নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সূর্য থেকে অসম্ভব শক্তিশালী আলোকরশ্মি চাঁদের উপর পড়ে। সে চাঁদ কিছুদিন জোছনা বিলায় আমাদের মাঝে।অমাবস্যায় কেউ চাঁদকে ভুলে যায় না।অপেক্ষা করে জোছনা ফিরে আসার ।সূর্য না হই ,মাঝে মধ্যে জোছনা হতে চাই।অমাবস্যায় হাহাকার হতে চাই মানব মনে।

আলমগীর জনি

গল্প বলি

আলমগীর জনি › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পঃ নীরবে

০১ লা মে, ২০১৯ রাত ১১:৪১


গ্রামে এসে নিলয় খুব অসহায়ের মত হয়ে গেল। ঢাকা শহরের নামকরা স্কুলে পড়ত সে। আর এখন গ্রামের একটা সাধারণ স্কুলে পড়ছে। স্কুলের ছেলেগুলো এমনকি মেয়েগুলোও হা করে তার দিকে চেয়ে থাকে। তার শুদ্ধ ভাষার কথা শুনে সবাই একটু অন্যভাবে তাকায়। তার শ্রেণি শিক্ষক তো প্রথম দিনই বলল, আরে তুমি আফতাব ভাইয়ের মেয়ে না? তোমার বাবার মৃত্যু সংবাদে খুব কষ্ট পেয়েছিলাম ,মা। বড়ই ভালো মানুষ ছিলেন।

এখানে ভর্তি করিয়ে দিয়েছিল তার দাদাভাই। দাদাভাইয়ের কিছু করার ছিল না। হঠাত করেই ক্যান্সারের কাছে হার মানে তার একমাত্র ছেলে। কত টাকা যে তার ছেলের চিকিৎসার পেছনে খরচ হয়েছে তা একমাত্র আল্লাহই ভালো জানেন। তবে নিলুফার বেগম মানে নিলয়ের মা তাদের সবটুকু দিয়ে চেয়েছেন স্বামীকে বাঁচিয়ে রাখতে। কিন্তু উপরওয়ালার ইচ্ছা অন্যরকম। সেটা মানুষের বুঝার সাধ্য নাই।

আফতাব সাহেব ছিলেন তার এলাকার গর্ব। গ্রাম থেকে ঢাকা শহরে যে কেউ আসলেই উঠত আফতাব সাহেবের বাসায়। তিনি কোনদিন কাউকে আসতে না করেছেন এমন দৃশ্য কেউ কল্পনাও করতে পারত না। আর মাস দুয়েক আগে আফতাব সাহেবের স্ত্রী নিলুফার তার একমাত্র মেয়ে নিলয় আর ছেলে অভ্রকে নিয়ে গ্রামে চলে আসেন। সিদ্ধান্তটা মোটেও সহজ ছিল না। কিন্তু তাদের আর কোন উপায়ও ছিল না।

অভ্র ভর্তি হলো ক্লাস সেভেনে। আর নিলয় ক্লাস নাইনে। ক্লাস নাইনের গণিত নেন জনাব আবুল হোসেন। স্যার একদিন বলল, তোমার নাম নিলয়? এটা তো ছেলেদের নাম। কে রাখল এই নাম? নিলয় বলল, আমার বাবা। স্যার বললেন, তোমার বাবাকে আমি চিনি। আরে, তোমার চেহারা একদম তোমার বাবার মত। খুবই ভালো মানুষ ছিলেন। একবার কি হয়েছে , শোনো। আমি গেলাম ঢাকায়। আমার ছোট শ্যালক প্রবাসে যাবে। শ্যালককে দিয়ে আসতে গেলাম। তুমি তখন অনেক ছোট ছিলে। ২-৩ বছর বয়স হবে। আফতাব ভাই আমাকে ডাক দিয়ে বলল, মাস্টার সাব, শালাকে নিয়ে আসবেন আগে বলবেন না। আমাদের গ্রামের মেহমান। ঠিক মত আপ্যায়ণ করতে পারলাম না ।আমি বললাম, কি যে বলেন ভাই, আপনি যা খাওয়াইসেন আমার সাত জনমেও এত ভালো খাবার এক লগে খায় নাই। তোমার বাবা হাসলেন। আহ ! বড্ড অমায়িক ছিলেন মানুষ টা। আল্লাহ্‌ কেন জানি ভালো মানুষগুলোকে তাড়াতাড়ি উঠিয়ে নেন।

