নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নির্ভীক৭১

নির্ভীক৭১ › বিস্তারিত পোস্টঃ

আল কায়েদার অডিও বার্তা ও মির্জা ফখরুলের শাক দিয়ে মাছ ঢাকার গল্প !

১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৩:৩৮

আল কায়েদা ও ওসামা বিন লাদেন। একটি চরম জঙ্গি সংগঠন ও একজন ব্যক্তি। তাবৎ বিশ্বের শান্তিকামী মানুষের নিকট নাম দুটি অতিপরিচিত ও ঘৃণিত। নাম দুটি ধ্বংস, সন্ত্রাস ও নাশকতার বন্ধু এবং শান্তির প্রতি চরম হুমকিস্বরূপ। খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিমান হামলার মাধ্যমে টুইন টাওয়ার ধ্বংস করা, বিশ্বের পরাক্রমশালী রাষ্ট্রের সামরিক সদর দপ্তরে বিমান হামলা হতে শুরু করে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানসহ বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে তাদের কর্মকান্ডের কথা স্মরণ হলে এখনও শান্তিপ্রিয় মানুষ আতকে উঠেন। শান্তিপ্রিয় মানুষ ও দেশ সব সময় আতংকে থাকেন কোথায় না জানি কোন সময় আল কায়েদার আক্রমন ও নাশকতা সংগঠিত হয়। ওসামা বিন লাদেন নেই, কিন্তু আল-কায়েদা রয়েছে। রয়েছে তার সিপাহশালার আয়মান আল-জাওয়াহিরি।



সম্প্রতি ইন্টারনেটে বাংলাদেশে জিহাদের ডাক দিয়ে আল কায়েদার বর্তমান শীর্ষ নেতা আয়মান আল-জাওয়াহিরির নাম ও ছবিসহ কথিত একটি অডিও বার্তা প্রচারিত হয়। সে থেকেই শুরু হয় ঘটনাকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে তোলপাড় কান্ড। বিভিন্ন বক্তব্য আসতে শুরু করে বিভিন্ন মহল থেকে। চিরাচারিত নিয়মেই রাজনৈতিক দলগুলোও একে কেন্দ্র করে দায়-দায়িত্ব চাপাতে শুরু করেন প্রতিপক্ষের উপর। এই প্রতিযোগিতায় সরকারী দল, বিরোধী দল, ছোট দল, বড় দল, তথাকথিত বুদ্ধিজীবী ও সুশীলসমাজ কেউ থেমে নেই। সরকারীদল আওয়ামী লীগ উক্ত অডিও বার্তার জন্য দায়ী করে বিএনপিকে। আর কিছুটা দেরিতে হলেও ঘটনার প্রায় ৪৮ ঘন্টা পর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব অনেকটা ভেবে চিন্তে একটি সংবাদ সম্মেলন করেন। এ সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আল কায়েদার হুমকির কথা বলে সরকার যুক্তরাষ্ট্রকে কাছে টানার চেষ্টা করছেন। এই অডিও বার্তাকে সরকার বিরোধীদল দমন পীড়নের অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করবেন ইত্যাদি গতানুগতিক বক্তব্য।



যাক, সেসব কথা। আল কায়েদার অডিও বার্তার বিষয়টি যেহেতু জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, নাশকতা, জেহাদ ইত্যাদি বিষয়ক, সেহেতু এ বিষয়ে আমরা বিএনপি ও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন বিগত দুটি সরকার সংক্রান্ত ঘটনার তুলনামূলক চিত্র নিয়ে আলোচনা করতে পারি।



