নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সূর্য থেকে অসম্ভব শক্তিশালী আলোকরশ্মি চাঁদের উপর পড়ে। সে চাঁদ কিছুদিন জোছনা বিলায় আমাদের মাঝে।অমাবস্যায় কেউ চাঁদকে ভুলে যায় না।অপেক্ষা করে জোছনা ফিরে আসার ।সূর্য না হই ,মাঝে মধ্যে জোছনা হতে চাই।অমাবস্যায় হাহাকার হতে চাই মানব মনে।

আলমগীর জনি

গল্প বলি

আলমগীর জনি › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পটা কার? - দ্বিতীয় পর্ব

২২ শে জুন, ২০১৯ রাত ৮:৪২



ঢাকা শহরের খুব নামি একটা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে মাঈশা। কম্পিউটার সায়েন্সের শেষ সেমিস্টারের ছাত্রী সে । গত ১২ সেমিস্টারে তার কোন বন্ধুকে তার বাসায় আসতে দেয় নি।কিভাবে আসতে দিবে ?

মাঈশার বাবা থাকেন না বাসায়। মাঈশার জন্ম হওয়ার পর থেকে সে কখনো দেখে নি তার বাবা আর তার মা একসাথে ছিল।এমনকি দুইজনকে এক সাথে অল্প কিছু সময়ের জন্যও সে দেখে নি। তবে কলিম উদ্দিন নিয়মিতই স্ত্রীর খোঁজ খবর রাখেন। তিনি নিজেই মেয়ের খোঁজখবরও নেন নিয়মিত। ফোন করে জানেন মেয়ের সব খোঁজ খবর। মাঝে মধ্যে তিনি এখানে আসেন। মাঈশা ফোন দিলে তিনি এসে ঘুরে যান ।যখন দেখেন ঘরে স্ত্রী নাই ।তার স্ত্রীকে নিয়ে আরেক জ্বালা। হামিদা বেগম খুব বেশি দরকার না হলে ঘর থেকে বের হন না। এমনও হয় তিনি টানা কয়েকমাস ঘরের ভেতরে ছিলেন।

কলিম উদ্দিন বেশীরভাগ সময় মেয়েকে দেখতেই আসেন। অবশ্য মাঈশা নিজে গিয়েও অনেকবার বাবার সাথে দেখা করে এসেছে। কিন্তু হামিদা বেগম এটা জানতে পারলে সর্বনাশ হয়ে যাবে। কাগজে কলমে তার বাবা মায়ের ডিভোর্স না হলেও এটা প্রায় ডিভোর্সের মতই একটা সম্পর্ক । তবে এ ধরণের সম্পর্ক ভয়ংকর। এক রকম ঝুলে থাকার মত। ২০ তলা কোন ভবনের ১০ তলায় ঝুলে থাকা কোন মানুষ চাইবে হয় সে বাকিটা উঠবে না হয় নীচে পড়ে গিয়ে মরে যাবে। মানুষ মৃত্যু পছন্দ করবে তবে ঝুলে থাকা কিছু পছন্দ করবে না। মানুষ চায় সিদ্ধান্ত। মানুষ শুরু চায় , না হয় শেষ চায়। স্রোত ছাড়া নদীকে মৃত নদী বলা হয়। স্রোত ছাড়া জীবনকেও তাই মৃত জীবন বলা যায়।

অন্যদিকে মাঈশার মা কখন মদের বোতলের ছিপি খুলে বসেন এটা কেউ বলতে পারে না।মাঈশার দাদা দাদী থাকেন গ্রামে। বলে রাখা ভালো তাদের যে স্ট্যাটাস সেখান থেকে এরকম একটা ফ্যামিলিতে ছেলেকে বিয়ে করানো কখনোই সম্ভব ছিল না । মাঈশার মা আর বাবার বিয়ের গল্পটা পরে কখনো বলা যাবে। কথা হচ্ছে মাঈশার মায়ের হঠাত বোতলের ছিপি খোলা নিয়ে। একবার কলিম উদ্দিনের মা বাবা আসেন ছেলের শ্বশুর বাড়িতে। একবার মানে সেটাই ছিল প্রথম এবং সেটাই ছিল শেষ বার। ততদিনে মাঈশার নানা-নানি কেউ জীবিত নাই। নানা-নানি জীবিত থাকা কালেই হামিদা বেগম মদের নেশায় আসক্ত হয়ে পড়েন। রাতে হঠাত হামিদা বেগম নেশা করা শুরু করলেন। মাঈশার দাদা-দাদী খাওয়ার জন্য ভেতরের ঘরে যান। সাথে সাথে হামিদা বেগম গালাগালি শুরু করেন তাদের। এমন গালাগালি যা কেবল রাস্তার মেয়েদের মুখেই মানায়। কলিম উদ্দিনের বাবা সেদিন ছেলেকে ডাক দিয়ে বললেন, এটা কি বিয়ে করলি? এর চেয়ে তো রাস্তার কোন মাগিকে বিয়ে করতি সেটা ভালো ছিল।

