নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মন নিয়ে, মনের কথা

ব্যাক্তিগত জীবনে আমি মনোরোগ বিশেষজ্ঞ, সাইকোথেরাপিস্ট। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগবিদ্যাবিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। চেম্বার করি পান্থপথের শমরিতা হাসপাতালে সন্ধ্যা ও রাতে।লেখালেখি আমার কাজ নয়। পারিও না। চেম্বারে রোগী দেখতে গিয়ে নানা অভিজ

ডা. সুলতানা আলগিন

ব্যাক্তিগত জীবনে আমি মনোরোগ বিশেষজ্ঞ, সাইকোথেরাপিস্ট। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগবিদ্যাবিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। চেম্বার করি পান্থপথের শমরিতা হাসপাতালে সন্ধ্যা ও রাতে।লেখালেখি আমার কাজ নয়। পারিও না। চেম্বারে রোগী দেখতে গিয়ে নানা অভিজ্ঞতা হয়। ভাবলাম সেসব এই ব্লগে শেয়ার করবো। যাতে অন্যরা উপকৃত হন। আর হ্যা, চেম্বার ঠিকানা দিলাম; সেটা একরকম বিজ্ঞাপণ বটে। তবে ভুক্তভোগীরা বিএসএম এমইউ'র আউটডোর, এবং বিকালের বিশেষ চেম্বার-সেবার জন্য আসতে পারেন। ব্যাক্তিগত চেম্বারের চাইতেও আকর্ষনীয় আয়োজন। প্রতিটি রোগী দেখা হয়--একাধিক চিকিৎসক মিলে;মেডিকেল অফিসার ও অধ্যাপক সমন্বয়ে। শুক্রবার বাদে প্রতিদিন আছে বিশেষায়িত চেম্বার। আসুন, মুগ্ধ হবেন অবশ্যই।

ডা. সুলতানা আলগিন › বিস্তারিত পোস্টঃ

রোকেয়া হলের সামনে প্রেমিকের চার বছর,কিন্তু কেন

১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সকাল ১১:৪৫

রোকেয়া হলের সামনে প্রেমিকের চার বছর,কিন্তু কে??

কানাডা থেকে প্রকাশিত ইনটারনেট কাগজ

দ্য বেঙ্গলি টাইমস ডটকম-এ খবরটা পড়লাম। অনেকের কাছেই চমকদার মনে হতে পারে। হাস্যকর মনে হতে পারে। খবরে বলা হচ্ছে--

প্রেমিকার অপেক্ষায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলের সামনে চার বছর কাটিয়ে দিলেন পটুয়াখালীর গলাচিপার মামুনুর রশীদ। মামুনের বিশ্বাস তিনি যাকে ভালবাসতেন একদিন না একদিন তার দেখা মিলবেই। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত তিনি রোকেয়া হলের সামনে দাঁড়িয়ে থাকেন। অপেক্ষা ভালবাসার মানুষটির জন্য। একটু সময়ের জন্য কোথাও যান না যদি তার ভালবাসার মানুষটি চলে যায়। তাকে অনেকবার পুলিশের হাতেও তুলে দিয়েছে রোকেয়া হল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ছাড়া পেয়ে এসে আবার এখানেই দাঁড়িয়ে থাকেন।









জানা গেছে, ২০০৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শনে মাস্টার্স মামুন একই বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ইংরেজি বিভাগের এক শিক্ষার্থীর প্রেমে পড়েন। ২০০৭ সালে তার পরিচয় হয় ইংরেজি বিভাগের একটি মেয়ের সঙ্গে। মার্চ মাসে ডিপার্টমেন্টে দেখেন তাকে। তখন তাকে দেখলেই মামুনের কথা বলতে ইচ্ছা হতো, কি যেন মনে হতো। যেন সে তার কত আপন। তাকে নিয়ে সারাক্ষণ ভাবতো। তখন তিনি বুঝতে পারলেন মেয়েটিকে তিনি ভালবাসেন। সেই ধারণা থেকেই তিনি মেয়েটিকে তার ভালবাসার কথা জানালেন। কিন্তু অনিমা তাকে মোটেও ভালবাসতো না। পাত্তা দিতো না। তিনি সেই সময় থেকেই একতরফা ভালবেসে যান। মেয়েটিকে একটু দেখার জন্য তার ক্লাসের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতেন, মেয়েটি রোকেয়া হলে থাকতো তাই তিনি হলের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতেন। কিন্তু কোন সাড়া পেতেন না। তবে তার ধারণা মেয়েটি তাকে ভালবাসে এবং আজীবন ভালবেসে যাবে। এই ধারণা থেকে তিনি আজও মেয়েটির অপেক্ষা দাঁড়িয়ে থাকেন রোকেয়া হলের সামনে।







