নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সূর্য থেকে অসম্ভব শক্তিশালী আলোকরশ্মি চাঁদের উপর পড়ে। সে চাঁদ কিছুদিন জোছনা বিলায় আমাদের মাঝে।অমাবস্যায় কেউ চাঁদকে ভুলে যায় না।অপেক্ষা করে জোছনা ফিরে আসার ।সূর্য না হই ,মাঝে মধ্যে জোছনা হতে চাই।অমাবস্যায় হাহাকার হতে চাই মানব মনে।

আলমগীর জনি

গল্প বলি

আলমগীর জনি › বিস্তারিত পোস্টঃ

মা অথবা আমার গল্প

১৩ ই মে, ২০১৯ রাত ৩:১৬



আজ সকালে আমি একটা ডায়েরি হাতে পেলাম।ডায়েরির উপর কালো মার্কার দিয়ে লিখা "ব্যক্তিগত ডায়েরি ১৯৯০ "।নিচে লিখা "আবুল কালাম "। ভদ্রলোক আমার বাবা।কারো ব্যক্তিগত কিছু পড়াটা কতটুকু অভদ্রতা তা আমি জানি।তারপরও আমাকে এই ডায়েরি পড়তে হবে।কেন পড়তে হবে সেটাও আমার ব্যক্তিগত। আমার ব্যক্তিগত তথ্য কারো কাছে শেয়ার করতে আমি আগ্রহী নই।

আমি ব্রাশ করতে গেলাম বেসিনে।বাসি মুখে অতি গুরুত্বপূর্ণ কোন কাজ করা ঠিক না।আমিও করব না।আমার ঘরে রাতে কোন এক সময় এই ডায়েরিটা কেউ রেখে গেছে। কেউ বলতে আমার মা।আমাদের এই ঘরে আমি আর মা ছাড়া আর কেউ নাই।

মার কাছে টাকা চাইলে, মা টাকা আমার হাতে দেন না।আমার রুমে একটা টেবিলে রেখে যান।এটা তিনি কেন করেন আমি খুব ভালো করেই জানি। যে টেবিলটায় মা সব কিছু রেখে যান আমার জন্য, সে টেবিলটা ছিল বাবার।মা'র ধারণা টেবিলটা থেকে কিছু নেওয়া মানে আমি বাবার হাত থেকে নিচ্ছি।অনেকটা দুধের স্বাদ লবণে মিটানো আর কি!কি ভালোবাসা! স্বামীর জন্য কি ত্যাগ!

একদিন রাতে প্রশ্ন করেছিলাম- মা আমি কি তোমার হাত থেকে কখনো কিছু পাব না? মা কিছু বললেন না।শুধু বললেন তাড়াতাড়ি ঘুমা শরীর খারাপ করবে।আমি অবাক হয়ে তাকাই এত ভালোবাসা কিভাবে আসে! মাঝে মধ্যে অদ্ভুত লাগে এই টেবিলটা আমার বাবার কাজ করে এই কথা ভেবে ! আসলে কি করে? মনে হয় না।ছোটবেলায় বাবাকে খুব ডাকতে ইচ্ছে করত।খুব ইচ্ছে করত বাবার গালটাকে থুতু দিয়ে ভরিয়ে দেই।কই আমার সেই ইচ্ছেটা পূরণ হলো কই?আমার বাবা ডাকটা কেন বাতাসে মিলিয়ে যায়? আচ্ছা বাতাসে মিলিয়ে যাওয়ার পর সেটা কি বাবা স্বর্গ থেকে শুনতে পান?আসলে মা নিজের সুখটাই দেখল শুধু।এটা আমার বিরক্ত লাগে প্রায় সময়ই।

ফ্রেশ হয়ে পড়া শুরু করলাম ডায়েরিটা।১৯৯০ সালের জানুয়ারি থেকেই এই ডায়েরিটা শুরু হলো।বাবার আগের ডায়েরি গুলো আমি পাই নি।বলা যায় মা আমাকে দেয় নি।কেন দেয়নি তা আমি জানি না ।আমি ডায়েরিটা পড়া শুরু করলাম জানুয়ারি ১ থেকেই।

প্রথম পাতার লিখাটা অনেকটা এরকম -
"মিনু,আমি তোমাকে ভালোবাসি,ভালোবাসি, ভালোবাসি"

