নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সূর্য থেকে অসম্ভব শক্তিশালী আলোকরশ্মি চাঁদের উপর পড়ে। সে চাঁদ কিছুদিন জোছনা বিলায় আমাদের মাঝে।অমাবস্যায় কেউ চাঁদকে ভুলে যায় না।অপেক্ষা করে জোছনা ফিরে আসার ।সূর্য না হই ,মাঝে মধ্যে জোছনা হতে চাই।অমাবস্যায় হাহাকার হতে চাই মানব মনে।

আলমগীর জনি

গল্প বলি

আলমগীর জনি › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পঃ বিভ্রাট

১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১২:১৮

ছবিঃ হুমায়ূন আহমেদ ও হিমু, মানবকন্ঠ ।

-তা হিমু সাহেব আপনার আসল নাম কি ইমদাদ হিমু?
-না স্যার আসল নাম ইমদাদ রহমান।
-এফিডেভিট করেছেন নামের ?
-এফিডেভিট করব কেন স্যার।এটা আমার আসল নাম।
-মানে হিমু এসোসিয়েশান এর সভাপতি হিসেবে আপনি এই নাম পেয়েছেন?
-জী অনেক টা এমনই ।আমাদের এসোসিয়েশান এর সদস্য হলেই তিনি হিমু।
-তা আর কি কি কার্যক্রম পরিচালনা করেন আপনারা?
-স্যার আমাদের অফিসের দেয়াল হতে শুরু করে সব কিছুর রঙ হলুদ।এমনকি আমাদের সব সদস্যদের তরকারিতে হলুদ বেশি দিয়ে রান্না করার কথা বলা আছে।
-এটা কেমন কথা !
-মানে স্যার।হলুদ বেশি খেলে বাথরুমে যা ত্যাগ হবে তার রঙও হলুদ হবে তাই ! গ্রহণে হলুদ, বর্জনেও হলুদ।

ড. ড্যানিয়েল জায়েদ হঠাত করে হো হো করর হেসে উঠলেন।তার এই হাসি কি বুঝায় সেটা হিমু এসোসিয়েশন এর হিমু সাহেব জানেন না ।তবে কিছুক্ষণ পরই হিমু সাহেব ও তার দল বুঝতে পারে তারা ভুল মানুষের সামনে পড়েছেন । হিমু নিয়ে তার স্ট্যাডি ব্যাপক ।এদের কারো মধ্যে তিনি হিমু খুঁজে পান নি।হিমু এসোসিয়েশান এর হিমুবৃন্দের তাই বেশিক্ষণ থাকার সৌভাগ্য হয় নি।

নরওয়ের নামকরা বিশবিদ্যালয় এর এক শিক্ষক ড. ড্যানিয়েল জায়েদ। তিনি ঢাকায় এসেছেন এখানকার এক লেখকের বিখ্যাত এক চরিত্র নিয়ে কাজ করতে ।লেখকের নাম হুমায়ূন আহমেদ। চরিত্রের নাম হিমু। ড. জায়েদ বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত নরওয়ের নাগরিক ।তিনি নরওয়ের একজন নামকরা মনোবিজ্ঞানীও ।সমস্যাটা বাঁধল নরওয়েতেই একটা ছেলের বাবা মা তাকে ড. জায়েদের কাছে নিয়ে গেলে। ছেলেটার বয়স ১৯। রাতদিন হিমু নিয়ে বসে থাকে। ড. জায়েদ ছেলেটার জন্য কিছু করতে পারছিলেন না ।
যদিও তিনি এত সহজে হারার পাত্র নয়। তিনি ঢাকায় এসে এখানকার পরিচিত একজনের সাথে যোগাযোগ করেন ।তিনিই খোঁজ দেন বাংলাদেশ হিমু এসোসিয়েশন ,ঢাকা মহানগরী শাখার।

হিমু এসোসিয়েশান ঢাকা মহানগরীর সম্মানিত সভাপতি জনাব ইমদাদ হিমু।তিনি ড.জায়েদ কে বলেছিলেন স্যার, হিমু বিষয়ে যে কোন ধরনের সহায়তা আমার সংগঠন আপনাকে করবে।আপনি কোন চিন্তা করবেন না ।ড.জায়েদ তাকিয়ে ছিলেন তখন তার চ্যালেঞ্জ এক সহজ সমাধান দেখে । আসলে যে ঘোড়ার ডিম হয়েছে তা তিনি কথা বলেই বুঝতে পারেন ।

