![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ২৫ অক্টোবরের সমাবেশ থেকে বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ঘোষণা দিয়েছিলেন যে, "আগামী ২৬ অক্টোবর ২০১৩ ইং তারিখের মধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে সংলাপের উদ্যোগ নেয়া না হলে সারাদেশে ২৭ অক্টোবর থেকে ২৯ অক্টোবর ২০১৩ পর্যন্ত ৬০ ঘন্টার হরতাল চলবে'। এরই প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী নিজে ২৬ অক্টোবর ২০১৩ ইং তারিখে দুপুরে বিরোধীদলীয় নেত্রীর লাল টেলিফোনে প্রায় আধঘন্টাব্যাপী কল করেন। কিন্তু অপর প্রান্তে রিং হলেও ফোন রিসিভ না হওয়ায় তিনি আবার সন্ধ্যা ০৬ টা ২০ মিনিটে মোবাইলে কল করে। বিরোধীদলীয় নেত্রীর সাথে সংলাপ ও বিভিন্ন ইস্যুতে প্রায় ৩৭ মিনিট কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী ফোনে বিরোধীদলীয় নেত্রীকে দেশ ও জাতির স্বার্থে হরতাল প্রত্যাহার করে সংলাপের আহবান জানিয়ে গণভবনে নৈশভোজের দাওয়াত দেন এবং যতজন খুশি সাথে নিয়ে আসতে বলেন। জবাবে বিরোধীদলীয় নেত্রী বলেন, আপনারা আগে নির্বাচনে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিন তারপর সংলাপ/আলোচনা হতে পারে। আর হরতাল প্রত্যাহার করা সম্ভব নয়। এছাড়া হরতাল শেষ হবার পর সংলাপের বিষয়ে চিন্তাভাবনা করব। তাঁর উত্তরটি এরকম যে, সবই মানি কিন্তু তালগাছটা আমার। যদি তালগাছটা তাঁরই হয় তাহলে আবার আলোচনার দরকার কী ? পূর্বে শর্তারোপ করে আলোচনার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করা বিরোধীদলীয় নেত্রীর দুরভিসন্ধি বৈকি !
বিএনপি আসলে কী চায় ? সমঝোতার উদ্যোগ না নিলে হরতাল চলবে এমন ঘোষণার প্রেক্ষিতে তাদের বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে যেখানে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী সংলাপের আহবান জানালেন। সেখানে বিরোধীদলীয় নেত্রী সংলাপের আহবানে সাড়া তো দেননিই এমনকি দেশবাসীর জন্য চরম ভোগান্তিকর হরতালও প্রত্যাহার করেননি। বরং তিনি বলেন, হরতাল প্রত্যাহার তার একার বিষয় নয়। ১৮ দলীয় জোট নেতৃবৃন্দের সাথে আলোচনা করে তবেই হরতাল প্রত্যাহার করতে হবে বলে তিনি জানান। প্রধানমন্ত্রী ফোন করার পর হরতাল শুরুর আরও ১২/১৩ ঘন্টা বাকী ছিল। এত দীর্ঘ সময়ের মধ্যেও বিরোধীদলীয় নেত্রী কি ১৮ দলীয় জোটের শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দকে একত্রিত করতে পারলেন না ? আমরা জানি, ১৮ দলের মধ্যে বড় শরীক হচ্ছে জামায়াত। তার মানে জামায়াতের চাপেই কী তিনি হরতাল দিতে বাধ্য হয়েছেন ? তাই জামায়াতের সম্মতি ছাড়া তিনি হরতাল প্রত্যাহার করতে পারবেন না ? তাহলে কেন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে হাজার হাজার জনতার সামনে দাঁড়িয়ে প্রতিশ্র“তি দিলেন ? একজন দায়িত্বশীল সাবেক প্রধানমন্ত্রী তথা বর্তমান বিরোধীদলীয় নেত্রী কিভাবে প্রতিশ্র“তি দিয়ে তা ভঙ্গ করেন ? তা আমার বোধগম্য নয়। আমরা আমজনতা এ প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের রাজনীতি দেখতে চাই না। বোকা বাঙ্গালীকে ধোঁকা দিয়ে রাজনীতির খেলা আর কত ! জাতির এমন দুর্যোগময় মুহুর্তেও যদি তিনি তার জোটভুক্ত নেতাদের একটি জরুরী সভা ডাকতে না পারেন। তাহলে তাঁর নেতৃত্বে এ জোট ক্ষমতায় গেলে দেশের স্বার্থে তারা কী করবে ? তারা নিজেদের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য দেশের বৃহত্তর ক্ষতি/বিপর্যয় ডেকে আনতে হয়তো কুন্ঠাবোধ করবে না। তাইতো তারা দেশ ও জাতির স্বার্থকে উপেক্ষা করে নিজেদের ক্ষমতালিপ্সু আবেগে তাড়িত হয়ে নিজেদের হীন স্বার্থে হরতাল বহাল রাখলেন। জ্বালাও-পোড়াও ও দমননীতি যাদের চিন্তা-চেতনায় ও রক্তে-মাংসে মিশে আছে তাদের কাছে জাতি ভাল কী আশা করতে পারে ? তাদের অসংখ্য বোমাবাজি ও সহিংস হরতাল থেকে আজ দেশের দিনমজুর থেকে শুরু করে নারী অবধি কেহই রেহাই পায়নি। হরতালের নামে বিএনপি তাদের মিত্র সন্ত্রাসী সংগঠন জামায়াতকে দিয়ে দেশব্যাপী যে নারকীয় সহিংসতা চালিয়েছে তা মধ্যযুগীয় বর্বরতা তথা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন নাৎসী বাহিনীর হত্যাকান্ডকেও হার মানায়। তাদের সহিংসতায় দেশব্যাপী যে নিহত/আহত হলো তাদের দায় দায়িত্ব আজ কে নিবেন ? সরকার কর্তৃক তাদের দেয়া আল্টিমেটাম পরিপূর্ণ করার পরও কি উদ্দেশ্যে তারা ৬০ ঘন্টার হরতাল পালন করেছে তা আজ জাতির প্রশ্ন। জাতির বিবেক আজ তাদেরকে ধিক্কার জানাচ্ছে। স্বাধীনতা বিরোধী জামায়াতের দেয়া নীতিমালা বাস্তবায়ন-ই কী তাহলে বিরোধীদলীয় নেত্রীর উদ্দেশ্য ?
