![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
হারিয়ে গেছে আমার সকল আশা,,,,,এখন নিরুপায় মানুষ,,,,কাউকে আর বিশ্বাস করি না,,,,
"রেজাল্ট "
"কুত্তা,কুত্তা, কুত্তা! তোর
মতো ছেলেরে পালার
চেয়ে আমি একটা কুত্তা পালতাম
তাও অনেক কাজে লাগতো "
আরেক রুম
থেকে কথা গুলো শুনছে নিলয়।
চোখের
পানি ধরে রাখতে পারছে না সে।
প্রচন্ড পরিমাণ কষ্ট
ভিতরে। ছোট বেলা থেকেই
ভালো ছাত্র ছিল নিলয়।
মা বাবার এক মাত্র সন্তান।
ক্লাস ফাইভ এবং ক্লাস এইট
এ বৃত্তি পায় ছেলেটা।
ম্যাট্রিক এ গোল্ডেন।
বাবা মার অনেক আশা।
ইচ্ছা ছিল
বুয়েটে মেকানিকাল
ইঞ্জিনিয়ারিং পরবে।
ছেলেটা অনেক ভদ্র। আর তাই
এইরকমই একটা ভদ্র
মেয়ে ছেলেটার
প্রেমে পরে যায় কলেজের
প্রথম দিনেই। ঢাকার নাম
করা কলেজে পরে তারা।
মেয়েটাও ভালো ছাত্রি।
প্রতিদিন কলেজ
শেষে নিলয়ের
দিকে তাকিয়ে থাকতো মেয়েটা।
কিন্তু নিলয় খুব
বোকা টাইপ ছিল।
চোখে মোটা মোটা চশমা।
ভালোবাসা নিয়ে কোনো চিন্তাই
আসেনি কখনো।
তবে সে বুঝতে পারে যে একটা মেয়ে প্রায়
সময়ই ওর
দিকে তাকিয়ে থাকে।
একদিন কলেজ
শেষে বাড়ি যাচ্ছিল নিলয়।
হঠাৎ কার যেন
ডাকে দাড়িয়ে পোড়ে সে।
-এই নিলয়!
পেছনে ফিরে তাকায় নিলয়।
হ্যা সেই মেয়েটাই।
-জি? কিছু বলবা?
-হুমম
-কি?
-তোমাকে একটা থাপ্পড়
দেই?
-কেন?
-তুমি আমার নাম জানো?
-নাহ
-এই কারনেই
তোমাকে থাপ্পড় দিবো।
-আমি ত জানতাম
পড়া না পারলে থাপ্পড়
খেতে হয়। নাম
না জানলে থাপ্পড় খেতে হয়
তা ত জানতাম না
-এইটা আমার ক্লাসের নিয়ম
-তোমার ক্লাস?
-হুমম
-তুমি ত টিচার না।
তাহলে ক্লাস কেন নিবা?
-আরে বুদ্ধু এইটা ভালোবাসার
ক্লাস
নিলয় কিছু
না বলে ভো দৌড় দেয়
বাড়ির দিকে।
মেয়েটা হা করে তাকিয়ে থেকে হঠাৎ
হেসে দেয়। এই মেয়েটাই
একসময়
মোটা চশমা পরা বোকা টাইপ
ছেলেটাকে অনেকটা চালাক
বানিয়ে ফেলে। ভালোবাসায়
ত পাগলও সুস্থ হয়ে যায়। আর
নিলয় ত বোকা মাত্র।
শুরু হয় নিলয় আর
রাখি নামের মেয়ের
ভালোবাসার একটা ছোট্ট
গল্প। ধীরে ধীরে গল্পটা বড়
হতে থাকে। নিলয়ের আচার
আচরনেও বেশ পরিবর্তন
আসে।
মেয়েটাকে নিয়ে সে ঘুরে বেড়ায়।
সারাদিন
মেয়েকে নিয়ে কল্পনায়
হাবুডুবু খায়।
আরো পরিবর্তন হয়
পড়াশোনায়। পরিবর্তন
টা অনেকটা এমন যে সেকেন্ড
ইয়ারে কোনো রকম পাশ
করে ওঠে।
এইরকম পরিবর্তনে নিলয়ের
বাবা মাও যেন একটু
বেশি অবাক। তারা তাদের
ছেলেকে নানারকম
ভাবে বোঝানোর
চেষ্টা করে। কিন্তু
ভালোবাসার পাগল ত আর
সেই কথা বোঝে না।
ফলাফলটা অনেকটা এরকম
এসে দাড়ালো যে নিলয়
সেকেন্ড ইয়ারে টেস্টে ফেইল