ড. জায়েদ আসল হিমু খুঁজছেন এই খবর সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে। অনেকে অনেক হিমু নিয়ে আসেন । কিন্তু এর কোনটাই আসল হিমু নয় । কেউ খালি পায়ে পকেটবিহীন হলুদ পাঞ্জাবি পরে আসেন কিন্তু হলুদ পাঞ্জাবি পরলেই কেউ হিমু হয়ে যাবে না । আধুনিক হিমুরা হলুদ পাঞ্জাবি নাও পরতে পারে। এরা হয়তো রুপার শাড়ির সাথে মিলিয়ে নীল রঙা টি শার্ট আর জিন্স পরে রাস্তায় নামবে। আর পায়ে থাকবে ডিসকাউন্ট শপ থেকে কেনা বাটার কমদামি জুতা। হিমু অন্তরে না থেকে শুধু হলুদ পাঞ্জাবিতে থাকলে চলবে?

ড. জায়েদের সাথে এখন একজনের কথা হচ্ছে। তিনি পরিষ্কার বাংলা ভাষায়ই কথা শুরু করলেন। বাংলাদেশে বসবাসকারী বাঙ্গালীরা প্রতি বাক্যে দুই তিনটা ইংরেজি শব্দ না জুড়ে দিলে নিজেদের আধুনিক মনে করতে পারে না ।তবে ড. জায়েদের মত বিদেশ বিভূঁইয়ে বড় হওয়া বড় বড় মানুষেরা সুযোগ পেলে বাংলায়ই কথা বলেন।

-তুমি তাহলে হিমু?
-নাহ, আমার নাম কাব্য রহমান ।
-কিন্তু আমি যে জানি তুমি হিমু।
-কারণ আপনাকে যা জানানো হয়েছে আপনি তাই জেনেছেন।
-আমাকে কি জানানো হয়েছে?
-সেটা আপনি জানেন।
-তুমি জানো আমি কে?
-হিমুর রহস্য উদঘাটনে ব্যস্ত নরওয়ের এক মনোবিজ্ঞানী।
-বাহ তুমি দেখি সব জানো।
-যতটুকু জানতে হয় ততটুকুই জানি এর চেয়ে বেশি জেনে মাথায় বোঝা বাড়াতে চাই না।
-তোমাকে আমার সাথে যেতে হবে।
-আমার ইন্টারভিউ শেষ?
-হ্যাঁ ।কারণ আমি আগে যাদের সাথে কথা বলেছি তাদের সব কিছু জেনে ডাকি নি ।কিন্তু তোমার সম্পর্কে আমি সবই জানি ।ত্যোমাকে নিয়ে যাব এটা আগেই কনফার্ম ।
-কখন যাবেন?
-তোমার ভিসা রেডি হোক ।
-আচ্ছা।
-তোমার কোন জিজ্ঞাসা নাই কেন, কি জন্য তোমাকে নিতে চাচ্ছি?
-হিমু বিষয়ক গবেষণার জন্য।
-তোমাকে কে বলেছে?
-আমার বাবা।তিনি চান তার পাগল হয়ে যাওয়া ছেলে ইউরোপ চলে গিয়ে সুস্থ হবে।
-তোমার কি ধারণা?
-আমি সুস্থ হয়ে যাব ।
-ঠিক আছে ।তুমি বাসায় যাও।আমি বললে তুমি আসবে।
-অবশ্যই আসব।

ড. জায়েদ যথেষ্ট চিন্তিত ।তবে তার আর কিছু করার নাই ।তাকে দ্রুত এই ছেলের ভিসা করিয়ে নরওয়ে নিয়ে যেতে হবে। এর বেশি তিনি কিছু করতে পারবেন না ।

