নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সূর্য থেকে অসম্ভব শক্তিশালী আলোকরশ্মি চাঁদের উপর পড়ে। সে চাঁদ কিছুদিন জোছনা বিলায় আমাদের মাঝে।অমাবস্যায় কেউ চাঁদকে ভুলে যায় না।অপেক্ষা করে জোছনা ফিরে আসার ।সূর্য না হই ,মাঝে মধ্যে জোছনা হতে চাই।অমাবস্যায় হাহাকার হতে চাই মানব মনে।

আলমগীর জনি

গল্প বলি

আলমগীর জনি › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পঃ অভিশাপ

২৪ শে মার্চ, ২০১৯ রাত ১০:৪৫

এই নিয়ে দুইবার বিয়ের আসর থেকে আসলাম আমি।আজকের আগেও একবার এই ধরনের ঘটনা ঘটেছে এবং সফলভাবে বহাল তবীয়তে সব ঝড় ঝাঁপটা সামাল দিয়েছিলাম আমি । কিন্তু আজকের ঘটনাটা অন্যরকম । সেজন্য ঘরে বসেই চিন্তা করছি আগের ঘটনা।

মরিয়মের সাথে আমার বিয়ে ঠিক করেন আমার বাবা।উনার ইচ্ছে উনার পছন্দের পাত্রীকে আমি বিয়ে করি ।যদিও সে সময় আমার বিয়ের বয়স হয় নি।ইন্টারমিডিয়েট পড়ুয়া একটা ছেলে বিয়ে করছে এই ব্যাপারটা আমাদের সমাজ একটু আড়চোখে দেখে।এহ! বাচ্চা পোলার বিয়ের খায়েশ হইসে। এখনো তো নাক টিপ দিলে দুধ বাহির হয় এই পোলার আর সে করতেসে বিয়ে ! বিয়ে করে বউকে খাওয়াবে কি ? অথচ স্কুলের বাচ্চা ছেলে -মেয়েদের অবাধ মেলামেশায় তেমন কিছু যায় আসে না সমাজের। বুঝলেন ভাবী ,যুগের দোষ। এসব বলেই নিজেদের সুবর্ণ যুগের কথা বলে হাহাকার করেন । আর দায় এড়ান সব কিছুর।

যাই হোক । মরিয়মের বাবা আমার বাবার বন্ধু ছিলেন। বাবার অনেক বয়স হয়েছে ।তার ধারণা তার হাতে আর বেশি সময় নাই।এই অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি অনেক কাজ শেষ করে যেতে চান ।তার সেই কাজের মধ্যে অন্যতম তার একমাত্র ছেলেকে বিবাহ করানো । তাই জোর করে তিনি আমাকে বিয়ে করাতে চাইছেন ।ছেলের বউয়ের মুখ দেখে তিনি মরতে চান ।কিন্তু আমি কোনভাবেই বিয়ের জন্য প্রস্তুত ছিলাম না । আমি বিয়ে করব না এটাই আমার সিদ্ধান্ত।আমি বললাম বাবা আমি মাত্র ইন্টারমিডিয়েট পড়ি এখন বিয়ের বয়স হয় নাই আমার ।বাবা বললেন-"আরে তোর নানা যখন আমারে দেখতে আইসে আমি তখন ক্লাস এইটে পড়ি ।আমারে দেইখা তোর নানা কইল শিক্ষিত পোলা ।দেখেই ভালো লাগছে ।এরপর বিয়ে হয়ে গেল। আর তুই তো অনেক বড় সে তুলনায় । "আমি বাবাকে বুঝাতে পারলাম না কোনভাবেই ।

