নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ।

মোগল সম্রাট

মানুষ মানুষের জন্য , জীবন জীবনের জন্য একটু সহানুভুতি কি মানুষ পেতে পারেনা...ও বন্ধু...

মোগল সম্রাট › বিস্তারিত পোস্টঃ

ময়না ভাই (পুর্ব প্রকাশের পর)

২৫ শে আগস্ট, ২০২৫ সকাল ১১:২৫



(পাঁচ)

আমেনা খালার বাসা থেকে ময়না ভাই যেভাবে বের হলেন, সেটা এক ধরনের কূটনৈতিক পালানো বলা যায়।
রাতে গেটের তালা খোলার শব্দে পাশের বাসার কুকুর ঘেউ ঘেউ করে উঠেছিল। কিন্তু ময়না ভাই তখনই সিদ্ধান্ত নেন-এই কানা গলি আমার জন্য না, আমি বড় রাস্তায় হাঁটব!

ময়না ভাই আরামবাগের মেসে এসে উঠলেন,
কিশোরের সাথে এখন ময়না ভাইয়ের তুই তোকারি সম্পর্ক। মেসের সবচেয়ে অলস কিন্তু কনফিডেন্ট ছেলে।
কিশোর বলল:
- ময়না ভাই, আপনার জীবন তো সিনেমা। আমি যদি ক্যামেরা চালাতে পারতাম...!
- তাইলে তো তুই এখন কাশিমপুরে ডকুমেন্টারি বানাইতি, ময়না ভাই গম্ভীর মুখে বলল।

জবেদা বেগম ময়না ভাইকে একদিন বলেছিলো তার জীবনে একটাই শখ, সুন্দরবন দেখা। হঠাৎ ময়না ভাই ঘোষণা দিলেন আমরা সুন্দরবন যাবো। পাঁচ দিনের সফরে। আমি, কিশোর এবং জবেদা বেগম এই তিন জনের গ্রুপ।
সাথে সাথে জবেদা বেগম বলে উঠলো;
-শোকর আলহামদুলিল্লাহ। আমার মানত পুরা হইছে যদি মরিও, সুন্দরবনে বাঘের মুখেই মরব! এই শহরে রিকশা চাপা পইড়া মরার চাইতে ভালা

তিনজনের দল গঠন হলোঃ
ময়না ভাই-নেতা,
কিশোর-পথপ্রদর্শ,
জবেদা বেগম-সুন্দরবনপ্রেমী ।

গন্তব্য: সুন্দরবন। উদ্দেশ্য: কানা হাইকে খুঁজে বের করা।
কানা হাই ময়না ভাইয়ের চাচা, যিনি এখন এক ফেরারী বনদস্যু। লোকজন বলে, তার নামে সুন্দরবনে বাঘ আর হরিণ একসাথে পানি খায়। বহু বছর তার সাথে যোগাযোগ নাই। তাকে একটা মহা সারপ্রাইজ দেয়ার খুব ইচ্ছে ময়না ভাইয়ের। সাথে কাশিমপুরের একটা গোপন রহস্য সলভ করতে হবে।

রাত এগারোটায় বাস ছাড়ল সায়দাবাদ থেকে। কিশোর একটা লম্বা ডায়লগ দিল,
-ময়না ভাই, জীবন একটা ভ্রমণ। কারো টিকিট কাটা থাকে আগে, কারো বাসেই ওঠা হয় না।
ময়না ভাই বললেন:
-তাইলে চুপচাপ জানালা দিয়ে বাইরে দেখ

মাওয়া ফেরী ঘাটে এসে তিন ঘন্টার জ্যামে বসে থাকার পর ফেরী পাওয়া গেল। কিন্তু ঠেলা ফেরী।
জবেদা বেগম অবাক হয়ে সেই ফেরী দেখছে। হঠাৎ বলে উঠলো-ময়না ভাই, কি বেক্কল কাজকাম এই দ্যাশে, এতো বড়ো একটা খেলার মাঠ এতটুক একটা জাহাজ দিয়া ঠেইলা নিতাছে। এই ভাবে চলতে থাকলে দরিয়ার ওপারে গিয়া আবার ফিরতে হইবো। তিনদিন শ্যাষ।

অতি ভোরে বাস যাত্রা বিরতী দিয়ে থামলো গোপালগঞ্জ। সবাই নেমে টয়লেটে যাচ্ছে, কেউ সিগারেট ফুকছে।
জবেদা বেগম ফিরলেন একটা গামছা হাতে।
-এইখানে পানি নাই, কিন্তু টিকিট কাটার আগে কেউ বলে না, ময়না ভাই হেসে বলেন।
-জবেদা বেগম, বাংলাদেশে ট্যুর মানেই সারপ্রাইজে ভরা

