নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সূর্য থেকে অসম্ভব শক্তিশালী আলোকরশ্মি চাঁদের উপর পড়ে। সে চাঁদ কিছুদিন জোছনা বিলায় আমাদের মাঝে।অমাবস্যায় কেউ চাঁদকে ভুলে যায় না।অপেক্ষা করে জোছনা ফিরে আসার ।সূর্য না হই ,মাঝে মধ্যে জোছনা হতে চাই।অমাবস্যায় হাহাকার হতে চাই মানব মনে।

আলমগীর জনি

গল্প বলি

আলমগীর জনি › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছোটগল্পঃ মেঘাদের বাবারা

১০ ই জানুয়ারি, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:১৭



- স্যার, আজ আপনার জন্মদিন।
- শুভ জন্মদিন বলো।
- শুভ জন্মদিন,স্যার।
- তোমাকে অশেষ ধন্যবাদ। এখন বিদেয় হও।
- স্যার,আজ কোথাও যাবেন না?
- কোথায় যাব?
- মেঘার মায়ের কাছে?
- ঐ ফকিন্নির পোলা। তুই কি মেঘার মায়ের দালাল? এক্ষুনি বাহির হ আমার বাড়ি থেকে। তোরে কয়দিন কইসি মেঘার মায়ের কথা আমার মুখের সামনেও আনবি না ? এক্ষুণি বাহির হ তুই।

বড় স্যার এভাবে রেগে যাওয়ার পর আমি উনার রুম থেকে সরে এলাম। বলা উচিত আমার আর সেখানে থাকা উচিত নয়, আমি তা বুঝে গেছি। স্যারের আর আমার বয়সের পার্থক্য কমপক্ষে ৩০ বছর। এই বয়সে স্যারের কাছে আর গালাগালি খেতে ইচ্ছে করছে না। একটা বয়স থাকে যখন মানুষ গালাগালি দিতেও পছন্দ করে আবার শুনতেও পছন্দ করে। আমার সেই বয়সটা আর নাই।

সেই ছোটবেলা থেকে বড় স্যারেদের বাড়িতে আমি থাকি। আরো ভালো ভাষায় বললে আমি এই বাড়িতে কাজ করি । তাই গালাগালি কখন কোন পর্যায়ে যাবে তা আমি খুব ভালো করেই জানি। স্যার অনেক গালাগালি করেন এটা সত্য।তবে বেশীরভাগ সময় গালাগালিটা আমি নিজেই ডেকে নিয়ে আসি। ডেকে আনব না কেন? আমি এই পরিবারের কেউ না হয়েও এই পরিবারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ । এটা আমার দোষ কিনা জানি না।তবে এই পৃথিবীতে কিছু কিছু মানুষ আছে যারা নিজেদেরকে অন্যের জীবনে বেশ গুরুত্বপূর্ণ মনে করে কিন্তু বাস্তবে এদের তেমন একটা গুরুত্ব থাকে না । আমার বেলায়ও এমন কিনা জানি না।

সবচেয়ে বড় কথা এই পরিবারের কেউ দুঃখে কষ্টে আছেন তা দেখতে আমার ভালো লাগে না। মেঘা স্যারের একমাত্র মেয়ে। একজন বাবার কাছে তাঁর মেয়ের চেয়ে কোন প্রিয় কিছু থাকতে পারে না। আমারও একটা ছোট্ট মেয়ে ছিল। কোন এক ঝড়ে সেই ছোট্ট মেয়েটি হারিয়ে যায়। এই যে এত ঝড়, এত তুফান তা কি একজন বাবার কাছ থেকে তাঁর মেয়েকে ছিনিয়ে নেয়া ঝড়ের চেয়েও শক্তিশালী?

