নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

প্রতিনিয়ত নিজেকে শেখার চেষ্টা করছি :)

আলামিন মোহাম্মদ

১৯৮৮ সালের বন্যার কথা বলছি। নভেম্বর মাস কিন্তু এখনো বন্যার পানি পুরোপুরি সরে যায়নি। বন্যায় রাস্তা ঘাট ভেঙ্গে গেছে। সেই সময় টাঙ্গাইল জেলার মির্জাপুর গ্রামের চান মিয়া খুবই চিন্তিত হয়ে আছেন। বাড়িতে পুরুষ ব্যক্তি বলতে একমাত্র সে। তার অনেক দায়িত্ব কারণ তার ভাগনির সন্তান হবে যেকোন মুহুর্তে ব্যথা উঠে যেতে পারে। আশেপাশে কোথাও ডাক্তার নেই, দাই একমাত্র ভরসা। দাইকে খবর দিয়ে রাখা হয়েছে। তিনি একবার আকাশের দিকে তাকাচ্ছেন আরেকবার রাস্তার দিকে তাকাচ্ছেন যদি হাসপাতালে নিতে হয় তাহলে তো মহা বিপদ। ভাগনির স্বামীও সাথে নাই। ঢাকায় কাজে গেছে। দুপুর গড়িয়ে সূর্য পশ্চিম আকাশে হেলে পড়ছে। এমন সময় রসুই ঘর থেকে একটি বাচ্চার কান্নার আওয়াজ আসলো। পুত্র সন্তান হয়েছে আজান দেয়া লাগবে। কিন্তু আলাদা করে আজান দেয়া লাগে নাই। আসরে নামাজের জন্য আহবান করা চারদিকের সকল মসজিদের আজান যেন নতুন ভুমিষ্ট শিশুকে বরণ করে নিল। চান মিয়া আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানালেন। সন্তানের পিতাকে খবর জানানো দরকার। ঢাকায় গিয়ে চান মিয়া সন্তানের বাবাকে খুঁজে পেলেন না। তিনি চিন্তিত হয়ে পড়লেন। বাড়ির প্রতিবেশীকে খবর দিয়ে রাখলেন যাতে বাড়িতে আসা মাত্র টাঙ্গাইলে চলে যায়। পুত্র সন্তান হয়েছে আর পিতা কিনা দূরে তা কি করে হয়? এক সপ্তাহ পর শিশুর পিতা বাড়িতে আসলো এবং পুত্র সন্তানের খবর শুনেই টাঙ্গাইলের পানে ছুটলেন। শিশু পুত্রকে দেখতে চাইলেন কিন্তু গ্রাম্য রেওয়াজ বাধা হয়ে দাঁড়ালো।স্বর্ণ দিয়ে শিশু পুত্রের মুখ দেখতে হবে। শিশুর পিতার তখন এত সামর্থ্য ছিল না স্বর্ণ কেনার। তাহলে কি উপায়? স্বর্ণ ও হলুদ একই ধরনের ধরা হয়। তখন একটি হলুদের টুকরো হাতে নিয়ে শিশুর হাতে দিলেন। সেটি ছিল শিশুর প্রথম উপহার। সেই উপহারটিকে যত্ন সহকারে তার নানী সিকায় তুলে রাখলেন। এভাবে চলে যেতে থাকলো দিন মাস বছর। এভাবে যখন শিশুর আঠারো বছর পূর্ণ হল তখন শিশুর নানী তার হাতে একটি শীর্ণ ও শুকিয়ে যাওয়া একটি হলুদ তুলে দিলেন এবং সেদিনের কথাগুলো পুনব্যক্ত করলেন। ১৮ বছর আগের প্রথম উপহার পাওয়া সেই হলুদ এখন সযত্নে আছে দেখে সেই কিশোরবালক অনেক পুলকিত হল। এরপর লজ্জা পেল যখন সে নানীর বাসনার কথা জানতে পারলো। বাসনা অনুযায়ী এই হলুদ দিয়েই নাতির গায়ে হলুদ দিতে চান। গত ১০ নভেম্বর ২০১২ সেই কিশোরবালক ২৪ বছর অতিক্রম করে ২৫ এ পা দেয়। আজো সেই কিশোরবালক তার নানীর ইচ্ছা পুরণ করতে পারে নাই। আর সেই কিশোরবালক হচ্ছে এই আলামিন মোহাম্মদ

আলামিন মোহাম্মদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যার এর চরণের ধুলা লাভ!

