নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সূর্য থেকে অসম্ভব শক্তিশালী আলোকরশ্মি চাঁদের উপর পড়ে। সে চাঁদ কিছুদিন জোছনা বিলায় আমাদের মাঝে।অমাবস্যায় কেউ চাঁদকে ভুলে যায় না।অপেক্ষা করে জোছনা ফিরে আসার ।সূর্য না হই ,মাঝে মধ্যে জোছনা হতে চাই।অমাবস্যায় হাহাকার হতে চাই মানব মনে।

আলমগীর জনি

গল্প বলি

আলমগীর জনি › বিস্তারিত পোস্টঃ

অবৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীঃ নেক্রপলিস

২২ শে মার্চ, ২০১৯ রাত ১২:৪৮

রাতে হঠাত ঘুম ভাঙার পরপরই প্রধানমন্ত্রী তার "DreamViewer52 " নামক ডিভাইসে একটু আগে ঘটে যাওয়া তিনটা স্বপ্নের ভিডিও দেখতে চাইলেন। বেশ কিছুদিন আগে বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরা "DreamViewer52 " নামক স্বপ্নে ঘটে যাওয়া ঘটনার ভিডিও রিভিউ করে দেখার যন্ত্রটি আবিষ্কার করেন।এটি শুধু বিশ্বের ক্ষমতাশালী ৫ জন রাষ্ট্রপ্রধানকে ব্যাবহার এর সুযোগ দেয়া হয়েছে। যেহেতু বাংলাদেশ একটি উন্নত রাষ্ট্র এবং বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরা এটা আবিষ্কার করেছেন সেহেতু অবধারিত ভাবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি এটি ব্যবহার করতে পারছেন।

প্রধানমন্ত্রী তার স্বপ্ন গুলোর ভিডিও দেখা শুরু করলেন।আরলি টু বেড আরলি টু রাইজ।এই আপ্তবাক্যটি প্রধানমন্ত্রী খুবই মেনে চলেন।
তিনি সন্ধ্যা ৭ টায় ঘুমিয়ে পড়েন এবং ভোর ৪ টায় জেগে উঠেন।এটি তার নিয়মিত রুটিন। সত্য বলতে কি একবিংশ শতাব্দীর রাত জাগার ব্যাপারটি এই শতাব্দীতে নাই বললেই চলে। সবাই প্রায় সন্ধ্যার পরপরই ঘুমিয়ে যায় এখন আর জেগে উঠে কাক ডাকার আগেই।কাক ডাকা ভোর বলে একটা ব্যাপার ছিল এক সময়।আর কাকরা এখন মানুষ ডাকা ভোরের অপেক্ষায় থাকে বলে এক গবেষণায় জানা গেছে। একটা সময় ভাবা যেত এসব?

