নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মানুষ মানুষের জন্য , জীবন জীবনের জন্য একটু সহানুভুতি কি মানুষ পেতে পারেনা...ও বন্ধু...
রেনুকে গতকাল হসপিটাল থেকে রিলিজ করে বাসায় নিয়ে এসেছেন মতিন ভাই। এটা রেনুর তৃতীয় ইস্যূ। গত পাঁচ বছরের মধ্যে তিন তিনটা বাচ্চা। বিরাট ধকল গিয়েছে রেনুর শরীরের উপর দিয়ে। শেষের ইসুটা একদম অপ্রত্যাশিত। বছরের এ মাথায় আর ওমাথায়। এ নিয়ে ডাক্তারের বেশি কথা শুনতে হয়েছে রেনুকে । তবে ডাক্তার শেষ বারে লাইগেশন করার পরামর্শ ছিল এবং মতিন ভাইও সেটাতে সম্মতি দিয়ে এবার সিজারের সময় লাইগেশন করে নিয়েছে।
ঢাকায় রেনুর কোন আত্মীয় সজন নেই মতিন ভাইয়েরও নেই বললেই চলে। গ্রাম থেকে পার্মানেন্ট কোনো কাজের লোকও আনতে পারছে না। এই অবস্থার মধ্যেও রেনুর রান্না-বান্না করতে হচ্ছে, ছেলে মেয়েদের গোসল, খাওয়ানো, অসুখ-বিসুখ সবই একহাতে সামলাতে হচ্ছে।
মতিন ভাই একটা ঔষধ কোম্পানিতে সেলসে চাকরি করে। সারাদিন টার্গেট নিয়ে টেনশন। এরমধ্যে সে সংসারের কোন কাজে রেনুকে ঠিকমতো সাহায্যও করতে পারছে না।
সন্ধ্যার পর বাজার করে নিয়ে বাসায় ফিরে মতিন ভাই। মাছ-মাংস তো বাজার থেকে কাটিয়ে আনা যায় কিন্তু তরকারি কোটা, ঘরের ফ্লোর মোছা, বাচ্চাদের কাপড়-চোপড় কাঁচা, বিছানা বালিশ গোছানোর কাজ মতিন ভাই করে দেয়ার চেষ্টা করে। আর সকালে বড় বাচ্চাটাকে স্কুলে নামিয়ে দিয়ে বাইক নিয়ে অফিসে চলে যায়।
সংসারে নানান ধরনের টানাটানি থাকলেও কোনদিন কোন উচ্চ স্বরে বাক্যালাপ হয়নি বাসায়। তবে ইদানীং রেনুর বিরাট কষ্ট হচ্ছে সব সামলাতে।
গত সপ্তাহে মতিন ভাইয়ের বড় বোন চৌদ্দ-পনের বছরের একটা মেয়েকে রেনুর বাসার কাজের জন্য ঠিক করে দিয়ে গেছে। মেয়েটির নাম শেফালি। ক্লাশ সেভেন পর্যন্ত পড়েছে। শেফালির মায়ের সাথে চুক্তি হয়েছে থাকা-খাওয়া সহ মাসে পাঁচ হাজার টাকা বেতন দিতে হবে । আর দুই তিন বছরের মধ্যে একটা ভালো পাত্র দেখে বিয়ে দিয়ে দিতে হবে।
শেফালী এ বাসায় আসার পর রেনুর আসলেই একটু উপকার হয়েছে। ছোট বাচ্চাটাকে কোলে নেওয়া, ঘর মোছা, থালা-বাসন ধোঁয়া, শেফালীই করে দেয়। শেফালি মতিন ভাইকে আব্বু ডাকে আর রেনুকে আম্মু।
ভালোই চলছে শেফালির ঢাকা শহরের জীবন। সামনেই রোজার ঈদ। ঈদের সময় বাড়ি যাবে। এজন্য শেফালি তার বাবা-মা, ভাই-বোনের জন্য নতুন কাপড়, সেমাই-চিনিও কিনেছে।