কলিম উদ্দিন বাবাকে কিছু বলতে পারল না। কেন সে এই বিয়ে করেছে এটা কলিম উদ্দিন ছাড়া আর কেউ জানে না। যদিও কলিম উদ্দিন বউ নিয়ে বেশ কবার নিজের বাড়িতে গিয়েছিল ।তখন এসব সমস্যা হয় নি । বরং এত বড়লোক বাপের মেয়ে তার বাড়িতে খুব ভালো ব্যাবহার করেছে তার বাবা মায়ের সাথে।ঐ যে বললাম হামিদা বেগম বানিয়ে বানিয়ে গল্প করতো কলিম উদ্দিন এর বাবা মায়ের সাথে। উনারা ভেবেছিলেন কি এক লক্ষী বউ তাদের!

কিন্তু এই বাড়ির কাহিনী ভিন্ন।এখানে সব চলে হামিদা বেগমের খেয়াল খুশি মত।বাড়ির কেয়ারটেকার সেলিমের মাধ্যমে হামিদা বেগম আগেই সব কিনে রাখেন। যখন দরকার এক বোতল দিয়ে যায় আর হামিদা বেগম শুরু করেন তার খাওয়া দাওয়া। বাসায় মাঈশা, তার মা আর কিছু কাজের লোকই আছে শুধু। কাজের লোকদের ডুপ্লেক্স বাড়ির সীমানায় ডোকা নিষেধ। রান্না শেষ হলে কেয়ারটেকার সেলিম গিয়ে সবকিছু নিয়ে আসে।

একবার কেয়ারটেকার সেলিম অসুস্থ ছিলেন। হামিদা বেগম দুপুরের খাবার নেন ঠিক ২ টায়। জোহরের নামাজ পড়ে তিনি জায়নামাজ থেকে উঠেই সোজা ডাইনিং টেবিলে চলে যান। কেয়ারটেকার সেলিম ২ টা বেজে গেছে দেখে তার স্ত্রীকে দিয়ে খাবার পাঠান। সেলিম ভেবেছিল হয়তো বেগম সাহেবা এখনো নামাজ পড়ছেন। তিনি দেখবেন না কিছুই। সেদিন মাঈশার ফাইনাল এক্সাম ছিল। তা না হলে সেলিম সাধারণত মাঈশাকে ফোনে জানিয়ে দেয় সে অসুস্থ। সেলিম জানে এই দুইজন অসুস্থ বাবা মার সন্তান ঠিক অসুস্থ হয় নি।

মাঈশা সম্পূর্ণ আলাদা অন্যরকম একজন মানুষ। একদিন অসুস্থ শরীর নিয়ে কাজ করতে গিয়ে সেলিম অচেতন হয়ে গিয়েছিল ।মাঈশা দেখে ফেলে এটা। মাঈশা তাকে ডাক্তার দেখালো ।
তারপর বলল, সেলিম ভাই আপনার শরীর খারাপ হলে আপনি আমাকে বলতে পারেন।
সেলিম বলল, জানেন তো আপা ।আমি ছাড়া এই বাড়ির গেটে কারো ডোকা নিষেধ।

এরপর থেকে সেলিম কিছু হলে মাঈশাকে জানায়। তো সেদিন হামিদা বেগম যখন দেখছেন তার টেবিলের উপর খাবার নিয়ে আসছে কেয়ারটেকার সেলিমের স্ত্রী তখন তার মেজাজ একদম উপরের লেভেলে চলে যায়। হামিদা বেগম একটা একটা করে প্লেট আর বাটি আছাড় দিয়ে ভাঙা শুরু করেন। সেলিমের বউকে এমন ভাবে গালাগালি করেন সে কান্নাকাটি শুরু করে দেয়।