বেগম খালেদা জিয়া কিছুদিন পূর্বে এক বক্তৃতায় বলেছেন, "বর্তমান সরকার অবৈধ’। তিনি সংবিধান বিষয়ে যথার্থ জ্ঞান নিয়েই একথাটি বলেছেন ? নাকি রাজনৈতিক আবেগতাড়িত হয়ে বলেছেন ? যদি দ্বিতীয় প্রশ্নটি সত্য হয় তাহলে তাকে যথাযথ শ্রদ্ধা রেখেই বলছি তাঁর সংবিধান বিষয়ে যথার্থ অধ্যয়ন করা প্রয়োজন। উনি হয়তো জানতেন না যে, বর্তমান সরকার অবৈধ হলে তিনিও যে বিরোধীদলীয় নেত্রী আর থাকছেন না। দেরীতে হলেও বিষয়টি তাঁর ও তাঁর দলের বোধগম্য হয়েছে। আর তাই তিনি নিজেকে বিরোধীদলীয় নেত্রী হিসেবেই পরিচয় দিচ্ছেন। বেগম খালেদা জিয়া স্ববিরোধীতার চরম বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন বর্তমান সরকার সম্পর্কে এধরনের অবান্তর মন্তব্য ও প্রধানমন্ত্রীর সাথে তাঁর শিষ্টাচার বহির্ভূত ফোনালাপের মাধ্যমে।
সম্প্রতি বেগম জিয়া তাঁর গবেষনাপ্রসূত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের যুগান্তকারী ফর্মূলা দিয়েছেন। তিনি তাঁর ফর্মূলায় ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ২০ জন উপদেষ্টাগণের মধ্যথেকে ১০ জনকে বর্তমান আলোচিত নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সদস্য করার প্রস্তাব দিয়েছেন। কিন্তু মজার বিষয় হল, তাঁর উল্লেখিত ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারে ১৮ জন উপদেষ্টা ছিল। তাদের মধ্যে আবার ০৪ জন মারা গিয়েছেন ও ০৩ জন শারীরিকভাবে দায়িত্ব পালনে অক্ষম এবং ০৪/০৫ জন দায়িত্ব নিতে ইতোমধ্যেই অপারগতা প্রকাশ করেছেন। সুতরাং স্পষ্টতঃই তাঁর দেয়া ফর্মূলা অনুযায়ী ১০ জনতো পাওয়াই যাচ্ছে না। এমন হাস্যকর ও উদ্ভট প্রস্তাবনা তাঁর মতো একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তির কাছে জাতি আশা করে না।
এবার বহুল আলোচিত রাষ্ট্রীয় ফোনালাপ নিয়ে কিছু নাই বললেই নয় ! পৃথিবীর ইতিহাসে কোন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কোন বিরোধীদলীয় রাজনৈতিক নেত্রী এত বাজে ব্যবহার করেছে কিনা তা আমার জানা নেই। শেখ হাসিনাকে তিনি অপছন্দ করতেই পারেন, কিন্তু তিনিতো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। অন্ততঃ সে চেয়ারটিকে সম্মান করা বিরোধীদলীয় নেত্রীর উচিত ছিল। যেই টোনে বেগম খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার সাথে কথা বললেন, যেভাবে তিনি প্রধানমন্ত্রীকে দমক দিলেন, যেভাবে ১৫ই আগস্টে জন্মদিন পালনের ঘোষণা দিলেন তাতে দেশের আপামর জনসাধারণ লজ্জিত বোধ করছে বলেই আমার ধারণা। আসলে সত্যি বলতে কী-আমরা সাধারণ জনগণ আসলেই অসহায়। একটি দেশের জন্য, দেশ ও জনগণের কল্যাণের জন্য, সরকারকে গঠনমূলক সমালোচনার মাধ্যমে সঠিক পথে পরিচালনার জন্য সে দেশের বিরোধীদলের বিশেষ ভূমিকা পালন করতে হয়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে আমাদের দেশে বিরোধীদলের ভূমিকা যেন বিরোধিতার জন্যই বিরোধিতা, যেন নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্যই বিরোধিতা ! বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, "বিরোধীদলের ভূমিকা' বিষয়ে সাধারণ মানুষের বদ্ধমূল ধারণাকে পাল্টে দিয়ে দেশ ও জাতির কল্যাণে গঠনমূলক বিরোধিতা করে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে এমনটাই জাতির প্রত্যাশা।
©somewhere in net ltd.