![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ব্যাক্তিগত জীবনে আমি মনোরোগ বিশেষজ্ঞ, সাইকোথেরাপিস্ট। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগবিদ্যাবিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। চেম্বার করি পান্থপথের শমরিতা হাসপাতালে সন্ধ্যা ও রাতে।লেখালেখি আমার কাজ নয়। পারিও না। চেম্বারে রোগী দেখতে গিয়ে নানা অভিজ্ঞতা হয়। ভাবলাম সেসব এই ব্লগে শেয়ার করবো। যাতে অন্যরা উপকৃত হন। আর হ্যা, চেম্বার ঠিকানা দিলাম; সেটা একরকম বিজ্ঞাপণ বটে। তবে ভুক্তভোগীরা বিএসএম এমইউ'র আউটডোর, এবং বিকালের বিশেষ চেম্বার-সেবার জন্য আসতে পারেন। ব্যাক্তিগত চেম্বারের চাইতেও আকর্ষনীয় আয়োজন। প্রতিটি রোগী দেখা হয়--একাধিক চিকিৎসক মিলে;মেডিকেল অফিসার ও অধ্যাপক সমন্বয়ে। শুক্রবার বাদে প্রতিদিন আছে বিশেষায়িত চেম্বার। আসুন, মুগ্ধ হবেন অবশ্যই।
.
মালিবাগে কোচিং ক্লাশ শেষে মায়ের সাথে ফিরছিল ১৬বছবয়সী এক কিশোরী । বাসের ধাক্কায় তার চোখের সামনেই করুন মৃত্যু ঘটে তার আম্মুর। সামনাসামনি মায়ের মৃত্যুর সাক্ষী হতে হলো তাকে ।
আজ ওর মানসপটে যে ভয়াবহ দৃশ্য গেঁথে গেল ,তা কি ও সহজে মন থেকে সরাতে পারবে ? ভুলতে পারবে কি কখনও। পড়াশোনায় কি একটুও ব্যাঘাত ঘটবে না । চোখের সামনে কি ভেসে উঠবে না দু:সহ স্মৃতি।
অভিজ্ঞতার আলোকে বলা যায়-এধরনের ভয়ংকর শোকাবহ ঘটনায় কোন কোন শিশু মনো:পীড়ায় ভুগতে থাকে। আত্মীয়স্বজনদের মাঝে এখনও একথা বলার লোক খুজে পাওয়া যায়--যারা বলে --মেয়েটি অপয়া। ওর জন্যই ওর মা বা অমুক আত্মীয় মরেছে। কেউ বলে ওকে বাঁচাতে গিয়েই তো মা’টি মরেছে। এসব কথা শিশুটির জন্য ক্রমশ: দুর্বহ হয়ে ওঠে। তাছাড়া অনেক ক্ষেত্রে নিজেরাও দু:স্বপ্নে ভোগে--তার জন্যই বুঝি মা মারা গেছে। সারাজীবন দোষীর কাঠগড়ায় নিজেকে দাঁড় করায় সে।
এইসব মেন্টাল ট্রমার শিশুদের এধরনের মনোসমস্যা নিয়ে বড় হওয়ার আশংকা থাকে। কিন্তু তাকে বোঝাতে হবে যে দোষ ওর নয় । সে নির্দোষ। ওর জন্য কিছুই ঘটে নি। দুর্ঘটনার বৈজ্ঞানিক কারনেই ঘটনাটি ঘটেছে। অর্থাৎ হয় গাড়ীর চালকের ভুলে। নয় পথচারীর ভুলে। শিশুটি গুম হয়ে থাকে। বিচ্ছিন্ন হয়ে বড় হতে থাকে। সবাই আমরা তার প্রতি দরকারি মনোযোগ দেই না। তার অন্যমনস্ক--চুপচাপ থাকাকে ভাবি--সে অমনই। সে যে আপন চিন্তায় , আপন দু:স্বপ্নের ঘোরে নীরব অন্যমনস্ক হয়ে বড় হচ্ছে-- সময় মত নজর দেই না।