নিলয়ের এসব গল্প শুনতে মোটেও ভালো লাগত না। তবে হ্যাঁ গর্ব হতো তার বাবাকে নিয়ে। পৃথিবীর সব সন্তান তার বাবাকে নিয়ে গর্ব করতে চায়। একজন ভালো বাবা পাওয়া গর্বের ব্যাপার।গল্প ভালো লাগত না কারণ বাবাকে তার ভয়ংকর ভাবে মনে পড়ত সে সময়। এমনও দিন গেছে স্যারেরা তার বাবার গল্প শেষ করার আগেই ভেতরে ভেতরে কেঁদে উঠত সে। কারণ ততদিনে নিলয় কান্না কন্ট্রোল করা শিখে গেছে। কান্না কন্ট্রোল করাটা এভাবে চলে আসে না। মানুষ জন্ম থেকেই হাউমাউ করে কান্না করে করে আসে। কিন্তু আস্তে আস্তে মানুষ শিখে ফেলে কিভাবে শব্দ না করে কান্না করা যায়। এই শিক্ষাটা মানুষ প্রকৃতি থেকে পায়। প্রকৃতি যার উপর যত কঠোর তার কান্না তত শব্দহীন ,তার কান্না তত নীরব।

নিলয় আগে বাবার কাছে কিছু আবদার করলেই পেয়ে যেত। এমনও হয়েছে এক ঈদে তার জন্য ৫-৬ টি জামা কেনা হয়েছে। এর চেয়ে বেশিও হতে পারে। আর এখন তার আলমারিতে যে জামাগুলো আছে সবই তার বাবা বেঁচে থাকার সময়ে কেনা। এত জামা বাবা কিনে দিয়েছে তার জন্য মনে হয় আর পাঁচ সাত বছর জামা-ই কিনতে হবে না তাকে। আচ্ছা, বাবা কি তাহলে জানত সে চলে যাবে? কেন এত জামা কিনে দিয়ে গেছে।এত জামা জমা না করে অনেক টাকা জমা করে গেলেও পারতেন তার বাবা। তাহলে আর তাদের এভাবে গ্রামে এসে থাকা লাগত না। তার বাবার অনেক ব্যাংক ব্যালেন্স ছিল না। যা ছিল সব চিকিৎসার জন্য খরচ হয়ে গেছে । আফতাব সাহেব মারা যাওয়ার পর নিলয়রা ঢাকা শহরে টিকে ছিল মাত্র ৩ মাস।তাও অনেক কষ্ট করে। শুধু নিলয়ের ক্লাস এইটের পরীক্ষাটা শেষ হবে এ জন্য তারা বাড়তি কিছুদিন থেকেছিল। নিলুফার বেগম কোনভাবেই ছেলে আর মেয়েকে নিয়ে থাকতে পারছিলেন না। এই তিনমাসের মধ্যে দুইমাসের ভাড়া এডভান্স করা ছিল বলে তারা থাকতে পেরেছিলেন। আর একমাসের ভাড়া অনেক কষ্ট করে আফতাব সাহেবের বাবা পাঠিয়েছিলেন গ্রাম থেকে। তারপর একদিন ফোন করে বললেন, বৌ মা। তোমরা আমার কাছে চলে আসো। কয়টা ডাল ভাত খেয়েও থাকতে পারবে এখানে। আর আমি তো একদম একা হয়ে গেছি। নিলুফার বেগম গ্রামে চলে আসেন কারণ আর কোন উপায় ছিল না।

