নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সূর্য থেকে অসম্ভব শক্তিশালী আলোকরশ্মি চাঁদের উপর পড়ে। সে চাঁদ কিছুদিন জোছনা বিলায় আমাদের মাঝে।অমাবস্যায় কেউ চাঁদকে ভুলে যায় না।অপেক্ষা করে জোছনা ফিরে আসার ।সূর্য না হই ,মাঝে মধ্যে জোছনা হতে চাই।অমাবস্যায় হাহাকার হতে চাই মানব মনে।

আলমগীর জনি

গল্প বলি

আলমগীর জনি › বিস্তারিত পোস্টঃ

কেমন আছো, বাবা?

০৩ রা জুন, ২০১৯ রাত ৯:২৮



আমাদের বাসার ডাইনিং টেবিলে একটা চেয়ার সব সময় ফাঁকাই থাকে। সব সময় বলতে গত তিন বছর যাবত। আর ফাঁকা থাকে মানে মা এই চেয়ারে কাউকে বসতে দেন না। যে চেয়ারটায় বসে বাবা ভাত খেতেন সেখানে আর কেউ বসতে পারবে না। বাবা এসে আবার এখানে ভাত খেতে বসবেন। ঐ চেয়ারে মা আর কাউকে দেখতে চান না।

মানুষ মরে গেলে তাকে ভুলে যাওয়ার নিয়ম আছে কিংবা মরে যাওয়া মানুষটাকে ধীরে ধীরে ভুলে যাওয়া যায়।মানুষ হারিয়ে গেলে তাকে ভুলে যাওয়ার কোন নিয়ম থাকতে পারে না। স্ত্রীর কাছে তাঁর স্বামীর হৃদস্পন্দন বন্ধ হওয়া না দেখা পর্যন্ত সেই স্বামী জীবিত। আর সন্তানের কাছে সেই স্পন্দনটা তার নিজের হৃদস্পন্দনের সাথে সমান্তরালে স্পন্দিত হয়। যে মানুষটা কোথায় আছে? কি করছে? আমরা কিছুই জানি না তাঁর স্পন্দনটা তো প্রতিনিয়তই কানে বাজতেই থাকবে।

বিশ্বের অনেক নামীদামী ক্লাব তাদের ইতিহাসের সেরা খেলোয়াড়টিকে সম্মান জানানোর জন্য তাদের পরিহিত জার্সিটা আর কাউকে দেয় না। চিরদিনের জন্য তুলে রাখে। এখানেও তেমন চেয়ারটা তুলে রাখা হয়েছে বলা যায়। তবে বাবা আদৌ এসে এই চেয়ারে আবার বসবেন কিনা সেটা মা কিংবা আমি অথবা আমরা কেউই জানি না।

একবার আমার পিচ্ছি ছেলেটা চেয়ারটায় উঠে বসে যায়। একবার না। রাতুল প্রায়ই তার দাদার চেয়ারটায় উঠে বসে থাকে। তবে সেটা মার চোখ এড়িয়ে ।আমার বউ তাই ওকে কখনোই এই চেয়ারের কাছে ঘেঁষতে দেয় না।তবে সেদিন শুধু বসে থাকলে একটা কথা ছিল।কারণ মা খাবারের সময় ছাড়া ডাইনিং টেবিলে আসেন না। কিন্তু ছেলেটা বিপত্তি বাঁধাল সেখানে পায়খানা করে দিয়ে।আমরা কেউ খেয়াল করি নি।খেতে বসে গেছি।কোথা থেকে গন্ধ আসছে সেটা খুঁজতে গিয়ে দেখা গেল সেই চেয়ারটার উপর পায়খানা। মা আমার গালে জোরে একটা থাপ্পড় দিয়েছেন।ঠিক এমন দুইটা থাপ্পড় শেষ আমি খেয়েছিলাম বাবার হারিয়ে যাওয়ার সন্ধ্যায়।

অন্য কেউ হলে হয়তো ছেলের বউকে গালাগাল করত কিন্তু মা কখনোই তার বউমাকে গালাগাল করেন না। এই বউমা তার খুব প্রিয়।অপ্রিয় হলাম শুধু আমি।কেন আমি অপ্রিয়? কারণ সেদিন বাবার হারিয়ে যাওয়ার সমস্ত দায় আমার বলে মার ধারণা। আমার কেন সেদিন মন চাইলো খিচুড়ি খেতে ? আমি উত্তর জানি না। আজরাইল এসে আমার কানে কানে কিছু বলে যায় নি। আজরাইল নাকি মৃত্যুর আগে মৃত্যুপথযাত্রী কিংবা তাঁর স্বজনদের একটা বার্তা দেয়।বাবাকে যারা নিয়ে গেছে তারা হয়তো মানুষের মত দেখতে। তাদের এত বার্তা দেয়ার ঠ্যাকা কিসের?

