নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সূর্য থেকে অসম্ভব শক্তিশালী আলোকরশ্মি চাঁদের উপর পড়ে। সে চাঁদ কিছুদিন জোছনা বিলায় আমাদের মাঝে।অমাবস্যায় কেউ চাঁদকে ভুলে যায় না।অপেক্ষা করে জোছনা ফিরে আসার ।সূর্য না হই ,মাঝে মধ্যে জোছনা হতে চাই।অমাবস্যায় হাহাকার হতে চাই মানব মনে।

আলমগীর জনি

গল্প বলি

আলমগীর জনি › বিস্তারিত পোস্টঃ

উসমানীয় গল্প

০৪ ঠা জুন, ২০২০ রাত ৯:৪৭



কাচ্চির সাথে কলা মিক্স করে খেতে দেখেই ছেলেটা আমার নজরে এলো।অবশ্য শুধু আমার না।পুরো রেস্টুরেন্টের সবার। অনেকে বেশ হাসাহাসি করছিল।আশেপাশের মানুষদের হাসাহাসি দেখে ছেলেটা বুঝতে পেরেছে হয়তো।মানুষের মুখের ভাষার চেয়েও শক্তিশালী তার শারিরীক অঙ্গভঙ্গি।

ছেলেটার নাম উসমান।এসেছে আফ্রিকার কোন এক দেশ থেকে।বাংলাদেশের কোন এক প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। বয়স আর কতই বা হবে। ১৯ কিংবা ২০। এই বয়সে দেশ ছেড়ে সূদুর আফ্রিকা মহাদেশ থেকে এই দেশে এসেছে পড়ালেখা করতে।

উসমানের সাথে আমার কারণে অকারণে দেখা হওয়া শুরু হলো।এতদিন হয়তো দেখেছি কিন্তু এখন খুব বেশি চোখে পড়ে। কোন মানুষ একবার নজরে পড়ে গেলে তাকে এরপর থেকে সবসময় খুব সহজে দেখা যায়।

একদিন হঠাত আবিষ্কার করলাম উসমান আমার বাসার ঠিক উপরের ফ্ল্যাটেই থাকে।সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় দেখা। আমি ডাক দিলাম। জানতে চাইলাম তার নাম,পরিচয়। সেদিনই আমি প্রথম উসমানের পরিচয় জানি। তবে এই পরিচয়ের আগে উসমানের সাথে ঘটে যাওয়া বেশ কিছু ঘটনা আমাকে বেশ নাড়া দেয়। সেগুলা বর্ণনা দেয়ার আগে একটু উসমান সম্পর্কে বলা যাক। এই গল্পটার নায়ক উসমান। নায়ক না বলে মূল চরিত্র বলা যায়। আর ভিলেন? ভিলেনকে খুঁজে বের করতে গেলে বিপদ হয়ে যেতে পারে।

অনেকে ফেঁসে যেতে পারে। সামাজিক বা রাষ্ট্রীয় জীবনে আমরা প্রায় প্রত্যেকেই ভিলেন। যাই হোক উসমান সম্পর্কে বলা শুরু করি।

উসমানের বাবা নিজের দেশে অনেক বড় ব্যাবসায়ী।শুনেছে বাংলাদেশে শিক্ষার মান খুবই ভালো কিংবা অন্য কোন কারণও জড়িত থাকতে পারে। ছেলেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে তাই বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেন।উসমানরা ২ ভাই ২ বোন।উসমান সবার ছোট। ছোটবেলা থেকেই পড়ালেখায় দুর্দান্ত উসমানকে বাবা চেয়েছিলেন ভালো কিছু বানাতে।উসমানও চলে এলো বাবার স্বপ্ন আর নিজের স্বপ্নটাকে সত্যি করতে।

উসমান ঢাকায় থাকে আফ্রিকান আরো কিছু স্টুডেন্টদের সাথে। এরা এক এক দেশ থেকে এসেছে।অন্যরা তাদের বন্ধু-বান্ধবসহ থাকে।এই ফ্ল্যাটে উসমান শুধু একা। মানে তার পুরাতন কোন বন্ধু নেই।ইন্ট্রোভার্ট উসমানের জন্য তাই ঢাকার মাটিতে বসবাস করা কঠিনই হয়ে গেছে।সবজায়গাই উসমান একা একা যায়। একা হাঁটে, একা খায়। এই শহরে একা মানুষ দুই রকমের। একদল অনেক মানুষের মাঝে থেকেও একা আর একদল শুধুই একা। এই শহরে এত মানুষ তবু এই শহরের সবচেয়ে বড় সমস্যা একাকীত্ব। কি অদ্ভুদ!