করে।
বাবা মা বকা দিবে তা স্বাভাবিক
কিন্তু এরচেয়েও খারাপ
একটা সময় তার জন্য
অপেক্ষা করে।
রাখি নামের
মেয়েটা ভালোবাসার
যে ডায়েরি খুলেছিল তা বন্ধ
করে দেয়। কারন একটাই
"আমি এমন কোনো ছেলের
সাথে রিলেশন
রাখতে পারবো না যার
ভবিষ্যৎ অন্ধকার "।
কথাগুলো হয়তো অনেক
কষ্টে মেনে নেয় নিলয়।
কিন্তু অন্ধকার
ঘরে আলো দেয়ার জন্য
কাওকে খুজে পায় না সে।
রিটেস্টের
মাধ্যমে এইচ.এস.সি পরীক্ষা দেয়ায়
সুযোগ পায় নিলয়। কিন্তু
বাবা মা মোটেও খুশি না। এক
ধরনের অস্থিরতার মধ্য
দিয়ে সময় যাচ্ছিল
নিলয়ের। দিন রাত পরিশ্রম
করতে থাকে সে। কিন্তু প্রায়
সময় মেয়েটার শুন্যতায়
ভোগে। প্রথম ভালোবাসা।
তাই হয়তো মনের
ভিতরে আঘাতের
মাত্রাটা একটু বেশি গভীর।
শেষ হয় পরীক্ষা। হ্যা।
অনেক পরিশ্রম করে নিলয়।
কিন্তু দুবছরের পড়া পাঁচ
মাসে পড়াটা একটু বেশিই
হয়তো কঠিন। এরপরেও
কোনো এক আশায় বুক
বাঁধে নিলয়।
কিন্তু হয়তো একটু বেশিই
দেরি করে ফেলেছে নিলয়।
রেজাল্টে নিলয় ৩.৫ পায়।
আশা তার এখানেই ভেঙে যায়।
স্বপ্নের বুয়েট স্বপ্নই
থেকে গেলো।
বাবা এখনো উচ্চশব্দে গাল
দিয়ে যাচ্ছে নিলয়কে।
মা অসহায়
মুখে তাকিয়ে আছে নিলয়ের
দিকে।
রাত একটা।
কাঁদতে কাঁদতে না খেয়েই
শুয়ে পরে নিলয়।
চোখদুটো এখনো ভেজা।
হঠাৎ উঠে পড়ার টেবিলের
দিকে যায়। বইগুলো একবার
দেখে নেয়। এরপর খসখস
আওয়াজে কি যেন
একটা লিখে একটা টুকরো কাগজে।
এরপর ড্রয়ার থেকে ডান হাত
দিয়ে একটা ব্লেড বের
করে নেয়। নিজেকে এই
পৃথিবীতে মুল্যহীন
মনে হচ্ছে নিলয়ের কাছে।
হয়তো আবেগের
বশে সবচেয়ে বড় ভুল
করে বসে সে।
সকাল সকাল খুব খারাপ
মেজাজ নিয়ে ঘুম
থেকে ওঠে নিলয়ের বাবা।
নিলয়ের রুম থেকে কান্নার
আওয়াজ আসছে।
তরিঘরি করে বিছানা থেকে নেমে নিলয়ের
রুমের দিকে যায়।
গিয়ে দেখে নিলয়ের
মা নিলয়ের বুকে পরে কাঁদছে।
কব্জির
রক্তনালী থেকে এখনো ফোটা ফোটা রক্ত
পরছে। মেঝেতে রক্তের
গড়াগড়ি। একটা সাদা কাগজ
রক্তে ভিজে লাল হয়ে আছে।
কাগজটা হাতে নেয় নিলয়ের
বাবা। হাতের
লিখাটা যে নিলয়ের
তা চিনতে ভুল করেন
না তিনি। চোখ
বুলিয়ে লেখাটা নিমিষে পরে ফেলেন
।
"বাবা আমাকে মাফ করে দিও"
তিনি যেন পাথর হয়ে যান।
তাকিয়ে থেকে দেখতে থাকেন
নিলয়ের
বুকে পরে থাকা একটি মায়ের
কান্না। নিলয়ের
দিকে তাকায় তিনি।
কি নিস্পাপ শিশুর
মতো দেখাচ্ছে। হঠাৎ
কান্নায় ফেটে পরে তার বুক।
অশ্রু যেন ঝরনা ধারার রুপ
নিয়েছে তার চোখে।
রুম থেকে কান্নার আওয়াজ
ছাড়া আর কিছুই
শোনা যাচ্ছে না....
©somewhere in net ltd.