নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সূর্য থেকে অসম্ভব শক্তিশালী আলোকরশ্মি চাঁদের উপর পড়ে। সে চাঁদ কিছুদিন জোছনা বিলায় আমাদের মাঝে।অমাবস্যায় কেউ চাঁদকে ভুলে যায় না।অপেক্ষা করে জোছনা ফিরে আসার ।সূর্য না হই ,মাঝে মধ্যে জোছনা হতে চাই।অমাবস্যায় হাহাকার হতে চাই মানব মনে।

আলমগীর জনি

গল্প বলি

আলমগীর জনি › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পঃ অপরুপা

০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ৮:৩৮


রাত তিনটায় দেখি বাবার রুম থেকে কান্নার শব্দ আসছে। এই কান্নার শব্দ যে আম্মার তা বুঝতে আমার একটুও কষ্ট হয় নি। এই বাসায় আমি আর আম্মা ছাড়া আর কেউ থাকে না।আমার শৈশব কালে এমন শব্দ শুনলে ধরে নিতাম জ্বীন-পরী কান্না করছে। আম্মাকে পরীর সাথে তুলনা করা যায়। ততকালে আশেপাশের কয়েক গ্রামের সবচেয়ে সুন্দরী মেয়েটার নাম ছিল হনুফা। এই হনুফাকে অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে বিবাহ করেন আমার বাবা হামিদুর রহমান।

বাবার রুমের দিকে এগিয়ে গেলাম আমি।দেখি আম্মা বাবার একটা ছবি দেখে দেখে কাঁদছেন।দরজার শব্দ শুনে আম্মা কান্না বন্ধ করে ফেলেন। আমি লাইট অন করতেই দেখি আম্মা তার চোখের পানি মুছা শেষ করলেন।

'আম্মা।'
'কিরে মা।'
'চলো।'
'কোথায় রে?'
'আমার রুমে।'
'এখন ভালো লাগছে না। তুই যা।ঘুমিয়ে পড়,মা।'
'তুমি যাবে কিনা বলো?'
'আচ্ছা তুই যা আমি আসছি।'

আমি আমার রুমে চলে যাওয়ার দশ মিনিট পর আম্মা আমার রুমে আসলেন।এসে বললেন, রাত কয়টা বাজে আপনার খবর আছে?

আমি বললাম, রাত তিনটার চেয়ে একটু বেশি।

তো আপনি ঘুমাচ্ছেন না কেন?, একথা বলে মা হাসি শুরু করলেন।

মধ্যরাতে মা-মেয়ের এমন কথাবার্তায় যে কেউ অবাক হতে পারে।কিন্তু আমি বা আম্মা আমরা কেউই অবাক না।গত ১০ টা বছর এভাবে আমাদের দিন-রাত কাটছে। আম্মা কখনোই আমার সামনে কান্না করেন না।কিংবা আমিও কখনও বাবাকে নিয়ে কোন কথা বলি না।

'আম্মা।'
'বল।'
'তোমার বিয়ের শাড়িটা কোন রুমে?'
'তোর বাবার রুমে আলমারিতে। হঠাত এটা দিয়ে কি করবি?'
'দরকার আছে।'

আমি দৌড়ে গিয়ে বাবার রুমের আলমারি থেকে শাড়িটা নামিয়ে আনলাম। এরপর আমার রুমে এসে আমার সব মেকাপ বক্স নামালাম।

আম্মার মেয়ে হিসেবে আমি তার রুপের ১০০ ভাগের একভাগও পাই নি। এতে আমার কোন আফসোস নাই। আমি আমার মত। আমি আম্মা থেকে যা পেয়েছি তা হচ্ছে- কীভাবে আত্মসম্মানবোধ রক্ষা করে চলতে হয়। আমি পেয়েছি কীভাবে প্রবল দুঃখের দিনেও মুচকি হেসে দিনের পর দিন পার করা যায়।

আমার এই মেকাপ বক্স বড় মামা দিয়েছে সূদুর যুক্তরাষ্ট্র থেকে। আমার নানার দিকের আত্মীয় আর দাদার দিকের আত্মীয়ের মধ্যে শুধু বড়মামাই আমাদের খোঁজ নেন।মামা বিদেশ থেকে আসলে আমাদের বাসায় এসে তারপর নিজের বাসায় যান।

আমি মেকাপ বক্স খুলে আম্মাকে আমার দিকে ডাকলাম, এদিকে আসো।

'কেন?'
'আসতে বলেছি আসো।'
'এই, তুই কি পাগল নাকি রে?'
' হ্যাঁ,পাগলই।'
'এই রাতের বেলায় কেউ মেকাপ করে? আর আমার মত বুড়ি এখন করবে মেকাপ? তুই দেখি মহা পাগল।'
'কোথাও লিখা আছে রাত ১০ টার পর মেকাপ করা নিষেধ? কিংবা মানুষ বুড়ি হয়ে গেলে আর সাজতে পারবে না? বলো।'
'না। নাই।তারপরও। আমার ভালো লাগছে না। '
'আমার ভালো লাগছে।মেয়ের ভালোর জন্য এটুকুন করতে পারবে না?'
'আচ্ছা। তোর যা খুশি কর।পাগলের ঘরে পাগল একটা।'

