নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মানুষ মানুষের জন্য , জীবন জীবনের জন্য একটু সহানুভুতি কি মানুষ পেতে পারেনা...ও বন্ধু...
একঃ
ফি বছর জানুয়ারী মাসে বিরাট রকম অর্থ কষ্টে পড়ে মাহমুদ। তিন বাচ্চার স্কুলে ভর্তি, ইউনিফর্ম, স্কুল ব্যাগ আর বই খাতা বাবদ প্রায় পঞ্চাশ হাজার টাকার মতো খরচ হয়। একই স্কুলে প্রতি বছর উন্নয়ন ফি’র নামে এতো টাকা দিয়ে ভর্তি হওয়া লাগবে কেন? মাহমুদ ভাবে, তার বাবা তার পুরো শিক্ষা জীবনেও তার পিছে এতো টাকা খরচ করে নাই যে টাকা প্রতি বছর বাচ্চাদের স্কুলে পড়াতে গিয়ে খরচ হয়। মাহামুদ একটা লিজিং কোম্পানীতে চাকরী করে। যা ইনকাম তা দিয়ে মোটামুটি টেনেটুনে সংসার চলে যায়।
ইদানিং আর পারছেনা মাহমুদ। দু’টো ক্রেডিট কার্ডের প্রায় সব লিমিট শেষ। প্রতিমাসে মিনিমাম পেমেন্ট দিয়ে কোন রকম জরিমানার হাত থেকে উদ্ধার হওয়া আরকি।
গত পাঁচ বছর ধরে বাড়িওয়ালা প্রতি জানুয়ারীতে এক হাজার টাকা করে বাসা ভাড়া ধারাবাহিক ভাবে বাড়াচ্ছে। এবারও তার ব্যতিক্রম না।
ওদিকে আলিকো ইনসুরেন্স কোম্পানীতে একটা বীমা পলিসি আছে মাহামুদের। তার প্রিমিয়াম প্রায় দশ হাজার টাকা। সেটাও জানুয়ারীতে দেয়া লাগে। আর ইনকাম ট্যাক্স অফিস রিটার্ন সাবমিটের মেয়াদ আরো একমাস বাড়িয়েছে, তাই রক্ষা। কারন বেতন থেকে প্রতিমাসে কাটার পরও ফাইল হিসাব করে দেখা গেছে আরো এগারো হাজার টাকার পে-ওয়ার্ডার দেয়া লাগবে।
এর মধ্যে বিজয় দিবসে মহল্লার পোলাপানকে ব্যাডমিন্টন টুর্নামেন্ট উপলক্ষে তিন হাজার টাকা চাঁদা দিতে হয়েছে।
মাহামুদ খুব চিন্তায় আছে কেমনে কি করবে।
দুইঃ
দিলু মিয়া সামনের ভবনের দাড়োয়ান। বয়স পঁয়ত্রিশ বছর। সারাক্ষন দুশ্চিন্তায় ডুবে থাকে। ধার-দেনা করে সৌদি আরব গিয়েছিলো। সৌদিতে ছয়মাস জেল খেটে দেশে আসার পর গ্রামে পাওনাদারের জ্বালায় আর টিকতে না পেরে ঢাকায় চলে এসেছে। বউ আর একটা বাচ্চা নিয়ে ঐ ভবনের ছাদের চিলে কোঠায় থাকে দিলু মিয়া।
শো’রুম থেকে কিস্তিতে বাইক কিনে ডিউটির পর ঢাকায় রাইড শেয়ার করতো। গত সপ্তায় এ্যাকসিডেন্ট করে বাম হাত ভেংগে ফেলেছে। তিন মাস আর বাইক চালাতে পারবেনা।
দিলু মিয়ার দুঃখের সীমা নাই ।
তিনঃ
মটর মেকানিকের দোকানে কাজ করে বাবলু। বয়স কতো আর হবে, এই বারো তেরো। এই বয়সে ভালোই গাড়ীর কাজ শিখে গেছে সে। বাবলুর বাবা নাই। মা ছুটা বুয়ার কাজ করে বাসা বাড়িতে। আমি বাইক নিয়ে ঐ গ্যারেজে গেলে চাকার হাওয়া দেয়া, ফিল্টার চেঞ্জ করা সহ টুকিটাকি কাজ বাবলুই করে দিতো। বাবলু আমাকে মামা বলে ডাকে।
প্রায় এক মাস পর বাইক নিয়ে গেলাম মবিল চেঞ্জ করার জন্য। দেখি বাবলুর মন বিরাট খারাপ। আগের মতো সেই চঞ্চলতা নাই, দৌড় দিয়েও আর কাছে আসছে না। গ্যারেজ মালিককে জিগ্যেস করলাম বাবলুর কি শরীর খারাপ? গ্যারেজ মালিক জানালো;
