নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মন নিয়ে, মনের কথা

ব্যাক্তিগত জীবনে আমি মনোরোগ বিশেষজ্ঞ, সাইকোথেরাপিস্ট। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগবিদ্যাবিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। চেম্বার করি পান্থপথের শমরিতা হাসপাতালে সন্ধ্যা ও রাতে।লেখালেখি আমার কাজ নয়। পারিও না। চেম্বারে রোগী দেখতে গিয়ে নানা অভিজ

ডা. সুলতানা আলগিন

ব্যাক্তিগত জীবনে আমি মনোরোগ বিশেষজ্ঞ, সাইকোথেরাপিস্ট। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগবিদ্যাবিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। চেম্বার করি পান্থপথের শমরিতা হাসপাতালে সন্ধ্যা ও রাতে।লেখালেখি আমার কাজ নয়। পারিও না। চেম্বারে রোগী দেখতে গিয়ে নানা অভিজ্ঞতা হয়। ভাবলাম সেসব এই ব্লগে শেয়ার করবো। যাতে অন্যরা উপকৃত হন। আর হ্যা, চেম্বার ঠিকানা দিলাম; সেটা একরকম বিজ্ঞাপণ বটে। তবে ভুক্তভোগীরা বিএসএম এমইউ'র আউটডোর, এবং বিকালের বিশেষ চেম্বার-সেবার জন্য আসতে পারেন। ব্যাক্তিগত চেম্বারের চাইতেও আকর্ষনীয় আয়োজন। প্রতিটি রোগী দেখা হয়--একাধিক চিকিৎসক মিলে;মেডিকেল অফিসার ও অধ্যাপক সমন্বয়ে। শুক্রবার বাদে প্রতিদিন আছে বিশেষায়িত চেম্বার। আসুন, মুগ্ধ হবেন অবশ্যই।

ডা. সুলতানা আলগিন › বিস্তারিত পোস্টঃ

অকালে সঙ্গী হারিয়ে

২২ শে মে, ২০১৪ রাত ১১:৪৫

অকালে অনেকে হারান স্বামীকে৷ এই শোক পুরোপুরি কাটিয়ে ওঠার আগে অল্প বয়সী মেয়েটিকে মুখোমুখি হতে হয় কঠিন বাস্তবের৷ সামাজিক ও মানসিক চাপে কেউ কেউ বিপর্যস্ত হন৷ তবু জীবন থেমে থাকে না৷ এগিয়ে যেতে হয় সামনের দিকে৷



‘বা রে, তুমি তো আবার বিয়ে করবে, আমার ছেলের সম্পদে তোমার কিসের অধিকার? আর নাতিটাকে আমাদের কাছেই রাখছি। আমি আছি। ওর ফুপুরাও আছে। আমরাই মানুষ করব। ওর জন্য যা খরচপাতি, তা আমরাই করব। তোমাকে আর এ সংসারে দরকার নেই।’ এই সংলাপ কোনো এক শাশুড়ির। তিনি তাঁর অকাল বিধবা পুত্রবধূকে এই কথাগুলো বলেছেন। না। গত শতাব্দীর কোনো গল্প-কাহিনি নয় এটা, মাত্র কয়েক মাসের আগের ঘটনা। বাস্তব। :| :|

মেয়েটির বয়স ৩০ পেরোয়নি। দুর্ঘটনায় মারা গেছেন স্বামী। শোকের কালো চাদরে তখনো ঢেকে ছিল পুরো পরিবার। তারপরও অপ্রিয় বিষয়গুলো খুব দ্রুত পারিবারিক আলোচনায় উঠে আসে। স্বামীর কর্মস্থল থেকে বড় অঙ্কের টাকা পাওয়ার কথা। তা নিয়ে পারিবারিক কূটচাল কম নয়। সন্তানকে নিয়েও চলছে নানা ঝামেলা। কোথায় থাকবে শিশুটি। বিধবা মায়ের কাছে নাকি দাদিরকাছে! রীতিমতো যেন সিরিয়ালের কাহিিন। অনাকাঙ্ক্ষিত শোক-কষ্ট কাটিয়ে না উঠতেই তাঁর সামনে একের পর নিষ্ঠুর চ্যালেঞ্জ। এসবের মোকািবলায় রীতমিতো হতোদ্যম হয়ে পড়েছিলেন তরুণীটি

