নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নির্ভীক৭১

নির্ভীক৭১ › বিস্তারিত পোস্টঃ

হরতাল রিডিফাইন্ড...

২৭ শে নভেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:৫৭

নির্বাচনের তফসিল প্রত্যাখ্যান করে ১৮ দলের ডাকা ৪৮ ঘণ্টা অবরোধ কর্মসূচির প্রথম দিন গতকাল মঙ্গলবার বিভিন্ন স্থানে বিক্ষিপ্ত গাড়ি ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, ব্যারিকেড এবং অবরোধকারীদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া, সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। সহিংসতায় সাতক্ষীরা, বগুড়া, কুমিল্লা, ফেনী ও সিরাজগঞ্জে সাতজন নিহত হয়েছে, গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছে অন্তত ৪০০ জন। নিহতদের মধ্যে সাতক্ষীরার কলারোয়ায় যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের দুই নেতা, বগুড়ায় এক যুবদল নেতা, কুমিল্লা শহরে এক বিজিবি সদস্য ও লাকসামে এক রিকশাচালক, ফেনী শহরে অটোরিকশাচালক ও সিরাজগঞ্জে এক পথচারী রাজমিস্ত্রি রয়েছেন। অবরোধকে কেন্দ্র করে সোমবার রাতে সহিংসতায় ঢাকায় এক রিকশাচালক ও কুমিল্লায় এক ছাত্রদলকর্মী নিহত হন। এ ছাড়া বরিশালের গৌরনদীতে সোমবার রাতে পিকেটারদের ছোড়া ইটের আঘাতে আহত কাঁচামাল ব্যবসায়ী গতকাল হাসপাতালে মারা গেছেন। আজকেও ইতিমধ্যে মারা গেছেন আরো ছয় জন । আর নির্বাচন অফিস, রেলের বগি বা রেলপথসহ কোন কিছুই রক্ষা পায়নি নাশকতার হাত থেকে ।

১৮ দলীয় জোটের এবারের কর্মসূচি অবরোধ হলেও আর দশটা হরতালের দিনের মতো সোমবার রাতে মানুষ গাড়ি পোড়ানো, ভাঙচুর দেখেছে। সকালেও একই চিত্র। কিন্তু নেতা-কর্মীদের রাস্তায় দাঁড়িয়ে অবরোধ করে রাখতে দেখা যায়নি। দোকানপাট, বিদ্যালয়- সব কিছুই ছিল বন্ধ। শহরের ভেতরে হরতালের দিনের মতো কিছু যান চলাচল করেছে। ককটেল হামলা হয়েছে, রেললাইন তুলে ফেলা হয়েছে। কিন্তু দিন শেষে হরতালের দিনে আহ্বানকারী আর অবরোধের দিনে অবরোধকারীদের কার্যক্রমে কোনো পার্থক্য ধরা পড়েনি মানুষের চোখে।

বিভিন্নজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হরতালের সঙ্গে মানুষের সাড়া দেওয়ার একটি সম্পর্ক আছে। অর্থাৎ রাজনৈতিক বা অন্য কোনো সংগঠন হরতাল আহ্বান করবে। মানুষ তাতে সাড়া দিয়ে পরিবহন, দোকানপাট, অফিস-আদালত বন্ধ রাখবে। অন্যদিকে অবরোধে মানুষকে জানিয়ে দেওয়া হয় যে কর্মসূচি চলাকালে সড়ক, নৌ ও রেলপথ অবরোধ করে রাখা হবে। পরিবহন চলতে দেওয়া হবে না। অবরোধে মানুষের সাড়া দেওয়া বা না দেওয়ার কিছু নেই, বরং কর্মসূচি পালনে মানুষকে বাধ্য করা হয়। কিন্তু বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে হরতাল আর অবরোধ কর্মসূচির মধ্যে আদতে কোনো পার্থক্য থাকছে না। বরং দুটি কর্মসূচিই আতঙ্ক ছড়িয়ে পালন করতে বাধ্য করা হচ্ছে।

এ সরকারের আমলে এটাই বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের প্রথম অবরোধ কর্মসূচি। এর আগে হেফাজতে ইসলাম ৫ মে ঢাকা অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছিল। বিএনপিও ঢাকা ঘেরাও কর্মসূচি পালন করেছিল। কিন্তু বিএনপি ও হেফাজতের কর্মসূচি দুটি বর্তমান অবরোধের মতো নয় বলে মনে করা হচ্ছে। গতকাল মঙ্গলবার মানুষের মনে প্রশ্ন ছিল, ঢাকায় দোকানপাট খোলা থাকবে কি না, স্কুল-কলেজে পাঠদান হবে কি না। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফকরুল ইসলাম আলমগীর সোমবার রাতে রাজপথ, রেলপথ ও নৌপথ অবরোধের কথা বলেই বক্তব্য শেষ করেন। রাজধানীর ভেতরে গাড়ি চলবে কি না, সে প্রশ্ন অস্পষ্টই থেকে যায়।

