![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
- আমাদের বিয়ের প্রথম দিকের কথা মনে আছে?
- কোন কথা?
- ঐ যে তুমি অনেক অপমান করে কথা বলতে আমাকে? আমার বাবার বাড়ি নিয়ে কথা বলতে? আমাকে বলতে, আমার বাবা লোভে পড়ে তোমার কাছে বিয়ে দিয়েছিল?
দিলুর কথা শুনে আনিস কোন কথা বলছে না। গত ১০ বছর আনিস দিলুর কোন কথারই উত্তর দেয় নি। কিন্তু আজ খুব দিতে ইচ্ছে করসে।
আনিসের দুই পা হাঁটু থেকে কেটে ফেলতে হয়েছে। আনিস এভাবে বেডে পড়ে আছে গত ১০ বছর। অথচ আগের কথাগুলো এই ১০ বছরে আজই প্রথম বলছে দিলু।
- তুমি হঠাত এটা আনলে কেন?
- না মানে।হঠাত মনে পড়ল।
- তুমি সব মনে রেখেছো?
- তো ভুলে যাব?
- না তা যাবে কেন? আমি জানি আমারই দোষ।
- আনিস, একটা ব্যাপার খেয়াল করেছো?
- কি?
দিলু কি এর উত্তর দেয়া শুরু করলো।
আজ ১৫ ফেব্রুয়ারি। ১৯৯৫ সালের এই দিনে আমাদের বিয়ে হয়। যে বিয়েতে তোমার মত ছিল না। তোমার ইচ্ছে ছিল শহুরে কোন ম্যাম সাহেবাকে ঘরে নিয়ে আসবে। ঢাকা শহরে বড় হয়েছো। চলাফেরা চলে অনেক নামি-দামি মডেলদের সাথেও। আর তোমার বাবা কিনা তোমাকে একটা গ্রাম্য "ক্ষ্যাত" মেয়ের সাথে বিয়ে দিয়ে দিয়েছিল।
- দিলু, আজ আমাদের ২৫ বছর হলো?
- না না। আজ আমাদের ১০ বছর হলো। এর আগের ১৫ বছর শুধু তোমার একার ছিল। সেখানে আমি কি ছিলাম আমি এখনো জানি না।
দিলুর চোখে পানি। আনিস ইচ্ছে করলেও এই পানি মুছে দিতে পারছে না। অনেকদিন আগের ঝরে যাওয়া চোখের জল মুছে দেয়ার সাধ্য কারো নাই।সে জলে ডুবুচরের মত হুটহাট জেগে উঠে। সে জল নিজের জন্য আলাদা একটা মানচিত্র তৈরি করে।
আনিস ইতস্তত হয়ে দিলুকে ডাক দিয়ে কথা শুরু করলো।
- দিলু।
- মাফ চাইবে?
- না।
- কেন?
- আমার যে পা জোড়া ধরে তুমি মাফ চাইতে।আমি মাফ চাইতে বাধ্য করতাম শত অন্যায়ের পরও সে পা জোড়া ১০ বছর আগেই তার প্রায়শ্চিত্ত করে নিয়েছে।
- তোমার ধারণা প্রায়শ্চিত্ত হয়ে গেছে?
- হ্যাঁ।
আনিস কাদঁছে। হাউমাউ করে কাঁদছে। তার এই কান্না জুড়ে আছে দশ বছর আগের সেই অন্যায়, অপরাধের স্মৃতিচারণ। আর তার করুণ প্রায়শ্চিত্তের কথা।
- তুমি কাদঁছো কেন?