- ওর মা এক হুজুরের লগে বিয়া বইছে কুড়ি বাইশ দিন আগে। রুহিতপুরে হেই হুজুরের একটা এতিমখানা আছে। হেইখানে চইলা গেছে অর মায়। বাবলুরেও নিছিলো কিন্তু নতুন বাপে দুই দিন থাবরাইছে ধইরা। তারপর বাবলু হেইখান থিকা চইলা আসছে। এহন আমার বাসায় খায় আর গ্যারেজেই রাইতে ঘুমায়।
আহা ! বাবলুর জন্য বিরাট মায়া লাগতেছে।
চারঃ
মহল্লায় গলির মুখেই মনু মিয়ার পান-সিগারেটের দোকান। বয়স সত্তুরের বেশি ছাড়া কম হবেনা। দোকানের নাম “মনু মিয়া ষ্টোর”। কোমল পানীয়, রুটি-কলা, বিস্কুটও বিক্রি করে। মনু মিয়ার এই দুনিয়ার একটা নাতি ছাড়া আর কেউ নাই। নাতির বয়স ১৬ বছর। এবার এসএসসি পরিক্ষা দেবে। মনু মিয়ার একটাই ছেলে ছিলো। ছেলের বউ আতœহত্যা করার আগে চিরকুটে স্বামীকে দায়ি করে লিখে গিয়েছিলো। সেই মামলায় যাবজ্জিবন সাজা খাটতে গিয়ে জেলেই মারা গিয়েছিলো মনু মিয়ার ছেলে।
নাতিকে নিয়ে একটা রুম ভাড়া করে মনু মিয়া লালবাগে থাকে। আজকাল মনু মিয়ার নাতির মতিগতি ভালো ঠেকছে না। খালি টাকা চায় দাদার কাছে। স্মার্ট ফোনের এমবি কেনা আর পকেট খরচ বাবদ মনু মিয়া প্রতিদিন একশো টাকা দিতো। একশো টাকায় এখন আর চলে না। ডেইলি তিনশো টাকা লাগবে।
মনু মিয়ার সাথে আমার সম্পর্ক এই মহল্লায় বাসা ভাড়া নেওয়ার পর থেকেই। শুধুমাত্র সিগারেট কিনতে গিয়ে একটা লোক কতো আপন হয়ে ওঠে মনু মিয়া সেরকম একজন। তাকে দেখে আমার খটকা লাগে মাঝে মাঝে। আমার সাথে মাঝে মাঝে সুখ-দুঃখের কথা বলতে বলতে তার চোখে জল আসে, সাথে আমারও ।
আজ মনু মিয়ার দোকান বন্ধ। খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে মনু মামুর কি হয়েছে।
পাঁচঃ
রেনুদের বাসায় আবার শেফালী ফিরে এসেছে দুই বছরের একটা বাচ্চা নিয়ে। সারাদিন রেনুকে বাসার সকল কাজে সহযোগিতা করে। পাশাপাশি এক বাসায় ঘর মোছার কাজও ঠিক করে দিয়েছে রেনু। শেফালীর থাকার জন্য বাসা থেকে কয়েকটা বিল্ডিংয়ের পর একটা টিনশেডে রুম ভাড়া করে দিয়েছে রেনুর স্বামী।
গত তিন দিন ধরে গভীর রাতে শেফালির ঘরের দরজায় কে জানি টোকা দেয়। প্রথম দিন দরজা খুলে কাউকে দেখতে পায়নি। পরের দিন দেখে ফেলেছে পাশের ঘরের আরেক ভাড়াটিয়া এই কাজ করছে। রেনু আজকে সেই ভাড়াটিয়াকে তার বাড়িওয়ালাকে দিয়ে শাষিয়ে এসেছে।
বিপদ শেফালীর পিছু ছাড়ছে না।
ছয়ঃ
মুদি দোকানদার ফয়সাল গাজী। মহল্লার লোকদের বাকি দিতে দিতে দেউলিয়া হবার উপক্রম। দোকানের মাসিক ভাড়া গত ছয় মাস ধরে অগ্রীম থেকে কাটিয়ে কাটিয়ে পার করেছে। এমাসে দোকান মালিক বলেছে দোকান ছেড়ে দিতে। কাষ্টমারদের কাছে দেড় লাখ টাকা পাওনা। দোকান ছেড়ে দিলে ফয়সাল টাকাগুলো আর তুলতে পারবেনা। ফয়সাল বৌ-বাচ্চা নিয়ে তার বাবা মায়ের সাথেই থাকে।
দেখলাম ফয়সাল প্রান কোম্পানীর সেলস রিপ্রেজেনটিভ হিসাবে চাকরির কথা ফাইনাল করার চেষ্টা করছে। পাওনা টাকা তুলতে পারবেনা মন ভিষন রকম খারাপ। আমি তার নগদ কাষ্টমার। আমার কাছে ফয়সালের প্রশ্ন;
- এই মহল্লার লোকজন গুলা এতো বাটপার ক্যা ভাই?
