নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সূর্য থেকে অসম্ভব শক্তিশালী আলোকরশ্মি চাঁদের উপর পড়ে। সে চাঁদ কিছুদিন জোছনা বিলায় আমাদের মাঝে।অমাবস্যায় কেউ চাঁদকে ভুলে যায় না।অপেক্ষা করে জোছনা ফিরে আসার ।সূর্য না হই ,মাঝে মধ্যে জোছনা হতে চাই।অমাবস্যায় হাহাকার হতে চাই মানব মনে।

আলমগীর জনি

গল্প বলি

আলমগীর জনি › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পটা কার?- শেষ পর্ব

২৬ শে জুন, ২০১৯ রাত ৮:১২


-মাঈশা।
-হুম, বাবা।
-বাড়িটা খুব ফাঁকা ফাঁকা না ?
-হ্যাঁ।
-তোর মায়ের একটা নাম দিয়েছিলাম আমি।জানিস সেটা?
-কি?
-নিশীথিনী।
-কেন?
-ঐ যে রাত জেগে থাকত। যদিও এই নামে খুব বেশি ডাকা হয় নি। কিছু নাম থাকে যে নামে কাউকে না ডাকা হলেও সেই নামটা তার এটা ভাবতে ভালো লাগে।
-মাকে খুব ভালোবাসলে ছেড়ে গেলে কেন?
-ছেড়ে যাই নি। তোর মা চায় নি আমি পাশে থাকি।
-তাহলে মা মাতাল হলে তোমাকে খুঁজত কেন?
-জানি না। আমি হয়তো নিজের দিকটা বেশি ভেবেছি।
-সেলিমের সাথে আমার কথা হয়েছে।
-জানি।
-তুমি ওকে জিজ্ঞেস করেছো?
-নাহ।
-তাহলে? জানলে কিভাবে?
-তোদের কথা আমি শুনেছি।শোন, মাঈশা।
-বল, বাবা।
-তোর মা কি আমাকে মাফ করবে?
-করবে। মা জানে তুমি শুধু তাকেই ভালোবাসো।
-জানলে কিভাবে বলত আমি অনেক মেয়ের সাথে রাত কাটিয়েছি?
-সেটা বেঁচে থাকার সময় জানত।কিন্তু মা কখনো বিশ্বাস করত না। মানুষ অনেক কিছুই জানতে পছন্দ করে কিন্তু বিশ্বাস করে খুব অল্প কিছু

কলিম উদ্দিন সাহেবকে খুব বিমর্ষ দেখাচ্ছে। তিনি যা জানতেন তা সত্য নয় এজন্য নয় । কলিম উদ্দিন এটা আগেই জানতেন। কিন্তু তিনি মেয়েকে অন্য একটা মিথ্যা বলেছেন। মাঈশা তার মাকে অসম্ভব ভালোবাসে। কলিম উদ্দিন মেয়েকে বলতে পারতেন না তোর মা যেকোন সময় মারা যেতে পারে। তিনি চেয়েছেন মেয়ে আস্তে আস্তে তার মা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিক। কলিম উদ্দিনের প্ল্যান মোতাবেক কিছুই হয় নি। উল্টো তার স্ত্রী হামিদা বেগম ঐ রাতেই চলে যান না ফেরার দেশে।হামিদা বেগমের চলে যাওয়াটা সহজে মেনে নিতে তিনি এই প্ল্যান করেছিলেন। এখন তিনিই হামিদা বেগমের চলে যাওয়া মেনে নিতে পারছেন না। মৃত্যু এমন একটা সত্য যা মানুষ মানতে চায় না। যা নিয়ে মানুষ ভাবতে চায় না। তবে প্রতিটা প্রাণেরই মৃত্যু আছে। আচ্ছা প্রতিটা প্রাণ কি মৃত্যু নিয়ে ভাবে