কাব্য ছেলেটার খোঁজ দেন কাব্যের বাবার এক কলিগ। কারণ কিছুদিন আগে এই ছেলে অদ্ভুত কিছু কাজ করতো, এখনো করে। এই কাজের সাথে লেখক হুমায়ূন আহমেদের হিমু চরিত্রের সাথে সাদৃশ্য খুঁজে পান অনেকে। কাব্যের বাবা ছেলেকে নিয়ে কিছু করতে পারছেন না । এই ছেলে দেশে পড়ালেখা কিছুই করবে না ।একে বিদেশে পাঠিয়ে দিতে হবে ।হাতের কাছে এমন সহজ সুযোগ আসতে তিনি তা মিস করতে চাইলেন না । আর ড. জায়েদ এই ছেলে সম্পর্কে সব জেনেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।তিনি একে নিয়ে যাবেন নরওয়েতে।

কিছুদিন পর...

ড. জায়েদ দাঁড়িয়ে আছেন হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের বিমানের কাছে। তিনি অপেক্ষা করছেন কাব্য রহমান নামক হিমুর জন্য।তাদের ফ্লাইট বিকাল ৫ টায়।কাব্যের আসার কথা ছিল দুপুর একটায় , পাঁচ তাঁরা হোটেলে তাদের এক সাথে লাঞ্চ করে তারপর উড়াল দেয়ার কথা ছিল।এখন ৫ টা বাজতে অল্প কিছু মিনিট বাকি।ড. জায়েদ বুঝতে পারলেন কাব্য আসবে না। ভুলটা তারই হয়েছে। তিনি ছেলেটাকে এত সহজে বিশ্বাস করলেন কেন? তিনি জানেন হিমুরা এমনই হবে। তিনি হিমুর সব কয়টা বই পড়েছেন।কাব্য হয়তো এখন ঢাকা শহরের কোন রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। না হয় রুপাকে ফোন দিয়ে বলছে, নীল শাড়িটা পড়ে বারান্দায় আসতে পারবে?

ড. জায়েদ এখন একা একাই নরওয়ে চলে যাবেন।তিনি বিরস মুখে বিমানে বসতে যাবেন। এমন সময় তার মনে হচ্ছে তার নরওয়ে যেতে ইচ্ছে করছে না।তার এখন আগ্রার তাজমহল দেখতে ইচ্ছে করছে। বছর চারেক আগে এনা নামক এক সুন্দরীর সাথে তার সেখানে যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল।কিন্তু এরপর নানা ব্যস্ততায় তিনি এনাকে আর সময় দিতে পারেন নি। আরেকবার তার এনার সাথে তাজমহলে যাওয়ার কথা ছিল।কিন্তু এক কনফারেন্সে যাওয়ার জন্য তিনি যেতে পারেন নি। এমন বেশ কিছুদিন পার হওয়ার পর এনার সাথে তার সম্পর্ক টিকে নি।

ড.জায়েদ এয়ারপোর্ট থেকে বেরিয়ে গেলেন। তাকে এখন আগ্রা যাওয়ার বন্দোবস্ত করতে হবে। ড. জায়েদ জানেন এনা সেখানে নাই।তবু তিনি সেখানে যাবেন।মানুষ মাঝে মধ্যে কোন কারণ ছাড়াই ,কোন কিছুর আশা ছাড়াই স্মৃতিময় কোন জায়গা ঘুরে আসতে চায়। কেউ কেউ অবশ্য সেসব জায়গা এড়িয়ে চলে। মানুষ বেঁচে থাকুক, মরে যাক কিংবা হারিয়ে যাক স্মৃতিগুলো কখনো হারিয়ে যায় না। কোন না কোনভাবে স্মৃতিরা বেঁচে থাকে। কেউ না কেউ এঁদের বাঁচিয়ে রাখে।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১:০৩

রাজীব নুর বলেছেন: ভালো গল্প এবং গল্পের নামকরন ১০০% ঠিক আছে।

১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ দুপুর ২:০৮

আলমগীর জনি বলেছেন: হিমুকে টেনে এনে লিখা ।একটু ভয়ে ছিলাম ।

নামকরণ কিভাবে জানি মিলে গেলো ।আশায় ছিলাম কেউ একজন নামকরণ নিয়ে কথা বলবে ।

ধন্যবাদ আপনাকে ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.