সাতঃ
আমার বাসায় কম্পিউটার নাই। মোবাইল দিয়া সামুতে আসি। অফিসের দিনগুলোতে কাজের ফাঁকে টাইপ করি, পোষ্ট করি, মন্তব্য করি।
পিওন আকমল হোসেন আজকে আমাকে প্রশ্ন করছে; -স্যার আপনি নাকি ব্লগার? আমি বললাম ; হ্যাঁ । সাথে সাথে আকমল বলে উঠলো;
- আসতগফিরুল্লাহ, হুনছি ব্লগাররা নাস্তেক হয় কিন্তু আফনেতো দেহি নামাজ পড়েন, ব্লগার কেমনে হইলেন?
আমি তারে পাল্টা প্রশ্ন করলাম; তুমিতো নামাজ কালাম পড়োনা তাইলে তুমি কি?
-স্যার শুক্কুরবার দিন জুমার নামাজতো পড়ি। আমি এহন যাই স্যার, বড় স্যারে ব্র্যাক ব্যাংকের কিস্তির বিশ হাজার ট্যাকা জমা দিতে কইছে আইজ বারোটার মইধ্যে, জমা স্লিপটা একটু লেইখ্যা দিবেন?
ঢাকা,
১৭ পৌষ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ।
ছবিঃ অন্তর্জাল।
প্রাত্যহিকী-১
প্রাত্যহিকী-২
প্রত্যহিকী-৩
প্রাত্যহিকী-৪
০১ লা জানুয়ারি, ২০২৪ বিকাল ৩:৫৪
মোগল সম্রাট বলেছেন:
শিক্ষার বানিজ্যিকিকরন থামাতে হবে। ব্রান্ডের স্কুল সবাই এফোর্ড করতে পারেনা।
মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ।
২| ০১ লা জানুয়ারি, ২০২৪ বিকাল ৩:৪৭
নয়ন বড়ুয়া বলেছেন: জীবন সুন্দর, তবে আমরা না...
সবার নতুন বছর ভালো কাটুক, সাথে আপনারও দাদা...
নতুন বছরের শুভেচ্ছা...
০১ লা জানুয়ারি, ২০২৪ বিকাল ৩:৫২
মোগল সম্রাট বলেছেন:
নতুন বছরের শুভেচ্ছা।
৩| ০১ লা জানুয়ারি, ২০২৪ বিকাল ৪:০৩
বিজন রয় বলেছেন: লেখক বলেছেন: শিক্ষার বানিজ্যিকিকরন থামাতে হবে।
হা হা হা হা ...... হাসাইলেন!!
