![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ব্যাক্তিগত জীবনে আমি মনোরোগ বিশেষজ্ঞ, সাইকোথেরাপিস্ট। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগবিদ্যাবিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। চেম্বার করি পান্থপথের শমরিতা হাসপাতালে সন্ধ্যা ও রাতে।লেখালেখি আমার কাজ নয়। পারিও না। চেম্বারে রোগী দেখতে গিয়ে নানা অভিজ্ঞতা হয়। ভাবলাম সেসব এই ব্লগে শেয়ার করবো। যাতে অন্যরা উপকৃত হন। আর হ্যা, চেম্বার ঠিকানা দিলাম; সেটা একরকম বিজ্ঞাপণ বটে। তবে ভুক্তভোগীরা বিএসএম এমইউ'র আউটডোর, এবং বিকালের বিশেষ চেম্বার-সেবার জন্য আসতে পারেন। ব্যাক্তিগত চেম্বারের চাইতেও আকর্ষনীয় আয়োজন। প্রতিটি রোগী দেখা হয়--একাধিক চিকিৎসক মিলে;মেডিকেল অফিসার ও অধ্যাপক সমন্বয়ে। শুক্রবার বাদে প্রতিদিন আছে বিশেষায়িত চেম্বার। আসুন, মুগ্ধ হবেন অবশ্যই।
ঢাকার নাটক মাঝেমধ্যে দেখার চেষ্টা করি। কিন্তু অতি নিম্নমানের ভাঁড়ামি-অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি--নাগরিকভাষা নামের কদর্য বাংরেজী, বরিশাল নোয়াখালি চট্টগ্রামের ভাষায় ফালতু সংলাপ দিয়ে ভাবখানা যেন অস্কার পুরষ্কার মানের কাজ করে ফেলছে। কাহিনীর জোর নেই। ২/৪ মিনিটের বেশী দেখলে অস্বস্তি লাগে। বাধ্য হয়ে জলনুপুর--বাহা-- দেখে সবাই। আহামরি কাহিনী হয়তো নয়-- কিন্তু সেসব ধারাবাহিকে ওপার বাংলার উপন্যাসের মত সাবলীল--গতিময়--গাথুনি--জীবন ঘেষা আবেগ--দর্শকদের টানছে। হুমায়ুনের প্রথমদিকের উপন্যাসনির্ভর ধারাবাহিক--আতিকুল হক চৌধুরীর নাটকে অসাধারণ কাহিনী ছিল। তখন এখনকার মত মেধাবী অভিনেতা কম ছিল। কিন্তু ছ্যাবলামি ছিল না। তাই ওপার বাংলার দর্শকও দেখত। এখন ঠিক উল্টো। হিন্দি সিরিয়াল রেখেই বাংলাদেশের দর্শক স্টার জলসার জল নুপুর, বাহা--ইষ্টিকুটুম দেখে।জী-বাংলার বয়েই গেল; দাদাগিরি দেখে।
অথচ আমাদের মোশাররফ করীম, সিদ্দিক, রওনক হাসান,জয়া মাসউদ, সহ অনেক ভাল অভিনয় শিল্পী আছে।
পত্রিকাগুলো বলছে--ক্রমান্বয়ে বৈচিত্র্য হারাচ্ছে স্বদেশী টিভি অনুষ্ঠান। দু’-একটি ভাল অনুষ্ঠান পাওয়া গেলেও তার মধ্যেই চলছে বিরামহীন বিজ্ঞাপন আর খবর-বুলেটিনের লাগামহীন যন্ত্রণা। সেই সূত্রে টিভি দর্শকদের পাশাপাশি বিদেশী টিভি চ্যানেলে নিয়মিত রপ্তানি হচ্ছে দেশীয় বিজ্ঞাপন। যেখানে দেশীয় চ্যানেলগুলোই বিজ্ঞাপন কিংবা বাজেটের অভাবে কাতরাচ্ছে। ভাল অনুষ্ঠান সমপ্রচারের অন্তরায় হিসেবে টিভি কর্তৃপক্ষ বার বার দোহাই দিচ্ছেন বিজ্ঞাপনদাতাদের; অথচ সেই বিজ্ঞাপন বাজার দর্শকদের সঙ্গে ক্রমশ পাড়ি জমাচ্ছে ভারতীয় বাংলা এবং হিন্দি টিভি চ্যানেলে। যা অনেক দিন ধরেই ‘রেড এলার্ট’ হয়ে ধরা দিচ্ছে দেশের সচেতন দর্শক, সমালোচক এবং টিভি সংশ্লিষ্টদের কাছে। অথচ এ নিয়ে সম্মিলিতভাবে তেমন কোন উদ্যোগ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। না উদ্যোগী হচ্ছে টিভি কর্তৃপক্ষ, না ভাবছে সরকার। এমন লেজেগোবরে পরিস্থিতিতেও দেশীয় টিভি চ্যানেলের তালিকায় নতুন করে যোগ হয়েছে আরও ১৩টি বেসরকারি চ্যানেল! চলমান পরিস্থিতিতে নতুন এই টিভি চ্যানেলগুলো চ্যালেঞ্জ নিয়ে ভাল কিছু করার সম্ভাবনা এরই মধ্যে ফিকে হয়ে উঠেছে। কারণ, পূর্ণাঙ্গ সমপ্রচারে থাকা ২২টি চ্যানেলের মধ্যে হাতেগোনা দু’-চারটি ছাড়া বাদবাকি বেশিরভাগ স্টেশনের আর্থিক অবস্থা খুবই নাজুক বলে খবর আসছে প্রতিনিয়ত। চ্যানেলগুলোর বৈচিত্র্যহীন অনুষ্ঠান, কম বাজেটে অনুষ্ঠান নির্মাণ প্রবণতা, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনিয়মিত বেতন-ভাতাসহ নানাবিধ তথ্য টিভি শিল্পের নাজুক অবস্থা স্পষ্ট করছে।