![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ব্যাক্তিগত জীবনে আমি মনোরোগ বিশেষজ্ঞ, সাইকোথেরাপিস্ট। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগবিদ্যাবিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। চেম্বার করি পান্থপথের শমরিতা হাসপাতালে সন্ধ্যা ও রাতে।লেখালেখি আমার কাজ নয়। পারিও না। চেম্বারে রোগী দেখতে গিয়ে নানা অভিজ্ঞতা হয়। ভাবলাম সেসব এই ব্লগে শেয়ার করবো। যাতে অন্যরা উপকৃত হন। আর হ্যা, চেম্বার ঠিকানা দিলাম; সেটা একরকম বিজ্ঞাপণ বটে। তবে ভুক্তভোগীরা বিএসএম এমইউ'র আউটডোর, এবং বিকালের বিশেষ চেম্বার-সেবার জন্য আসতে পারেন। ব্যাক্তিগত চেম্বারের চাইতেও আকর্ষনীয় আয়োজন। প্রতিটি রোগী দেখা হয়--একাধিক চিকিৎসক মিলে;মেডিকেল অফিসার ও অধ্যাপক সমন্বয়ে। শুক্রবার বাদে প্রতিদিন আছে বিশেষায়িত চেম্বার। আসুন, মুগ্ধ হবেন অবশ্যই।
পত্রিকান্তরে পড়ে আমরা অনেকেই জেনেছি বাংলাদেশের ক্রিকেটের জনপ্রিয় তারকা সাকিব আল হাসান সম্প্রতি লাইভ ক্যামেরার সামনে অশ্লীল অঙ্গ ভঙ্গি করে দেশে বিদেশে নিন্দিত ও স্বদেশে দন্ডিত হয়েছে। তার কর্ম ছিল অনভিপ্রেত। ক্রিকেট আইনের প্রক্রিয়ায় তার দন্ডও হয়েছে। প্রশ্ন হল কেন এমনটি করলেন সাকিব। জানা যায়, এর আগেও তিনি এমন আচরণ করে বিতর্কিত ও সমালোচিত হয়েছিলেন। বার বার তার এই আচরণ কেন, কিভাবে নিরাময় হতে পারে, তা নিয়ে আমার আলোচনা।
প্রথম আলো বলছে--
দেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন তিনি। এবার তিনি দেশের ক্রিকেটের জন্য বড় একটা খারাপ নজিরও তৈরি করলেন। টেলিভিশন ক্যামেরার সামনে চূড়ান্ত অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি প্রদর্শন করায় বিসিবি তিন ম্যাচের জন্য বহিষ্কার করেছে সাকিব আল হাসানকে। সঙ্গে জরিমানাও করা হয়েছে তিন লাখ টাকা। বিসিবির এই শাস্তির কারণে শ্রীলঙ্কা সিরিজের আজকের ম্যাচটি ছাড়াও সাকিব খেলতে পারবেন না ভারত ও আফগানিস্তানের বিপক্ষে এশিয়া কাপের প্রথম দুই ম্যাচেও।
ঘটনাটা শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে পরশুর দ্বিতীয় ওয়ানডে চলাকালে। আউট হওয়ার পর ড্রেসিংরুমের ভিউয়িং এরিয়ায় ট্রাউজার আর তোয়ালে গায়ে সতীর্থদের সঙ্গে বসে ছিলেন সাকিব। টেলিভিশন ক্যামেরায় পর পর দুবার তাঁকে দেখানো হয়। তৃতীয়বার আবারও ক্যামেরা তাঁর দিকে তাক করা হলে সেই অশ্লীল অঙ্গভঙ্গিটি করেন সাকিব।প্রথম আলো সহ পত্রিকা গুলো এই ঘটনার নিন্দা করেছে কঠোর ভাষায়। প্রথম আলো বলছে--
বাংলাদেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় তারকা সাকিব এ দেশের ক্রিকেটের বড় এক দূতও। ক্ষণিকের জন্য সেটা যেন ভুলেই বসলেন তিনি! বিতর্কিত আচরণ এর আগে কয়েকবার করলেও এবারেরটি ছাড়িয়ে গেছে সবগুলোকেই।
বিষয়টি উপলব্ধি করেই ফেসবুকে নিজের অফিসিয়াল ফ্যান পেজে দুঃখ প্রকাশ করেছেন সাকিব।
তিনি সেখানে লিখেছেন:
‘প্রিয় সমর্থক ও ভালোবাসার ক্রিকেট দল, গতকালের ম্যাচে আমার আচরণের জন্য আমি ভীষণ দুঃখিত। হঠাত্ আউট হয়ে যাওয়ায় ভীষণ ভেঙে পড়েছিলাম। আমি আবেগ সামলাতে পারিনি। অনেকে আমাকে আদর্শ মনে করেন। ফলে এভাবে প্রতিক্রিয়া প্রকাশ না করাই উচিত ছিল। বিসিবি, সতীর্থ, সমর্থক এবং সকল বাংলাদেশির কাছে আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি। ভবিষ্যতে যাতে এমনটা না হয়, তার সর্বোচ্চ চেষ্টা করব। টাইগাররা এগিয়ে যাও!—সাকিব আল হাসান’
চিকিৎসক হিসেবে আমার কথা----