০১ লা জানুয়ারি, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৪
মোগল সম্রাট বলেছেন:
হাসেন হাসেন বিজন দা। সারাদেশ ভর্তি বিনোদন।
৪| ০১ লা জানুয়ারি, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৪
রাজীব নুর বলেছেন: সুন্দর লিখেছেন।
লেখা ভালো হয়েছে।
০১ লা জানুয়ারি, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯
মোগল সম্রাট বলেছেন:
ধন্যবাদ রাজীব নুব ভাই।
ইংরেজি নববর্ষের শুভেচ্ছা ।
৫| ০১ লা জানুয়ারি, ২০২৪ বিকাল ৫:০৮
নীলসাধু বলেছেন: নতুন বছরের শুভেচ্ছা।
পোষ্টে ভালো লাগা রইলো।
০১ লা জানুয়ারি, ২০২৪ বিকাল ৫:১২
মোগল সম্রাট বলেছেন:
আপনাকেও ইংরেজি নতুন বছরের শুভেচ্ছা।
পোস্টে আপনার উপস্থিতি আর মন্তব্য দেখে আনন্দিত হলাম।
শুভকামনা।
৬| ০১ লা জানুয়ারি, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৫
নাহল তরকারি বলেছেন: রিযিকের মালিক তো আল্লাহ। তো সমস্যা কই? হুজুরেরা তো বলে “আল্লাহ তুমার খাবার বাসায় এনে দিয়ে আসবে।” তো দশ বারো টা বাচ্চা হলেও তাদের স্কুলের ফিস দেবার সমস্যা হবার কথা না।
০১ লা জানুয়ারি, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৪
মোগল সম্রাট বলেছেন:
মফস্বলের শিক্ষা ব্যায় আর রাজধানীর শিক্ষা ব্যায় এক না। খরচ না করে উপায় নাই। সন্তানের জন্য বাবা-মা অনেক কষ্ট করে সেগুলো জোগার করে।
ধন্যবাদ মন্তব্য করার জন্য।
নতুন বছরের শুভেচ্ছা।
৭| ০১ লা জানুয়ারি, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০৩
শূন্য সারমর্ম বলেছেন:
জীবন থেকে নেয়া?
০১ লা জানুয়ারি, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৭
মোগল সম্রাট বলেছেন:
জ্বি! সবগুলা ঘটনাই জীবন থেকে নেয়া।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
নতুন বছরের শুভেচ্ছা।
৮| ০১ লা জানুয়ারি, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৪
প্রামানিক বলেছেন: ঘটনাগুলা চোখের সামনে ভাসতাছে, ব্লগার না হইলে এগুলো পড়তে পারতাম না।
০১ লা জানুয়ারি, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৮
মোগল সম্রাট বলেছেন:
ধন্যবাদ প্রামানিক ভাই। আনন্দিত হলাম।
নতুন বছরের শুভেচ্ছা।
৯| ০১ লা জানুয়ারি, ২০২৪ রাত ৮:৩১
শার্দূল ২২ বলেছেন: ভারত মহাদেশে ইব্রাহীম লোদিকে হত্যা করে মোঘল সম্রাট বাবরের ক্ষমতা দখল থেকে শুরু করে মোটামুটি প্রায় সব সম্রাটদের জীবনী পড়েছিলাম। ঐ সম্রাটদের বিলাষী জীবন যাপন আমাকে অনেক আহত করেছিলো, ভাবছিলাম সত্যি যদি ঐ মোঘল সম্রাট গুলো আমাদের এই সম্রাটের মত হতো তাহলে পাক ভারত হতো পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী প্রদেশ। ঘটনা ৫ পর্যন্ত পড়েছি। একটু জরুরী কাজে বের হবো, এসে বিস্তারিত বলবো ।
নতুন বছরের শুভেচ্ছা
০১ লা জানুয়ারি, ২০২৪ রাত ৯:২০
মোগল সম্রাট বলেছেন:
হা হা হা।
এক সময় ভাবতাম মোগল সম্রাটদের মতো সম্রাজ্য বানাবো তাই হয়তো ঐ সময় এই নাম দিয়ে সামুতে আইডি তৈরি করেছিলাম। চেয়েছিলাম সেই সম্রাজ্য হবে চর দখলের মতো মানুষের মন দখল করা। আফসোস কিছুই দখল করতে পারিনি। উল্টো হারিয়ে ফেলেছি কতো কিছু।
নতুন বছর খুব ভালো কাটুক সেই প্রত্যাশা নিরন্তর।
১০| ০১ লা জানুয়ারি, ২০২৪ রাত ১০:৫৭
শেরজা তপন বলেছেন: পুরোটা আগেই পরেছি। মোগল সাম্রাজ্যে অনেক দুঃখ কষ্টের কাহিনী!!