মানবজমিন বলছে ---পুরনো টিভি চ্যানেলগুলোর মধ্যে শত প্রতিকূলতার মধ্যেও নিজের অবস্থান অটুট রাখতে পারছে মাত্র চারটি প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে রয়েছে চ্যানেল আই, এনটিভি, এটিএন বাংলা ও বাংলাভিশন। এর বাইরে প্রচার চলতি সর্বোচ্চ ৮টি টিভি চ্যানেলের অবস্থা ভাল-মন্দ মিলিয়ে চলছে। আর বাকি ১০টি টিভি চ্যানেলের অবস্থা একেবারেই নাজুক। এর সঙ্গে গেল বছর হুট করে লাইসেন্স পাওয়া নতুন ১৩টি টিভি চ্যানেল স্যাটেলাইট সমপ্রচার বহরে যোগ হওয়ার কথা রয়েছে এ বছরেই। যদিও এসব টিভি চ্যানেলের বেশিরভাগই শেষ পর্যন্ত সমপ্রচারে আসতে পারবে কিনা সে বিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহ পোষণ করছেন টিভি সংশ্লিষ্টরাই। টিভি শিল্পের এমন অতি ফলন এবং সেসব নষ্ট হয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, এবার যেমন আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে, তেমনি দাম পাননি বলে কৃষকরা তাদের শ্রম-ঘাম দিয়ে চাষ করা আলুর বস্তা বানের জলে ভাসিয়েও দিয়েছে। আমাদের টেলিভিশন ইন্ডাস্ট্রির অবস্থাও সেদিকেই যাচ্ছে। কারণ, প্রয়োজনের তুলনায় বেশি ফুলে-ফেঁপে গেছে, তাই আমরা দর্শক হারাচ্ছি। দেশের আয়তন, জনসংখ্যা এবং বিজ্ঞাপন বাজার অনুপাতে যেখানে টিভি চ্যানেল থাকা উচিত ছিল মাত্র সাত-আটটি, সেখানে এখন অগুনতি চ্যানেল। এসব হচ্ছে রাজনৈতিক অভিলাষের কারণে। ফলে একটা দুষ্টচক্র তৈরি হয়েছে। ব্যাপারটা ব্যাখ্যা করলে দাঁড়ায়, চ্যানেল বাড়ছে, তাই বিজ্ঞাপন রেট কমছে। বিজ্ঞাপন রেট কমায় চ্যানেল বাজেট দিতে পারছে না, তাই ভাল অনুষ্ঠান নির্মাণ হচ্ছে না। ফলে দর্শক দেখছে না, চলে যাচ্ছে স্টার জলসা কিংবা জি বাংলায়। দর্শক দেখছে না বলে বিজ্ঞাপনদাতারা বিজ্ঞাপন কমিয়ে জি বাংলা, স্টার প্লাসে চলে যাচ্ছে। এই দুষ্টচক্রের কারণে ইন্ডাস্ট্রির অবস্থা আরও কাহিল হবে। আমরা দর্শক হারাব। এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। এদিকে বিভিন্ন জরিপে দেখা যায়, চিত্তবিনোদনের আশায় হাতেগোনা কিছু দর্শক এখনও দেশীয় টিভি চ্যানেলে চোখ রাখেন। এর মধ্যে নন-ফিকশন কিংবা রিয়েলিটি শো’র সংখ্যা একেবারেই কম। তবে মধ্যরাতের মিউজিক্যাল লাইভ অনুষ্ঠান এবং নানা ধরনের টক শো দর্শক কম-বেশি এখনও দেখেন। পাশাপাশি সেলিব্রেটি শো’র প্রতি দর্শকের আগ্রহ অল্প হলেও আছে। বিলুপ্তপ্রায় একশ্রেণীর দর্শক আছেন যারা এখনও পুরনো বাংলা চলচ্চিত্র টিভিতে উপভোগ করেন ছুটির দিনে।
আর নাটকের ক্ষেত্রে বিজ্ঞাপনের অত্যাচার সহ্য করেও দর্শক এখনও হাতেগোনা অল্প কিছু নাটক দেখার চেষ্টা করেন। আবার এই দর্শকরাই দিনের সিংহভাগ সময় বিনোদনের জন্য আশ্রয় নেন স্টার জলসা, স্টার প্লাস, জলসা মুভিজ, জি বাংলা, সনি, কালারস-এর পর্দায়। এর বাইরে দেশের ৯৮ ভাগ নারী দর্শকই এখন রাত-দিন মুখিয়ে থাকে ভারতীয় চ্যানেলের বৈচিত্রম্যয় নাটক-অনুষ্ঠানের দিকে।
এমন ভয়ংকর পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের পথ কি?
নাটক হোক, সিরিয়াল হোক আর উপন্যাস-কবিতা-গদ্যপদ্য যাই হোক--আমরা যদি উপমহাদেশের চ্যালেঞ্জ না নিই--আরও এগিয়ে বিশ্বমান রক্ষার চ্যালেঞ্জ না নিই-- কোন লাভ নেই। আমাদের বিশাল বিরাট অস্কারটাইপ নাটক-ফাটক-উপন্যাস-টুপন্যাস-কবিতা ফবিতা পত্রিকায় বিজ্ঞাপণ আর পিঠ চুলকানি ও ফেসবুকেই থেকে যাবে। লাইকেই খুঁজতে হবে আনন্দ ও সাফল্য।
©somewhere in net ltd.