আজ পত্রিকা পড়ে ছোট খবরটিই তাই আমার কাছে বড় হয়ে উঠল। বাইরের দেশে যেটা হয়--এধরনের শিশুদের বিশেষ কেয়ার নেয়া হয়। তারা মানসিক কোন ট্রমায় বেড়ে উঠছে কিনা --সেটা বিশেষ উদ্যোগ নিয়ে চিকিৎসাধীন রাখা হয়। আমাদের দেশে এতটা নিবিড় স্বাস্থ্যসেবা এখনও গড়ে তোলা যায় নি। সকলের সচেতনতায় নিশ্চ্য়ই আগামীতে হবে।
চেম্বারে আসা একজন রোগী পেশায় ড্রাইভার । ময়মনসিংহ থেকে আসার পথে
৭-৮ মাস আগে একটা সড়ক দুর্ঘটনার সম্মুখীন হন। মৃত ব্যক্তির হাত পা ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে, মগজ ছিটকে বের হয়ে গিয়েছিল। বিভিন্ন ডাক্তারের কাছে চিকিৎসা নিয়েছেন । কিন্তু কিছুতেই উনি সেই দুঃসহ স্মৃতি ভুলতে পারছিলেন না । সারাক্ষণ চোখে ভেসে উঠত । বুক ধড়ফড় করতো । অসহ্য যন্ত্রণায় কুকড়ে উঠতেন ।ঘুম হারাম হয়ে গিয়েছিল । স্টীয়ারিং জীবনে আর ধরতে পারবেন কিনা সংশয় ছিল মনে। চাকরী চলে গেলে কি করে সংসার চলবে? কে পরিবারকে খাওয়াবে।তার ভবিষ্যৎ অন্ধকার হয়ে পড়েছিল ।
এ ধরণের স্ট্রেসফুল সিচুয়েশনে এই কিশোরীএবং পাশাপাশি মনোসমস্যার শিকার ওই ড্রাইভার এর মত ভুক্তভোগী মানুষ বিভিন্ন মানসিক রোগে ভোগেন ।যেমন Acute Stress Disorder, Post Traumatic Stress Disorder, Depressive Disorder,Adjustment Disorder ইত্যাদি ।
মানসিক রোগের চিকিৎসা নিয়ে বা এর প্রতিকারে আমরা ততটা সজাগ নই । তারপরও মনোচিকিৎসা আপনি যত তাড়াতাড়ি নিবেন তত দ্রুত আপনি আপনার মনোবল ফিরে পাবেন ।
Prevention is better than cure এ কথা কে না জানে। পথচারী এবং চালক দুপক্ষকেই সহনীয় আচরণ করতে হবে । পথচারীকে ফুটপাথ কিংবা ফুটওভার ব্রীজের ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।
ড্রাইভারদের সরকারীকর্মকর্তাদের মত ফাউন্ডেশন ট্রেনিং দেয়া দরকার । তাদেরকে ধৈর্যশীল, সহনশীল আচরণ শেখানোর জন্য কর্তৃপক্ষের জোরদার ভূমিকা রাখতে হবে । রাস্তাঘাটে সচেতনভাবে ধীরে চলো নীতি মেনে চলাফেরা করলে অনেক সমস্যার সমাধান হতে পারে ।
১৪ ই মে, ২০১৪ বিকাল ৩:৩৩
ডা. সুলতানা আলগিন বলেছেন: দুর্ঘটনার ছবি পাঠক দর্শক মনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। একসময় পড়েছিলাম পত্রিকায় সাংবাদিকরা এমন ছবি ছাপবেন না। শীর্ষ কয়েকটি দৈনিক তা মানেও। কিন্তু ফেসবুকে এমন ছবি অহরহ দেখা যা্য়। এটা রুখতে সচেতনতার বিকল্প নাই।
২| ১৩ ই মে, ২০১৪ বিকাল ৪:৪৭
আহলান বলেছেন: আল্লাহর জিকির মনে শান্তি আনয়ন করে ....