এইজন্যই কাউকে ব্লগার বলে পরিচয় দেই না
০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০২৪ বিকাল ৩:০৯
মোগল সম্রাট বলেছেন:
দুঃখিত তপন ভাই দেরিতে প্রতি মন্তব্য করার জন্য। কামলা মানুষতো সব সময় দৌরের উপ্রে থাহি।
আপনি ঠিক বলেছেন। এদেশে ব্লগার হিসাবে কাউকে পরিচয় দেয়া খুবই বিপজ্জনক। আমার অফিসের দুই একজন ছাড়া আর কেউ এটা জানেনা।
মোগল সম্রাজ্যে প্রজারা দুঃখ কষ্টেই থাকে। মোগলরাই সুখে থাকে
শুভকামনা জানবেন।
১১| ০২ রা জানুয়ারি, ২০২৪ রাত ১:৩৪
শার্দূল ২২ বলেছেন: আপনার লেখা থেকে বুঝতে পারি আপনি যখন কোন কিছুতে দৃষ্টি দেন একদম গভীরে চলে যান, আপনার বর্ণনার মানুষ আর সমস্যা গুলো আমরা সবাই পরিচিত কিন্তু এমন করে সবাই খুব বেশি অবলোকন করেনা । এটাই হলো আমাদের মানুষের মধ্যে পার্থক্য। একি ঘটনা একেক জন একেক রকম ভাবে দেখে। খুব কম মানুষ আছে ঘটনার আসল বিষয়টা দেখতে পায়। আমি জানিনা সম্রাট আপনার বয়স কত জানার ও ইচ্ছে নেই, যেই বয়সের হয়ে থাকেননা কেন আপনার অনুভুতির প্রতি আমার শ্রদ্ধা থাকলো।
শেষের দুটো নিয়ে বলি- আমার ফুফা মারাত্মক ধর্মান্ধ মানুষ। কোন এক আড্ডায় আমি সামুর কথা বলেছিলাম। সেই থেকে আমি তার চোখে অমুসলিম। তিনি জামা কাপড়ে ইসলাম। মানে জামাতে ইসলাম করেন। ওনাকে আমি একদিন খুব অনুরোধ করে ধর্ম তর্কে বসতে বললাম আমার সাথে। দুটো প্রশ্ন করলাম কোরান থেকে, সময় দিয়েছি ১ মাস আমার প্রশ্নের জবাব দিতে। গত ১০ বছর উনি আমার সামনে পড়েনি আর।
মুদি দোকানের বাকি - একবার এক গ্রামের বাজারে গিয়ে দেখলাম এক মুদি দোকানের হালখাতা হচ্ছে। আপনি হালখাতা বুঝেন কিনা জানিনা, এটা সাধারণত শীলকালে ধান আসলে করে। সকল বাকি দেয়া কাষ্টমারকে ঐদিন দাওয়াত দিবে, তারা বকেয়া পরিশোধ করবে সাথে খানাপিনা ব্যবস্থা থাকে । এক কাষ্টমার দেখলাম তার বাকি ৫ হাজার টাকা। উনি ৪ হাজার টাকা দিবে বলে খাবার খেয়ে গেলো, আমি জানলাম এটা আবার কেমন পরিশোধ, ? বাকি টাকা পরিশোধ করবে সেটাও আবার বাকি, শুধু মুখে বলেছেন আমার নামে ৪ হাজার লেখেন পরে এসে টাকা দিয়ে যাবো। কত সহজ সরল মুদি দোকানদার।
সম্রাট ভাই বলতে একটু বিব্রতবোধ করছি তবুও বলি- কিছু মানুষের অভাব হয় সততা থেকে কিছু হয় অলসতা থেকে। কিছু হয় অজ্ঞতা থেকে। কিছু হয় পরিবারের ভুল সিদ্ধান্ত থেকে। আমাদের দেশের মানুষ সৃষ্টিশীল হতে চায়না। সবাই চায় বসে বসে খেতে । ডেসটিনি আমাদের দেশে ৪৫ লক্ষ যুবক কে অলস বানিয়ে ফেলেছিলো। আপনি একটু ভাবুন ৪৫ লক্ষ যুবক ১২ বছরে একটা সুই বানায়নি। বিদেশ থেকে পন্য এনে ৫ টাকার জিনিশ ১০ টাকা নিজেদের মধ্যে বিক্রি করে একে অন্যের টাকা ভাগ করে খেয়েছে। ১২ বছর পরে যখন সবার লাভের টাকা দেয়ার কথা তখন ডেসটিনির পরিচালক কোন এক গাধা মন্ত্রীকে টাকা দিয়ে নিজেকে গ্রেফ্তার করিয়েছে জনগনের হাত থেকে বাচার জন্য । এটা একটা দেশের জন্য করনার চেয়ে ভয়াবহ ব্যাপার ছিলো।
