নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সূর্য থেকে অসম্ভব শক্তিশালী আলোকরশ্মি চাঁদের উপর পড়ে। সে চাঁদ কিছুদিন জোছনা বিলায় আমাদের মাঝে।অমাবস্যায় কেউ চাঁদকে ভুলে যায় না।অপেক্ষা করে জোছনা ফিরে আসার ।সূর্য না হই ,মাঝে মধ্যে জোছনা হতে চাই।অমাবস্যায় হাহাকার হতে চাই মানব মনে।

আলমগীর জনি

গল্প বলি

আলমগীর জনি › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পঃ সাইকেল

০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৫:৫৯



আমার ছেলে তপুর জন্য সাইকেল কিনে ফেরার পর দেখি আমার মা মিটিমিটি হাসছেন।
আমি ফিরে এসে বললাম,হাসছ কেন, মা?
মা হেসে হেসেই উত্তর দিলো,কই হাসলাম!

-মা তুমি মিটিমিটি হাসছো।
-এত গুলো সাইকেল দিয়ে কি করবি রে বাবা?
-কি আর করব।তোমার বৌ মা ফোন করে বলেছে তার দাদীর প্রিয় নাতির জন্য সাইকেল নিয়ে যেতে। না হলে বাসায় গেলে হুলস্থুল কান্ড বাঁধাবে। তার একটা সাইকেলে হবে না।দুই তিনটা লাগবে।
-দুই তিনটা কেন লাগবে রে?
-ঐতো এক একটা এক এক রকমের।এই যুগের বাচ্চা বুঝতে হবে না । হা হা হা।

মা অনেকক্ষণ চুপ করে রইলেন।কোন কথা বলছেন না।মানুষের মিটিমিটি হাসির পরে নিরব হয়ে থাকার অর্থ সামনে খারাপ কিছু অপেক্ষা করছে।

যা ভাবলাম সেটাই দেখছি।মায়ের দুচোখ দিয়ে টপটপ করে পানি ঝরছে।আমি টিস্যু এগিয়ে দিতেই মা কথা বলা শুরু করলেন।

তোদের তো এখন চোখ মোছার জন্য টিস্যু আছে। আমাদের ছিল বালিশ। কত রাত আমার বালিশ ভিজেছে তা ঐ উপরওয়ালা ভালো জানেন।এমনও হয়েছে বালিশ ভিজে এর কাভারের রঙ এলোমেলো হয়ে যেত। কিন্তু যার জীবন এলোমেলো চোখের জলে,সে জলে বালিশের রঙ এলোমেলো হলে কি আসত যেত? তোর বাবা দেখতেন হয়তো।কিন্তু কখনো বলার সাহস পেতেন না।এই যে এভাবেই আমার চোখের জল ঝরে পড়ত রোজ রাতে তার কারণ ছিল তোর বাবার একটা শব্দ-অভাব, অভাব আর অভাব।

আমার বাবা গ্রামের একটা স্কুলে পড়াতেন।খুব বেশি যে বেতন পেতেন তা না। গ্রামের স্কুলের একজন শিক্ষক তখন আর কতই বা বেতন পেতেন। এখনকার শিক্ষকরা তো টিউশনি করে ছাত্র পড়িয়ে তাও কিছু ইনকাম করতে পারে। বাবাও ছাত্র পড়াতেন। তবে ঐ গরীব স্কুল শিক্ষককে কেউ পড়ানোর জন্য কখনো কোনদিন একটা টাকা দিতে পারেন নি। বাবা কখনোই তার ছাত্রদের কাছ থেকে টাকা নিতেন না ।
বাবা বলতেন, সরকার তো আমাকে বেতন দিচ্ছেই তাহলে আমি আবার কেন আলাদা করে টাকা নিব ?
মা প্রায়ই বলতেন, বাসায় এসে পড়ানো তোমার চাকুরী না। তোমার চাকুরী স্কুলে।
বাবা প্রতিউত্তরে বলতেন, আমার ছাত্র স্কুলেও আমার ছাত্র, আমার বাড়িতেও আমার ছাত্র। ওদের সাথে আমার টাকা পয়সার সম্পর্ক না।

প্রকৃতি সব কিছুই ফিরিয়ে দেয়। বাবার সেই ছাত্ররা এখনো তাদের প্রিয় জামিল স্যারকে মনে রেখেছেন। জামিল স্যারের ছাত্রকে এই ঢাকা শহরে নিজেদের বাসায় রেখে পড়তে দিয়েছেন।জামিল স্যারের চিকিৎসা থেকে শুরু করে মৃত্যু পর্যন্ত সব কিছু করেছেন তার ছাত্ররা। তার ছাত্রদের প্রিয় জামিল স্যারের জানাজায় এত মানুষ হয়েছে কেউ হঠাত দেখলে বুঝতেও পারত না, মৃত ব্যাক্তিটি খুব সাধারণ একজন স্কুল শিক্ষক ছিলেন।একজন মানুষ তার মৃত্যুর পরটাকে এর চেয়ে ভালোভাবে রাঙাতে পারে?

