নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সূর্য থেকে অসম্ভব শক্তিশালী আলোকরশ্মি চাঁদের উপর পড়ে। সে চাঁদ কিছুদিন জোছনা বিলায় আমাদের মাঝে।অমাবস্যায় কেউ চাঁদকে ভুলে যায় না।অপেক্ষা করে জোছনা ফিরে আসার ।সূর্য না হই ,মাঝে মধ্যে জোছনা হতে চাই।অমাবস্যায় হাহাকার হতে চাই মানব মনে।

আলমগীর জনি

গল্প বলি

আলমগীর জনি › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পঃ ১০ কেজি বকুলের বাসর

১৬ ই এপ্রিল, ২০১৯ সকাল ১০:৩১

ব্যাচেলর ফ্ল্যাটে এভাবে বউ নিয়ে উঠা যায় না।তবু আমি উঠে গেলাম।আমার ফ্ল্যাটের সবাই আজকে মারাত্মক খুশি।আদিল বলল ,সে অনেকগুলো ফুল কিনে এনেছে। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো সব গুলো ফুলই সম্ভবত বকুল ফুল। আমিই সম্ভবত প্রথম ব্যাক্তি যার বাসর ঘর সাজবে বকুল ফুলে।বকুল ফুলের আইডিয়াটা আমার না, মৌলির। মৌলি আমার সদ্য বিবাহিত বউ। কেন জানি এখন আর তাকে মৌলি বলে ডাকতে ইচ্ছে করছে না। আমার মন চায় শুধু বউ বলে ডাকি। বউ কথা কও পাখির মত একটু পর পর বলি "বউ কথা কও" "বউ কথা কও"।

আদিল আজকে সন্ধার দিকে রুমে নক দিয়ে বলল, ভাই, আমি একটু শাহবাগ যাই ।মেজাজ প্রচন্ড খারাপ হলো।আরে ভাই আমি কি এই মেসের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ? নাকি আমি দারোয়ান? তোরা কই যাবি যা।আমাকে এভাবে ডিস্টার্ব করছিস কেন?
যাক কিছু না বলে হাসিমুখে বললাম, কেন রে?
আদিল বলল, ভাই, বিয়ে করে আসছেন মেসে।এজন্য কি বাসর ঘর হবে না? আমি থাকতে এটা হবে না?
পেছনে ফিরে আড়চোখে মৌলিকে দেখলাম।সে হাসছে। আদিলকে ডাক দিয়ে বলল , এই যে, তুমি এদিকে আসো।

এই সময়টায় স্বামীরা কিংবা স্ত্রীরা তাদের ঘরে তৃতীয় কাউকে দেখতে চায় না। আদিলের দিকে চোখ বড় করে ইশারা করলাম যাতে ভিতরে না যায়।কিন্তু কে শুনে কার কথা! আদিল ভিতরে গেলে মৌলি বলল, শোনো ভাই, তোমার ভাইয়ের প্রিয় ফুল বকুল। তুমি খুঁজে দেখো কয়েক কেজি বকুল পাও কিনা।
আদিল আমার দিকে তাকিয়ে বলল, ভাই, কেজি? বকুল ফুল?
আমি বললাম, বকুল ফুল একটা দুইটা হিসাব করা যায় না। সম্ভবত কেজিতে হিসাব করতে হয়।আমি ঠিক জানি না রে !
আদিল আমার দিকে কেমন ভাবে জানি তাকালো।
আমি আবার বললাম ,যা ভাই । বাসর ঘর সাজানোর শখ পূরণ কর।

এই বেচারা ফুল কিনতে চেয়ে বিপদে পড়ে গেলো।এখন সে এত বকুল কই পাবে? বকুল ফুল নিয়ে আমার প্রেম টা ভয়াবহ রকমের। একদিন মৌলিকে বলেছিলাম, ধরো আমি মরে গেলাম।প্রেমিকা হিসেবে তো তোমার একটা দায়িত্ব আছে। আমার কবরে তো তোমাকে ফুল দিতে হবে। সেদিন মৌলির দিকে তাকানো যাচ্ছিলো না। মেয়েটা কেমন জানি একটা চেহারায় তাকালো আমার দিকে।
তারপর বলল, এসব কথা বলতে হয় না।
আমি বললাম, মজা না।কিছু জিনিস আগে আগেই ঠিক করে নেয়া উচিত।মৃত্যু দুনিয়ার সবচেয়ে বড় সত্য। অমর হওয়ার সুধা পানকারীও মরেছে আবার যে কখনো বাঁচতে চায়নি সেও মরেছে।আমি সাফ কথা বলে দেই।আমি মরলে তুমি আমার কবরের উপর এক মুঠো বকুল ফুল ছিটিয়ে দিয়ে যাবে।মৃত মানুষকে কি দেয়া হলো সেটায় তার কিছু যায় আসে না। তবে এর মাধ্যমে তার প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করা হয়।দৃশ্যটা চিন্তা করো একবার। আমার কবরে আমার প্রেমিকা এক মুঠো বকুল ফুল দিয়ে যাচ্ছে। আমি যদি বেঁচে থাকতাম আমি এই কঠিন সুন্দরকে আমার ক্যামেরায় তুলে রাখতাম। মৌলি সেদিন কিছুই না বলে উঠে চলে গিয়েছিল। তবে তার একটা হাতকে বারবার চোখের কাছে চলে যেতে দেখেছি । চোখের কাছে হাত চলে যাওয়ার অর্থ হচ্ছে চোখের জল মোছা। হাত দিয়ে চোখের জল মোছার কাজটা সব মানুষের জন্য একরকম।

