![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়ার অপরাধে রাজাকার ও মুজাহিদরা তাদের বাড়ি জালিয়ে দেয়
১৭৫৭ সালে পলাশীর পান্তরে বাংলার শেষ নবাব সিরাজদ্দৌলার মৃত্যুর পর অস্তমিত হল আমাদের বাংলার স্বাধীনতা সূর্য। তার পর ২০০ বছর ইংরেজদের গোলামী পর যখন একটা রাষ্ট্র আমাদের উপহার দিলো দুইটি খন্ডে ভিবক্ত পূর্ব পাকিস্তান আর পশ্চিম পাকিস্তান। একি অপরের দুরুত্ব ছিল ১১০০ মাইল। তাদের সাথে আমাদের ভাষা, সংস্কৃতি ও খাদ্যভ্যাস কিছুই মিল ছিল না শুধু ধর্মের ভিত্তিতে একটি দেশ হয়ে গেলো। আমরা জন সংখ্যা বেশী হলেও তারা আমাদের শোসন করতে শুরু করল। আমাদের গর্ভ ছিল শোনালী আঁশ (পাট)। সেই পাটের টাকা দিয়ে তাদের অঞ্চল কে তারা সম্বৃদ্ধ করতে শুরু করলো। অবশেষে আমাদের মায়ের ভাষা বাংলা ভাষার উপর যখন আঘাত হানলো তখন ৫২‘র শহীদের তাজা রক্তে রঞ্জিত হল ঢাকার রাজ পথ। তার পর লড়াই আর থামেনি। ৫৪ যুক্ত ফ্রন্ট নির্বাচনে মুসলিমলীগের ভরাডুবি এরপর ৬৪‘র ৬ দফা ৬৯‘র এ গন অভ্যুথান, ৭০‘র নির্বাচনে আওয়ামীলীগের নিরঙ্কুশ বিজয় ও ৭১ মুক্তি যুদ্ধ অবশেষে ১৬ ডিসেম্বরের বিজয়। এই কথাগুলো বলতে বলতে তিনি শিহরীত হয়ে পড়েন, তিনি আর কেউ নন মুক্তিযোদ্ধা আলী আকবর ভুঁইয়া। পিতা মৃত বাদশা মিয়া ভুঁইয়া। গ্রাম মহালঙ্গা। পোষ্ট অফিস বালিয়াদি। উপজেলা মীরসরাই। এপ্রিল মাসেই তিনি মুক্তি যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন। ছিলেন প্লাটুন কমান্ডার। তার প্লাটুনে ছিল ৩৭ জন মুক্তি যোদ্ধা। থানা কমান্ডার ইঞ্জিনিয়ার ইউসুফ সালাউদ্দিনের নেতৃত্বে মুক্তি যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন বলেন তিনি জানান। এলাকা ছিল সিতাকুন্ড। প্রথমে আসামের লোহারগড় ক্যাম্পে মুক্তি যুদ্ধের ট্রেনিং নেন। সামনা সামনি যুদ্ধ করেন সিলেট জেলায়। সেখানে যুদ্ধে তিন জন মুক্তি যুদ্ধা শহীদ হন এবং পাঁচ জন গুরুত্বর আহত হন। এরপর দুটি লাশ পাওয়া যায়। একটি লাশ খাল দিয়ে ভেসে চলে যায়। এরপর তিনি চলে আসেন সিতাকুন্ডে। এখানে এসে শুরু করেন গেরিলা আক্রমন। ৭ই মার্চে বঙ্গ বন্ধুর ভাষন এবং তার আব্বার অনুপ্রেরনায় মুক্তি যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন বলে জানান। মুক্তি যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করার অপরাধে তাদের বাড়িটি রাজাকার এবং মুজাহিদরা ৪ সেপ্টেম্বর আগুন দিয়ে জালিয়ে দেয়। এতে ৬৮টি পরিবারের ঘর সম্পুন্ন রুরে বর্ষিভুত হয়ে যায়। তাদের বাড়িতে রাজাকার এবং মুজাহিদের সাথে এক যুদ্ধ সংগঠিত হয়। সেখানে তিন জন মুক্তি যোদ্ধা শহীদ হন। তাদের নাম হচ্ছে, আবুল হোসেন, আবদুল মোতালেব এবং টিপু। পরবত্বীতে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর সংসদ সদস্য এম আর সিদ্দিকী শহীদদের স্মৃতি রক্ষাত্বে একটি স্মৃতি পলক তৈরি করেন। এরপর মাননীয় সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন হিতু মোহাম্মদ ভুঁইয়া বাড়ির জামে মসজিদ কবরস্থানের পাশে একটি শহীদ মিনার প্রস্তুত করে দেন। মুক্তি যুদ্ধে তাদের বাড়ি থেকে সবচেয়ে বেশী মুক্তি যোদ্ধা অংশ গ্রহণ করেন বলে জানান। প্রায় ২৬ জনের মত মুক্তিযোদ্ধা অংশ গ্রহণ করেন। ১১ এবং ১২ ডিসেম্বর পাকিস্তানীদের সাথে ছোট দারগোহাটে সামনা সামনি যুদ্ধে লিপ্ত হন। এই যুদ্ধে তিন জন রাজাকার এবং দুইজন বিহারীকে মুক্তি যোদ্ধা হত্যা করেন। যুদ্ধের সময় তিনি চট্টগ্রাম সিটি কলেজের ইন্টার মেডিয়েটের ছাত্র ছিলেন। যুদ্ধে তাদের বাড়ির একজন মুক্তি যোদ্ধা শাহাদাত বরণ করেন । তার নাম আবদুল জলিল। তিনি কুমিরার ঘাটঘর এলাকায় যুদ্ধে শহীদ হন। যুদ্ধের পর তিনি প্রগতি ইন্ডাস্টিজের চাকরি করেন এবং বর্তমানে অবসর জীবন যাপন করছেন। তার দুই ছেলে এবং দুই মেয়ে।
১৬ ডিসেম্বর এলেই তার হৃদয় আনন্দে উদ্ভাসিত হয়ে যায়। এবং পাশাপাশি বেদনাও জাগে। কারণ নয় মাসের দীর্ঘ সংগ্রামে অসংখ্য মানুষ তাদের প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন। অবশ্যই প্রাণের বিনীময়ে পাওয়া এই বিজয় হচ্ছে অনন্য। দেশমাতৃকার মুক্তির যুদ্ধে যারা শহীদ হয়েছেন, যারা স্বজন হারিয়েছেন, যারা লাঞ্চিত হয়েছেন তাদেরকে কখনো ভুলতে পারবেনা তাদের আত্মত্যাগের স্মৃতি। তার জীবনের স্বরনীয় ঘটনাই হচ্ছে মুক্তি যুদ্ধ। যত দিন বেছে থাকবেন ততদিন ১৯৭১ কে স্বরণ করে যাবেন বলে তিনি জানান।
©somewhere in net ltd.