আমার বাবার ছাত্রদের প্রিয় জামিল স্যারের সন্তান হাসিব মোহাম্মদ এখন অনেক টাকা পয়সার মালিক।গাড়ি আছে, বাড়ি আছে।অনেক টাকা বেতনের চাকুরী করে।

মা আবার শুরু করলেন,
অথচ, দেখ আমার ছেলে আছে এখন।আমার চোখের পানি মুছে দেয়ার জন্য। জানিস হাসিব, তোর বাবাকে আমি জীবনে একবারই কাঁদতে দেখেছি।সেদিন তোর বাবা খুব কেঁদেছিলেন ।কেন জানিস? একটা সাইকেল কিনে দিতে পারে নি বলে। আমি সেদিন খুব বকেছিলাম। একটা সাইকেল কিনে দিতে পারবে না ছেলেকে।কেমন বাবা সে ? তোর হয়তো মনে আছে। আছে না ? ঐ যে তুই তখন ক্লাস নাইনে পড়তি। খুব বালতি,মা, একটা সাইকেল কিনে দিতে বলো বাবাকে। বাবার সাইকেলে যেতে তোর লজ্জা করে। বড় হয়ে গিয়েছিলি বেশ। হা হা হা। অথচ তোর বাবা কিনে দিবে দিবে বলেও কিনে দিতে পারেন নি। লোকটা আর কত পেত স্কুল থেকে? নিজে একটা জামা পরেই সারা সপ্তাহ স্কুলে যেতেন।কখনো কারো কাছে হাত পাততেন না।তোর স্কুল শেষ হবার পর এক প্রকার জোর করে তোর বাবার কয়জন ছাত্র তোকে ঢাকা নিয়ে যায়। এরপর তোর বাবা কতদিন বলেছিল সেই সাইকেল কিনে না দিতে পারার কথা। হাসিব, তোর বাবা এত অভাবে না থাকলে হয়তো তোর শৈশবটা আরো সুন্দর হতো তাই নারে বাবা?

আমি মাকে বললাম,
না তাই না। শুনো মা ,অভাব সবারই থাকে।যে এক বেলা খেতে পায় না তার এক বেলা খাবারের অভাব।যে একটা ভালো কাপড় কিনতে পারে না তার কাপড়ের অভাব।যার ভালো করে দেশ বিদেশ ঘুরতে যাওয়ার শখ কিন্তু টাকা পয়সা নাই তার ঘুরতে যাওয়ার টাকার অভাব।যার বউ নাই তার একটা বউয়ের অভাব।যার মা নাই তার মায়ের অভাব।যার বাবা নাই তার বাবার অভাব।যার ভাই বোন নাই তার ভাই বোনের অভাব।যার কোটি কোটি টাকা আছে কিন্তু সুখ নাই তার সুখের অভাব।আজ আমার সব আছে কিন্তু আমার বাবা নাই।আমার বাবার অভাব। তোমার স্বামী নেই তোমার স্বামীর অভাব। তাই না? আর শুনো, যার কোন অভাব নাই তারও একটা অভাব আছে, অভাব না থাকার অভাব।

মা আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, একদম বাপ কা ব্যাটা।তুই তোর বাবার মত এমন দার্শনিক হয়েছিস কবে থেকে রে ?

মা হুট করে হেসে ফেললেন। আমিও মায়ের সাথে সাথে হাসা শুরু করলাম।

আমি বললাম, বাবা অনেক কষ্ট করত তাই না?
মা বললেন, কষ্ট করতেন তবে লোকটা কষ্ট নিয়ে চলে যান নি।তোর বাবার মৃত্যু অনেকটা শান্তির ঘুমের মত।এক ঘুমে রাত পার। আনিস, তোর বাবাকে একদিন বললাম, মানুষ এত কিছু করে ।ব্যাংক ব্যালেন্স রেখে যায়। তুমি কি করছো?তোর বাবা কি বলেছিল জানিস?
আমি জানতে চাইলাম ,কি?
মা বললেন, তোর বাবা বলেছিলেন, আমি আমার ছেলেকে রেখে যাচ্ছি।