প্রধানমন্ত্রী টাইমিং দেখলেন।দেখলেন একটা স্বপ্ন শুরু হয়েছে ঠিক ৭ টা ২৯ মিনিটে।মানে তিনি ঘুমানোর ঠিক ২৯ মিনিট পর। আর একটা স্বপ্ন দেখলেন রাত ৩ টা ১৯ মিনিটে। মানে ঘুম ভাঙার ঠিক ৪১ মিনিট আগে। প্রধানমন্ত্রী আরেকটা স্বপ্ন দেখতে যাবেন ঠিক তখনই তার ঘুম ভেঙে গিয়েছিল। "DreamViewer52" এটিকে "Error404" হিসেবে দেখাচ্ছে। মূলত স্বপ্নের সংখ্যা দাঁড়ায় দুইয়ে। তিনি দুইটি ভিডিও খুব ভালো করে খেয়াল করা শুরু করলেন। দুইটা ভিডিও তে কনটেন্ট প্রায় হুবুহু একই। প্রধানমন্ত্রী ভিডিও দুইটা দেখে হতভম্ব হয়ে গেলেন।একদল কংকাল তাকে হাত দিয়ে ডাকছে।তিনি প্রথমবার তাদের কথা শুনছিলেন না।পরের বার তাদের কথায় তিনি সায় দেয়া শুরু করেছেন। সায় দেয়া আর সায় না দেয়া ছাড়া দুইটা স্বপ্নের বাকী সব একই। এই কংকালের দল একটা ম্যানিফেস্টো দিতে চায় তার কাছে। বিশাল এক ব্যানারে তারা সেটা গণভবনের একটা দেয়ালে ঝুলিয়ে দিয়েছে । ভিডিওতে এমনটাই দেখা যাচ্ছে। সেই ব্যানারের কাছে আসলেই প্রধানমন্ত্রী সেই জায়গাটা ভিডিওতে থামিয়ে বারবার দেখছেন। তিনি স্পষ্ট তাদের ম্যানিফেস্টো গুলো পড়তে পারছেন। তবে এই ম্যানিফেস্টো পড়ার আগে তিনি ড্রিম এনাইলাইজারের কাছে গেলেন।"DreamAnalyzer71 " ড্রিম ভিউয়ার এর সাথে বানানো আরেকটা ডিভাইস।এটিও বাংলাদেশী বিজ্ঞানীদের বানানো।লেখক হিসেবে গর্ব করে বলতে পারি এই ডিভাইস দুইটির জন্য পরপর দুইবার নোবেল বিজয়ী হয়েছেন বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরা। যদিও এই সময়ে এসে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলতে চাননা বাংলাদেশের কোন বিজ্ঞানী। এঁদের আরো চাই । এই চাওয়ার আকাংখাই বাংলাদেশকে আজ বিশ্বের অন্যতম উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করেছে।

তো প্রধানমন্ত্রী "DreamAnalyzer71" এর কাছে জানতে চান এই স্বপ্নের অর্থ কি? ড্রিম এনালাইজারের কাজ গত শতাব্দীর গণকের মত। একবিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে এবং এর আগের শতাব্দীগুলোতে এমন কিছু মানুষ পাওয়া যেত যারা হাত দেখেই মানুষের ভবিষ্যত বলে দিতে পারতেন বলে দাবি করতেন। যদিও বেশিরভাগ মানুষ এদের বিশ্বাস করত না।তবে এই এনালাইজার ইতিহাস দেখে কিংবা ইউজারের আগের কার্যক্রমের ভিত্তিতে ড্রিম বা স্বপ্নের একটা ব্যাখ্যা দাঁড় করায়। এটি আবার ব্যক্তিতে ব্যক্তিতে আলাদা হয়।যিনি প্রকৌশলী তার ব্যাখ্যা হবে প্রকৌশল কেন্দ্রিক। ডাক্তারের ব্যাখ্যা হবে ডাক্তারী টাইপ । যিনি প্রধানমন্ত্রী তাঁর জন্য নিজের দেশের এবং বিশ্বের তাবৎ ইতিহাস ঘেঁটে বের করবে আসলে এর সাথে কোন মিল আছে কিনা।"DreamAnalyzer71" শুধু এটুকুই করতে পারে।এর চেয়ে বেশি উন্নত করে একে এখনো বানানো সম্ভব হয় নি। তবে "DreamAnalyzer71" শীঘ্রই সব ধরণের ব্যাখ্যা দাঁড় করাতে পারবে বলে বিজ্ঞানীরা আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।

