নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সূর্য থেকে অসম্ভব শক্তিশালী আলোকরশ্মি চাঁদের উপর পড়ে। সে চাঁদ কিছুদিন জোছনা বিলায় আমাদের মাঝে।অমাবস্যায় কেউ চাঁদকে ভুলে যায় না।অপেক্ষা করে জোছনা ফিরে আসার ।সূর্য না হই ,মাঝে মধ্যে জোছনা হতে চাই।অমাবস্যায় হাহাকার হতে চাই মানব মনে।

আলমগীর জনি

গল্প বলি

আলমগীর জনি › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পঃ হুইল চেয়ার

২১ শে নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:৩০

দরজায় নক করতেই দরজা খুলল হামিনের স্ত্রী।আমি বললাম , কেমন আছেন? হামিনের স্ত্রী সামনের দিকে দেখিয়ে বিরস মুখে বলল ,এইতো ভাই । ড্রইং রুমে দেখলাম হামিন আর তার মেয়ে ঐশি পাশাপাশি দুইটা হুইল চেয়ারে বসে আছে।আমি দেখে হতভম্ব হয়ে গেলাম।ছেলেটা এত অসুস্থ কিন্তু অফিসে একবারও জানাল না।আমাকেও জানাতে পারত।আমি এতবার ফোন দিলাম অথচ তাঁর ফোন বন্ধ পাই। রুমে ঢুকেই হামিনকে রাগত স্বরেই বললাম, আমাদের একটু জানালেও পারতে।হামিন আমাকে কিছু বলল না।শুধু তাকিয়ে আছে তার স্ত্রীর দিকে।এরপর ইশারা দিলো ঐশিকে রুমে নিয়ে যেতে।ঐশি রুমে যাওয়ার পর হামিন হুট করেই হুইলচেয়ার ছেড়ে দিয়ে সোফায় এসে বসল।আমি বললাম কি হয়েছে হামিন?



হামিন আমার অফিসের কলিগ।কলিগ হলেও সে আমার বন্ধুর মত।যদিও বয়সে আমি কিছুটা বড় তার চেয়ে। এই কর্পোরেট যুগে কর্পোরেট অফিসগুলোতেও কর্পোরেট বন্ধুর ছড়াছড়ি।এখানে প্রাকৃতিক বন্ধু নেই বললেই চলে। প্রাকৃতিক বন্ধু আবার কি জিনিস?চাওয়া পাওয়াকে পিছনে ফেলে যে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে তাকে প্রাকৃতিক বন্ধুত্ব বলে। হামিন একটু ব্যতিক্রম। অত্যন্ত বিনয়ী আর সৎ চরিত্রের মানুষ।তাই অল্প কয়দিনেই আমাদের মধ্যে বন্ধুত্ব গড়ে উঠে।
হামিন বলল আসিফ ভাই ব্যাপারটা আপনাকে জানানো উচিত ছিল আমার কিন্তু আসলে কারো সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করছিল না।তাই ফোন বন্ধ করে ডুব মেরে আছি। আমি অভিমানের স্বরে বললাম হামিন, এখন তো বলবে।হামিন বলল, একটু অপেক্ষা করুন।আগে কিছু খেয়ে নিন।আপনি প্রথমদিন আসলেন।এই চম্পা, আসিফ ভাইকে কিছু দাও।খেতে খেতে গল্প করি। চম্পা হামিনের স্ত্রী। অফিসে গিয়েছিল বেশ ক'বার।

-হামিন।
-জী আসিফ ভাই।
-তোমার পায়ে কি হয়েছে?
-কিছু হয় নি।
-তাহলে এমন প্লাস্টার করা কেন?
-আসলে হয়েছে কি, গত সপ্তাহে আমরা তিনজন ঘুরতে গিয়েছিলাম এক জায়গায়।আমি ,চম্পা আর আমাদের মেয়ে ঐশি। ফেরার সময় আমাদের বাস এক্সিডেন্ট করে।কয়েকজন স্পট ডেড।আমরা তিনজনেই বেঁচে যাই। তবে আমাদের ঐশির বা পা গুরুতর ভাবে জখম হয়। ওর পায়ে দেখবেন এমনই একটা প্লাস্টার করা।
-হুম সেটা দেখেছি।কিন্তু তোমার কি হয়েছে?
-আমার কিছুই হয় নি।আমি আর ঐশির মা প্রায় অক্ষতই । চম্পার হাত একটু কেটে গেছে আর আমার কিছুই হয় নি।
-কিছু না হলে এভাবে প্লাস্টার করে রেখেছ কেন?
-মেয়ের জন্য।সে তার বাবাকে হুইল চেয়ারে দেখে খুশিই হয়।তার একজন সংগী হয়েছে।আসিফ ভাই একটা কথা জানেন আপনি?
-কি?
-হুইলচেয়ারের বাসিন্দারা হুইল চেয়ার পছন্দ করে না?
-মানে।
-আদিম যুগ থেকেই মানুষ সংগ প্রিয়।কিন্তু হঠাত হুইল চেয়ারের বাসিন্দা হওয়া মানুষগুলো নিজেকে ভয়ংকর একা ভাবে আবিষ্কার করে।প্রথম কয়দিন সবাই খুব সিম্প্যাথি দেখালেও এরপর তারা একা হয়ে যায়।
-হামিন, তোমার কথায় যুক্তি আছে কিন্তু তোমার এই ইমোশন দিয়ে তোমার চাকুরী টিকবে না।অফিস থেকে তোমাকে কিছু বলবে।
-বলুক।চাকুরী চলে যাবে বেশি হলে।কিন্তু আমার এমন করার পিছনে একটা কারণ আছে।
-কি কারণ?
-দাঁড়ান বলছি ।