প্রথমেই ধরা যাক, বিএনপির নেতৃত্বাধীন চার দলীয় জোটের বিগত ২০০১ থেকে ২০০৬ সালের শাসনামল। এ সময়ে দেশব্যাপী একই সময়ে সিরিজ বোমা হামলা, দেশের বিভিন্ন স্থান, অনুষ্ঠান ও স্থাপনায় নিয়মিতভাবে বোমা/গ্রেনেড হামলা, রমনার বটমূলে বোমা হামলা, ব্রিটিশ হাইকমিশনারের উপর বোমা হামলা, আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যা ও দলকে নেতৃত্বশূন্য করার জন্য ২১ আগষ্ট গ্রেনেড হামলা, বিচারক ও বিচারালায়ে বোমা হামলার মতো ঘটনা ঘটে। এ সকল ঘটনায় শত শত লোক তাৎক্ষণিকভাবে মৃত্যুবরণ করার পাশাপাশি অনেকেই আহত ও পঙ্গু হয়ে যায়। সে সময়ে দেশব্যাপী জিহাদের ডাক সম্বলিত পোষ্টার লিফলেটে দেখা যেত দেশের আনাচে কানাচে। জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের জন্য বিভিন্ন দেশী/বিদেশী সংস্থা ও সংগঠনের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় অর্থ যোগান দেওয়া হয় বলেও শোনা যায়। দেশে নাশকতামূলক কর্মকান্ড ও সন্ত্রাসীদের জন্য আনা ট্রাকে ট্রাকে আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদ ধরা পড়ে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ের শীর্ষ সন্ত্রাসী দাউদ ইব্রাহিম ও তার সহযোগীরা এদেশ সফর করে ও আস্তানা গড়ার প্রচেষ্টা চালায়। পার্শ্ববর্তী দেশের বিছিন্নতাবাদী ও সন্ত্রাসী সংগঠন এদেশকে অভয়ারাণ্য হিসেবে ব্যবহার করার সুযোগ পায়। অনেকে বলে থাকেন, সে সময়ে আল কায়েদার শীর্ষ নেতারাও এদেশ সফর করে এদেশে তাদের নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার প্রচেষ্টা চালায়। অনেকের মতেই বিএনপির নেতৃত্বাধীন বিগত চার দলীয় জোট সরকারের শাসনামালে এদেশে জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসবাদের যে উত্থান ও ব্যাপ্তি ঘটেছিল, তা স্বাধীনতা উত্তর কোন কালেই ঘটেনি। সে সকল ঘটনার জন্য কারা দায়ী ছিল তা ক্রমান্বয়ে তদন্ত ও বিচারের মাধ্যমে বেরিয়ে আসছে।



এবার আসা যাক, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন গত ২০০৯ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত মহাজোট সরকারের শাসনামলের চিত্র। দেশব্যাপী জঙ্গীবাদ, নাশকতা, বোমা হামলা, এ সকল কর্মকান্ডের জন্য দেশে ট্রাক ভর্তি অবৈধ অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার, জঙ্গী সংগঠন ও কর্মকান্ডের অর্থ আনা ও পাচার এবং এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা, আন্তর্জাতিক জঙ্গী ও সন্ত্রাসী সংগঠনের নেতাদের বাংলাদেশ সফর ও আস্তানা গড়ার প্রচেষ্টা ইত্যাদি ঘটনার মতো কোন ঘটনা গত মহাজোট সরকারের শাসনামলে ঘটেনি। বরং এক্ষেত্রে সামান্যতম উত্থান বা আলামতের চেষ্টাও শক্ত হাতে শুরুতেই দমন করা হয়েছে। অতীতে মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসের অর্থায়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ছিল ধূসর তালিকাভূক্ত। আর সে ক্ষেত্রে বর্তমানে মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন সংক্রান্ত প্রতিরোধ বিষয়ক আন্তর্জাতিক মানদন্ড বিষয়ক সংস্থা ফিনান্সিয়াল এ্যাকশন টাস্কফোর্স তথা এফএটিএস কর্তৃক মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলায় বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জন করেছে। জঙ্গীবাদ বিরোধী দেশ হিসেবে এটি বাংলাদেশর জন্য একটি বিরাট সাফল্য। তবে বিগত মহাজোট সরকারের শাসনামলের শেষ দিকে বিশেষতঃ ২০১৩ সালের শেষ দিকে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের (বর্তমানে ১৯ দলীয় জোট) দেশব্যাপী লাগাতার হরতাল, অবরোধ, লংমার্চ, মার্চ ফর ডেমোক্রেসী, যানবাহনে পেট্রোল বোমা হামলাসহ বিভিন্ন সহিংস কর্মকান্ডে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যসহ শতাধিক ব্যক্তি নিহত ও আহতের ঘটনা ঘটে। এসকল ঘটনা ও হতাহতের জন্য কারা দায়ী তাও ইতোমধ্যেই দেশের মানুষ জেনেছে।



যাক, এতো গেল দুটি দলের শাসনামল ও পরস্পর দোষারোপের জন্য দল দুটির কর্মকান্ডের কিছুটা নিরপেক্ষ আলোচনা/সমালোচনা। এবার যদি বিশ্লেষণ করা হয় যে আল কায়েদার অডিও বার্তা বিষয়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের বক্তব্য ও বিএনপির মহাসচিবের সংবাদ সম্মেলনের বক্তব্য কতটুকু যুক্তিযুক্ত, তাহলে এক কথায় মন্তব্যে বলা যাবে, আওয়ামী লীগ কি ভুল বা মিথ্যা বলেছে ? আওয়ামী লীগ ভুল বা মিথ্যা না বললেও বিএনপির মহাসচিব কিন্তু শাক দিয়ে ঠিকভাবেই মাছ ঢাকার চেষ্টা করেছেন !

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.