বেঙ্গলি টাইমসএ প্রকাশিত মামুনের ছবি



জানা গেছে, তবে মেয়েটি এখন আর রোকেয়া হলে থাকে না। তার বিয়ে হয়ে গেছে। চলে গেছে স্বামীর বাড়িতে। কিন্তু এই কথাটি এখন মামুন বিশ্বাস করতে চান না। বাবা-মায়ের সঙ্গে কোন সম্পর্ক নেই। সেই মনের মানুষটিকে ছাড়া তার ভাবনার মধ্যে আর কেউ নেই।একদিন পছন্দের মানুষের দেখা মিলবে এমনটাই বিশ্বাস। এই বিশ্বাস থেকেই অপেক্ষায় কেটে গেছে তার চারটি বছর। এক তরফা ভালবাসায় কাতর মামুন পাগল হয়ে সব কিছু ভুলে গেলেও, মামুন ভোলেনি রোকেয়া হল আর অনিমাকে। আজও তিনি অপেক্ষা করেন তার ভালবাসার মানুষকে পাওয়ার জন্য। দাঁড়িয়ে থাকে। রোকেয়া হলের সামনে। প্রতিটি বিশেষ দিনে অনিমার জন্য লাল গোলাপ ও উপহার হাতে নিয়ে অপেক্ষা করেন। তার বিশ্বাস অনিমা তার উপহার নিতে আসবে। তার মুখে বার বার একটি কথা উচ্চারিত হতে শোনা যায়, ‘সে আসবে। তাকে তো আসতেই হবে। সে আমার ভালবাসা। হয়তো বা পড়ছে, তাই আসতে একটু দেরি হচ্ছে। এই তো এখনি চলে আসবে।’





অনেকেই তাকে বলেছে মেয়েটি এখন আর রোকেয়া হলে থাকে না। কিন্তু কারো কথাই সে বিশ্বাস করে না। মামুন বলেন, আমার সঙ্গে একটু রাগারাগি হয়েছিল তার। অভিমানে কাতর আমার মনের মানুষটি তাই আমার সঙ্গে দেখা করে না। কিন্তু রাগ কমলে সে আসবে। আমি যখন গেট থেকে একটু দূরে যাই তখন সে হল থেকে বাইরে আসে। আমার সঙ্গে তার শেষ দেখা হয়েছিল গত বছরের পহেলা বৈশাখে। তখন আমি কথা বলতে পারিনি। আমার কিছু চাওয়ার নেই। শুধু দেখা হওয়ার অপেক্ষায়। তাই এখানে দাঁড়িয়ে থাকা। আমাকে সবাই পাগল বলে। কাউকে ভালবাসা যদি পাগলামি হয় তাহলে আমি তাই। যে যাই বলুক আমি এখান থেকে যাবো না।