আমি এরপর কি বলব বুঝতে পারছিলাম না। অন্য কোন বিষয় নিয়ে কথা বলা শুরু করলাম।

মাকে বললাম ,তোমার কাছে টাকা আছে?
মা বলল, আছে মনে হয়।তোর বাবার পেনশনের টাকা আছে।আরো কিছু টাকা থাকতে পারে।
আমি বললাম, কত টাকা?
মা বললেন, দাঁড়া দেখি।

মা ভ্যানিটি ব্যাগ খুলে গুনে দেখছেন কত টাকা আছে উনার কাছে। একটু পর আমাকে জানালেন, সব মিলিয়ে হাজার দশেক হবে।
আমি বললাম,চলো এক জায়গায় নিয়ে যাব তোমাকে ।
মা বললেন, আরে চল না ।

আমি ড্রাইভারকে বললাম নবাবপুরের দিকে নিয়ে যেত।

মা জানতে চাইলেন সেখানে কেন? নবাবপুর কোথায়।আমি মাকে কোনরকম বুঝিয়ে বললাম কাজ আছে।গেলে দেখতে পারবে।

নবাবপুর সাইকেলের দোকানগুলোর সামনে আমরা নামলাম। আমি মাকে বললাম, আজ তুমি আমাকে একটা সাইকেল কিনে দিবে।তোমার পছন্দের সাইকেল।

মা আমার দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে আছেন এক দৃষ্টিতে ।তারপর আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলেন।

মা কেন কাঁদছেন সেটা কে না বলতে পারে?মায়েরা সন্তানের সুখেও কাঁদে, দুঃখেও কাঁদে ।

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:৪১

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন:
হৃদয় ছোঁয়া গল্প ।

সব বাবা এই রকমই হয় ।

০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ১০:৫২

আলমগীর জনি বলেছেন: আসলেই।

ধন্যবাদ আপনাকে।

২| ০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ১০:১৯

রাজীব নুর বলেছেন: যা লিখলেন তা কি বাস্তব?

০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ১০:৫২

আলমগীর জনি বলেছেন: পুরো গল্পটার কাহিনি বাস্তব না।তবে বাস্তবের উপর ভেবে লিখা ।

৩| ০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৯ দুপুর ১২:৪৫

কনফুসিয়াস বলেছেন: মাঝে মাঝে সিনেমার গল্প গুলো সত্য হয়। হয়তো নাটকিয় ভাবে কারো জীবনে পুনরাবৃত্তি হয়ে যায়। শিক্ষিত ব্যক্তি অভাবকে এক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে পায়, আবার অশিক্ষিত ব্যক্তি অন্য দিক থেকে দেখতে পায়। কেউ অভাবে ধৈর্য ধরে আর কেউ রেগে প্রকাশ করে। তবুও সবারই অভাব থাকে।

তাও মন বলে- ঘুমিয়ে আছে সকল পিতা, সব শিশুর অন্তরে। পিতা তোমার প্রতি দৃষ্টি নোয়ানো শ্রদ্ধা এবং সমুদ্রের অন্তহীন ভালবাসা। যেখানেই থাক, সৃষ্টিকর্তার ছায়ায় থাক, এই মোর প্রার্থনা।

অসাধারন লেখনি। ধন্যবাদ।

০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৯ দুপুর ১:৫৬

আলমগীর জনি বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে এত সুন্দর করে মন্তব্য করার জন্য ।

৪| ০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৪:০৭

নীল আকাশ বলেছেন: হৃদয় কে ছুয়ে যাবার মতো গল্প।

০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৯ দুপুর ১:৫৬

আলমগীর জনি বলেছেন: ধ্নন্যবাদ ভাই

৫| ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৪:২৬

তানজীর আহমেদ সিয়াম বলেছেন: কাদিয়ে দিলেন বস শেষ বেলায় :(
লেখক হিসাবে আপনি সার্থক :)

০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ৮:১২

আলমগীর জনি বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই। আপনাদের মন্তব্যগুলোই আমার পাওয়া।

৬| ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ১০:০৭

অপু তানভীর বলেছেন: চমৎকার গল্প ।
সন্তানকে কিছু না দিতে পারার কষ্ট একজন বাবার জীবনে সব থেকে বড় কষ্ট !

নিয়মিত লিখে যান ।
:)

০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ১২:২১

আলমগীর জনি বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.