![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
-তোদের রিলেশন কতদিনের?
-৪ মাস হবে।
-আচ্ছা ,ছেলেটাকে নিয়ে আসিস বাসায়।
-আজকেই নিয়ে আসব?
-হুম আজকেই।এত প্রশংসা করলি যার তাকে দেখতে মন চাইছে আমার।
-কই আর প্রশংসা। বললাম ও অনেকটা আমার বাবার মত।বাবার মত কবিতা লিখে।কি সুন্দর করে কবিতা আবৃত্তি করে শুনায়।আর জানো মা, তুমি যদি ওকে ওর কালো শালটা পরা দেখতে তুমি বাবার একটা ছায়া দেখতে পেতে তার মধ্যে।নিজেই অবাক হয়েছি বাবার সাথে কিভাবে এত মিলে গেল !
সুফিয়া বেগম মেয়েকে বলল যাতে শীঘ্রই ছেলেটাকে বাসায় নিয়ে আসে।কিন্তু মেয়ের উত্তর লিমন তো ঢাকার বাহিরে।এক মাসের জন্য থাইল্যান্ড গেছে।ফিরলেই নিয়ে আসবে । সুফিয়া বেগম আরো কিছু জানতে চাইল ছেলে সম্পর্কে কিন্তু দিনা তেমন কিছু জানাতে পারছে না ।মেয়েটা তার এত বোকা কেন ? কোন কিছু না জেনেই একটা রিলেশনে চলে গেল !সুফিয়া বেগমের নিজের কথা মনে হলো ।নিজে কি কম ভুল করেছেন এক জীবনে ? সুফিয়া বেগম বুঝলেন মেয়েটার ভুল করাটা তার রক্ত থেকে গেছে । মা করেছে মহা ভুল আর তার মেয়ে করবে মহা মহা ভুল । আর দিনার মেয়ে হলে সে করবে মহা মহা মহা ভুল ।এভাবে ভুল চলতেই থাকবে।এক ভুলের প্রায়শ্চিত্ত কয়েক প্রজন্ম করে।
সুফিয়া বেগমকে এখন বেশ চিন্তিত মনে হচ্ছে।দিনা যেভাবে ছেলেটার প্রশংসা করছে আর বর্ণনা দিচ্ছে তাতে তার অন্য কিছু মনে হচ্ছে।দিনার বাবার আরো একটা স্ত্রী ছিল।এই ব্যাপারে দিনা কিছুই জানে না ।সেই স্ত্রীর ঘরে একটা ছেলেও আছে। সুফিয়া বেগম ছেলেটাকে কখনো দেখেন নি, তার নামও জানেন না কিন্তু তার কেন জানি মনে হচ্ছে এই ছেলেই সেই ছেলে।এত কিছু মিলে কিভাবে।তাহলে তো সর্বনাশ হয়ে যাবে।সুফিয়া বেগম তখন কি করবে? মেয়েকে কিভাবে এই বিপদ থেকে উদ্ধার করবেন তিনি ।এটা তো কোন ভাবেই সম্ভব না । আমিনুল মানে দিনার বাবা বেঁচে থাকলে জিজ্ঞেস করতেন কি সর্বনাশ করলে তুমি,সে কালে আমি ভুগেছি আর এ কালে আমার মেয়েও ভুগছে।এই এক তুমি আমার জীবনকে তছনছ করে দিয়েছ।শুধু তাই নয় আমার মেয়ের জীবনেও সর্বনাশের ব্যবস্থা করে রেখেছ।আমিনুল তোমাকে বিয়ে করা ছিল আমার সবচেয়ে বড় ভুল।মরে গিয়েও তুমি আমার সর্বনাশ করে যাচ্ছ।
সুফিয়া বেগমের আমিনুলের কথা মনে পড়ছে ।এতক্ষণ দিনা যে ছেলের বর্ণনা দিল তা্র অনেকটাই মিলে যায় আমিনুলের সাথে।আমিনুল মানে সুফিয়া বেগমের স্বামী, দিনার বাবা। আমিনুল নিজেই কবিতা লিখত।এরপর হাঁটতে হাঁটতে রাস্তায় আবৃত্তি করত সেগুলো।এমন না যে কেউ শুনত।গ্রাম থেকে আসা এমন একটা ছেলেকে শহরের সভ্য মানুষেরা পাত্তা দিবে কেন ? শহর হচ্ছে শহর ।এখানে মায়া নাই ,মমতা নাই ,ভালোবাসা নাই ।আচ্ছা, মানুষ কি আছে ?