সেলিম শব্দ শুনে কোন মতে উঠে এল। হামিদা বেগম চেঁচিয়ে বললেন, শুয়োরের বাচ্চা তুই জানিস না এই বাড়িতে কারো ডোকার অধিকার নাই? সেলিম আমতা আমতা করে কিছু বলতে চাইলো। কিন্তু বলতে পারল না।সেলিম এমনিতেই অনেক অসুস্থ ছিল। তার উপর বেগম সাহেবার চেঁচানো শুনে সেদিনও অচেতন হয়ে গেল। এরপর কোন মতে তাকে হাসপাতালে পাঠানো হয়। বলা ভালো, সেদিন সেলিম এভাবে সেন্সলেস না হলে তার চাকুরী সেদিনই শেষ হয়ে যেত।

সেলিম সম্পর্কে আরেকটা তথ্য দেয়া যায়। এই গল্পে সেলিমের একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে দেখেই এটা দিতে হবে। সেলিমের চৌদ্দ গুষ্ঠি ভূঁইয়া বাড়ীতে কাজ করে আসছে। এই বিশাল বাড়ির গোড়াপত্তন করেন অছিমুল হক ভূঁইয়া। তিনি ব্রিটিশ আমলের শুরু থেকেই এখানে থাকেন। অছিমুল হক ভূঁইয়ার একটা ছবি টাঙ্গানো আছে মাঈশাদের বাড়ির দেয়াল । সেই ছবিটার সাইজ ৪ ফিট বাই ৩ ফিট। বিশাল আকারের ছবি। এমন ছবি আরো আছে তবে সেগুলো সাইজে একটু হলেও ছোট। হামিদা বেগমের ছবিও আছে। সেটা ২ ফিট বাই দেড় ফিট। হামিদা বেগমের ধারণা সাইজ ছোট হতে হতে এক সময় এই বাড়ি বিলুপ্ত হয়ে যাবে।কিছুদিন আগে হামিদা বেগম তার মেয়ের ৮ ফিট বাই ৫ ফিট একটা ছবি অর্ডার দিয়ে এসেছে।হামিদা বেগম চান এখন থেকে এই বাড়ির প্রধান হবে কোন মেয়ে।আর এটা তাকে দিয়ে শুরু হলেও এর পূর্ণাঙ্গ রুপ দিবে মাঈশা।এজন্য সবচেয়ে বড় একটা ছবি বানানো হচ্ছে তার।কি অদ্ভুত!

এই বাড়িতে আগে আরো বিশাল অট্টালিকা ছিল। এখন সেরকম কিছুর অল্প ফ্লেভার থাকলেও আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে সর্বত্র । এই আধুনিক বাড়ির ফ্লেভার দিয়েছেন ইমামুল হক ভূঁইয়া ।তিনি মাঈশার নানা। অছিমুল হক ভূঁইয়ার আমল থেকেই এখানে সেলিমদের পরিবারের একজন লোক হলেও কাজ করে। বেশীরভাগ সময় তারা বাড়ির প্রধান কাজের লোক হিসেবেই থাকেন। আধুনিক মার্জিত ভাষায় যাদের কেয়ারটেকার বলে।

সেলিমের বাবা ছিলেন মাঈশার নানার কেয়ারটেকার। মাঈশার নানা বেঁচে থাকতেই এখানে আসা যাওয়া করত সেলিম।বয়সে মাঈশার মা আর সেলিম প্রায় সমবয়সীই।নানা বেঁচে থাকতেই সেলিম কেয়ারটেকারের দায়িত্ব পান। সেলিম দেখতেও অনেক সুদর্শন। মাঈশার নানী সেলিমকে প্রথম প্রথম ভেতরের ঘরে ডুকতে দিতেন না। মাঈশার নানীর ভয়টা তার মেয়েকে নিয়ে। এমন সুদর্শন কেয়ারটেকার এর সাথে অনেক কিছুই ঘটে যেতে পারে তার মেয়ের। কিন্তু ইমামুল সাহেবের বিশ্বাস সেলিম এমন কিছু করতে পারে না। নিমকহারামি ব্যাপারটা সেলিমদের পরিবারের মধ্যে নাই বলেই তারা এত বছর এই বাড়িতে টিকে আছে। কিন্তু সব কিছুর একটা শেষ আছে।সব ভালো সারাজীবন ভালো থাকে না।অনেক পবিত্র জিনিসও এক সময় পঁচে যায়।আর মানুষ তো কারণে অকারণে বদলাবে। মানুষের বদলের পেছনে মানুষের তেমন হাত নাই।সব "খাইচ্চত" এর দোষ।