কলিম উদ্দিন আজকে বারবার মেয়ের সামনে দাঁড়াচ্ছেন । কিন্তু সত্যিটা বলতে সাহস পাচ্ছেন না। মাঈশা সত্যটা জানলে অনেক কষ্ট পাবে।মাঈশার বুঝ হওয়ার পর থেকে সে জেনেছে তার মা কিছুদিন আগে থেকেই একটা সমস্যায় ভুগছে। বছরের একটা নির্দিষ্ট সময় হামিদা বেগম মানসিক ভাবে অসুস্থ হয়ে যেতেন। কলিম উদ্দিন এই বিষয়টা জানতেন না। এটা নিয়ে তার মধ্যে একটা অভিমান ছিল। যার জন্য তিনি হামিদা বেগমের সাথে আর বসবাস করতে চান নি। এটাই শুধু একমাত্র কারণ নয় । আগেই বলা হয়েছে শুধু বাবা মায়ের চিকিৎসার জন্য কলিম উদ্দিন বিয়ে করেছিলেন হামিদা বেগমকে। বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান হিসেবে তাকেই দেখতে হতো তার বাবা মাকে। কলিম উদ্দিন কাজের লোক রাখেন নি ।টাকা দিয়ে হয়তো আট দশটা কাজের লোক রাখা যেত কিন্তু তার বাবা মা কি তাদের সন্তানের স্পর্শ পেত? ছোটবেলায় বাবা মাকে ছেড়ে যেমন আমরা কোথাও যেতে চাইতাম না ঠিক বাবা মায়ের বৃদ্ধ বেলায় তারা তাদের সন্তানদের ছেড়ে কোথাও যেতে চান না। কিন্তু বাস্তবতা মেনে বাবা মা'রা আমাদের ছেড়ে দেন। আর পেছন থেকে বড় বড় দীর্ঘশ্বাস ফেলেন। কলিম উদ্দিন সেই দীর্ঘশ্বাস দেখে ফেলেছেন তাই বাবা মাকে নিজ দায়িত্বে দেখেছেন। আর এদিকে তার স্ত্রীর চোখে হয়েছেন ভীলেন। কলিম উদ্দিন হামিদা বেগমকে এসব বলেছেন। এমন পরিবারের সন্তান হয়ে হামিদা বেগম গ্রামে গিয়ে উনাদের সেবা করবেন না। এক পর্যায়ে তিনি কলিম উদ্দিনকে দুচোখে দেখতে পারতেন না।

-মাঈশা।তুই কি আমাকে ক্ষমা করে দিয়েছিস?
-বাবা, মানুষ একবার ভুল করলে তাকে ভুল বলে। তুমি মিথ্যা বলে একবার ভুল করেছো। আমার মা এখন বেঁচে নেই।তুমি আরেকবার ভুল করতে পারবে না। একবার ভুল করলে সেটা ভুল। বারবার করলে তা অপরাধ। ভুলের ক্ষমা আছে, অপরাধের না।
মাঈশা বাবার সামনে থেকে সরে গেল। সে এখন তার মায়ের ২ ফিট বাই দেড় ফিট ছবিটার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। সেলিম তাকে আজ সব বলেছে।মাঈশার জন্মের ঠিক কয়দিন আগে তার বেগম সাহেবা আবার পাগল হয়ে যান। মাঈশাকে গর্ভধারণ করেন একজন সুস্থ মহিলা। কিন্তু তার জন্মের দিন তিনি থাকেন বদ্ধ উন্মাদ। মাঈশার একথা চিন্তা করে ভীষণ কষ্ট লাগছে যে তার জন্মের সময় তার মাকে শেকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছিল। ভাবা যায় ? একজন মা সন্তান জন্ম দিচ্ছেন আর তাকে বেঁধে রাখা হয়েছে। হামিদা বেগম কি তবে সে সব দুর্ভাগা মা দের একজন যারা তাদের সন্তানকে কোলে নিতে পারেন নি জন্মের শুরুর দিনগুলোয়?

সেলিমের সাথে যে সম্পর্কের কথা বলা হয়েছে সেটা সেলিম জানত। কলিম উদ্দিন আগেই সেলিমকে বলে দিয়েছেন যাতে সে মাঈশাকে কিছু না বলে। হামিদা বেগমের ক্যান্সার। স্টেজ ফোরে এসে ধরা পড়ে। যেদিন কলিম উদ্দিন মাঈশাকে কথাটা বলেছিলেন ঠিক তার এক সপ্তাহ আগে। কি অদ্ভুত তিনি যেদিন বললেন সেদিনই হামিদা বেগমকে চলে যেতে হবে ?