তবু সুফিয়া বেগমের চোখ এড়ায় নি।স্কুল কলেজ একা একা কাটানো সুফিয়া ভার্সিটিতেও একা একা বসে থাকত আর এই ছেলেটিকে দেখত।কি মুগ্ধতা ছড়াত ছেলেটা!পাখির বাসার মত মাথাটা চুলে ভর্তি ছিল।একটা ফুলহাতা ফতুয়া।আর তখন শীতকাল চলছিল।গায়ে সবসময় থাকত ফুটপাত থেকে কেনা একটা কালো চাদর।ওই যে দিনা ছেলেটার গায়ের চাদরের যে বর্ণনা দিয়েছিল অবিকল তেমন । ছেলেটা কারো সাথে মিশত না।একা হাঁটত , একা গাইত।সুফিয়া একদিন সাহস করে বলল- একটা কবিতা শোনাবেন?আমি প্রতিদিন দেখি আপনি কবিতা আবৃত্তি করেন একা একা ।দূর থেকে আমি শুনি .আজকে মনটা ভালো নাই ,তাই কাছে আসলাম । আমিনুল শহরে তার প্রথম শ্রোতা পেয়ে গেল।সে একটু লজ্জিত মুখে বলল - মন ভালো নাই কেন ? কলেজ পেরোনো সুফিয়া সেদিন জবাব দিয়েছিল- জানি না । আমিনুল শুরু করল রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর অভিমানের খেয়া কবিতাটি -
এতোদিন কিছু একা থেকে শুধু খেলেছি একাই,
পরাজিত প্রেম তনুর তিমিরে হেনেছে আঘাত
পারিজাতহীন কঠিন পাথরে।
প্রাপ্য পাইনি করাল দুপুরে,
নির্মম ক্লেদে মাথা রেখে রাত কেটেছে প্রহর বেলা__
এই খেলা আর কতোকাল আর কতোটা জীবন!
কিছুটাতো চাই ,হোক ভুল, হোক মিথ্যে প্রবোধ,
আভিলাষী মন চন্দ্রে না-পাক জোস্নায় পাক সামান্য ঠাঁই,
কিছুটাতো চাই, কিছুটাতো চাই।
সুফিয়া মুখে হাত দিয়ে কবিতা শুনছিল আর মুগ্ধ হচ্ছিল।
সুফিয়া আমিনুল কে বলল- কি চান এত?
আমিনুল বলল- কই কিছু না তো ।
এরপর থেকেই তারা এক সাথে ভার্সিটি শেষ করেছে।সেদিনকার আমিনুলকে জোস্নায় সামান্য ঠাঁইয়ের বদলে সুফিয়া সারাজীবনের জন্য তার আলোতে ঠাঁই দিতে চেয়েছিল।
কিন্তু বিপত্তি বাঁধল অন্য জায়গায় । আমিনুল গ্রামে থাকতেই আর একটা বিয়ে করেছিল।সুফিয়া বেগম যখন কাজী অফিসে গিয়ে আমিনুলকে বিয়ে করে তখনও তার কল্পনায় ছিল না সে আমিনুলের দ্বিতীয় বউ হতে যাচ্ছে।সুফিয়া যখন জানতে পারল তখন তাঁর পেটে দিনা । এই মেয়ে জন্ম হওয়ার পর দেখবে তাঁর বাবা নাই এটা সুফিয়া বেগম সেদিন মেনে নিতে পারছিলেন না।তাই তার অনাগত মেয়ের জন্য সেদিন আমিনুলকে ক্ষমা করেছিলেন । তবে তিনি আজও সন্দিহান তিনি কি আসলে আমিনুলকে ক্ষমা করতে পেরেছিলেন ? এভাবে কি কাউকে ক্ষমা করে দেয়া উচিত ?