১৪ ই মে, ২০১৪ বিকাল ৩:৩৮
ডা. সুলতানা আলগিন বলেছেন: আপনি ঠিক বলেছেন। আল্লাহর জিকির , ইশ্বর ভগবানের ধ্যান-নাম জপ--সব ধর্মেই এধরনের বিধান আছে। আল্লাহর জিকির,খোদার নাম নেয়া, হরি হরি বা কৃষ্ণ কৃষ্ণ জপ---ধর্মাবলম্বীরা নিজ নিজ ধর্মমত অনুযায়ী এটা অবশ্যই করতে পারেন। এটা উপকারী।
৩| ১৩ ই মে, ২০১৪ রাত ১১:২৯
দি সুফি বলেছেন: ড্রাইভারদের সরকারীকর্মকর্তাদের মত ফাউন্ডেশন ট্রেনিং দেয়া দরকার । তাদেরকে ধৈর্যশীল, সহনশীল আচরণ শেখানোর জন্য কর্তৃপক্ষের জোরদার ভূমিকা রাখতে হবে ।
এইটা অতীব দরকার। বিশেষ করে ঢাকার লোকাল বাস চালকদের জন্য।
১৪ ই মে, ২০১৪ বিকাল ৩:৪০
ডা. সুলতানা আলগিন বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ।
৪| ১৬ ই মে, ২০১৪ রাত ১২:৫৩
সচেতনহ্যাপী বলেছেন: যেহেতু মনোরোগ বিশেষজ্ঞ সেহেতু সাধারনের চেয়ে আপনি বেশী বুঝবেন, এটাই স্বাভাবিক। আপনার বাস্তবমমুখী লেখা ভাল লাগে তাই লগইন/আউট হয়েই পড়ে যাই। মন্তব্য করার ক্ষমতা নেই। আজ করলাম।।
মেয়েটির বেলায় আপনর কথা মেনে নিলেও ড্রাইভারের কথা মানতে কষ্ট হচ্ছে। এরা বিকারহীন দানব। তবে ব্যাতিক্রম নেই বললে ভুল হবে।।
২২ শে মে, ২০১৪ রাত ১১:৫৫
ডা. সুলতানা আলগিন বলেছেন: বাসচালকদের ব্যাপারে আপনার ক্ষোভখুবই সঙ্গত। কিন্তু আমাদের যে কোন সমস্যার কারণ জানতে হবে। সমস্যার গোড়ায় গিয়ে সেটা সমাধান করতে হবে। কাজটা দৈনন্দিন আবেগের সাথে মেলানো কঠিন। তারপরও সবাই মিলে দেশ সমাজ, রাষ্ট্র। সকলকেই ভাল করার কঠিন কাজটি করার সহনশীলতা চাইও বটে।
৫| ২৩ শে মে, ২০১৪ রাত ১২:৪৮
সচেতনহ্যাপী বলেছেন: @ আলগিন- সত্যিকথা বলতে কি "আমাদের যে কোন সমস্যার কারণ জানতে হবে। সমস্যার গোড়ায় গিয়ে সেটা সমাধান করতে হবে"। এইতত্বে আমি আর বিশ্বাসী নই। কম তো দেখলাম। এদের ভাল করতে গেলেই অনেক উপাধী আপনার কপালে জুটবে।
আর আমার ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতা বলে দিনে-রাতে বেশীর ভাগ সময়েই এরা থা নেশাগ্রস্থ। কত সহনশীল আর হতে পারবেন বলে আপনি মনে করেন??
©somewhere in net ltd.
১|
১৩ ই মে, ২০১৪ বিকাল ৩:২৭
নতুন বলেছেন: কিছু মানুষ আছে যারা ফেসবুকে ব্লগে এই সব দূঘটনার ছবি/ভিডিও পোস্ট করে.... তাদের থেরাপী দেওয়া দরকার...