- কই না তো।
আনিস দুই হাত দিয়ে চোখের পানি মোছার চেষ্টা করছে। যে চোখ প্রায়শ্চিত্তে কাঁদে তার কান্না থামানো খুব কঠিন। আনিস চাইছে দিলু এসে তাকে জড়িয়ে ধরুক। কিন্তু দিলু আসছে না। দিলু এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আনিসের দিকে। দিলু আজকে ঠিক আনিসের সামনেই বসেছে। আনিসকে খুব অসহায় দেখাচ্ছে আজ।
এই মানুষটাই বিয়ের পর সব জায়গায় তাকে অপমান করত। বাসায় সবার সামনে। দিলু কখনোই কিছু বলতো না। এমন না যে দিলুর কান্না আসতো না। কান্না আসতো। দিলু সেই কান্না দাঁতে দাঁতে চেপে রাখতো। দাঁতের ভেতর চেপে রাখা কান্না সুযোগ পেলেই তার অস্থায়ী স্থান থেকে বের হয়ে ঝরতে থাকতো। সেই ঝরে যাওয়া জল দেখার কেউ ছিল না ওই সর্বশক্তিমান ছাড়া।
আনিস বিয়ের পর থেকেই দিলুকে তুই বলে ডাকত। খুব রাতে ঘরে ফিরত। রাত বলা ভুল হবে। আনিস ঘরে ফিরতো খুব ভোরে। এসেই এক ঘুম দিতো। দিলু দেখত মুখে মদের গন্ধ আর গায়ে নারীদের পারফিউম। এসব দেখেও কিছু বলতো না দিলু। কিন্তু একদিন নিজেকে আর ধরে রাখতে পারে নি। দিলু দেখে তার মাতাল স্বামী ভুলবশত মেয়েদের জ্যাকেট পরে ঘরে ফিরেছে। মাতাল হয়ে কি করেছে, কি পরেছে তা বাছবিচারের সময় ছিল না হয়তো।
দিলু এ কথা বলাতেই আনিস দিলুর পেট বরাবর একটা লাথি মারে সেদিন। দিলু, ও আল্লাহ গো বলে মাটিতে লুটিয়ে পড়েছিল। দিলুর "ও আল্লাহ গো" টা জায়গামতো পৌঁছে গিয়েছিল সেদিন।
এর কিছুদিন পরই আনিস এক সড়ক দুর্ঘটনায় দুই পা হারায়। একদম হাঁটু থেকে কেটে ফেলতে হয় আনিসের দুই পা। অনেক চেষ্টা করেছে পা না কাটার। কিন্তু লাভের লাভ কিছুই হয় নি। কেউ একজন কোনভাবে বিচার করে ফেলেন।
এরপর দিলু চাইলেই আনিসকে ছেড়ে যেতে পারতো। কিন্তু দিলু তা করে নি। দিলু বুঝতে পেরেছে আনিসের প্রায়শ্চিত্ত হয়ে গেছে। এখন মানবিক দিক বিবেচনা করে হলেও আনিসকে ছেড়ে যাওয়া ঠিক হবে না। দিলু যায় নি। আরো ১০ বছর এই অসুস্থ স্বামীকে নিয়ে কাটিয়ে দিয়েছে।
আনিসকে নিয়ে গ্রামের বাড়িতে চলে আসে দিলু। আর শহরের বাড়ির ভাড়া দিয়ে খুব সুন্দর চলে যায় তাদের দুইজনের সংসার। ওদের কোন সন্তান নেই।তাতে তাদের দুইজনের কারোরই কোন আফসোস নেই। সন্তান দেয়া নেয়ার মালিক আল্লাহ তা'আলা।যিনি যাকে ইচ্ছা সন্তান দিবেন, যাকে ইচ্ছা দিবেন না।
দিলু চেয়ার থেকে উঠে আনিসের পাশে এসে বসলো।
তারপর বললো, আমি চাইলেই তোমাকে ছেড়ে যেতে পারতাম ১০ বছর আগেই। কিন্তু তোমার প্রায়শ্চিত্ত হয়ে গেছে তাই আর তোমাকে ছাড়ি নি।আসলে এর আগের ১৫ বছর তো তোমার দাসী হয়ে কাটিয়ে দিয়েছিলাম। একটা মায়ায় আবদ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম।কিন্তু আজ মনে হচ্ছে আমি মুক্তি চাই। বাকিটা জীবন আমি মুক্তভাবে থাকতে চাই, আনিস।
- তুমি কোথায় যাবে?