প্রধানমন্ত্রী ড্রিম এনালাইজারে দেখলেন রাত ৭ টা ২৯ মানে জুলাই মাসের ২৯ তারিখ।১০৩ বছর আগে এই দিনে তার দেশে একটা ছাত্র আন্দোলন হয়েছিল।এটা ড্রিম এনালাইজারের দেয়া সংক্ষিপ্ত একটা তথ্য মাত্র। এবং ঠিক একই কারণ পরের বছর মার্চের ১৯ তারিখেও। "DreamAnalyzer71" জানাচ্ছে সময়ের সাথে এই তারিখের মিল পাওয়া যাচ্ছে । ড্রিম এনালাইজার দুইটা ঘটনাকে মেলাতে পারছে। বাকি সব বাদ দিয়ে তাই এই তথ্যের উপর সে "Red Alert" দেখাচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী এনালাইজারকে বললেন, এই দিনের সব তথ্য চাই তার।এনালাইজার সব তথ্য বের করে বলা শুরু করল। এই দুটি দিনে বাংলাদেশে ছাত্র আন্দোলন হয়েছে.মোট তিনজন ছাত্র দুইবারে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হবার পর এই দুটি আন্দোলন হয়েছে।প্রধানমন্ত্রী বিচলিত হলেন তিনি স্বপ্ন কে এবার আরো বেশি গুরুত্ব দিতে শুরু করলেন। কারণ বিশ্বের অন্যতম উন্নত দেশ হওয়ার পরও বাংলাদেশের প্রধান সমস্যা এখনো সড়ক দুর্ঘটনা। এনালাইজার বলছে গত শতকের তিন বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে প্রায় ২২ হাজার মানুষ। এই তিন বছর ছিল ২০১৫ থেকে ২০১৭। (সুত্রঃ প্রথম আলো অনলাইন, আগস্ট ৪, ২০১৮) এই তিন বছর বাদে আরো পার হয়েছে ১০৪ বছর ।এভাবে অনেক মানুষ মারা গেছে গত শতাব্দীতে। এমনকি আজ ৩০২১ সালেও সড়কে মানুষের মৃত্যু মিছিল থামছে না। থামবে কিভাবে? দেশ উন্নত হলেও মানুষের জীবনের কোন গ্যারান্টি নাই এখনো। ভাবা যায়? গত শতাব্দীর মৃত মানুষেরা এখনো নিরাপদ সড়কের জন্য আন্দোলন করে যাচ্ছে? এটি কোন সহজ কিছু নয়।

প্রধানমন্ত্রী এতক্ষণে খেয়াল করলেন কংকালদের ম্যানিফেস্টোতে সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে কিছু ছিল।তিনি প্রবল উত্তেজনায় দেখা শুরু করলেন। পেছনে গিয়ে ভিডিওতে ম্যানিফেস্টো গুলো দেখলেন বারবার।সেখানে যা ছিল তা হুবহু নীচে তুলে ধরা হলোঃ-

"আমরা যারা মরে গেছি ,
আমরা গেছি ঝরে।
ভাইয়েরা আমার বেঁচে থাকুক,
হাজার বছর ধরে।"

আমাদের দাবি সমূহঃ

১.সব শহরে "সিটি সার্ভিস" বাস সহ সব আধুনিক যানবাহন বন্ধ করে দিতে হবে। শহরের আট-দশ কিলো রাস্তা মানুষ পায়ে হেঁটে যাবে। আমরা লাশেরা যদি মাইলের মাইল হেঁটে হেঁটে চলতে পারি আমাদের জীবিত মানুষেরা কেন পারবে না? মৃতদের মিছিল কি কষ্টদায়ক এটা যে মরে গেছে সে জানে।

২.ডিসট্রিক্ট বাসগুলোর গতি ৪০ কিলোমিটার অতিক্রম করতে পারবে না। সময়ের চেয়ে জীবনের মূল্য বেশি।সুতরাং মানুষ ৪ ঘন্টার রাস্তায় ৮ ঘন্টায় যেতে পারবে।

৩.গণভোট আয়োজন করে জীবিত মানুষদের মতামত জানতে হবে।কোনভাবে নির্বাচনে অনিয়ম করা্র চেষ্টা করা যাবে না। আমরা মৃতরা ভোটকেন্দ্র পাহারা দিব।

৪.এর ব্যত্যয় ঘটলে প্রথমে ঢাকা শহরকে নেক্রপলিস তথা মৃতদের শহর বানানো হবে। পর্যায়ক্রমে পুরো দেশকে "মৃতদের দেশ" বানিয়ে ফেলা হবে। সড়ক দুর্ঘটনায় মরার চেয়ে নিজেদের এভাবে মেরে ফেলা ভালো। আমরা মানুষদের রক্ত দেখতে চাই না আর।