আমি প্রায় অর্ধেক পড়ে ফেললাম।রবীন্দ্রনাথ কিংবা শরৎও আমাকে এতটা মুগ্ধ করতে পারে নি আমার বাবার লিখাগুলো যতটা মুগ্ধ করেছে আমাকে।পার্বতী ,হৈমন্তী ওদের চেয়ে আমার মাকে বেশ ভালো মানের নায়িকা মনে হলো।

খুব আশ্চর্য হলাম।যতটুকু পড়লাম, ডায়েরির কোথাও আমি নাই।একমাত্র সন্তানের কথা থাকবে না এটা কেমন কথা! বাবার প্রতি যে একটু ভালোবাসা ছিল সেটা এখন আর খুঁজে পাচ্ছি না।ডায়েরির প্রতি বিরক্ত চলে এসেছে প্রায়।তবে একটা জিনিস খুব ভালো লেগেছে -যে পাতায় মা'র কথা লিখা আছে সেখানে একটা করে গোলাপের পাপড়ি রাখা ছিল সেটা বুঝা যাচ্ছে।আচ্ছা আজ থেকে ১৮ বছর আগে কি গোলাপ এতটা সহজে পাওয়া যেত?বাবা সম্ভবত খুব কষ্ট করে গোলাপ জোগাড় করতেন।আমার তো মনে বাবা মাঝে মধ্যে গোলাপ চুরি করতেন কারো বাগান থেকে।এক বাগানে এত ফুল পেতেন না তিনি ।প্রিয় মানুষের জন্য গোলাপ চুরি, খারাপ কি! আমি হলেও তাই করতাম।গোলাপই তো।আমি তো কারো গোলাপ গাছ তুলে আনতাম না।একটা দুইটা গোলাপ আমি এমনিতেই তুলতে পারতাম।

মাকে নিয়ে লেখা লিখাগুলোর মধ্যে একটা আমার নজর করেছে খুব।
সে জায়গার লিখা টা এমন-
"আজ মিনু বলল সে আমার সাথে আর থাকবে না।তবে আমি জানি সে আমার সাথেই থাকবে।সে ব্যাগ গুছাবে।এরপর কতক্ষণ এটা সেটা নাড়িয়ে দেখবে ।এমন ভাব করবে সে চলে যাচ্ছে অনন্তকালের জন্য।কিন্তু মিনু জানে একটু পর আমি তার সামনে গিয়ে দাঁড়াবো।এরপর একটা বকুলের মালা দিব।বকুলের মালা পেয়ে মিনু আর যাবে না।মেয়েটার বকুলের প্রতি এক দুর্বলতা কেন? এই দুর্বলতার জন্যই হয়তো আমি টিকে আছি ।আমি এই লিখাটা লিখেই বকুল খুঁজতে যাব।আমি যদি তিনদিন না আসি এই তিনদিন সে যাবে না।সে জানে আমার দেরি হচ্ছে বকুলের জন্যই।সে জানে আমি তাকে ছেড়ে যাব না।"

অনেক দিনের পুরানো ডায়েরিতে গোলাপের অস্তিত্ব প্রায় বিলীন, তবু যতটুকু পেলাম বুঝতে অসুবিধা হলো না।তবে মা'র প্রতি বাবার ভালোবাসাটা দেখে খুব ভালো লাগছিল।এজন্য পুরোটা পড়া কমপ্লিট করব সিদ্ধান্ত নিলাম।মেজাজ খুব খারাপ তাও পড়ব।পুরা ডায়েরিটা মায়ের দখলে।ইচ্ছে করছে ডায়েরির উপরের "ব্যক্তিগত ডায়েরি শব্দটার মাঝখানে লিখে দেই "ব্যক্তিগত প্রেমের ডায়েরি"। মায়ের জীবনটা প্রেম দিয়ে ভরিয়ে দিয়েছেন আমার বাবা।বাবার প্রতি একটা শ্রদ্ধাবোধ কাজ করছে।বাবা হিসেবে নয়।আমার মায়ের প্রেমিক হিসেবে।আমি দেখলাম বাবা মার যতটুকু স্বামী ছিলেন তার চেয়ে বেশি প্রেমিক ছিলেন।আমার ১৮ বছর হওয়ার আগে মা কেন এই ডায়েরি আমার হাতে দেন নি সেটা বুঝতে পারলাম এখন। এমন প্রেমময় মাখো মাখো ডায়েরি ছেলের হাতে দেয়া ঠিক নয়।