এবার আমার কিছু কথা---

খবরটি পড়ে অনেকেই বিমল কৌতুক অনুভব করতে পারেন। বেচারা ৪ বছর ধরে প্রতিদিন ধর্না দিচ্ছে রোকেয়া হলের সামনে। পুলিশ থানা হয়েছে। জেলটেলও গেছে। তারপরও দমে নি। বেচারা প্রেমিকা যার ছদ্মনাম অনিমা --সে এখন সংসার করছে। তার কোন দোষ নেই। একতরফা প্রেম। কখনই তার দায় কথিত প্রেমিকার ওপর বর্তায় না। অনিমা রোকেয়া হলেও নেই। তবুও কেন মামুন খুজছে তাকে হলের সামনে। আসলে সত্যি বলতে কি মামুনের এই সমস্যা চিকিৎসা যোগ্য মানসিক সমস্যা বা রোগ। সমাজে এমনটা অনেকে ঘটে। কিন্তু আমরা তার চিকিৎসা না করিয়ে বেচারাদের তামাশার বস্তু করে রেখে দেই। আমি এমন রোগীও পেয়েছি যে কিনা মৃত স্ত্রীকে জীবিত ভাবছে। বিশ্বাস করছে। যথাযোগ্য চিকিৎসা দিয়ে তাকে সুস্থ করা গেছে। তবে সার্বিক ও মেয়াদী সুস্থতার জন্য এই ধরনের রোগীদের চিকিৎসা শাস্ত্র সম্মত নিয়মিত চিকিৎসা আবর্তনের মধ্যে রাখতে হয়। এ ক্ষেত্রে হাল ছাড়ার উচিত নয়। মানসিক রোগ কোন পীর মুরশিদি রোগ নয়। সবই অন্য ১০টা সাধারণ রোগের মত রোগ। কিন্তু শিক্ষিত মানুষও এসব কে নানা যাদুটোনা, পরীটানা বলে বিশ্বাস করে। এই পীরালি বিশ্বাস ভাঙতে হবে। এ সব রোগই এলোপ্যাথিক রাসায়নিক ওষুধ ও সাইকোথেরাপি দিয়ে নিরাময় সম্ভব। এই মামুন চিকিৎসা পেলে এভাবে ৪ বছর রোকেয়া হলের সামনে পড়ে থাকত না। সে উচ্চতর পড়াশোনা করেছে। সেটা কাজে লাগাতে পারত। সকলের হাসির পাত্র হত না। রোকেয়া হলের অতি কাছেই রয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল। সেথানে দক্ষিণ এশীয় মানের উন্নত চিকিৎসা হয়। অথচ সে চিকিৎসা না পেয়ে সবার মজার মানুষ হয়েছে।



মামুন কোথায় সুলভ চিকিৎসা পাবেন--



বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল-বিএসএম এমইউ-এ রয়েছে মনোরোগ বিদ্যা বিভাগ। সেখানে উন্নত মানের চিকিৎসা নিশ্চিত করা হয়। সাইকো থেরাপি হয় সুলভে। আউটডোরে সামান্য টাকায় টিকিট কেটে ভাল চিকিৎসা মেলে। যেখানে চেম্বারে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগন/ অধ্যাপকগন সাইকোথেরাপির জন্য ২০০০-২৫০০ টাকা প্রতি সেশন ফি নেন, সেখানে বিএসএম এমইউ মনোরোগ বিদ্যা বিভাগ সেশন প্রতি মাত্র ৩০০ টাকায় সাইকোথেরাপি করে। এজন্য দক্ষ টিম রয়েছে। মামুনকে এখানে নিয়মিত চিকিৎসা করাতে পারেন তার আত্মীয় বন্ধুরা। বিএসএম এমইউ হাসপাতালে শুক্রবার বাদে প্রতিদিন বিকেল বেলা ২টা থেকে ৫টা পর্যন্ত চলে বৈকালিক বিশেষজ্ঞ চেম্বার। এটা ভিসি অধ্যাপক প্রানগোপাল দত্ত স্যারের যুগান্তকারী কাজ। যেখানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক/সহযোগী অধ্যাপক তার ব্যাক্তিগত চেম্বারে ৮০০- ১২০০ টাকা পর্যন্ত ফি নেন, সেখানে বিএসএম এমইউ বিকেল চেম্বারে মাত্র ২০০ টাক ফি নিয়ে রোগী দেখান সম্ভব। অধ্যাপক/সহযোগী অধ্যাপকই রোগী দেখেন। সময় নিয়ে দেখেন। আমি নিশ্চিত করছি মনোযোগ যত্ন নিয়ে রোগী দেখা হয়। কোন গাফিলতি হয় না।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.