মতিন ভাই ফ্যামিলি নিয়ে প্রতি রোজার ঈদেই গ্রামের বাড়ি যায়। এবারও সবাই মিলে সাতাশে কদরের পর দিন গ্রামের বাড়ি চলে গিয়েছিলো। আবার ইদের পর সবাইকে নিয়ে ঢাকায় ফিরে এসেছে। পুরো দমে চালু হয়ে গেছে স্কুল-কলেজ, অফিস-আদালত সবকিছু।
দেখতে দেখতে দেড় বছর কেটে গেল শেফালির ঢাকা শহরের জীবন। তবে ইদানিং শেফালির মতি-গতি খুব একটা ভালো ঠেকছে না। উত্তর দিকের ব্যালকনিতে ঘন ঘন গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে, দূর থেকে কাকে যেন ইশারা ইঙ্গিত করে। এটা টের পেল রেনু।
একদিন শেফালির ব্যাগের ভিতর মোবাইলের রিংটোন বেজে উঠলো। পাওয়া গেল একটা মোবাইল ফোন। রেনু আর ঝুঁকি নিতে রাজি হলো না, যা দিনকাল পড়েছে যদি পালিয়ে টালিয়ে যায় তাহলে কি জবাব দিবে তার মা-বাবার কাছে? কি জবাব দেবে বড় ননদের কাছে। তাই লোক মারফত পাঠিয়ে দেওয়া হল শেফালিকে তার গ্রামের বাড়িতে।
একমাস পর খবর হল, ঢাকা থেকে যে ছেলের সাথে যোগাযোগ করে গিয়েছিল তার সাথেই শেফালির বিয়ে হবে। বিয়ের খরচ বাবদ কিছু টাকা যেন শেফালির মা'কে দেয়া হয়। খরচ বাবদ দশ হাজার টাকা পাঠানো হলো।
ফরিদপুরের কোন এক গ্রামে শেফালির বিয়ে হয়েছিলো। বিয়ের চার মাসের মাথায় শেফালি পোয়াতি হলো,পাঠিয়ে দেয়া হলো বাপের বাড়িতে, কোল জুড়ে একটা ফুটফুটে ছেলে বাচ্চা হলো।
কয়েক মাস পর হঠাৎ একদিন শেফালির ফোন এলো রেনুর মোবাইলে-
-আম্মু কেমন আছেন? আব্বু কেমন আছে?
-হ্যাঁরে শেফালি সবাই ভালো আছি তুই কেমন আছিস?
-ভালো না আম্মু, পোলার বয়স এখন ছয় মাস হইছে, এখন পর্যন্ত তার বাপে তারে দেখতে আসে নাই। মোবাইল করলে খালি গাইল দেয়। কোন খোঁজ খবর নেয় না, কয় তালাক দিয়া দিবো।
তারপর অপরপ্রান্ত থেকে কান্নার সুর ভেসে আসতে থাকলো কিছুক্ষণ........!
ছবিঃ অন্তর্জাল।
ঢাকা, ২৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ।
(পোষ্টের সকল চরিত্র স্থান কাল পাত্র সম্পুর্ন কাল্পনিক। কারো সাথে হুবহু বা আংশিক মিলে গেলে তা অনভিপ্রেত কাকতাল মাত্র।
প্রাত্যহিকী-১
প্রাত্যহিকী-২
১২ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ রাত ১১:০১
মোগল সম্রাট বলেছেন:
ধন্যবাদ প্রিয় ঠাকুর ভাই।
আসলে এসব চিত্র দেখছি গত কয়েক যুগ ধরে। এবং এগুলোর পুনরাবৃত্তি ঘটেই চলেছে। তাহলে পরিবর্তনটা কোথায় আটকে আছে? বলতে পারেন?