বাবা বউ দেখলেন আমার ।বিয়ের আসরে আমি আর আমার হবু বউ মরিয়ম এক সাথে বসে আছি ।আমি বললাম বাবা ,বউ দেখেছ ? বাবা বললেন হুম বাবা খুব আনন্দ লাগছে । আমি তখন দেখলাম আমার চরিত্রহীনতার বেশ কিছু প্রমাণ বিয়ে বাড়িতে ঘুরছে।কন্যার বাবা আমার বাবার দিকে তাকালেন । এরপর বাবারকে বললেন -"শরীফ তোর তাড়াহুড়ো করার কাহিনী তাহলে এই ? তুই আমার বন্ধু।নিজের একটা নষ্ট ছেলেকে দিয়ে তুই আমার মেয়ের সর্বনাশ করতে চাইলি ? কাজটা তুই ঠিক করিস নাই শরীফ।তুই আমার শুধু বন্ধুই না এরচেয়ে বেশি কিছু ছিলি।তবে আজকে থেকে আমার সাথে তোর আর কোন সম্পর্ক নাই ।"

বাবা সেদিন আমাকে কিছু বলেন নি ।আর আমি জামাই এর সাজে ভেতরে ভেতরে মিটিমিটি হাসছিলাম । বাবার সব চাওয়াকে দূরে ফেলে দিয়ে আমি এই বিবাহ ঠেকালাম ।পূর্ব পরিকল্পনামত সব হয়েছে এজন্য আমার বন্ধুকে অনেক ধন্যবাদ দিলাম ।এক বন্ধু আরেক বন্ধুর উপকার করে একটা পুরোনো দিনের ভাইয়ের মত বন্ধুর সম্পর্ক নষ্ট করে দিলো। বাবা আমার সাথে এরপর ১ বছর কথা বলেন নি ।এক বছর পর বাবাকে বললাম সব ।আর বললাম আমি আসলে তখন বুঝতে পারি নি আমি কত বড় ভুল করলাম ।আসলেই যে ভুল করেছি সেটা আমি খুব ভালো করে বুঝতে পেরেছি তার কয়দিন পরই। বাবা আমাকে বললেন মাফ করে দিয়েছেন ।প্রকৃতি আমাকে মাফ করেছে কি ?

মরিয়মের সাথে বিয়ে ভাঙার ঠিক আট বছর পর আমি আবার বিয়ে করতে গিয়েছিলাম রিমিদের বাড়িতে।ইন্টারমিডিয়েট শেষ হওয়ার পরই বাবা তার চরিত্রহীন ছেলেকে দেশের বাহিরে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন।এই কয়দিনে আমার সব বন্ধু বান্ধবকে আমি ভুলতে বসেছিলাম প্রায়।সায়ানের গানটার কথা মনে আছে ? "কেন বাড়লে বয়স ছোট্ট বেলার বন্ধু হারিয়ে যায় ? " সেতুও তেমন ভাবে হারিয়ে গিয়েছিল । সেতু হচ্ছে আমার সেই বন্ধু যে আমার চরিত্রহীনতার নকল প্রমাণাদি আমার বিয়ের আসরে ছড়িয়ে দিয়েছিল আমার নির্দেশে ।সেতুর সাথে এরপর অনেক বছর দেখা হয় নি । প্রকৃতিই হয়তো চায় নি আমাদের বন্ধুত্বটা টিকুক । কিন্তু হয়তো অন্য কিছু চেয়েছে । প্রকৃতির খেলা বুঝার সাধ্য কি মানুষের আছে ?

ওহ, বিয়ের কথা বলছিলাম । তো আট বছর পর পড়ালেখা শেষ করে এসে একজন অতি সুন্দরী রুপবতীকে বিয়ে করতে গেলাম আমি । আমার বউ দেখে মরতে চাওয়া আমার বাবা তখনো বউ দেখার জন্য জীবিত ছিলেন । বউ দেখার জন্য নাকি অন্য কিছু?তবে আমি খুশি ছিলাম এজন্য যে আমি সেদিন বিয়ে করলে তো আমার বউ দেখা হয়ে যেত তার । তার সময়ও দ্রুত ফুরিয়ে যেত।প্রকৃতি মানুষের অপেক্ষা করা পছন্দ করে ।