আমার বড় স্যারের বাবা মারা যাওয়ার পর থেকেই স্যারকে আমি দেখাশোনা করি। স্যারের বাবা মারা যান স্যারের বয়স যখন ১০ বছর। এরপর উনাদের দুই ভাইকে আমিই দেখেশুনে বড় করেছি।কখনো স্যারদের সম্পত্তির প্রতি এতটুকু লোভ ছিল না আমার। চাইলেই হয়তো স্যারের বাবার রেখে যাওয়া সম্পত্তি আমি গ্রাস করে ফেলতাম। কিন্তু এই গ্রাস করার সাথে সাথেই হয়তো আমাকে গ্রাস করত লোভ। কে না জানে লোভে পাপ আর পাপে মৃত্যু?

স্যারের কাছ থেকে যতবারই কেউ হারিয়ে যায় স্যারকে দেখাশোনার দায়িত্ব আমার কাঁধে এসে পড়ে।এই যেমন মেঘার মা যখন চলে যান স্যার আমাকে ডেকে পাঠান। আমাকে ডেকে পাঠালেন একটা চিঠির মাধ্যমে।বড় স্যার খুব সুন্দর করে চিঠি লিখেন। দুনিয়ার সবচেয়ে সুন্দর বিষয়গুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে চিঠি। আগেকার দিনে মানুষ একটা চিঠির জন্য কত হন্যে হয়ে ঘুরত। ডাক হরকরার সাইকেলের শব্দ এখন হারিয়ে গেছে আধুনিক টেলিফোন কিংবা স্মার্টফোনের শব্দে।আমি বলি কি দুধের স্বাদ দুধ ছাড়া আর কিছুতে কি মেটে ?

আমাকে পাঠানো স্যারের তখনকার চিঠিটা ছিল এমন,

রমিজ চাচা,

মেঘার মা চলে গেছে। তুমি বলেছিলে এই বিয়েটা না করতে ।আমি তোমার কথা শুনিনি। মেঘার মা কেন চলে গেছে তুমি শুনলে অবাক হয়ে যাবে। মেঘার মায়ের চলে যাওয়ার কারণটা আমি কাউকে বলতে পারছি না। রমিজ চাচা, তুমি জানো, আমি তোমাকে ছাড়া আর কাউকে বিশ্বাস করি না। তুমি ফিরে না আসলে আমি দম বন্ধ হয়ে মারা যাব। তুমি হয়তো ভাবতে পারো আমার তোমাকে প্রয়োজন , তাই তোমাকে আবার ডাকছি কিন্তু আদতে তা নয়।

রমিজ চাচা, তুমি এটাও জানো আমি খুব সুন্দর করে গুছিয়ে মিথ্যে বলতে পারি না। গুছিয়ে মিথ্যা বলা নাকি একটা গুণ কিন্তু আমি জানি মিথ্যা মিথ্যাই। তুমি হয়তো সত্যটা বুঝে গেছো এতক্ষনে।

রমিজ চাচা, আমি খুব একা হয়ে গেছি। তুমি কি আবার ফিরে আসবে?

ইতি,
তোমার প্রিয় গুল্লু।

বড় স্যারকে আমি ছোটবেলায় গুল্লু ডাকতাম। গুল্লু ডাকার পেছনে একটা কারণ আছে।বড় স্যার দেখতে একদম গোলগাল ছিলেন। মানে খুব স্বাস্থ্যবান ছিলেন। তখন থেকেই আমি উনাকে গুল্লু ডাকতাম। এই গুল্লু শব্দটা বড় স্যার যখন ব্যাবহার করেছেন এর মানে হচ্ছে তিনি ভয়ংকর বিপদে কিংবা কষ্টে আছেন।

মেঘার মা স্যারের বাড়িতে আসার পর আমি আর বড় স্যারকে গুল্লু ডাকতে পারতাম না।
মেঘার মা একদিন ধমক দিয়ে বললেন, এই হারামজাদা ,গুল্লু কি রে?

