![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
[img|http://s3.amazonaws.com/somewherein/pictures/alam1007/09-2014/db655c91241bf512683f41a9228f8cde_tiny.jpeg
মেঘনাদ সাহার জীবনের জুতার কারনে হেনস্তা
জুতো কেনার টাকা নেই। তাই সে খালি পায়েই স্কুলে যায়।কিন্তু সেদিনটা ছিল অন্যরকম। বাংলার গভর্নরের আগমণ উপলক্ষে ঢাকায় ছাত্ররা প্রতিবাদ-মিছিল বের করেছে। পায়ে জুতো না-পরাটাও ছিল প্রতিবাদের অংশ। কলেজিয়েট স্কুলে খালি-পায়ের ছেলেদের ধরে শাস্তির ব্যবস্থা করা হলো। অনেকের সাথে মেঘনাদকেও স্কুল থেকে বহিস্কার করা হলো। বাতিল করা হলো তার বৃত্তি।
ব্যক্তিগত জীবন
অশিক্ষিত মা-বাবার সন্তান হয়েও মেধা, পরিশ্রম ও নিষ্ঠার জোরে একজন মানুষ যে কত বড় হয়ে উঠতে পারেন মেঘনাদ সাহা তার জ্বলন্ত প্রমাণ। আধুনিক জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞানের ভিত্তি গড়ে উঠেছে যে ক’জন মানুষের মৌলিক তত্ত্বের ওপর – অধ্যাপক মেঘনাদ সাহা তাঁদের অন্যতম। ১৯২০ সালে মেঘনাদ সাহার তাপীয় আয়নায়নের সমীকরণ প্রকাশিত হবার পর থেকে ১৯৩৮ সাল পর্যন্ত জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞানে যত গবেষণা হয়েছে তাদের প্রায় সবগুলোই সাহার সমীকরণ দ্বারা প্রভাবিত।
সাহা সমীকরণ জানতে চাইলে : Click This Link
ঢাকা থেকে প্রায় পঁয়তাল্লিশ কিলোমিটার দূরে শেওড়াতলী গ্রাম (বর্তমানে এই গ্রামটি গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর থানায় অবস্থিত)। গ্রামের দরিদ্র মুদি দোকানী জগন্নাথ সাহা ও ভুবনেশ্বরী দেবীর ঘরে ১৮৯৩ সালের ৬ই অক্টোবর রাতে মেঘনাদের জন্ম। ভীষণ ঝড়বৃষ্টির মধ্যে জন্মেছিলেন বলে ঠাকুরমা নাম রেখেছিলেন মেঘনাথ। পরে স্কুলে যাবার সময় নাম বদলে মেঘনাদ করা হয়। আট ভাই-বোনের মধ্যে মেঘনাদ পঞ্চম। ছয় বছর বয়সে গ্রামের প্রাইমারি স্কুলে ভর্তি হন।এরপর শিমুলিয়া জুনিয়র হাই স্কুলে মেঘনাদের লেখাপড়া শুরু হলো। নিম্ন-মাধ্যমিক পরীক্ষায় সমগ্র ঢাকা জেলার মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করেন। ঢাকার কিশোরী লাল জুবিলী স্কুল থেকে ১৯০৯ সালে পূর্ব-বাংলায় প্রথম স্থান অধিকার করে এন্ট্রান্স ও ১৯১১ সালে ঢাকা কলেজ থেকে সমগ্র বাংলায় তৃতীয় স্থান অধিকার করে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করলেন মেঘনাদ সাহা। ১৯১৩ সালে গণিতে অনার্স সহ বিএসসি ও ১৯১৫ সালে মিশ্র-গণিতে এমএসসি পাশ করলেন মেঘনাদ সাহা।শেষ দুই পরীক্ষায় মেঘনাদ সাহা প্রথম শ্রেণীতে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করলেন, আর প্রথম হলেন সত্যেন বসু।