সেদিন ছিল শুক্রবার।মা গিয়েছিলেন নানাবাড়িতে। খুব কাছেই নানা বাড়ি হওয়ায় কাউকে আর নিয়ে যান নি।

বাবাকে বললেন,আবিদ,তোমরা বাপ ছেলে থাকো।মিশুর নানুর শরীরটা ভালো না।আমি যদি দেখি অবস্থা খারাপ তাহলে তুমি মিশুকে নিয়ে চলে এসো আর তা না হয় আমি ঘন্টাখানেক পরই চলে আসছি।
বাবা বললেন, আচ্ছা, ঠিক আছে।তুমি যাও চিন্তা করো না একদম।আর কি হয় না হয় আমাকে জানাবে কিন্তু।
আমি বললাম, মা , আমি আসি ? তুমি একা যাবে।
মা বললেন, আমি একটু একা থাকতে চাই তোর নানুর পাশে।

আমি আর কিছু বললাম না। মা চলে গেলেন নানাবাড়িতে।

বাবাকে আমি হুট করে বলি,চলো বাবা আমরা খিচুড়ি রান্না করি।তোমার হাতের খিচুড়িটা কতদিন খাই না। ছোটবেলায় কত খেতাম।
বাবা বললেন, এখন? এই সময়?
আমি বললাম, তো কি? এমন ভুড়িওয়ালা বাপ-বেটার আবার টাইম লাগে নাকি?
বাবা হাসতে হাসতে আমার ভুড়িতে দিলেন এক আলতো ঘুষি।আর আমিও বাবার ভুড়িতে একটু জোরেই দিলাম।ভাগ্যিস ঘুষিটা দিয়েছিলাম না হলে আমি মনে রাখতে পারতাম কিভাবে বাবাকে করা শেষ স্পর্শ কোনটা ছিল ?

বাবা বললেন, খিচুড়ি কিভাবে রান্না হবে? ডাল নেই।
আমি বললাম, এখন কি হবে!
বাবা বললেন,কি আর হবে।তুই একটু থাক।আমি ডাল নিয়ে আসছি পাশের দোকান থেকে।বেশিক্ষণ লাগবে না।
আমি বললাম, আমি যাই?
বাবা বললেন, আরে না।আমি যাচ্ছি।তুই ছোট মানুষ।
আমি বললাম, আমি অনার্স করছি আর আমি ছোট মানুষ?
বাবা বললেন, সন্তান কখনো বাবা-মার কাছে বড় হয় না।হয়তো সন্তানের সাইজটা দিন দিন একটু একটু বাড়ে। হা হা হা ।

বাবা ডাল কিনতে গিয়েছিলেন ঠিকই কিন্তু আর ফিরলেন না।১ ঘন্টা পার হওয়ার পর আমার হুঁশ হলো বাবা এখনো ফিরেন নি।বাবাকে বেশ কয়বার ফোন দিলাম।কিন্তু ফোন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে;।যাই হোক ফোন কেন বন্ধ থাকবে?

আমি এবার বাহিরে চলে গেলাম। বাহিরে গিয়ে খুঁজতে খুঁজতে হয়রান।পরে ভাবলাম হয়তো মা ফোন দিয়েছে তাই ইমারজেন্সি নানাবাড়িতে চলে গিয়েছে।আমি মাকে ফোন দিলাম।

মা বললেন,কই তোর বাবা তো আসে নি।তোর নানু বলল,রাতে খেয়ে যেতে তাই আমার দেরি হচ্ছে।আমি ফোন দিব ভাবতে ভাবতে আর ফোন দেওয়া হয় নি।
মা আবার বললেন, কি হয়েছে?
আমি বললাম বাবাকে পাওয়া যাচ্ছে না।
মা।বললেন, পাওয়া যাচ্ছে না মানে?
আমি বললাম, বাবার ফোন বন্ধ।
মা বললেন, সে বের হয়েছে কেন?
আমি বললাম,দাঁড়াও আমি আসছি।

আমি নানার বাসায় গিয়ে মাকে সব বললাম।মা আমার দুই গালে দুইটা থাপ্পড় দিলেন।তারপর বললেন, গেল কই মানুষটা।

সেদিন আমরা সারারাত বাবাকে খুঁজলাম ।কিন্তু কোথাও বাবাকে পাওয়া গেল না। তবে বাবার একটা জুতা পাওয়া গিয়েছিল।মনে হচ্ছে, মানুষটার উপর বড়সড় কোন ঝড় বয়ে গেছে।

বলতে ভুলে গেছি। বাবার ঐ জুতাটাও মা খুব যত্ন করে রেখে দিয়েছেন। মার ধারণা বাবা এক পায়ে একটা জুতা নিয়ে আরেক পা খোঁড়াতে খোঁড়াতে এসে তাঁকে বলবেন , নিলু, আমার আর একটা জুতা কই গেল ?

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা জুন, ২০১৯ রাত ৯:৫৭

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন: দোয়া রইলো।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.