০:০০

মাহমুদুর রহমান সুজন বলেছেন: বড়ই জটিল বিষয়।

২২ শে জানুয়ারি, ২০২৪ রাত ১১:৩১

মোহাম্মদ আলী আকন্দ বলেছেন:


জটিল সন্দেহ নাই।
কিন্তু অনুভূতি, উপলব্ধি, জ্ঞান, বুদ্ধি, চেতনা, ধারণা, অনুমান, আন্দাজ বা বোধের অগম্য নয়।

২| ২৩ শে জানুয়ারি, ২০২৪ সকাল ১০:২৮

রাজীব নুর বলেছেন: সত্য কথা বলতে কি কাফকা আজকের দিনে অচল।

২৩ শে জানুয়ারি, ২০২৪ রাত ১০:৫২

মোহাম্মদ আলী আকন্দ বলেছেন:



না, আমি মনে করি না যে কাফকার দৃষ্টিভঙ্গি আজকের দিনে অচল। তার কাজগুলি এখনও প্রাসঙ্গিক এবং আমাদের জীবনের সাথে প্রতিধ্বনিত হয়।

কাফকার কাজগুলির মূল থিমগুলির মধ্যে একটি হল অনির্দিষ্টতা এবং উদ্বেগ। তার চরিত্রগুলি প্রায়শই একটি অজানা এবং দুর্বোধ্য জগতে হারিয়ে যায়, এবং তারা তাদের পরিস্থিতি বা তাদের ভবিষ্যতের উপর কোন নিয়ন্ত্রণ অনুভব করে না। এই ধারণাগুলি আজকের দিনে আরও প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছে, যখন আমরা একটি বিশ্বে বাস করি যা ক্রমবর্ধমান জটিল এবং অনিশ্চিত হয়ে উঠছে।

কাফকার কাজগুলিও ব্যক্তিগত এবং সামাজিক অস্তিত্বের সমস্যাগুলি অন্বেষণ করে। তার চরিত্রগুলি প্রায়শই তাদের নিজস্ব পরিচয় বা তাদের স্থানের জন্য সংগ্রাম করে। এই থিমগুলি আজকের দিনেও প্রাসঙ্গিক, যখন আমরা একটি বিশ্বে বাস করি যা ক্রমবর্ধমান বৈচিত্র্যময় এবং দ্রুত পরিবর্তনশীল হয়ে উঠছে।

কাফকার কাজগুলির একটি নির্দিষ্ট উদাহরণ যা এখনও প্রাসঙ্গিক হল তার উপন্যাস মেটামরফোসিস। এই উপন্যাসে একটি সাধারণ মানুষ এক সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখে যে সে একটি বিশাল পোকায় পরিণত হয়েছে। এই পরিবর্তনটি তার জীবনকে উল্টে দেয়, এবং সে তার পরিচয় এবং তার স্থান সম্পর্কে হতবাক হয়ে পড়ে। এই গল্পটি আজকের দিনে প্রাসঙ্গিক কারণ এটি আমাদের ব্যক্তিগত পরিচয় এবং আমাদের সামাজিক ভূমিকার অনিশ্চয়তা সম্পর্কে প্রশ্ন করে।

কাফকার কাজগুলি আমাদের জীবনের অন্ধকার দিকগুলিকে অন্বেষণ করার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায়। তারা আমাদেরকে আমাদের ভয় এবং অনিশ্চয়তার মুখোমুখি হতে এবং আমাদের অস্তিত্বের অর্থ সম্পর্কে প্রশ্ন করতে সাহায্য করতে পারে।


৩| ২৩ শে জানুয়ারি, ২০২৪ দুপুর ১:৩০

বিজন রয় বলেছেন: সুন্দর, সুন্দর।

সত্য।

২৩ শে জানুয়ারি, ২০২৪ রাত ১১:১৬

মোহাম্মদ আলী আকন্দ বলেছেন:


কাফকার চিন্তাভাবনা এবং মনোবৃত্তি এখনও আনুষঙ্গিক, প্রাসঙ্গিক, এবং নৈমিত্তিক যা আমাদের জীবনের সাথে প্রতিধ্বনিত এবং অনুরণিত হয়।

কাফকার কাজগুলির মূল থিমগুলির মধ্যে একটি হল অনির্দিষ্টতা, অনির্ণীত বা অনিশ্চিত বিষয় বা সময় এবং উদ্বেগ, সন্দেহজনিত ব্যাকুলতা, উৎকণ্ঠা এবং দুশ্চিন্তা। তার চরিত্রগুলি প্রায়শই একটি অজানা, অজ্ঞেয় বা অপরিচিত এবং দুর্বোধ্য বা দুর্জেয় জগতে হারিয়ে যায়, এবং তারা তাদের পরিস্থিতি বা তাদের ভবিষ্যতের উপর কোন নিয়ন্ত্রণ, ক্ষমতা, শক্তি, পরাক্রম, প্রভাব, বা শাসন অনুভব করে না। এই ধারণাগুলি আজকের দিনে আরও প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছে, যখন আমরা একটি বিশ্বে বাস করি যা ক্রমবর্ধমান জটিল, দুর্বোধ্য, গোলমেলে, অনির্দিষ্ট, অস্থির এবং অনিশ্চিত হয়ে উঠছে।

কাফকার কাজগুলিও ব্যক্তিগত এবং সামাজিক অস্তিত্বের সমস্যাগুলি অন্বেষণ এবং অনুসন্ধান করে। তার চরিত্রগুলি প্রায়শই তাদের নিজস্ব পরিচয় বা তাদের স্থানের জন্য প্রচেষ্টা চালায়, সংগ্রাম এবং যুদ্ধ করে। এই থিমগুলি আজকের দিনেও আনুষঙ্গিক, প্রাসঙ্গিক, এবং নৈমিত্তিক। কারণ আমরা একটি বিশ্বে বাস করি যা ক্রমবর্ধমান বৈচিত্র্যময় দ্রুত পরিবর্তনশীল এবং অস্থির হয়ে উঠছে।

কাফকার কাজগুলির একটি নির্দিষ্ট উদাহরণ যা এখনও প্রাসঙ্গিক হল তার উপন্যাস মেটামরফোসিস। এই উপন্যাসে একটি সাধারণ মানুষ এক সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখে যে সে একটি বিশাল পোকায় পরিণত হয়েছে। এই পরিবর্তনটি তার জীবনকে উল্টে দেয়, এবং সে তার পরিচয় এবং তার স্থান সম্পর্কে হতবাক হয়ে পড়ে। এই গল্পটি আজকের দিনে প্রাসঙ্গিক কারণ এটি আমাদের ব্যক্তিগত পরিচয় এবং আমাদের সামাজিক ভূমিকার অনিশ্চয়তা সম্পর্কে প্রশ্ন করে।

আরেকটি উদাহরণ হল তার উপন্যাস "দ্য প্রসেসে"। এই উপন্যাসে, একটি সাধারণ মানুষ তার বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়, কিন্তু তাকে তার অপরাধের প্রকৃতি সম্পর্কে কখনই জানানো হয় না। তাকে একটি জটিল এবং দুর্বোধ্য বিচার প্রক্রিয়া দিয়ে যেতে হয়, এবং সে তার বিরুদ্ধে অভিযোগগুলির বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষা করার কোন উপায় খুঁজে পায় না।

কাফকার কাজগুলি আমাদের জীবনের অন্ধকার দিকগুলিকে অন্বেষণ এবং অনুসন্ধান করার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায়। তার এই কাজগুলি আমাদেরকে আমাদের ভয় এবং অনিশ্চয়তার মুখোমুখি হতে এবং আমাদের অস্তিত্বের অর্থ সম্পর্কে প্রশ্ন করতে সাহায্য করতে পারে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.