এরপর ইন্ডিয়ান ফাইনেন্সিয়াল সিভিল সার্ভিস পরীক্ষা দেবার জন্য দরখাস্ত করলেন মেঘনাদ সাহা। । কিন্তু পরীক্ষা দেবার অনুমতি পেলেন না । ব্রিটিশ গোয়েন্দারা রিপোর্ট দিয়েছে – মেঘনাদ সাহা বিপ্লবীদের সাথে যুক্ত। ব্রিটিশ রাজত্বে সরকারী চাকরির সব সম্ভাবনাই বন্ধ হয়ে গেলো মেঘনাদের।
তড়িৎচুম্বক তত্ত্ব ও বিকিরণের চাপ সংক্রান্ত থিসিসের জন্যে ১৯১৯ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ডক্টর অব সায়েন্স ডিগ্রি প্রদান করে মেঘনাদ সাহাকে।
নোবেল বিজয়ী পদার্থবিজ্ঞানী চন্দ্রশেখর সুব্রাহ্মনিয়ামের চেষ্টায় আইনস্টাইনের রচনার প্রথম অনুবাদের স্বীকৃতি পান সাহা ও বসু। সেই অনুবাদ এখন প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির আইনস্টাইন আর্কাইভে রাখা আছে।
১৯৯৯ সালে প্রকাশিত মেঘনাদ সাহার তৃতীয় কন্যা চিত্রা রায়ের লেখা থেকে মেঘনাদ সাহার কিছুটা ব্যক্তিগত পরিচয় পাওয়া যায় । ১৯১৮ সালে বিক্রমপুরের রাধারাণীর সাথে বিয়ে হয় মেঘনাদের। মেঘনাদের বয়স তখন ২৬, আর রাধারাণীর মাত্র ১৪। রাধারাণী ও মেঘনাদের তিনটি ছেলে ও চারটি মেয়ে। বড় ছেলে অজিত পদার্থবিজ্ঞানে পিএইচডি করে সাহা ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার ফিজিক্সের অধ্যাপক ছিলেন (মৃত্যু- ১৯৯১), মেজ ছেলে রঞ্জিত ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার ও বোম্বের টাটা হাইড্রোইলেকট্রিক্সে কাজ করতেন (মৃত্যু – ১৯৯৩)। ছোট ছেলে প্রসেনজিৎ – সেন্ট্রাল গ্লাস এন্ড সিরামিক রিসার্চ ইনস্টিটিউটের ডেপুটি ডিরেক্টার ছিলেন। বড় মেয়ে ঊষা এমএসসি পাশ করেন(মৃত্যু- ১৯৯৭)। দ্বিতীয় মেয়ে কৃষ্ণা এমবিবিএস পাশ করেন। । তৃতীয়া কন্যা চিত্রা ইংরেজি সাহিত্যে পিএইচডি করে সরকারি কলেজে অধ্যাপনা করেছেন। ছোট মেয়ে সংঘমিত্রা দিল্লিতে ইতিহাসের অধ্যাপিকা।
রাজনৈতিক দায়বদ্ধতা অনুভব করে সরাসরি রাজনীতিতে প্রবেশের সিদ্ধান্ত নিলেন অধ্যাপক সাহা ।১৯৫১ সালে কংগ্রেসের রাজনীতির কঠোর সমালোচক স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লোকসভার নির্বাচনে দাঁড়ালেন। কংগ্রেসের প্রার্থীকে বিপুল ভোটে পরাজিত করে উত্তর-পশ্চিম কলকাতা আসনে লোকসভার সদস্য নির্বাচিত হলেন অধ্যাপক সাহা। লোকসভায় তিনি সক্রিয় সদস্য হিসেবে ভূমিকা রাখেন শিক্ষায়, শিল্প-নীতিতে, নদী ও বন্যা নিয়ন্ত্রণে এবং বিশেষ করে পারমাণবিক শক্তি সংক্রান্ত নীতিতে।
১৯৫৬ সালের ১৬ই ফেব্রুয়ারি দিল্লিতে প্ল্যানিং কমিটির অফিসে যাবার পথে হার্ট অ্যাটাকে মারা যান মেঘনাদ সাহা।
সূত্র: ইন্টারনেট
©somewhere in net ltd.