আমরা আমেরিকাতে বসে বসে খেতে পারিনা, শারীরিক কসরত করতে হয় কিন্তু আলহামদুলিল্লাহ আমাদের কোন মানসিক পেইন নেই, যখন কাজ থেকে বাসায় যাই নিশ্চিন্তে ঘুম দিতে পারি। আমাদের দেশে উল্টো, সবাই চেয়ারে বসে থাকে আর ব্রেইনকে কাজে দুষ্ট বুদ্ধিতে কাজে লাগায় টাকা আয় করতে। টাকা থাকুক আর না থাকুক সবার উচিৎ সৃষ্টিশীল হওয়ার।
আমার এক চাইনিজ ফ্রেন্ড , বেইজিং ট্যাকনলজি ইউনিভারসিটির প্রফেসরের মেয়ে, সে এইচটিসি মোবাইলের মাদারবোর্ড ইন্জিনিয়ার, তার হাজব্যান্ডও সেইম। কিন্তু তারা ছুটিরদিন গুলো শহরের বাইরে গিয়ে কৃষি কাজ করে পরিবারের সবার সাথে । সে আমাকে একদিন কথায় কথায় তাদের দেশের মানুষের এক্টিভিটিজ বুঝাতে একটা উপমা দিয়ে বললো- শার্দুল তুমি যদি চিন এ এসে রাত ১২ টায় কোন পাহাড়ের চুড়ায় উঠে বসে থাকো তাহলে শুনবে সারা চিন থেকে একটা টুক টুক শব্দ আসতেছে। তার মানে আমাদের মানুষ গুলো ঘুমানোর আগে কিছুনা কিছু বানিয়ে ঘুমায়, হোক সেটা পাতার বাসি কিংবা বাঁশের বাড়ি।
আরেকটা বিষয় না বললেই নয় সম্রাট ভাই- ধর্মকর্ম কোন পেশা হতে পারে সেটা ইসলামের প্রথম চার শত বছরের মধ্যে শোনা যায়নি। প্রতি বছর নুরানি মাদ্রাসা থেকে শুধু আরবি উচ্ছারণ আর হাদিস শিখে লক্ষ লক্ষ মানুষ বের হচ্ছে। এদের উদ্দেশ্য হলো তারা মিলাদ বা মসজিদে আযান দিয়ে খাবে। এটা একটা জাতির জন্য কত বড় মেধার হত্যা কেই কি ভেবে দেখেছে? মসিজদে যারা নামাজ পড়তে আসবে তাদের একজন আযান দিনে, তাদের একজন নামাজ পড়াবে, ম্যানহাটনে আমাদের একটা মসজিদে আমরা নামাজ পড়ি, শতশত মানুষ হয়। কোন ইমাম মুয়াজ্জিন নেই। যখন যে চায় সেই নামাজ পড়ায়।
যাইহোক সমালোচনা বেশি হয়ে গেছে। আমি বিশ্বাস করি আমাদের দেশের মানুষ একদিন জীবনের সঠিক মানে বুঝবে, সঠিক স্বাদ নিয়ে বেচে থাকবে। আর অবশ্যই আমার দেশের মানুষ অনেক বেশি হৃদয়বান। একে অন্যকে হেল্প করতে জানে। তা না হলে এই ছোট্ট একটা দেশে এত মানুষ বেঁচে থাকতে পারতোনা।
সবার জন্য শুভ কামনা।
০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০২৪ বিকাল ৩:৫২
মোগল সম্রাট বলেছেন:
প্রিয় শার্দুল মন্তব্যে দেরিতে প্রতি মন্তব্য করার জন্য খুবই দুঃখিত।
আমি আামার জীবন চলার পথে দেখা হওয়া নানান পেশার মানুষদের সাথে মিশে দেখেছি। আর তাদের প্রতিদিনের জীবনকে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখার চেষ্টাও করেছি। গভীরে যেতে পেরেছি কিনা সেটা আপনাদের মূল্যায়ন। তবে একটু ভালো ব্যবহার একটু হাসি দিয়ে সাধারন মানুষের মনের দরজায় খুব সহযেই পৌছানো যায় তা আমি টের পেয়েছি অনেক আগেই।