আমার মনে হয় সময়ের প্রয়োজনে যৌথ পরিবারগুলো ভেঙ্গে যাওয়ায় মধ্যবিত্ত শ্রেনির ক্রম বর্ধমান একক শহুরে জীবনের প্রতি ঝোঁক আর গরীব শ্রেণির অশিক্ষা, অসচেতনতা দুর না হওয়া একটা বিরাট কারন।
২| ১২ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ রাত ১১:১১
জনারণ্যে একজন বলেছেন: বাস্তব জীবনের খণ্ডিত এক চিত্র - ভালো এঁকেছেন। পড়তেও বেশ ভালো লেগেছে।
জাস্ট কিউরিয়াস, গল্পের অন্যতম চরিত্র মতিনকে "মতিন ভাই" হিসেবে পরিচিত করালেন কেন? গল্পে তো কোথাও দেখলাম না লেখক প্রথমে নিজেকে পরিচিত করিয়ে তারপর তার পরিচিত এক ক্যারাক্টারকে নিয়ে লিখছে।
১২ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ রাত ১১:২৪
মোগল সম্রাট বলেছেন:
ধন্যবাদ জানাচ্ছি অনুপ্রেরণা মুলক মন্তব্যের জন্য।
আপনার এই পরামর্শটা আমার মনে থাকবে। আমি মতিন ভাই চরিত্রের কথাটা ভালো করে গভীর ভাবে চিন্তা করিনি সত্যিই। এজন্য একটু এলোমেলো হয়েছে। পরের লেখায় এ বিষয়গুলো অবশ্যই মাথায় রাখবো।
ভালো থাকবেন, শুভকামনা নিরন্তর।
৩| ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ রাত ১২:০৪
কামাল১৮ বলেছেন: মেয়ে বাচ্চা হলে আরো যুক্তিপূৃর্ণ হতো।
৪| ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ দুপুর ১২:০১
মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন:
সখী এরেই কি ভালোবাসা কয়....................!!!!
১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ দুপুর ২:৪৫
মোগল সম্রাট বলেছেন:
সখি ভালোবাসা কারে কয়,
সে কি কেবলই যাতনাময়......।!
৫| ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ দুপুর ১২:৩২
অপু দ্যা গ্রেট বলেছেন:
বাস্তবতার সাথে বসবাস, তবুও এড়িয়ে চলে জীবন,
ক্লান্তি আর নিদ্রাহীনতায় মানুষ গুলো
হয়ে পরেছে বিবেকহীন....।
১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ বিকাল ৩:০১
মোগল সম্রাট বলেছেন:
বাস্তবতা লেখা খুবই কঠিন। চেষ্টা করে দেখতেছি মাত্র। তবে আমার মনে হয় পারবো না বেশি দুর আগাতে
৬| ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ দুপুর ২:৪৬
মিরোরডডল বলেছেন:
সিরিজের প্রথম পর্ব খুঁজে পাইনি কিন্তু ২ আর ৩ পড়লাম।
মধ্যবিত্ত পরিবারের টানাপোড়ন জীবনের কাহিনী।
ভালোই হচ্ছে । চলুক ....