মোংলা বন্দর পৌছে একটা ট্রলার তিনদিনের জন্য ভাড়ায় নেয়া হলো। ট্রলারটার নাম "ভাগ্যবানের ভেলা" মাঝির নাম মতিন। চেহারা দেখে বোঝা মুশকিল, লোকটা নৌকা চালায়, নাকি কবিতা লেখে। মতিন ট্রলারে উঠেই একটা হুঁশিয়ারি দিল,
-বনে গেলে চুপচাপ থাকবেন। বাঘ কান পাতে।
জবেদা বেগম চোখ বড় বড় করে তাকালেন,
–আরে বাবা! ময়না ভাই আমার ডর লাগতাছে।

ময়না ভাই বললেন,
-বাঘ তো অনেক কিছু করে, জবেদা বেগম, কিন্তু মানুষের সামনে বাঘ অতি নগন্য প্রানী!

ট্রলার বনের দিকে এগোতে থাকে। কিশোর নিজের মোবাইল দিয়ে ভিডিও করতে করতে বলে,
-এই ভিডিওটা ভাইরাল হলে তো ইউটিউব থেকে আয় করে লঞ্চ কিনে ফেলতে পারব আমরা ময়না ভাই

সুন্দরবনের হাড়বারিয়া ফরেস্ট স্টেশনের সামনে দিয়ে বিরাট একটা খাল ধরে খানিক এগিয়ে দক্ষিণ দিকে আর একটা ছোট খাল ধরে খুবই ধীর গতিতে চলছে ট্রলার। মাজে মধ্যেই আওয়াজ হচ্ছে এবং সেই আওয়াজ প্রতিধ্বনির মতো শোনা যাচ্ছে। জবেদা বেগম আবাক হয়ে ময়না ভাইকে জিজ্ঞেস করলো:
-ময়না ভাই জঙ্গলে মইধ্যে বিল্ডিং আছে নাকি? আওয়াজ বারি খাইতাছে ক্যা?

মতিন হঠাৎ ট্রলার থামাল, ফিসফিস করে বলল,
-এইখানে সাবধানে থাকবেন। এই অঞ্চলেই কানা হাই থাকেন।
সবাই থেমে গেল। এক অদ্ভুত নিস্তব্ধতা। আর ঠিক তখনই.. দূরে একটা অদ্ভুত ধরনের বাঁশির শব্দ!

জবেদা বেগম ভয় পেয়ে ঠাণ্ডা হয়ে বললো,
-ময়না ভাই এইডা কি ভুতের বাঁশি? শুনছি বনোবিবি নামের একজন পেত্নী এই জঙ্গলে সব সময় বাঘের পিঠে চইড়া ঘুইরা বেড়ায়। বিরাট ক্ষমতা তার।
ময়না ভাই তার চশমাটা খুলে বললেন:
-এইটা কানা হাইয়ের বাঁশির সুর।
কিশোর দম বন্ধ করে দাঁড়িয়ে আছে। মতিন ভয় পেয়ে ট্রলার একটু পেছনে ঠেলে দিতে চাইলো, ময়না ভাই বলে উঠলেন,
-চলো। আজকে এক মহান বনদস্যুর মোকাবেলা হবে। সে না থাকলে আমি এই বনে আসতাম না।

দূরে ধোঁয়া উঠছে একটা কুঁড়েঘর থেকে। সামনে একটা প্রকান্ড গাছের গুড়ি দেখা যাচ্ছে। তার ওপর বসে একজন লোক বাঁশি বাজাচ্ছে। মাথায় হ্যাট পরা, পড়নে থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট আর গায়ে জলপাই রংয়ের টিশার্ট -চেহারা এমন যে, মানুষ না বনদস্যু, চরিত্র বোঝা দায়।
ময়না ভাই আস্তে আস্তে কাছে গিয়ে বলে উঠলো:

-কানা হাই, উই আর কোস্ট গার্ড ব্যাটেলিয়ান। ইউ আর আন্ডার এ্যারেস্ট.....

(চলবে…)



ময়না ভাই-১ম পর্ব
ময়না ভাই -২য় পর্ব
ময়না ভাই-৩য় পর্ব
ময়না ভাই-৪র্থ পর্ব

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে আগস্ট, ২০২৫ দুপুর ১২:১৭

বিজন রয় বলেছেন: গল্প না উপন্যাস?

২| ২৬ শে আগস্ট, ২০২৫ সকাল ১১:০৬

রাজীব নুর বলেছেন: ভালো।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.