.......................................চলবে

প্রথম পর্বঃ Click This Link

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে জুন, ২০১৯ রাত ১০:০৫

পাঠকের প্রতিক্রিয়া ! বলেছেন: গুড। গল্পটা বেশ হয়েছে। কিন্তু শিরোনামটা কেমন জানি

২২ শে জুন, ২০১৯ রাত ১০:১৬

আলমগীর জনি বলেছেন: আসলে গল্পের নাম দেয়ার ক্ষেত্রে আমি খুবই আনাড়ি। এটা মাথায় আসল তাই দিয়ে দিলাম।

আপনাকে ধন্যবাদ। সুন্দর মতামতের জন্য ।

২| ২২ শে জুন, ২০১৯ রাত ১১:২৯

রাজীব নুর বলেছেন: খুব সুন্দর।

চলুক।

২৩ শে জুন, ২০১৯ দুপুর ১:০২

আলমগীর জনি বলেছেন: ধন্যবাদ

৩| ২৩ শে জুন, ২০১৯ সকাল ১১:০০

তানজীর আহমেদ সিয়াম বলেছেন: গল্পটা আরো কিছুটা বড় হলে ভালো হত :)

২৩ শে জুন, ২০১৯ দুপুর ১:০২

আলমগীর জনি বলেছেন: আরো কিছু পর্ব বাকি আছে । বড়ই হবে একটু ।

৪| ২৩ শে জুন, ২০১৯ দুপুর ১:০৩

পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: গল্প ভালো লিখেছেন। তবে কতগুলো জায়গায় আরো শ্রুতি মধুর করার সুযোগ ছিল। যেমন রাস্তার কোন ম*** না বলে বাজারে মহিলা বলতেই পারতেন । অন্য এক স্থানে শুয়োরের বাচ্চা জাতীয় অশ্লীল শব্দ ব্যবহার না করে উচ্চারণের অযোগ্য গালিগালাজ বলা যেতে পারতো।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য সুনীল গাঙ্গুলী অনাল বিভিন্ন লেখায় সরাসরি কিছু স্থানে অশ্লীল শব্দ ব্যবহার করেছেন। যেহেতু উনি একজন আইকন কাজেই উনি পাঠকের কঠোর সমালোচনার ধরাছোঁয়ার বাইরে। কিন্তু নবাগতদের ক্ষেত্রে সাহিত্য সৃষ্টিতে এমন অশ্লীল শব্দ যথেষ্ট বিড়ম্বনার কারন হবে। যদিও আপনার সিদ্ধান্ত আপনার নিজস্ব ব্যাপার।
যাই হোক লিখতে থাকুন। আগামী দিনে আরও উন্নতি হবে আশা করি।


শুভকামনা ও ভালোবাসা জানবেন।

২৩ শে জুন, ২০১৯ দুপুর ১:০৮

আলমগীর জনি বলেছেন: আপনার মূল্যবান কথায় বুঝা যায় আপনি যথেষ্ট মনোযোগ দিয়েই পড়েছেন। আসলে ভদ্রমহিলা মাতাল তাই তার মুখের ভাষা বাজে হবে এটাই বাস্তব। বাতস্তবতাটাকে ফুটিয়ে তোলার জন্য সরাসরি এসব শব্দ ব্যাবহার করতে হয়েছে প্রায় অনিচ্ছায়। তবে চেষ্টা করব এসব এড়িয়ে যাওয়ার জন্য। লেখক হিসেবে আমি খুবই নবীন। তাই যেকোন পরামর্শ ভালো লাগে সব সময়।

আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। শুভকামনা রইল আপনার জন্য।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.