১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ দুপুর ২:৫৮
মোগল সম্রাট বলেছেন:
ধন্যবাদ মিররাপু।
এডিট করে লিংক যুক্ত করে দিয়েছি।
আর আপনিতো ১ম পর্বটা পড়েছিলেন এবং কমেন্টও করেছিলেন। ভুলে গিয়েছেন হয়তো
শুভকামনা থাকলো।
৭| ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ দুপুর ২:৫৫
রাজীব নুর বলেছেন: বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকেই লিখেছেন। সেটা পরিস্কার।
১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ বিকাল ৩:০৩
মোগল সম্রাট বলেছেন:
এ রকম বাস্তবতা আমার আপনার চারপাশে অসংখ্য আছে। আমি আপনি দেখার বা লেখার চেষ্টা করছি মাত্র । অনেকেই এড়িয়ে যায়
শুভ কামনা প্রিয় রা-নু ভাই ।
৮| ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ বিকাল ৩:২৪
মিরোরডডল বলেছেন:
থ্যাংকস আগের পর্ব লিংক যুক্ত করার জন্য।
তাইতো! পড়েছিলাম, একাধিক মন্তব্য করেছিলাম, এখন দেখলাম।
আসলেই ভুলে যাই
সেই মে মাসের কথা।
জীবন তখন অন্যরকম ছিলো।
থ্যাংকস সম্রাট।
১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ রাত ৮:৪৫
মোগল সম্রাট বলেছেন:
থ্যাংকয়ু।
৯| ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ রাত ৮:২৯
শেরজা তপন বলেছেন: এ পর্বও ভাল লেগেছে। বেশিরভাগ কাজের মেয়েগুলোর পরিনতি এমনই হয়
নীচের লাইনটায় একটু খটকা লাগল;
আর সকালে বড় বাচ্চা দুটোকে স্কুলে নামিয়ে দিয়ে বাইক নিয়ে অফিসে চলে যায়।
পাঁচ বছরে রেনুর তিনটে ইস্যু। এবারেরটা বছরের এ মাথায় ও মাথায়। তাহলে বড়জনের বয়স পাঁচ হলেও পরের জনের বয়স ১ এর বেশী হবে না, সে স্কুলে পড়বে কেমনে?
১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ রাত ৮:৪৪
মোগল সম্রাট বলেছেন:
ধন্যবাদ তপন ভাই।
টাইপোা ছিলো। এডিট করে ঠিক করে দিয়েছি। মোবাইল দিয়ে টাইপ করা পোস্ট করা সব কিছু । অনেক ভুল হয়েছে দেখলাম।
ভালো থাকবেন।
১০| ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ রাত ১১:১৯
শার্দূল ২২ বলেছেন: মন্তব্য করার আগে একটা প্রশ্ন সম্রাট ভাইয়ের কাছে । আপনার গল্প গুলো রসদ কোথা থেকে পান? এসব কি আপনার আশে পাশে ঘটে যাওয়া ঘটনা নাকি সমাজের নানা ঘটনা থেকে মনে মনে কোন চিত্র আঁকেন?
রংপুরের এক অসহায় পরিবারে জন্ম নেয়া আমাদের কাজলকে আমরা নিয়ে আসি যখন তার বয়স ৬ বছর, মা মারা গেছে, বাবা বিয়ে করেছে। সৎ মা এমন মেরেছে পরে পুলিশ কেইস,থানায় নিয়ে আসলে আম্মু তাকে রেখে দেয়। আমাদের কাজল এর বয়স এখন ২৬। ২০২১ এ আমরা কাজলকে বিয়ে দিয়েছি কোন এক টিভি চ্যানেলে কাজ করে এমন এক বিশাল মনের ছেলের কাছে, গত মাসে তার একটা ছেলে হয়েছে। কাজলের মনে কোনদিন আসেনি সে আমাদের পরিবারের কেউ ছিলোনা কোন এক সময়।
কিছু দায়িত্ব জোর করে নিতে হয়, আর দায়িত্ব নিলে বিপদ আসতেই পারে। নিজের বিপদের কথা চিন্তা করে অন্যকে বিপদের মুখে ঠেলে না দিলে কিছু জীবন গতি ফিরে পায়।
আমি আপনার লেখায় সব সময় মুগ্ধ হই আমারো কিছু বলতে ভালো লাগে
শুভ কামনা
©somewhere in net ltd.
১| ১২ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ রাত ১০:৪০
ঠাকুরমাহমুদ বলেছেন:
কাল্পনিক গল্প হলেও বাস্তব ঘটনা একই। এই চিত্র বাংলাদেশের (১৯৭১) জন্মের আগে থেকে চলছে।