উসমানের সাথে ঘটে যাওয়া প্রথম ঘটনাটা আগেই বলেছি। মানে ধরে নিন প্রথম প্যারার ঘটনাটা "ঘটনা-১"। উদ্দেশ্য পরিষ্কার। এখন আমি " ঘটনা-২" থেকে একটা একটা করে বলা শুরু করব।

গলির সেলুনের বড় চেয়ারে পা তুলে বসে আছে উসমান। হঠাত দোকান মালিকের প্রবেশ।লোকটা বাংলা ভাষায় প্রচন্ড গালাগালি করছিল। উসমান হয়তো কিছুই বুঝে নি।কিন্তু ঐ যে বলেছিলাম মুখের ভাষার চেয়েও শক্তিশালী শারীরিক ভাষা কিংবা ইশারার ভাষা। ছেলেটা তাও না বুঝার ভান করে বসে ছিল।তবে মোটামুটি ভয় পেয়েছে এটা বুঝা যাচ্ছে।চেয়ার থেকে পা নামিয়ে অপেক্ষা করছে চুল কাটার।দোকানদারের ভাবটা এমন সে খুব বিরক্ত হয়ে কাজটা করছে, চুল কাটা শেষ হলে দেখলাম সে আমার চেয়ে অনেক বেশি টাকা দিয়েছে চুল কাটার জন্য।

এরপর একদিন দেখলাম সবজি দোকানের সামনে সবজি কিনছিল উসমান। হাবিজাবি অনেক কিছুই কিনল। তবে দেখলাম এখানেও তাকে বেশ চড়া দাম দিতে হচ্ছে। ক্রেতা হয়েও দোকানের ছেলেটা বাজে ব্যাবহার করছে উসমানের সাথে।উসমান এটার বদলি ওটা দিতে বলছে কেন এটাই তার অপরাধ।

উসমানের সাথে ঘটা পরের ঘটনাটা রিকশায়। রিকশাওয়ালাও কি দুর্দান্ত বাজে ব্যাবহার করছে উসমানের সাথে।টাকা তো বেশি নিচ্ছেই।

এরকম আরো অনেক গল্প আছে উসমানের।এ তো গেল এক শ্রেণীর মানুষের ব্যাবহার। উসমানকে তার নিজের বিশ্ববিদ্যালয়ে ও অনেক কিছুর সম্মুখীন হতে হয়েছে। এরকম হাজার গল্প হয়তো আছে।

এবার মুদ্রার অন্যপিঠ দেখা যাক। মনে করি, কোন একদিন এক সাদা চামড়ার মানুষ বাংলাদেশে আসলো। সবাই খুব আগ্রহভরে তাকে দেখছে। রিকশাওয়ালাও কথা বলার সময় বারবার চিন্তা করছে। সবজি দোকানি খুব হাসিখুশিভাবে কথা বলছে। তার বিশ্ববিদ্যালয়ের সবাই তাকে জিজ্ঞেস করছে আরে তুমি এখানে কেন! এই দেশে কেন?

উসমানের সাথে আমার একদিন কফি খেতে ইচ্ছে করে। একসাথে বসে অনেক গল্প করলাম। তাকে বুঝাব আসলে আমরা এমন না।আসলে মানুষ এমন হতে পারে না। কিন্তু কেন জানি আমি উসমানকে কখনো এ কথা ডেকে বলছি না।আমি বলছি না "হেভ এ কাপ অফ কফি উইথ মি, ব্রাদার? "কেন বলছি না ? তাহলে কি আমিও?