নিলয় তার রুমে পড়ছিল। হঠাত নিলুফার বেগম ডাক দিলেন।

-নিলয়।
-জী মা।
-তোর পড়ালেখা কেমন চলছে?
-ভালো।
- খুব কষ্ট হয় নারে মা? শহরে সারাজীবন থেকে এখন এভাবে হেঁটে হেঁটে ক্লাস যাস, এত কষ্ট করে ক্লাস করিস।

নিলয় তার মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে। তারপর বলল,

-মা, আমার কষ্ট গুলো তোমার কষ্টের কাছে কিছুই না। যে তোমার জন্য সকালের নাস্তা বানানোর লোক থাকত সেই তুমি এখন এতগুলো মানুষের জন্য সকালের নাস্তা, দুপুরের লাঞ্চ, রাতের ডিনার তৈরি করো। আরে , দেখ তো মা আমরা আগে লাঞ্চ করতাম, ডিনার করতাম আর এখন? লাঞ্চ ডিনার এসব শব্দ আসেই না তাই না মা? আমাদের কপাল এত খারাপ কেন মা? আমাদের সাথেই কেন এমন হতে হলো? আমরা তো খুব ভালো ছিলাম। আমাদের ভালো থাকা কি পাপ ছিল? বাবা কেন চলে গেল ?

নিলুফার বেগম নিলয়ের কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনছিলেন ।মেয়ের কথাগুলো সত্য। বিয়ের ঠিক এক মাস পরই নিলুফার বেগম আর আফতাব সাহেব ঢাকায় একটা বাসায় উঠে। এমন না যে তারা ইচ্ছে করেই উঠেছেন। আফতাব সাহেবের বাবা চেয়েছিলেন ছেলে শহরে থাকবে। বউ সাথে থাকবে। তার ছেলের কাছে গ্রামের আট দশজন মানুষ যাবে। তারাও মাঝে মধ্যে বেড়াতে যাবেন। তিনি যত কষ্ট করে ছেলেকে বড় করেছেন তিনি চাননি ছেলের সন্তানেরা এভাবে কষ্ট পাক। যদিও প্রকৃতির এক খেলায় সেই সন্তানেরা এখন গ্রামের স্কুলে পড়ছেন। পার্থক্য শুধু তারা শুরু করেছিল শহরে এখন আসল গ্রামে।

-নিলয়, কাঁদছিস কেন?
-কই না তো।
-বাবাকে খুব মনে পড়ে?
-না।

নিলুফার বেগম মেয়েকে বুকে টেনে নিলেন। অঝোরে কাঁদতে লাগলেন মা আর মেয়ে। মা আর মেয়ের কান্নায় পাশের ঘর থেকে অভ্রও চলে আসল। কিছু বুঝে উঠার আগেই নিলুফার বেগম দুই সন্তানকে দুই হাত দিয়ে চাপ দিয়ে বুকের সাথে জড়িয়ে নিলেন। এদেরকে তার কাছ থেকে কাউকে কেড়ে নিতে দিবেন না। বাঁধ ভেঙে দেয়া কান্না যাকে বলে সেটা চলছিল তখন। নিলুফার বেগম তার সন্তানদের বাবা মারা যাওয়ার পর আর কোনদিন সন্তানদের সামনে এভাবে কাঁদেন নি।নিলুফার বেগমও আস্তে আস্তে শিখে ফেলেন কিভাবে শব্দ না করে কান্না করা যায়। প্রকৃতি তার উপর এত কঠোর তাই তার কান্না শব্দহীন ,তার কান্না এত নীরব।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা মে, ২০১৯ বিকাল ৩:৫১

আর্কিওপটেরিক্স বলেছেন: সাবলীল বর্ননা......
আসলে জীবনে একটা ঝড়ই সবকিছু লন্ডভন্ড করে দিতে পারে।

ভালো লেগেছে :)

০৩ রা মে, ২০১৯ রাত ৯:১২

আলমগীর জনি বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে ।

২| ০২ রা মে, ২০১৯ রাত ৯:২২

মাহমুদুর রহমান বলেছেন: সহজ সরল সুন্দর লেখা।

০৩ রা মে, ২০১৯ রাত ৯:১৩

আলমগীর জনি বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.