আদিল সন্ধ্যায় বের হয়ে রাত ১০ টায় রুমে ফিরল।এই সময়ে ওকে একটা ফোনও দেই নি আমি।দরকার কি ভাই?ও তো ফুলসজ্জার ফুল কিনতে গিয়েছে যদিও আমার ফুলসজ্জায় ফুলের তেমন কোন ভূমিকা নাই। যেই ঘরে মৌলি আছে সেই ঘরে সব ধরণের ফুলের সৌন্দর্য গৌণ। মৌলির চেয়ে সুন্দর কিছু নাই। যদিও প্রচলিত অর্থে মৌলি একজন শ্যামলা কিংবা সত্যিকার অর্থে কালো মেয়ে। ফুল যে রঙয়েরই হোক না কেন তা সব সময় ফুলই। কালো রঙয়ের গোলাপকে কেউ কালো বলে ফেলে দেয় না।মানুষের গায়ের রঙ কিংবা আকৃতি যাই হোক না কেন সে একজন মানুষ। মানুষ পরিচয় ছাপিয়ে আর কোন কিছু যদি কেউ বড় করে দেখে তবে সে আর মানুষের লিস্টে থাকবে না।মানুষের লিস্টে টিকে থাকা এত সহজ কিছু নয়।

ভাই একটু বের হতে হবে। আদিল রুমে নক করে বলল।
আমি বললাম ,কেন ?
আদিল বলল, ভাই , ফুল নিয়ে এসেছি।
আমি বললাম, তো? ফুল এনেছিস রুমের সামনে রেখে যা। আমরা সাজাতে পারব। তুই তো জানিস তোর ভাবি ইভেন্ট ম্যানেজম্যান্ট এর কাজ করে। সে তোর চেয়ে ভালো বুঝবে।
আদিল আর কিছুই বলে নি। সে হয়তো বাহিরে ফুল গুলো রেখে গেছে। আমি কিংবা মৌলি কেউই সে ফুলের পরোয়া করলাম না।

মৌলি বলল, এত বকুল সে কই পেল?
আমি বললাম, এত বকুল কই দেখলে তুমি ?
মৌলি বলল, কি সুন্দর গন্ধ আসছে।
আমি এরপর রুমের দরজা খুললাম। বাহিরে একটা বকুল ফুলের সন্ধানও পেলাম না। একটা কাগজ পেলাম।সেখানে লিখা "১০ কেজি বকুল ফুল"।

মন্তব্য ১৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই এপ্রিল, ২০১৯ সকাল ১০:৪০

রাজীব নুর বলেছেন: বকুল ফুল বকুল ফুল বকুল ফুল বকুল ফুল, সোনা দিয়া হাত কেন বান্ধাইলি।

১৬ ই এপ্রিল, ২০১৯ সকাল ১০:৪৮

আলমগীর জনি বলেছেন: সেই একটা গান

২| ১৬ ই এপ্রিল, ২০১৯ সকাল ১১:২৪

আনু মোল্লাহ বলেছেন: বকুল ফুল আমারও খুব প্রিয়।
শুভেচ্ছা রইল, আর গল্পে ভাললাগা।

১৬ ই এপ্রিল, ২০১৯ রাত ১১:০০

আলমগীর জনি বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই

৩| ১৬ ই এপ্রিল, ২০১৯ দুপুর ২:০৫

ভুয়া মফিজ বলেছেন: গল্পে ভালোলাগা। শেষ পর্যন্ত এই প্রেম কতোটা থাকবে জানিনা......তবে বর্তমানের এই আনন্দটাই বা কম কি?

১৬ ই এপ্রিল, ২০১৯ রাত ১১:০০

আলমগীর জনি বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই

৪| ১৬ ই এপ্রিল, ২০১৯ বিকাল ৪:৪২

পবিত্র হোসাইন বলেছেন: সুন্দর গন্ধ।

১৬ ই এপ্রিল, ২০১৯ রাত ১১:০১

আলমগীর জনি বলেছেন: একটু অন্যরকম মাতাল করা গন্ধ

৫| ১৬ ই এপ্রিল, ২০১৯ বিকাল ৫:২৭

অজ্ঞ বালক বলেছেন: হা হা হা। কাগজে লেখা। হা হা হা। ভালা পাইলাম। সুন্দর হইসে।

১৬ ই এপ্রিল, ২০১৯ রাত ১১:০১

আলমগীর জনি বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে

৬| ১৬ ই এপ্রিল, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:২৩

মাহমুদুর রহমান বলেছেন: সোনা দিয়া হাত কেন বান্ধাইলি.
বকুল ফুল বকুল ফুল. সোনা দিয়া হাত কেন বান্ধাইলি.
শালুক ফুলের লাজ নাই. রাইতে শালুক ফোটে লো.
রাইতে শালুক ফোটে. শালুক ফুলের লাজ নাই.
রাইতে শালুক ফোটে লো. রাইতে শালুক ফোটে.
যার সনে যার ভালোবাসা. যার সনে যার ভালোবাসা.
সেইতো মজা লুটে লো. বকুল ফুল বকুল ফুল.
সোনা দিয়া হাত কেন বান্ধাইলি. বকুল ফুল বকুল ফুল.

১৬ ই এপ্রিল, ২০১৯ রাত ১১:০২

আলমগীর জনি বলেছেন: বকুল ফুল , বকুল ফুল । একটা ভালোবাসা।

৭| ১৬ ই এপ্রিল, ২০১৯ রাত ১১:০৫

মনিরা সুলতানা বলেছেন: বাহ ! চমৎকার লেখা।

২৫ শে এপ্রিল, ২০১৯ বিকাল ৪:৩১

আলমগীর জনি বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.