যাক উসমানের গল্প আরেকদিন করা যাবে। এখানে গল্প শেষ। উসমানের সাথে যেদিন কফি খাব সেদিন আবার গল্প লিখা শুরু করব উসমানকে নিয়ে। সেদিন হয়তো সব গল্পই নতুন করে লিখা শুরু হবে।

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা জুন, ২০২০ রাত ১০:৩২

কল্পদ্রুম বলেছেন: উসমানকে কোন একদিন কফি খেতে বলবেন।তথাকথিত উচ্চ বংশীয় মুসলমান আর পাশ্চাত্যের মানুষদের দেখে দেখে সাদা চামড়ার প্রতি আমাদের একটা ভয় মিশ্রিত ভক্তি কাজ করে।সাদা চামড়ার দেশে গেলে অবশ্য তখন বাস্তবে ফিরে আসি।

০৪ ঠা জুন, ২০২০ রাত ১০:৩৯

আলমগীর জনি বলেছেন: কথা সত্য ।

২| ০৪ ঠা জুন, ২০২০ রাত ১০:৩৩

কল্পদ্রুম বলেছেন: তবে কাচ্চির সাথে কলা খাওয়ার চিন্তা কিভাবে আসলো!

০৪ ঠা জুন, ২০২০ রাত ১০:৪০

আলমগীর জনি বলেছেন: আফ্রিকান কিছু দেশের মানুষ কলা ছাড়া তাদের খাবার কল্পনা করতে পারে না। আপনি আমি আমাদের প্রেক্ষাপটে ভাবতে পারি।

৩| ০৫ ই জুন, ২০২০ রাত ১২:৫২

রাজীব নুর বলেছেন: সেদিন আফ্রিকা থেকে পড়তে আসা কয়েকজন ছাত্রের সাথে কথা হলো। ওরা খুব ভদ্র। খুব অমায়িক।
উসমানের গল্প ভালো লাগলো।

১৫ ই জুন, ২০২০ রাত ১০:০২

আলমগীর জনি বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই

৪| ০৫ ই জুন, ২০২০ ভোর ৫:৫৩

নেওয়াজ আলি বলেছেন: অনুপম, ভালোই হয়েছে।

১৫ ই জুন, ২০২০ রাত ১০:০২

আলমগীর জনি বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে

৫| ০৫ ই জুন, ২০২০ বিকাল ৪:১৯

পদ্মপুকুর বলেছেন: আমার মনে হয় সে আমাদের সমাজ সম্পর্কে যে ধারণা পাচ্ছে, আপনার উচিৎ হবে এই ছেলেটার সাথে বন্ধুত্ব করে অ্যাটলিস্ট সমাজের আলোকিত অংশটাও দেখার সুযোগ করে দেয়।

ব্যক্তিগতভাবে আমি রাস্তায় বিদেশী দেখলে সাহায্য করতে এগিয়ে যায়, সাদাকালো বুঝিনা। তবে অধিকাংশ সময়েই সেটা সফল হয়না। সাহায্য করতে চাইলে এরা রিফিউজ করে। আমাদের সম্পর্কে এদের ধারণা ভালো না।

১৫ ই জুন, ২০২০ রাত ১০:০৩

আলমগীর জনি বলেছেন: আমাদের এই ধারণা নিজেদেরই পাল্টাতে হবে ।

৬| ০৭ ই জুন, ২০২০ দুপুর ১:৩৮

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: আমার ফ্যাকাল্টিতে একটা ছেলে ইথিওপিয়া থেকে এসেছে পোস্টগ্রাজুয়েশন করতে। পরিশ্রমী, ভালো কাজ করে। ওর পিএইচডি করার ইচ্ছে থাকলে সেটাও মঞ্জুর করা যাবে বলে আমার ধারণা। আফ্রিকানরা ভালো এগিয়ে যাচ্ছে এখন।

১৫ ই জুন, ২০২০ রাত ১০:০৪

আলমগীর জনি বলেছেন: হুম

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.