মাঈশা বাবাকে খুঁজছে। কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না।বেশ কিছুদিন আগে এই মানুষটা তার মা আর বাবাকে হারিয়েছে। কলিম উদ্দিন এখন খুঁজছেন তার হারিয়ে যাওয়া স্ত্রীকে। হারিয়ে না গেলে এভাবে কেউ কাউকে খুঁজে না। কোন কিছু হারিয়ে না গেলে তার মূল্যটা ঠিক বুঝা যায় না।

আকাশ তুমি হারিয়ে গেলে,
খুঁজব তোমার আকাশটাকে।

ছাদের এক কোণে বেশ কিছু বকুল ফুলের টব ছিল হামিদা বেগমের। এই গাছগুলো কলিম উদ্দিনই খুঁজে এনেছে। গছোট ছোট বকুলের গাছ। অদ্ভুত সুন্দর ভাবে ফুটে থাকে। হামিদা বেগমের প্রিয় ফুল ছিল বকুল। কলিম উদ্দিন বকুল গাছ থেকে ফুল ছিঁড়ছেন ।মাঈশা একটু দূর থেকেই দেখছে এই দৃশ্য। বাবাকে এই মুহূর্তে একটা বাচ্চাছেলে মনে হচ্ছে মাঈশার। কিভাবে হাউমাউ করে কাঁদছে। ছেলেরা "বাচ্চা ছেলে' থাকা পর্যন্ত তাদের কাঁদার অধিকার আছে। এরপর এই অধিকার হারিয়ে যায়।

কলিম উদ্দিন সাহেব এই মুহূর্তে বেশ কিছু বকুল ফুল হাতে নিয়ে স্ত্রীর কবরের দিকে যাচ্ছেন। মাঈশা বাবার পিছু নিল। কলিম উদ্দিন সাহেব আলতো করে এক হাতে হামিদা বেগমের কবরকে ছুঁয়ে দিচ্ছেন। এরপর বুকের উপরের খেজুর গাছের ডালটাকে সোজা করে দিচ্ছেন। আরেক হাতে বকুল ফুল গুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে দিলেন।

ফেরার সময় মাঈশার সাথে তার বাবার দেখা হয়ে যায়।মাঈশা বাবাকে এসে জড়িয়ে ধরে। কলিম উদ্দিন মেয়েকে বলছেন, তোর মায়ের এপিটাফে একটা কথা লিখে রাখবি।
মাঈশা বলল, কি?
কলিম উদ্দিন বললেন,

হৃদয়ে অংকিত-
শুভ্রতার হরিণী।
নিশীথিনী ,
তুমি নিশিথিনী।


তৃতীয় পর্বঃ Click This Link
দ্বিতীয় পর্বঃ Click This Link
প্রথম পর্বঃ Click This Link

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে জুন, ২০১৯ রাত ৮:৩৪

মাহমুদুর রহমান সুজন বলেছেন: চমৎকার কাহিনী বয়ে নিয়ে আসার গল্পটি এখানে এসে মিলিয়ে যাওয়া যেমন কোন পাঠকের কাম্য নয়। যদি আরেকটু থাকতো হয়তো এই গল্পের আরো কোন ছোট গল্পের সাথে পরিচয় হতো। কিন্তু গল্প সেতো একটি ফ্রেমে বাধাঁ তার শেষ শুরু থেকেই। জীবন যে এমন নয়। আপনার গল্প অনেক ভাল লেগেছে। ভাল থাকবেন সবসময়।

২৬ শে জুন, ২০১৯ রাত ৮:৫২

আলমগীর জনি বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।

২| ২৬ শে জুন, ২০১৯ রাত ৯:৫৬

রাজীব নুর বলেছেন: বাস্তব জীবনের গল্প।

২৭ শে জুন, ২০১৯ রাত ১:১৯

আলমগীর জনি বলেছেন: বাস্তব কিনা জানি না।

৩| ২৭ শে জুন, ২০১৯ বিকাল ৪:২৩

মাহমুদুর রহমান বলেছেন: মন ছুঁয়ে গেল

২৮ শে জুন, ২০১৯ রাত ১২:৫৬

আলমগীর জনি বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.