২৫ শে জুলাই, ২০১৫ দুপুর ২:৪৫

শ্রদ্ধেয় শিক্ষক জনাব অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ,

পৃথিবী নামক গ্রহে আজ আপনার ৭৫ তম আগমন বার্ষিকী। এই গ্রহটিকে যাঁরা সত্যের আলোয় আলোকিত করেছেন তাদের মধ্যে আপনি একজন। পত্রের শুরুতে আপনার আগমন বার্ষিকী উপলক্ষ্যে আমার ভালোবাসা ও শুভেচ্ছা গ্রহণ করুন।

আপনি ছিলেন আকাশের চাঁদের মত। আমি ছিলাম একজন বামন মানুষ। তাই বামন হয়ে আপনাকে স্পর্শ করার সাহস কখনোই পাইনি। আর আপনি যখন ঢাকা কলেজের শিক্ষক ছিলেন তখন আমার জন্মই হয়নি। তাই আপনার শ্রুতিমধুর ক্লাস করার অভিজ্ঞতা আমার কখনোই হয়নি। যখন কারো মুখে আপনার ক্লাসের অভিজ্ঞতা শুনতাম তখন মনযোগের সাথে সেই কথা শুনতাম আর একটা অতৃপ্তির ঢেকুর তুলতাম। আপনি হলেন আকাশের চাঁদ। আমার মত বামন হয়ত আপনার চরণের ধুলা কখনো হয়ত নিতে পারবে না। কিন্তু আপনি আমাদের শিখিয়েছেন- মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়। তাই স্বপ্ন দেখা ছাড়িনি।

আপনার চরণের ধুলা নেবার স্বপ্ন আমার খুব ছিল। সেই স্বপ্ন পুরণ হয় ২০১১ সালে। আপনি শুধু চরণের ধুলা দিয়েই শান্ত হোননি আমাকে দিয়েছেন অনেক উৎসাহ ও সাহস। আপনার সেই সাহস পেয়ে এখনো সামনের চলার বন্ধুর পথ অতিক্রম করার সাহস পাচ্ছি।
আমি অজপাড়া গায়ের এক স্কুলে পড়েছি। সেখানে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের গাড়ি পৌঁছাত না। স্কুলে থাকতে আপনার আলোক বার্তা না পেলেও আপনি জেনে আনন্দিত হবেন যে, স্কুল থাকতেই আমার বই পড়ার অভ্যাস ছিল। প্রতিদিন রাতে কোন বই না পড়ে ঘুমালে আমার ঘুম আসত না। আমি গরীব ঘরের সন্তান। আমার এত সামর্থ্য ছিল না বই কেনার। এলাকার বড় ভাইদের কাছ থেকে বই সংগ্রহ করে বই পড়তাম।

যখন কলেজে উঠলাম তখন আপনার কথা জানলাম। আপনার বিশ্বসাহিত্যকেন্দ্রের কথা জানলাম। কলেজে আব্দুল্লাহ আল মামুন নামে আমার এক বন্ধু ছিল। সেই বন্ধু কথায় কথায় আপনার উদ্ধৃতি দিত। আর সে আপনার অনেক ভক্ত ছিল। তার মুখ থেকেই আপনার কথা জেনেছিলাম। তখন শুধু আফসোস হত যদি স্কুলে থাকাকালীন আপনার আলোর গাড়ির দেখা পেতাম তাহলে আমি আরও আলোকিত হতাম। কলেজে থাকতে আমি প্রথম আপনার আলোর গাড়ির সন্ধান পাই এবং সেই আলোর গাড়ির একজন সদস্য হই। আপনাকে কাছ থেকে দেখার খুব ইচ্ছা ছিল। আমার এক সহপাঠী বলেছিল শুক্রবার বাংলামটরের আপনাদের কার্যালয়ে গেলে আপনার দেখা মিলবে। তখন আমার পৃথিবী ছিল ছোট। কুয়োর ব্যাঙ এর মত ছিলাম। সেই কুয়ো থেকে বের হয়ে আপনার কাছে যাওয়া ছিল আমার কাছে মাছ হয়ে ডাঙ্গায় উঠার মত। আপনার চরণের ধুলা নেবার ইচ্ছা থাকলেও সেই ইচ্ছা পূরণ হয়নি। টেলিভিশনের পর্দায় আপনাকে যখন দেখতাম তখন এক নাগাড়ে তাকিয়ে থাকতাম। ২০১১ সালে আমি আপনার প্রথম চরণের ধুলা নেবার সুযোগ পাই। সেই গল্প আপনাকে একটু বলি। সেই ঘটনা আপনি হয়ত ভুলে গেছেন কিন্তু আমার পরিষ্কার মনে আছে।