হামিনের স্ত্রী দুই কাপ চা আর কিছু নাস্তা নিয়ে এলো ।এসে বলল ভাই,দুপুরে অবশ্যই খেয়ে যাবেন।আমি একটা হাসি দিলাম।আসলে কিছু বলার ছিল না আর।হামিন স্ত্রীকে বলল,বলেছিলাম না অফিস থেকে আসিফ ভাই ঠিকই আসবেন ।

এরপর হামিন লুংগি একটু উপরে টেনে নিয়ে ওর আরেক পা দেখাল। ক্ষত চিহ্ন।বুঝা যাচ্ছে এর উপর কোন এক সময় চরম ধকল গিয়েছিল।

তারপর হামিন বলল,খুব ছোটবেলায় আমি একবার এরকম হুইল চেয়ারের বাসিন্দা হয়েছিলাম। আমাদের বাবাদের তো এত সময় ছিল না আমাদের জন্য। বাড়িতে এত মানুষ আমার খবর কে রাখবে। আমি তখন একা হয়ে যাই। আমার তখনকারের অনুভূতি আমি ঐশির মধ্যে দেখতে শুরু করি। এরপর আমি সিদ্ধান্ত নেই আমিও হুইলচেয়ারের বাসিন্দা হয়ে যাব।আপনি জানেন আমার এই মেয়েটা এরপর কত খুশি হয়েছে? মেয়ের এই খুশি কিন্তু তার বাবার অসুস্থতার জন্য না।তার খুশি সে তার বাবাকে পাশে পেয়েছে সেজন্য। পৃথিবীতে যত মেয়ে আছে তাদের কেউই নিজেদের বাবাকে কখনো হারাতে চায় না।

আমি অবাক হলাম।মানুষ এভাবেও ভাবতে পারে ? আমি হামিনকে জড়িয়ে ধরলাম।তারপর বললাম, তোমার কাছ থেকে অনেক কিছু শিখার আছে।হামিন আবার বলা শুরু করল,

-আসিফ ভাই আমি জানি মাস দুইমাসের জন্য অফিস আমাকে ছুটি দিবে না।সেজন্য আর অফিসের কথা চিন্তা করছি না।
-কিন্তু ফ্যামিলি চালাতে হলে তো টাকার দরকার আছে। তাই না?
-দুই তিনমাস চলার মত টাকা আছে। এরপর চাকুরী খুঁজব আবার।কিছুনা কিছু করে তো খেতে পারব তাই না? কিন্তু আসিফ ভাই, মেয়ের এই হাসিমুখটা কি অফিস করলে দেখতে পারব ?
-হামিন,তুমি আবার অফিসে আসবে আমি স্যারকে বলে রাখব।যদি তোমাকে না রাখে অফিস তাহলে আমরা দুইভাই মিলে আরেকটা অফিসে জয়েন করব।
-ধন্যবাদ ভাই।
-ধন্যবাদ তুমি প্রাপ্য। তুমি সমগ্র বাবা জাতির গর্ব।

হামিন লজ্জিত মুখে বলল,ভাই চম্পা রান্না করছে ।খেয়ে যাবেন। আমি বললাম ,অবশ্যই ।ঐশিকে ডাক দিয়ে বললাম, কেমন আছো মা? ঐশি একটা স্বর্গীয় হাসি দিয়ে তার বাবার দিকে কি জানি ইশারা করল।যার অর্থ হতে পারে , বাবা পাশে থাকলে কে খারাপ থাকে ?

মন্তব্য ২ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে মে, ২০১৯ সকাল ১১:৩৯

তানজীর আহমেদ সিয়াম বলেছেন: আসলেই বাবা পাশে থাকলে কে খারাপ থাকে ?

২৪ শে মে, ২০১৯ রাত ১:৪৫

আলমগীর জনি বলেছেন: কেউ কেউ হয়তো খারাপ থাকে । সবার গল্পটা তো এক রকম হয় না ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.