- যেখানে তুমি নেই।
আনিস আর কিছু বললো না। দিলু "আসি" বলে বের হয়ে যাচ্ছে যে কাপড় পরা ছিল তা নিয়েই। দিলুর এই আকস্মিক চলে যাওয়াতে আনিস কিছুই বুঝে উঠতে পারছিল না।
রুমে রাখা সিসিটিভির মনিটরে আনিস দেখছে দিলু তার বাড়ি থেকে বের হয়ে যাচ্ছে।দিলু খুব কাঁদছে।
মেয়েটা সারাজীবন কেঁদে কেঁদেই পার করে দিলো। আনিসের মনে পড়ছে। আনিস কখনোই দিলুকে তেমন পাত্তা দেয় নি যতদিন না আনিসের পা দুটি কাটা পড়েছে। আগের ১৫ টা বছর দিলুর জীবনটা সে নরক বানিয়ে ছেড়েছিল। অথচ দিলু চাইলেই এর প্রতিশোধ নিতে পারতো। কিন্তু নেয় নি। আনিস চাইছে না দিলু এভাবে চলে যাক। এই যে সংসার এর সব দেখে রেখেছিল দিলু। আনিস কখনোই দিলুকে ছাড়া ঘর থেকে বের হয় নি এতদিন।
আনিস কোন ভাবে হুইল চেয়ারে চড়ে বসল। এরপর ঘর থেকে বের হতে চাইছে। আনিস বেরও হলো। হুইলচেয়ারে করে বাড়ির সীমানা পার হয়ে দেখল দিলু বাড়ির সামনে বসে বসে কাঁদছে।
আনিস দিলুকে ডাক দিলো, দিলু।
দিলু আনিসকে এভাবে দেখে অবাক হয়ে গেল।
মুহুর্তেই কান্না থামিয়ে বলল, তুমি বের হলে কেন? আমি সব ভেবেচিন্তেই বের হয়ে এসেছি।আমি একা থাকতে চাই, আনিস।
আনিস দিলুর দিকে তাকিয়ে বলল, তোমাকে ফেরানোর জন্য বের হইনি।
দিলু বলল, তাহলে?
আনিস বলল,তোমাকে কখনো কিছু দিতে পারি নি, দিলু। না পেরেছি স্ত্রীর সম্মান দিতে। কিন্তু পেয়েছি তোমার ভালোবাসা, তোমার করুণা। দিলু, এই বাড়িটা তোমার। আজ থেকে এখানে তুমি থাকবে আর আমি চলে যাচ্ছি।
দিলু জানতে চাইলো, তুমি কোথায় যাচ্ছ?
আনিস বলল, করুণায়ই তো বেঁচে আছি। রাস্তাঘাটে হাত পাতলে কিছু করুণা তো পাব, তাই না?
দিলু আনিসের কথা শুনে ফুফিয়ে কান্না শুরু করলো। দৌড়ে এসে আনিসকে জড়িয়ে ধরে বলল, কেউ কোথাও যাবে না।
১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সকাল ১১:০৩
আলমগীর জনি বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই
২| ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সকাল ৯:৫৩
নেওয়াজ আলি বলেছেন: বিমোহিত হলাম চয়নে।
১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সকাল ১১:০৩
আলমগীর জনি বলেছেন: দোয়া করবেন।
৩| ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সকাল ১০:২০
দেশ প্রেমিক বাঙালী বলেছেন: রাজীব নুর বলেছেন ------- সহজ সরল জীবনের গল্প!