:|| :|| :||

আরেকজনের কথা বলি। ধরুন বাবলি তাঁর নাম। দুই বছর বয়সী শিশুকন্যা রেখে স্বামী হঠাৎ করেই মারা যান। পাঁচ বছরের সংসার ছেড়ে শ্বশুরবাড়ি থেকে বাবার বাড়ি আসেন তিনি। সেখানেও সমস্যা কম নয়। এর মধ্যে এক সহকর্মীর সঙ্গে বাবলির একটা সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তিনি বুঝতে পারছিলেন না এই সম্পর্কের পরিণতি কী? কেননা সেই ব্যক্তি বাবলিকে ভালোবাসেন কিন্তু তাঁর সন্তানের বিষয়ে অনাগ্রহী। তাহলে সারা জীবন একাকী কাটাতে হবে তাঁকে?



:!> :!> :!>

সামাজিকভাবে একজন নারীর জীবনে তাঁর পরিচয় বদলাতে থাকে। কন্যা, বোন, মা, স্ত্রী, শাশুড়ি—একেক সময় একেক রকম। কিন্তু কম বয়সে স্বামী মারা গেলে তাঁকে বিধবা নামে বিশেষভাবে পরিচয় করানো হয়। সামাজিক নানা সরব ও নীরব পীড়ন তো আছেই—অনেকেই জটিল মনোপীড়নের শিকার হন। পারিবারিক, সামাজিক, মানসিক চাপে দিশেহারা হয়ে পড়েন। থাকার জায়গা নিয়েও প্রশ্ন। শ্বশুরবাড়ি না বাবার বাড়ি । উদ্বাস্তু হয়ে পড়েন তিনি। নিমেষেই পরিচিত মুখ অপরিচিত হয়ে ওঠে। কেউ কেউ ‘অপয়া’ অপবাদ দিতেও ছাড়েন না। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকেই বোঝা মনে করেন মেয়েটি। এই অবহেলা, কটুক্তি, ভুক্তভোগী স্বামীহারা কম বয়সী নারীর মানসিক বিপর্যয়ের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ডিপ্রেসিভ ডিসঅর্ডার—অ্যাডজাস্টমেন্ট ডিসঅর্ডার, কনভার্সন ডিসঅর্ডার, স্লিপ ডিসঅর্ডার, মাদকাসক্তি—আত্মহত্যার চেষ্টাও করতে দেখা যায়।



:| :| :| :|

এসবের পরও জীবন থেমে থাকার নয়। সব সামলে সব প্রতিবন্ধকতা মোকািবলা করে অল্প বয়সে স্বামী হারানো মেয়েটিকে অবশ্যই সামনের দিকে এগোতে হবে দৃঢ় পায়ে৷ অকাল বৈধব্যের সমস্যাপূর্ণ ঢেউগুলোর সামনে তাঁকে ভেঙে পড়লে চলবে না। আবার পারিপাশ্বির্ক ভাবনা থেকেও মেয়েটি নতুন কোনো সম্পর্কে নিজেকে জড়াতে ভয় পান। কিন্তু একটি মানুষ সারা জীবন একা থাকবেন এটিও কোনো সমাধান হতে পারে না। সব সময় পরিস্থিতি তো তাঁর প্রতিকূলে থাকবে না, কখনো না কখনো অনুকূলে আসতে পারে৷





8-| 8-| 8-|

তাহলে কী করবেন

এই পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য পারিবারিক, মানসিক, সামাজিক সচেতনতা প্রয়োজন। নারীকে আত্মবিশ্বাসী ও সাহসী করে তুলতে হবে। নারীর শিক্ষা ও উপার্জনমুখী কাজে অংশগ্রহণের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। ছেলে বা মেয়ে হোক—তাকে সুযোগ্য করে গড়ে তুলতে হবে। অর্থনৈতিকভাবে সক্ষম বা কর্মজীবী নারী এ ধরনের পরিস্থিতি মোকািবলায় বেশি সামর্থ্যের পরিচয় দেন। সংসারে ও কর্মস্থলে মতামত রাখার ব্যাপারে গুরুত্ব দিতে হবে। জীবনে চলার পথে আবার নতুন কাউকে পছন্দ হতে পারে৷ কিন্তু যিনি জীবনসঙ্গী হবেন, তাঁর মানসিকতা ভালোভাবে বুঝে নিতে হবে৷ শুধু তিনি নন, তাঁর পরিবারের সবার মতামত আছে কি না জেনে নিন৷ আপনার সন্তান থাকলে অবশ্যই সন্তান আপনার কাছে থাকবে, এ বিষয়ে খোলাখুলি আলোচনা করতে হবে৷ কোনো কথাই লুকানো উচিত নয়৷ খুব কাছের বন্ধু বা পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিন৷