এই ম্যানিফেস্টোর সাথে কিছু সংযুক্তি (Attached File) পাওয়া যায়। এর আকার ১ ইউট্টা বাইট। (১ ইউট্টাবাইট= ১০০০ ০০০ ০০০ ০০০ টেরাবাইট। ১ টেরাবাইট=১০০০ গিগাবাইট) ।এর মধ্যে সংরক্ষিত আছে ২০১৫ থেকে ৩০২১ সালের সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত সব মানুষদের ডাটা এবং সাথে আরো অনেক কিছু।গবেষণায় এসব কাজে লাগবে বলে প্রধানমন্ত্রী ধারণা করছেন। "DreamAnalyzer71" একটা স্টার মার্ক দেখিয়ে ফাইলের গুরুত্ব বোঝাচ্ছেন।

[সর্বশেষঃ
কিছু সংসদ সদস্যের বিরোধিতার মুখেও প্রধানমন্ত্রী তার স্বপ্নে পাওয়া ম্যানিফেস্টোর সাথে অনেক কঠিন ধারা যুক্ত করে আইনে পরিণত করেন ।এর আগে এক গণভোটের মাধ্যমে মতামত যাচাই করা হয়। সেখানে কিছু লোক বিরোধিতা করেছিল এবং ভোট বানচালের চেষ্টা করে। কিন্তু লোকমুখে প্রচার পায় অশরীরী কিছু সেসব বানচালকারীদের ধরে নিয়ে যায় । এদের এখনো খুঁজে পাওয়া যায় নি।]

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে মার্চ, ২০১৯ রাত ১:১৫

আকতার আর হোসাইন বলেছেন: কি বলবো। ফ্যান্টাসি মনে হল। মজা পাচ্ছিলাম। আর শেষে এসে তো দেখি দারুণ বার্তা দিচ্ছেন। ধন্যবাদ আপনাকে....


"আমরা যারা মরে গেছি ,
আমরা গেছি ঝরে।
ভাইয়েরা আমার বেঁচে থাকুক,
হাজার বছর ধরে।"


আমরা শুধু নিরাপদ সড়ক চাই না, নিরাপদ সড়কের পাশাপাশি আমরা আইনের বাস্তবায়ন চাই। আইনের বাস্তবায়ন যতদিন হবে ততদিন এদেশে যতই সড়ক মহাসড়ক, ওভার ব্রিজ করুক না কেন দুর্ঘটনা এড়াতে পারবে না..

২২ শে মার্চ, ২০১৯ রাত ১:২১

আলমগীর জনি বলেছেন: একটু ফ্যান্টাসির ভেতর দিয়ে পাঠককে নিতে চেয়েছিলাম এই আর কি ! আপনাকে ধন্যবাদ।

২| ২২ শে মার্চ, ২০১৯ রাত ১:৪৭

আকতার আর হোসাইন বলেছেন: হ্যাঁ, সমস্যা নেই। ফ্যান্টাসি আর যাইহোক না কেন লেখায় বার্তা দেয়া চেষ্টা করেছেন, সমসাময়িক বাস্তবতা নিয়ে লিখেছেন, সমস্যা নিয়ে লিখেছেন, সমাধানের কথাও লিখেছেন।

এটাই তো একজন লেখকের উদ্দেশ্য হওয়া উচিৎ।

আপনার লেখায় মুগ্ধতা রেখে গেলাম। লিখে যান অবিরাম।

শুভ রাত্রি। ভালো থাকবেন, ভালো রাখবেন।

২২ শে মার্চ, ২০১৯ দুপুর ১২:৩৬

আলমগীর জনি বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। দোয়া করবেন ।

৩| ২২ শে মার্চ, ২০১৯ দুপুর ১:১৭

রাজীব নুর বলেছেন: দূর্দান্ত।

২২ শে মার্চ, ২০১৯ রাত ৮:০১

আলমগীর জনি বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই ।

৪| ২২ শে মার্চ, ২০১৯ বিকাল ৫:৩০

ম্যাড ফর সামু বলেছেন: জটিল কল্পনা, ব্যাপক ফান! =p~

২২ শে মার্চ, ২০১৯ রাত ৮:০১

আলমগীর জনি বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে।

৫| ২৩ শে মার্চ, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:৫৪

মাহমুদুর রহমান বলেছেন: খুব সুন্দর লিখেছেন।

২৪ শে মার্চ, ২০১৯ দুপুর ১২:৪৪

আলমগীর জনি বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.