বলা ভালো আমি ঠিক সেদিনই বড় স্যারের বাড়ি থেকে চলে আসি।

বড় স্যারদের বাড়িতে আমার কোন সম্মান না থাকলেও আমার আত্মসম্মান বলে ব্যাপারটা খুব আছে। এই পৃথিবীতে কেউ আপনাকে সম্মান না দিক তাতে আপনার কিছু যায় আসে না । কিন্তু যেদিন থেকে আপনি নিজেই নিজেকে আর সম্মান করতে পারবেন না সেদিন থেকেই বুঝবেন আপনি নিজের উপর নিজে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছেন। আপনি নিজেকে হারিয়ে ফেলেছেন।এই নিজেকে হারিয়ে ফেলা ব্যাপারটা খুবই জঘন্য একটা কাজ। তাই আত্মসম্মানবোধ থাকাটা খুবই জরুরি।যদিও আমার মত একজন কাজের লোকের জন্য এসব খাটে না। কিন্তু আমার যেহেতু আত্মা আছে তাই আত্মসম্মানবোধ ও থাকার অধিকার আছে।

বড় স্যার নিজেও আমাকে অসম্মান করেন। তবে এই অসম্মানটা মেজাজ হারালে। কিছু কিছু মানুষকে ছেড়ে আসা যায় না।তাই এই মানুষটার কথায় আমি কখনো কষ্ট পাই না।

তাই সেদিন যখন বড় স্যারের চিঠিটা পেয়েছিলাম বুকের ভেতরটা খুব কেঁপে উঠেছিল খুব। আমি ফিরে আসি আরো একবার। কিন্তু আজ স্যারকে দেখে খুব বিমর্ষ লাগছিল। আমি বড় স্যারের বাসা থেকে বেরিয়ে গেলাম। স্যার স্যারের রুমেই আছেন।

এখন দুপুর ১ টা। আমি বাসা থেকে বের হয়ে সোজা চলে গেলাম মেঘা মামনির স্কুলে। উদ্দেশ্য মেঘা মামনিকে বাসায় এনে স্যারকে চমকে দিবো। জন্মদিনের স্যারপ্রাইজ।

মেঘা মামনির স্কুল শেষ হয় ২ টায়। আমি এর আগেই পৌঁছে যাব। স্কুলের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। ২ টা বাজলেও দেখি মেঘা মামনি স্কুলের গেট দিয়ে বের হচ্ছে না। এভাবে তিনটা বেজে গেলেও মেঘা মামনিকে কোথাও দেখছি না। এক সময় ব্যর্থ হয়ে আমি ফিরে যাই বাসায়।

বাসায় ফিরে দেখি বড় স্যার বাসায় নাই। আমি স্যারকে ফোন দিলাম।

- স্যার ,আপনি কোথায়?
- রমিজ চাচা, আমি মেঘাকে দেখতে এসেছি।
- আপনি না যাবেন না?
- মেঘা খুব অসুস্থ। বাবাকে দেখতে চায়।
- কি হয়েছে মেঘা মামনির?
- শুধু বাবাকে দেখতে চায়।
- স্যার, আপনি ফিরবেন কখন ?
- যখন আমার মেয়ে আর আমাকে দেখতে চাইবে না।

আমি জানি বড় স্যার আর কখনোই ফিরবেন না। বাবাকে দেখতে চাইবে না এই ক্ষমতা কোন মেয়েকে দেয়া হয় নি। আমার মেয়েটার কথা বেশ মনে পড়ছে ।বেঁচে থাকলে হয়তো সেও আমাকে দেখতে চাইত।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই জানুয়ারি, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৫১

আহমেদ জী এস বলেছেন: আলমগীর জনি,




বেশ চমৎকার লেখা । গল্পের ভেতরে মূল চরিত্রের বয়ানে কিছু কিছু উপলব্ধি ভালো লেগেছে।

১০ ই জানুয়ারি, ২০২০ রাত ১০:৫০

আলমগীর জনি বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ রইল।

২| ১১ ই জানুয়ারি, ২০২০ সকাল ৯:৫৩

রাজীব নুর বলেছেন: চমৎকার গল্প।
গল্পে রূপ, রস গন্ধ সব উপাদান আছে।

১১ ই জানুয়ারি, ২০২০ দুপুর ১:৩৫

আলমগীর জনি বলেছেন: ধন্যবাদ রাজীব ভাই ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.