গতকাল বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী আহমেদের কাছে জানতে চাইলে তিনিও বিষয়টি স্পষ্ট করেননি। তিনি বলেন, 'আমরা এটিকে নির্দিষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত করছি না। অবরোধ বলতে রাজপথ, রেল ও নৌপথ অবরোধ করে রাখাকে বোঝাচ্ছি। তবে বড় কর্মসূচিতে বিক্ষিপ্ত কিছু ঘটনা ঘটে যায়। এ জন্য সতর্ক থাকাই ভালো।'

হরতাল গুজরাটি শব্দ। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী এর প্রবর্তন করেন। ১৯৪৮ সালে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে 'তমুদ্দিন মজলিস' প্রথম হরতাল ডাকার পর থেকে এ দেশের রাজনীতিতে জেঁকে বসেছে চরম এ কর্মসূচি।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমের হরতাল সম্পর্কে বলেন, 'হর' মানে সব জায়গায় আর 'তাল' মানে তালা। অর্থাৎ, হরতাল মানে হলো সর্বত্র তালা। আর অবরোধ হলো, রাজপথ, রেলপথ আর নৌপথ রুদ্ধ করা। কিন্তু এখন দুটি কর্মসূচিই আতঙ্ক ছড়াতে ব্যবহার করা হচ্ছে। এই অবরোধে শহরের ভেতরে দোকানপাট, স্কুল খোলা রাখা যায় কি না এ ব্যাপারে তাঁর মন্তব্য, 'যাওয়ার তো কথা, কিন্তু মনে হয় নিরাপদ নয়।'

লেখক ও বুদ্ধিজীবী আবুল মকসুদের মতে, 'রাজপথ বা নৌপথের সংজ্ঞা কী, তা তাঁরা দেননি। অবরোধ শব্দটিও অস্পষ্ট। এসবই অপরিণত ও মেধাহীন রাজনীতির গতানুগতিক কর্মসূচি।' আবুল মকসুদ বলেন, রাজনীতি একটি সৃষ্টিশীল জিনিস। প্রয়োজনে সেখানে আন্দোলনের নতুন নতুন কৌশল নিতে হয়; যে কাজটি মওলানা ভাসানীর মধ্যে দেখা যেত। একেক সময় তিনি একেক ধরনের আন্দোলনের কর্মসূচি নিতেন। এখনকার নেতাদের মধ্যে সৃষ্টিশীলতা নেই। তাঁরা পুরনো ও ভোঁতা অস্ত্র ব্যবহার করছেন।

গ্রিক উপাখ্যানে ইলিয়াড ও ওডেসিতে ট্রয় নগরী অবরোধের কথা আছে। ট্রয়ের যুবরাজ প্যারিস যখন গ্রিকদের স্পার্টার রাজা মেনেলাসের সুন্দরী স্ত্রী হেলেনকে অপহরণ করেন তখন প্রতিশোধ নিতে ট্রয় আক্রমণ করে গ্রিকরা। দশ বছর ধরে গ্রিকরা তাদের রাজা মেনেলাসের ভাই আগামেমননের নেতৃত্বে ট্রয় অবরোধ করে রাখার পর বীর একিলিস কাঠের ঘোড়ার ভেতরে থেকে কৌশলে ট্রয় নগরীর ভেতরে ঢুকে পড়েন। ধ্বংস হয় সে নগরী।

জেরুজালেম অবরোধের ঘটনা ঘটে ১১৮৭ সালের ২০ সেপ্টেম্বর থেকে ২ অক্টোবর পর্যন্ত। মিসরের আইউবীয় সুলতান সালাদিন ওরফে সালাউদ্দিনের নেতৃত্বে এই অবরোধ হয়। ওই সময় শহরের নাগরিকদের শহর থেকে বের হতে দিতে মুক্তিপণও আদায় করা হয়েছিল।

তদানীন্তন পাকিস্তান আমলে অবরোধের চেয়ে ঢের বেশি হরতাল হয়েছে। স্বাধীনতার পর এরশাদের আমলে কিছু অবরোধ হয়। আওয়ামী লীগও বিভিন্ন সময় অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছে। তবে বিগত সময়ে আমরা শুধু নেতাকর্মীদের মাধ্যমে রাস্তা অবরোধ করতে দেখেছি, নিতান্তই সাধারণ মানুষ বা আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী উপর প্রাণঘাতী হামলা নয় । এমনকি সাধারণ জনগনের কষ্টের টাকায় তিলে তিলে গড়ে তোলা রাষ্ট্রীয় বা ব্যক্তিগত সম্পদ ধ্বসের ঘটনা ও বিরল ।

তাই, হরতাল আর অবরোধের মধ্যে পার্থক্য কী- এ প্রশ্নটি এখন সবার মনে।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে নভেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:১০

পথিক০২১ বলেছেন: When you have question in mind , you should always ask an expert. If you have question about "Hartal" you should ask that question to people who have pioneered this concept and has re-defined it for 21st century and those people are none but our beloved ruling party Awami League.

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.