এই বিয়েটাও বাবাই ঠিক করলেন ।এবার একটু দূরে । একবার চরিত্রহীনতার চিহ্ন পড়ে গেলে সেই চিহ্ন দূর করা অনেক কঠিন।তাই গ্রাম থেকে অনেক দূরের আরেক উপজেলায় আমার জন্য পাত্রী দেখা হলো। রিমিকে আমি দেখেই মুগ্ধ হয়েছি ।অসম্ভব সুন্দর চাহনি আর কি মায়াবী চেহারা ! আমাদের বিয়ে প্রায় হয়েই যাচ্ছিল। কাজী রেডি ,পাত্র রেডি।কিন্তু বিপত্তিটা বাড়ল এরপর। রিমির সাবেক প্রেমিক এসে হানা দিয়েছে তার বাড়িতে । কোনভাবেই সে এই বিয়ে হতে দিবে না । এত দূরে এসে আমরাও আসলে কিছু করতে পারছি না ।

ছেলেটা শুনছি বলছে জামাই কই ? ওই *** পুত জানে না রিমি আমার ? এসব বলে বলে হঠাত দেখি ছেলেটা মারমুখী ভাবে আমার দিকে তেড়ে আসছে।আমার দিকেই আসতেই সে থেমে গেল ।আমি বললাম সেতু ! তুই !!! সেতু আমার দিকে তাকিয়ে আছে।আমিও তাকিয়ে আছি। আমি সবাইকে একটু শান্ত থাকতে বলে সেতুকে নিয়ে একটু আড়ালে গেলাম। সেতু আমাকে সব বলল। সব কিছু ঠিক থাকার পরও রিমির বাবা কোনভাবেই তাদের বিয়ে দেবে না।আর আমার মত ডলার কামানো ছেলে পেলে মেয়ের বাবারা ছোট খাটো বেতনের পাত্রের কাছে কন্যা বিয়ে দিবেন কেন ? সুপাত্রে কন্যাদান করতে গিয়ে বাবারা একটু ভুল করে ফেলেন ।সুপাত্রে কন্যা দান করেন ঠিকই কিন্তু সেই পাত্রে কন্যা ভালো থাকবেন কিনা সেটা তারা চিন্তা করেন না ।

নিজের বন্ধুর প্রেমিকাকে বিয়ে করার প্রশ্নই আসে না । মেয়েরা তাদের বান্ধবীর প্রেমিককে খুব সহজে বিয়ে করতে পারলেও ছেলেরা তাদের বন্ধুর প্রেমিকাকে বিয়ে করতে পারে না । আমি বাবাকে খুঁজছিলাম।বাবাকে পাচ্ছি না ।সবাই বলছে বাবার নাকি শরীরটা খুব খারাপ লাগছিল তাই চলে গেলেন আগে আগে । আমিও এরপর চললাম।বিয়ের আসর থেকে আমার দ্বিতীয় প্রস্থান এবারও সফলভাবে সম্পন্ন করল কেউ একজন ।তার চিত্রনাট্য বুঝার সাধ্য নাই আমাদের ।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে মার্চ, ২০১৯ রাত ১০:৫২

চাঁদগাজী বলেছেন:


ঘটনা আছে, গল্প নেই!

২৪ শে মার্চ, ২০১৯ রাত ১১:০৭

আলমগীর জনি বলেছেন: ঘটনাটাই গল্প নয় কি ?

২| ২৫ শে মার্চ, ২০১৯ সকাল ৭:২৪

রাজীব নুর বলেছেন: বিয়ে অনেক বড় একটা বিষয়। খেলা নয়।

২৫ শে মার্চ, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:৫০

আলমগীর জনি বলেছেন: এটা সত্য কথা।

৩| ২৫ শে মার্চ, ২০১৯ দুপুর ২:৪৩

মাহমুদুর রহমান বলেছেন: বেশ।

২৫ শে মার্চ, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:৫০

আলমগীর জনি বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.