আমি হাসি দিয়ে আম্মাকে সাজানো শুরু করি।মুখে ফাউন্ডেশন, ঠোঁটে টকটকে লাল লিপস্টিক,আইলাইনার আর কাজল দিয়ে আম্মাকে সাজালাম। আম্মা আমার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে। এই ধরণের সাজ মধ্যরাতে আমি দেই। আম্মা মাঝেমধ্যে দেখে ফেলে।কিংবা ফেসবুকে আপলোড দিলে কমেন্ট করে।

কয়েকবছর আগে আম্মাকে একটা ফেসবুক আইডি খুলে দেই আমি। আম্মা এর মাধ্যমে মামার সাথে কথা বলেন। উনার কিছু বান্ধবী আছে উনাদের সাথেও কথা বলেন। মাঝেমধ্যে লিখালিখিও করেন।আম্মা খুব সুন্দর কবিতা লিখতে পারেন।আমি একদিন শিখিয়ে দিলাম কিভাবে লিখতে হয়।আম্মা লিখা শুরু করেন।আম্মার বেশিরভাগ লিখাই বাবা আর আমাকে নিয়ে। আম্মা লিখে খুব আনন্দ পান।আম্মার সময় চলে যায় এভাবেই। আমার পোস্ট গুলোয় সবসময় লাইক কমেন্ট করেন। ইদানীং আম্মা আমার ফ্রেন্ডদের ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট দেয়া শুরু করেছেন। আমি না করি না। আমার বান্ধবীদের মেসেজ দেন।গল্প করেন।ওরাও খুব উপভোগ করে ব্যাপারটা।

'এখন কি আমাকে শাড়ি পরানো হবে?'
' জ্বী, হনুফা ম্যাডাম।'
'পাগলামির আর কিছু বাকি আছে?'
'সবে তো শুরু হলো। হা হা হা। '
'হাসবি না একদম।'
'তো কি করব?শাড়িটা কই রাখলাম। এইদিকে দাও।'

আম্মার বিয়ের শাড়িটা তাকে পরিয়ে দিলাম। এরপর আমার একজোড়া জুতা পরতে বললাম।আম্মা শাড়ি পরল।জুতা পরল। আম্মার চুলগুলো বেঁধে দিলাম। সবশেষ করে আম্মাকে বললাম, দাঁড়াও তোমার কয়েকটা ছবি তুলি।

'এই খবরদার ছবি টবি একদম ফেসবুকে দিবি না।'
'আচ্ছা, বাঁধাই করে হামিদুর রহমান সাহেবের রুমে ঝুলিয়ে দিব।'
'মার সাথে কেউ এমন রসিকতা করে? ফাজিল মেয়ে। '

আমি আম্মার দিকে তাকিয়ে আছি।আম্মাকে অপরুপ সুন্দর লাগছে। আম্মার মুখে একটা হাসি। আমি বলেছি, লিপিস্টিক দিয়েছি মুখ হাসিখুশি করে রাখবে। আম্মার ঠোঁটের কোণে একটা হাসি।

আম্মাকে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়ে আমি আম্মার পেছনে দাঁড়ালাম।

'আম্মা'
'কি?
'আম্মা,তোমাকে এত অপরুপ লাগছে কেন?'

আম্মা আমার দিকে তাকাচ্ছেন না। একবার শুধু আয়নায় চোখে চোখ পড়ল।আমি দেখলাম আম্মার দুইচোখ দিয়ে পানি ঝরছে।


মন্তব্য ৮ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ৯:০১

সাগর শরীফ বলেছেন: খুবই সুন্দর। মায়ের সাথে যেন বন্ধুর সম্পর্ক । খুবই ভাল ব্যাপার মায়ের সাথে সন্তানের এমন সম্পর্ক থাকা। লেখাটা খুব ভাল লেগেছে। ধন্যবাদ
আর হ্যা, আমার আম্মার নামও হনুফা।

১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১:৩৬

আলমগীর জনি বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে।

বাহ ! আন্টির জন্য শুভ কামনা রইলো।

২| ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ৯:২২

সাবিনার বচন বলেছেন: ভাল লাগলো লেখনী এবং গল্পটা।

১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১:৩৬

আলমগীর জনি বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে ।

৩| ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১১:৪০

রাজীব নুর বলেছেন: সহজ সরল সুন্দর।

১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১:৩৬

আলমগীর জনি বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে ।

৪| ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১২:২৭

মা.হাসান বলেছেন: হামিদুর রহমান সাহেব কি অন্য জগতে চলে গেছেন? নাকি পরীর প্রতি আকর্ষন হারিয়ে এখন অন্য কারো সাথে?

মা-মেয়ের আনন্দটা থাকুক, দুঃখটা ভুলে যাক।

১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১:৩৭

আলমগীর জনি বলেছেন: সেটা উহ্য রাখলাম।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.