২০০৭-০৮ শিক্ষাবর্ষে আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হই। এই বিশ্ববিদ্যালয় আমাকে শিখিয়েছে কিভাবে বামন হয়েও চাঁদের সাথে ঘর সংসার করার স্বপ্ন দেখা যায়। পড়াশোনার পাশাপাশি একটি কাজ করতাম। এখন সবাই ভালো কাজ বলে তবে যখন শুরু করেছিলাম তখন সবাই টিটকারী করত। বিভিন্ন জেলায় ঘুরে এবং বিভিন্ন মানুষের কাছে গিয়ে হারিয়ে যাওয়া লোকছড়াগুলো সংগ্রহ করতাম। আমার এই লোকছড়া সংগ্রহ নিয়ে ২০১১ সালে চ্যানেল আইতে রিয়েলিটি শোতে অংশ নেবার সুযোগ পাই। হারিয়ে দাও ছাড়িয়ে যাও ভালো কাজে এই স্লোগানকে সামনে রেখে চ্যানেল আই শুরু করেছিল ‘ক্যাম্পাস হিরো’ নামে একটি রিয়েলিটি শো। এই অনুষ্ঠানে আপনি প্রধান বিচারক ছিলেন। যখন আমাদের ফাইনাল অনুষ্ঠান হয় তখন আপনি এসেছিলেন। আমি আপনাকে কাছ থেকে দেখার সুযোগ পাই। আমাদের সংগঠন লোরক থেকে প্রকাশিত সাময়িকী ‘মাচাঙ’ আপনার হাতে দিয়েছিলাম। আপনি সেই সাময়িকী দেখে অনেক প্রশংসা করেছিলেন। আপনাকে বিভিন্ন মানুষের বঞ্চনার কথা বলেছিলাম। তখন আপনি সাহস দিয়ে বলেছিলেন- 'যারা বঞ্চনা বা টিটকারী করে তাদের মধ্যে কিছু নেই বা তারা কিছু করতে পারে না দেখে টিটকারী করে।' আপনি আমাকে আরও বলেছিলেন- 'দুঃসময়ে যারা টিকে থাকতে পারে সুসময়ে তারাই রাজত্ব করে।'

আমি আপনার সেদিন চরণের ধুলা নিয়েছিলাম। আপনি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়েছিলেন। সেদিন এই বামনের স্বপ্ন পূরণ হয়েছিল। আপনি স্যার এই বামনের জন্য দোয়া করবেন- আপনি যে আলোর মশাল হাতে নিয়ে চারদিকে ছড়িয়ে দিচ্ছেন সেই মশালের উত্তরাধিকারী যেন হতে পারি। আপনি জেনে আনন্দিত হবেন- আমার ক্ষুদ্র সামর্থ্য হলেও যখনই শুনি কেউ পাঠাগার দিচ্ছে তার গ্রামে আমি তখন আমার সাধ্যমত বই দিয়ে এগিয়ে আসি অথবা বই সংগ্রহ করে দেই।

আপনার এই আগমন বার্ষিকীতে আমার একটাই প্রার্থণা- আপনি শতায়ু হোন। আমাদেরকে আরও দীর্ঘদিন আলোকিত করে যান।
ইতি
আপনার একজন ভক্ত
আলামিন মোহাম্মদ
ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস বিভাগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.