আজ ৯ অক্টোবর। আজ আমার জন্মদিন। ৯ অক্টোবর ১৯৯০। ডায়েরিতে এটা দেখে আমি খুব আগ্রহ নিয়ে পড়া শুরু করলাম।

"আজ আমার জীবনের সবচেয়ে খুশির দিন।আজকে আমার ছেলে জন্ম নিল ।আর আমি হলাম বাবা।এতদিন ধরে অপেক্ষা করছিলাম কবে বাবা হবো।ডায়েরির প্রতিটি পাতায় দেওয়া পাপড়ি জানে এগুলোয় কত ভালোবাসা লুকিয়ে আছে।প্রতিটি পাপড়ি আমার ছেলের জন্য।আমি এখন মরে গেলেও আমার কোন দু:খ নাই।আমার স্বপ্ন ছিল আমি একদিন বাবা হব।স্বপ্ন পূরণ হলো।কাজ শেষ এবার বোধহয় মরে যাওয়া যায়।"

এটুকু পড়ে থমকে দাড়ালাম।আচ্ছা কারো কি এমন স্বপ্ন থাকে যে সে বাবা হবে? আমার বাবার ছিল।আমি জানি সত্যিই ছিল।আমার মাকে বিয়ে করার পিছনে একটাই কারণ তার সন্তান লাগবে।আমি খুব ভালো করেই জানতাম আমার মা'ই বাবার একমাত্র স্ত্রী ছিলেন না।বুঝতে পারলাম যেদিন আমার অস্তিত্ব প্রকাশ পেল মানে বাবা জানল মা প্রেগন্যান্ট সেদিন থেকেই বাবার মা'র প্রতি ভালোবাসা জন্ম নিল।এটা যতটা না মা'র জন্য তার চেয়ে বেশি আমার জন্য। এটা কল্পনা করতেই মা'র জন্য খুব খারাপ লাগছে।এ কথাটা আমি জানতাম তবে বিশ্বাস করি নি কখনো।শুধুমাত্র একটা সন্তানের জন্য কেউ বিয়ে করতে পারে আমি এটা ভাবতে পারি না।এখন প্রমাণ পেলাম কিছুটা।আচ্ছা মা কেন এই লোকটাকে বিয়ে করলেন?

আর ওই যে একটা করে গোলাপের পাপড়ি দিয়ে রাখতেন সেটা আমার জন্যই।মা যে জানতেন বাবা মাকে ছেড়ে যাবেন না তাও আমার জন্যই।আজব তো! যে ডায়েরিটাকে এতক্ষণ প্রেমের সুভাস ছড়াচ্ছিল সেখানে আমি একটা দুর্গন্ধ পাচ্ছি।একজন স্বার্থপর স্বামীর দুর্গন্ধ।
আচ্ছা বাবার অপরাধটা কি খুব বেশি? বাবাকে কি আমার ঘৃণা করা উচিত?উনি যা করেছেন আমার জন্যই তো করেছেন।নাহ জানি না আমি।বাবাকে আমি ঘৃণা করতে পারব না।আবার যে অবস্থা তাতে ভালোবাসলেও আমার মা'কে অপমান করা হবে।আমি যতটুকু না "বাপ কা বেটা" তার চেয়ে অনেক বেশি "মা কা কলিজা"।যাই হোক আমি জানি আর একটা পৃষ্ঠাও আমি পড়তে পারব না।আমি জানি এই পৃষ্ঠাটাই বাবার জীবনের শেষ পৃষ্ঠা।এটাই এই ডায়েরির শেষ লিখা।এরপর বাবা আর লিখতে পারেন নি কখনো।

আমার আসার দিনই তাকে চলে যেতে হবে? বাবার জন্য একটুও খারাপ লাগছে না এখন।সব খারাপ লাগা মা'র জন্য।বাবা কোন দু:খ না রেখেই চলে গেলেন।আমি আসলাম বাবা আমাকে দেখলেন এরপর জয়ীর বেশে চলে গেলেন।আচ্ছা বাবা কি জয়ী?নাকি মা'র ভালোবাসার কাছে পরাজিত? বাবা থাকলে এতদিনে হয়তো মা সবচেয়ে সুখী মানুষের পুরষ্কার পেতেন।আর এই পুরষ্কার আনতে গিয়ে মা দু চোখ ভেজাতেন।আচ্ছা মা কি আমার আগমনের জন্য চোখ ভেজাতেন নাকি বাবার উপস্থিতির জন্য?।আমি তাঁর একটা ছবি তুলে রাখতাম।আমি জানি সেই ছবিটার জন্য আমি খুব বড় একটা পুরষ্কার পাব।এই ছবিটা তোলার পর আমি আর কোন ছবি তুলতাম না।এক ছবিতেই জীবন পার টাইপের চিন্তা ভাবনা আর কি!