তথ্য গুলো জানলাম। এবার আমার কথা। এখানে আমরা নোটিশ করতে পারি যে--সাকিব একাধিকবার এমন আচরণ করলেন। আগে সেজন্য ক্ষমা চেয়ে নিজেকে শুধরাতে পারেন নি। যেখানে একটি দেশের সম্মান তার আচার আচরণের উপর জড়িত সেখানে তার দায় দায়িত্ব অনেক বেশী। সাকিবের এই বারংবার আচরণের কারণ অনুসন্ধানের জন্য চিকিৎসা বিজ্ঞানে বিশেষ করে মানসিক রোগ বিজ্ঞানে পদ্ধতি রয়েছে। একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ সহজেই সেই পদ্ধতি অনুযায়ী সাকিবের এই বার বার আচরণের কারন জানতে পারেন। সহজে বলি- এর নেপথ্যে কারণ থাকতে পারে সামাজিক, পারিবারিক-- পারিবারিক সংস্কৃতির। কারন হতে পারে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগত, বংশগতির। পারিবারিক সামাজিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগত পরিবেশের। বন্ধু বান্ধব আত্মীয় স্বজনের আবহের।
যেহেতু এই বিশ্বখ্যাত ক্রিকেটারকে যথোচিত নিরাময়ের টেবিলে আনা হয় নি--সুতরাং ধারনার বশে আমি কোন কারণ কল্পনা করতে চাই না।
তবে যেহেতু বিষয়টি বার বার ঘটছে - এবং সাকিবের ওপর নির্ভরশীল একটি দেশের ইমেজ সুতরাং একেবারেই গুরুত্ব না দিয়েও পারছি না। আমার উদ্বেগ বারা বার ঘটায়। সংশ্লিষ্টদের জানার কথা--বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের জন্য একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ আছেন। কাউন্সেলর ও সাইকোথেরাপিস্টও আছেন। এটা আমার জানা একারণে যে ইতোপূর্বে আমার সুযোগ্য সহকর্মী বিশিষ্ট মনোরোগ বিশেষজ্ঞ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগ বিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সালাহউদ্দিন কাউসার বিপ্লব অত্যন্ত সাফল্যের সাথে ওই গুরু দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি জনপ্রিয় লেখক কলামিস্ট। তার আমলে এধরণের ঘটনা ঘটে নি বলে তিনি ক্রিকেটার শুভানুধ্যায়ী মহলে অতি প্রশংসাভাজন বলে শুনেছি। পরিষ্কার ভাবে বলতে চাই বর্তমানে যারা এই জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের মন-যত্নের কাজ করছেন--তারা নিসন্দেহে সুযোগ্য--এবং কাজ তারা প্রয়োজনীয় যত্ন নিয়ে করছেন। তাদের কর্মতৎপরতা নিয়ে কোনরকম সংশয় আমি পোষন করি না। তারপরও কেন এমনটা ঘটল। সে কি সাকিবের মুহূর্তের ভুলে। মুহূর্তের ভুল বার বার কেন হবে ! আর বার বার হলেই সেটি রোগের পর্যায়ে পড়বে। এবং অবশ্যই তা নিরাময় যোগ্য।
সাকিব বারা বার ক্ষমা চাইবেন--বিসিবি বার বার তাকে শাস্তি দেবে জরিমানা করবে-- এমন টা কাংখিত নয়। বরং দরকার এমনটা যেন না ঘটে।
সেজন্য দরকার এধরণের আচরণ কারী ক্রিকেটার বা তারকাদের আচরণের কারন জানা। সেই অনুযায়ী চিকিৎসা। কাউন্সেলিং। প্রয়োজনে সাইকোথেরাপি। আমরা জানি, অন্য দেশের ক্রিকেটার বা অন্য জগতের তারকারাও এমন ভুল করে থাকেন। ফিলেমর তারকা , রাজনীতির তারকারাও করেন। উপমহাদেশের শীর্ষ চিত্রতারকা শাহরুখ খান মাত্রাজ্ঞান ছাড়া আচরণ করে একাধিকবার সমালোচিত হয়েছেন। এটা সবাই জানি। কিন্তু সেসব আচরণের পর শাহরুখ খান যেটা করেন, সেটাই আরও চমৎকার। তিনি যাতে মেজাজ না হারান, এজন্য নিজ উদ্যোগে মনোচিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। কাউন্সেলিং-সাইকোথেরাপি নেন। এমন কি মাঝে মধ্যে ভারতের নিঝুম এলাকায় অবস্থিত মাইন্ড কেয়ার সেন্টার --বা মনোভুমিতে মেয়াদী চিকিৎসা নিতে সময় দেন।
সমস্যা আচরণ নিয়ে তো বটেই।প্রশ্ন হল তার নিরাময় আছে কিনা। আমি এই মেসেজটাই দিতে চাই-- অবশ্যই নিরাময় আছে। অবশ্যই নিরাময় আছে সাকিবের এই বার বার রিপিটেড অনাকাংখিত আচরনের। এজন্য তাকে নিয়মিত মনিটরিংএর মধ্যে রাখতে হবে। তার দায় দায়িত্ব , তার অবস্থান , মর্যাদাবোধ সম্পর্কে নিয়মিত কাউন্সেলিং ও থেরাপি দরকার।
আর এধরণের রোগীদের কোন রাসায়নিক পথ্য দরকার আছে কি না , সেটা নিরাময়ের পর্যবেক্ষনে বলা সম্ভব।
©somewhere in net ltd.
১|
২৩ শে এপ্রিল, ২০১৪ দুপুর ২:৫৭
নিঃশব্দ শিশির! বলেছেন: ভালো লিখছেন!! ধন্যবাদ!