আপনি হালখাতার কথা উল্ল্যেখ করেছেন। এটার সাথে আমি পরিচিত। ছোটবেলা থেকে অনেক হালখাতার দাওয়াতে আব্বার সাথে গিয়েছি। তখন তো কার্ড ছাপিয়ে দাওয়াত দেয়া হতো। বৈশাখ মাসে দেখতাম বাজারের মুদিদোকান মালিকরা এটা করতে। মিষ্টি শরবত খেতে দিতো। হালখাতার সময় অর্ধেক পাওনা টাকা পরিশোধ করে আসাতো অনেকে। কিন্তু খাওয়ার পর বাকির টাকা বাকি রাখার ঘটনাও হয় এটা আপনার কাছে শুনলাম। নতুন অভিজ্ঞতা।
সেই ছোটবেলা থেকে এতো বেশি ধর্মান্ধদের সাথে দেখা হয়েছে তার ফিরিস্তি দিয়ে একটা পোষ্ট দিবো একদিন। ধর্মের নামে কি পরিমান কুসংস্কার পালন করতে দেখেছি। আপনিও হয়তো দেশে থাকতে দেখেছেন। ধর্মান্ধদের সাথে বসলে যখন কোরানের আয়াত কোট আনকোট করি তখন তারা চল্লিশ খন্ডের তাফসিরে গিয়ে কতো রকম ব্যাখ্যা দেয়া শুরু করে তার বর্ননা অন্য কোন পোস্টে লিখবো।
আমারা শর্টকাটে ধনী হবার রাস্তা তালাশ করি পুরো জাতি। তা নাহলে কয়েক বছর পর পর মহাপ্রতারকের ফাঁদে পড়ে এদেশের মানুষ? ডেসটিনি, যুবক, ই-ভ্যালী, এহসান গ্রুপ সহ আরো কতোবার তা অবশ্যই জানেন। আর অলসতার বিষয়ে একটা ঘটনা বলি-এক মোয়াজ্জেন সাহেব খুব মধুর সুরে আজান দিতো মহল্লার মসজিদে। প্রায়ই সংসারে টানাটানির কথা শেয়ার করতো আমার সাথে। আমি তাকে পরামর্শ দিয়েছিলাম পাচ ওয়াক্ত আজানের পর অন্য কোন কাজ তো করতে পারেন অথবা টুকটাক ব্যবসা। আমি তাকে একটা অটো রিক্সাও কিনে দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমি তার জবাবে তাজ্জব হয়ে গেলাম। সে বলেছিলো ইমাম মোয়াজ্জেন সমাজের উচু স্তরের সম্মানীয় ব্যক্তি তারা ছোট খাটো কাজ করলে ধর্মকে খাটো করা হবে। আর মসজিদ কমিটিও সেটা মানবে না।
যাই হোক আমার বয়সটা আপনার অজানা থাক আপাতত কোন একদিন বলবো অবশ্যই । আপনার জন্য অন্তরের গভীর থেকে ভালোবাসা জানালাম। ভালো থাকবেন সব সময় সেই প্রত্যাশা করি।
১২| ০২ রা জানুয়ারি, ২০২৪ দুপুর ১:৪৫
রাজীব নুর বলেছেন: পোষ্টে আবার এলাম। কে কি মন্তব্য করেছেন সেটা জানতে।
০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০২৪ বিকাল ৩:১২
মোগল সম্রাট বলেছেন:
আমি ধইন্ন হইলাম প্রিয় রা-নু ভাই।
১৩| ০২ রা জানুয়ারি, ২০২৪ রাত ১০:১৮
শ্রাবণধারা বলেছেন: আপনার এই লেখাটি খুব ভালো হয়েছে। অনেকগুলো ছোট ছোট ঘটনা জীবনের আয়নায় প্রতিফলিত হয়েছে।
০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০২৪ বিকাল ৩:১৫
মোগল সম্রাট বলেছেন:
ভালো লেগেছে জেনে আনন্দিত হলাম। দেরিতে প্রতি মন্তব্য করার জন্য দুঃখিত ।
চেষ্টা করেছি আশপাশের টুকরো টুকরো কিছু দৈনন্দিন ঘটনাকে লিখতে।
শুভ কামনা জানবেন।
©somewhere in net ltd.
১| ০১ লা জানুয়ারি, ২০২৪ বিকাল ৩:৪২
মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:
শিক্ষার দায়িত্ব রাষ্ট্রের নেয়া উচিত।
শিক্ষা হোক এক মুখী।
শিক্ষা হোক সবার জন্য।