একটা জিনিস আবার মনে হলো এখন।আজ ৯ অক্টোবর।

আজ আমার জন্মদিন।
আজ আমার বাবার বাবা হওয়ার জন্মদিন।
আজ আমার মা'র বিধবা হওয়ার জন্মদিন।
আজ আমার মায়ের ভালোবাসা হারানোর দিন।

এই যে আমার চোখ দিয়ে এখন পানি ঝরছে এটা কি বাবার জন্য? নাকি মার জন্য?আচ্ছা ডান চোখের পানি গুলো মা'র জন্য।আর বাম চোখের গুলো বাবার জন্য।আর আমার হৃদয়ে যে রক্তক্ষরণ হচ্ছে সেটা কার জন্য? সেটা বোধহয় বাবার জন্য।বাবা মানে ওই স্বার্থপর মানুষটার জন্য যিনি আমার জন্য বাবা হতে চেয়েছিলেন।যিনি আমার জন্য আমার মাকে ভালোবেসেছিলেন।আমার মা যাকে ভালোবাসতে পেরেছিলেন।

মন্তব্য ১৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই মে, ২০১৯ ভোর ৬:৩৪

ডার্ক ম্যান বলেছেন: হৃদয়স্পর্শী

১৩ ই মে, ২০১৯ সকাল ১০:০৭

আলমগীর জনি বলেছেন: হুম

২| ১৩ ই মে, ২০১৯ ভোর ৬:৫৯

বলেছেন: এমন করুণ ও হৃদয় বিদারক কাহিনি শুনে আহত হলাম।
সমবেদনা জানানোর ভাষাটা শক্তি হারিয়ে ফেলছে।


তবুও ভালো থাকুক মায়ের নিয়ে শত যন্ত্রণা।।

শুভ কামনা নিরন্তর।

১৩ ই মে, ২০১৯ সকাল ১০:০৮

আলমগীর জনি বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই

১৩ ই মে, ২০১৯ সকাল ১০:০৮

আলমগীর জনি বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই

৩| ১৩ ই মে, ২০১৯ সকাল ১০:৫৭

আপেক্ষিক মানুষ বলেছেন: আহা প্রথমে খুব ভাল লেগেছিল, পরে কষ্টে বুক ভরে গেল।

১৩ ই মে, ২০১৯ দুপুর ১:২৮

আলমগীর জনি বলেছেন: হুম

৪| ১৩ ই মে, ২০১৯ সকাল ১১:০০

আপেক্ষিক মানুষ বলেছেন: এটা গল্প নাকি বাস্তব! গল্প বস্তবের মত আবার বস্তব গল্পের মত। কোনটা গ্রহন করব জানি না...

১৩ ই মে, ২০১৯ দুপুর ১:২৯

আলমগীর জনি বলেছেন: কিছুটা বাস্তব , কিছুটা গল্প। সব মিলিয়ে একটা গল্প।

১৩ ই মে, ২০১৯ দুপুর ১:২৯

আলমগীর জনি বলেছেন: কিছুটা বাস্তব , কিছুটা গল্প। সব মিলিয়ে একটা গল্প।

৫| ১৩ ই মে, ২০১৯ রাত ৮:০৩

মেঘ প্রিয় বালক বলেছেন: মা,মা একমাএ সন্তানদের ভালোর জন্যই তার কলিজায় আগুন লাগাতেও ভয় করেনা। খুব হৃদয়স্পর্শী।

১৪ ই মে, ২০১৯ রাত ১১:৩৫

আলমগীর জনি বলেছেন: সত্য কথা

৬| ১৩ ই মে, ২০১৯ রাত ৯:৩৫

রাজীব নুর বলেছেন: মন ছুঁয়ে গেল।

১৪ ই মে, ২০১৯ রাত ১১:৩৫

আলমগীর জনি বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.