তবে চারপাশের কথা ভেবে নতুন কোনো সম্পর্কের পরিণতি টানবেন না, সেটিও ঠিক নয়৷





:( :( :(

বৈধব্যের ফলে সৃষ্ট জটিলতাকে কাটিয়ে উঠতে আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব—সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। যাতে তাঁর মধ্যে জীবনকে নতুনভাবে দেখার স্বপ্ন ও আগ্রহ জেগে ওঠে৷ মানসিক বিপর্যয়ে চিকিৎসা নিতে দেরি করা যাবে না। পুরুষশাসিত সমাজে কোনো নারী বিধবার শৃঙ্খলে বাঁধা পড়ে যেন মানসিক রোগী হয়ে না পড়েন সে ব্যাপারে আমাদের সচেতন হওয়া প্রয়োজন ।

:| আমার লেখাটি ১৪ মে প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে মে, ২০১৪ রাত ১১:৫৮

না পারভীন বলেছেন: অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে অনেক পুরুষ সেক্সুয়াল সম্পর্ক করতে চায়, বিধবা আর তালাকপ্রাপ্তাদের আরো একটি সমস্যা

২৩ শে মে, ২০১৪ রাত ১২:১৪

ডা. সুলতানা আলগিন বলেছেন: এধরণের পরিস্থিতি অনাকাঙ্খিত হলে অবশ্যই ভুক্তভোগীকে দৃঢ় মনোবলের পরিচয় দিতে হবে। অসহায় অবস্থান ও অসহায় মানসিক পরিস্থিতি ও মনোবল দুষ্টকে প্ররোচিত করে। আর মনোবল অর্জন করানোর ভুক্তভোগীর স্বজন-পরিজন আত্মীয়দের ভূমিকা অপরিসীম। সাহস দিতে হবে। দিতে হবে বাঁচার--মর্যাদা নিয়ে বাঁচার উদ্দীপনাও।

২| ২৩ শে মে, ২০১৪ দুপুর ১২:০১

শুঁটকি মাছ বলেছেন: এধরনের পরিস্থিতে মেয়েটা যদি উপার্জনক্ষম হয় তাহলে হতো সেটা কিছুটা কম যন্ত্রণাদায়ক হয়।

৩| ২৪ শে মে, ২০১৪ রাত ১:৩১

সচেতনহ্যাপী বলেছেন: আমার শ্বাশুরী স্বাধীনতার ঠিক পূর্বমুহুর্তে ৫টি শিশু সন্তানসহ বিধবা হন। কিন্তু হাল ছাড়েন নি পুরো পরিবারটিই। না উনার শ্বশুরবাড়ী না বাপের বাড়ী। সবাই তাকে আগলে রেখেছিলো। বিপদে-আপদে এগিয়ে আসতো সবাই। বড়ছেলেটি একটু বড় হওয়ার সাথে সাথে পড়া ছেড়ে পিতার চাকুরীতেই ঢুকে পড়লো। আর ছোটটি কয়েকবছর পর একই পথে। ফলে আর্থিক দৈন্যতা কিছুটা ঘুচলেও মেয়েদের বিয়ের সময় দরকার পড়তো সবার সাহায্যের। ঠেকেও নি কখনো। আমি সবার ছোট জামাই। স্বভাবতঃই মা বলে ডাকি। বাসায় মেয়ে-স্ত্রী একা বলে উনি স্বইচ্ছায় আমার কাছে থাকেন। নিজের মা নেই বলে উনাকে মায়ের মতই শ্রদ্ধা ও সন্মান করি। মাঝে মাঝে কয়েকদিনের নিজের বাসায় যেয়ে সবার সাথে দেখা করে আবার চলে আসেন। আমার মেয়েও দাদু বলতে পাগল।
কিন্ত গত বছর খানেক ধরে খেয়াল করছি উনি যেমন আগের মত স্বচ্ছন্দ বোধ করছেন না। অসুখ হলেও জানাতে চান না। সিরিয়াস না হলে ঔষধ খেতে চান না। আমার কাছে কেন যেন মনে হচ্ছে উনি আর আমার খরচ বাড়াতে চাচ্ছেন না। কেন বুঝতে পারছি না। তারপরও কেন??

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.