এসব ভাবতে ভাবতেই সুফিয়া বেগমের দিন কেটে যাচ্ছিল ।কিন্তু এই ভাবনাটা তিনি কোনভাবেই নিতে পারছিলেন না । তিনি না পারছেন মেয়েকে সব কিছু খুলে বলতে ,না পারছেন একা একা সব গিলে ফেলতে।সুফিয়া বেগম যেদিন হাসপাতালে ভর্তি হলেন তার আগে তিনি মেয়েকে একবারও বলেন নি তিনি ছেলেটাকে দেখতে চান। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর শুধু বললেন ছেলেটাকে আমি দেখে যেতে চাই, দিনা।দিনা তখন হাউ মাউ করে কাঁদছিল।বুঝতে পারছে মার হয়ত সময় শেষ। দিনা লিমনকে ফোন দিলো।লিমন ফোন ধরছে না । দিনা ফোন নিয়ে ব্যস্ত আর সুফিয়া বেগম তখন মৃত্যুযমের সাথে যুদ্ধ করছেন, দিনাকে ডেকে কি জানি বলতে চাইছেন।দিনা শুনছে না,সে ফোন করাতে ব্যস্ত।
০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ বিকাল ৫:৪৭
আলমগীর জনি বলেছেন: প্রেম
২| ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ বিকাল ৫:৪৪
চাঁদগাজী বলেছেন:
গল্প কেমন যেন প্রানহীন
০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ বিকাল ৫:৪৭
আলমগীর জনি বলেছেন:
৩| ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:০৯
জুনায়েদ বি রাহমান বলেছেন: তারপর....
০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ১১:৫১
আলমগীর জনি বলেছেন: শেষ তো
৪| ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:০০
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: সাংঘাতিক ব্যাপার।
০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ১১:৫২
আলমগীর জনি বলেছেন: এমন হতে পারে কিন্তু
৫| ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:২১
রাজীব নুর বলেছেন: স্বচ্ছ প্রেম ভালোবাসা হারিয়েই গেছে।
০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ১১:৫২
আলমগীর জনি বলেছেন: আসলেই
৬| ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:৩২
পাঠকের প্রতিক্রিয়া ! বলেছেন: এত কঠিন, কষ্টের গল্প পড়তে ভালো লাগে না। লেখকরা কষ্টের মধ্যে যে কী সুখ খুঁজে পায়???
০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ১১:৫৩
আলমগীর জনি বলেছেন: সুখ আসলে সুখই । দুঃখে থাকলেই মানুষ গল্প বলতে চায় । মানুষ খোঁজে গল্প বলার। সুখের গল্প কেউ বলে না । আমরা চোখের পানি ফেলতে ফেলতে গল্প বলতে পছন্দ করি ।
৭| ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:৪৩
ভুয়া মফিজ বলেছেন: চমৎকার লিখেছেন......তবে শেষটা নিয়ে টেনশানে ফেলে দিলেন।
এই জন্যই আমি বলি, চট করে রিলেশানে যাওয়া ঠিক না, পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা উচিত।
০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ১১:৫৪
আলমগীর জনি বলেছেন: রিলেশন ব্যাপারটা চট করেই হয়। চিন্তা ভাবনা করলে আসলে প্রেম হয় না ।হলেও খুব কম ।
©somewhere in net ltd.
১|
০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ বিকাল ৫:৪৩
চাঁদগাজী বলেছেন:
'রিলেশন' বলতে কি বুঝায়েছেন?