১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সকাল ১১:০৩
আলমগীর জনি বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই
৪| ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সকাল ১১:৪৮
এম এ হানিফ বলেছেন: কেবল দিলুরাই পারে এমন জীবন বেছে নিতে, যাদের কাছে ভালবাসা চিরন্তন। ভালো লাগলো এমন অদ্ভুদ এক জীবনের কান্না মাখা গল্প।
১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সকাল ১১:০৪
আলমগীর জনি বলেছেন: আহ দিলু। ♥
৫| ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ দুপুর ২:৪৯
রাশিয়া বলেছেন: এই ধরণের গল্পে দেখি স্বামী দেভতা পাপের পর পাপ করে, তার প্রায়শ্চিত্ত করে্ কিন্তু ভালোবাসার গুণে স্ত্রী বেচারার মাফ করা ছাড়া কোন উপায় থাকেনা। এরকম গল্প দেখলে আমি আশায় থাকি ডলস হাউসের 'নোরা'র মত একজন শক্তিশালী নারীকে পাবো, যে কিনা নিজের ব্যক্তিত্বের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে স্বামী সংসার সন্তানসহ ত্যাগ করতে পেরেছে।
দিলু মেয়েটা খুব নরম। তাই স্বামীর লাথি গুতাই তার প্রাপ্য। আর পুরুষবাদী লেখককের উপকরণ হবার জন্য এরা বেশ ভাল রসদ দিয়ে যাচ্ছে।
১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ১১:২৬
আলমগীর জনি বলেছেন: পুরুষবাদী লেখকের উপকরণ কথাটা কেমন না? লেখক সত্যিটা তুলে ধরেছেন আমাদের সমাজে যা হয়। নাকি সত্যকে তুলে না ধরে অনকিছু হলে ভালো?
৬| ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৪৮
তামান্না তাবাসসুম বলেছেন: দিলুর ও আল্লাহ গো টা জায়গা মত পৌছে গিয়েছিলো সেদিন।৷ - এই শাস্তি পাওয়ার ব্যাপারটা ভাল লেগেছে। কিন্তু শেষে শাবানার মত ফিরায় না আনলো আরো আনকমন হতো কাহিনীটা।
১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ১১:২৭
আলমগীর জনি বলেছেন: এক গল্পের ভাবনাটা এক রকম।এখানে যেটা হয় সেটাই বলা হয়েছে। আমাদের সমাজে কিন্তু এমনই ঘটে।
৭| ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সকাল ১১:৫৬
রাশিয়া বলেছেন: সত্যকে তুলে ধরার কিছু নেই। সত্য আমাদের সামনেই থাকে সব সময়। আমাদের সাহিত্যে দরকার এমন কিছু নারী, যারা সব ধরণের মায়া কাটানোর ক্ষমতা রাখে। নারীর ভেতরের শক্তি যে কি - তা দেখিয়ে দেয়।
দিলু অভিশাপ দেয়ায় নিজেরই ক্ষতি হল। আনক্যাপাবল স্বামী নিয়ে এখন তাকে জীবন কাটাতে হবে। তার চেয়ে পঙ্গু অথর্ব স্বামীকে লাথি মেরে বের করে দিলেই খুশি হতাম। অন্তত ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেও হত। তাতে তার ক্ষমতা কিছুটা প্রকাশ পেত। দিনশেষে ভালোবাসার করুণ শিকার নারীই।
২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ২:৩১
আলমগীর জনি বলেছেন: সত্যকে তুলে ধরার কিছু নেই শুনে হাসি পেল। যেটা আমরা ঘটাচ্ছি তা বলতে আপত্তি কিসে?
৮| ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ দুপুর ১২:১৫
মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন:
সব গল্প যে সাহসী নারীর মত হবে তা ভাবার কোন কারণ নেই। ব্যকিক্রম ছাড়া যে সমাজ যেমন সেখানের ঘটানাইতো গল্পের পরিনতি। ++++
২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ২:৩১
আলমগীর জনি বলেছেন: এক গল্প এক রুকম হবে। এক দিলু এক রকম হবে
©somewhere in net ltd.
১|
১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সকাল ৯:৪৯
রাজীব নুর বলেছেন: সহজ সরল জীবনের গল্প!