নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অাল- হেলাল ৭৩

ড.েমাহাম্মদ অাতীকু রহমান

মোহাম্মদ আতীকুর রহমান

ড.েমাহাম্মদ অাতীকু রহমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

কোরবানির নিয়মাবলি

২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৩:১১


স্বীয় কামনা-বাসনা, ব্যক্তিসত্তা, কষ্টার্জিত সম্পদ ও প্রাণাধিক প্রিয় বস্তুকে মহান আল্লাহর ইচ্ছা ও সন্তুষ্টির সামনে সমর্পণের উদাত্ত আহ্বান নিয়ে কোরবানির ঈদ আমাদের সামনে উপস্থিত। কোরবানি এক দিকে যেমন ত্যাগের অভূতপূর্ব দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী মহানবী হজরত ইব্রাহিম আ:-এর ত্যাগদীপ্ত সংগ্রামী জীবনের ইতিহাস আমাদের স্মৃতিপটে জাগিয়ে দেয়, তেমনি প্রতিটি মুমিন অন্তরকে ঈমানি চেতনায় করে তোলে উজ্জীবিত।
কোরবানি কী : কোরবানি শব্দের অর্থ ত্যাগ, উৎসর্গ, বিসর্জন, নৈকট্য লাভ ইত্যাদি। শরিয়তের পরিভাষায় জিলহজ মাসের ১০, ১১ ও ১২ তারিখে নির্দিষ্ট নিয়মে নির্দিষ্ট জন্তুকে মহান আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের উদ্দেশ্যে জবাই করাকে কোরবানি বলা হয়। কোরবানি আদায় করা বিত্তবানদের ওপর ওয়াজিব, কিন্তু দরিদ্র ব্যক্তিও ইচ্ছা করলে কোরবানি আদায় করে সাওয়াব অর্জন করতে পারেন।
কোরবানির ফজিলত : কোরবানির ফজিলত সীমাহীন। মহানবী সা: বলেছেন, ‘কোরবানির সময় আল্লাহর কাছে কোরবানির চেয়ে অধিক প্রিয় আর কোনো জিনিস নেই। কোরবানির সময় কোরবানিই সবচেয়ে বড় ইবাদত। কোরবানির জবাই করার সময় প্রথম যে রক্তের ফোঁটা পড়ে, তা মাটি পর্যন্ত পৌঁছার আগেই কোরবানি আল্লাহর দরবারে কবুল হয়ে যায়’ (ইবনে মাজাহ)।
কাদের ওপর কোরবানি ওয়াজিব : ১০ জিলহজ ফজর থেকে ১২ জিলহজ সন্ধ্যা পর্যন্ত সময়ের মধ্যে কোনো ব্যক্তি যদি মালিকে নিসাব (সাড়ে বায়ান্ন ভরি রুপা কিংবা সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ বা সমমূল্যের নগদ অর্থ অথবা কিছু স্বর্ণ, কিছু রুপা এবং কিছু নগদ অর্থÑ সব মিলিয়ে যদি সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার মূল্যের সমান) হয়, তবে তার ওপর কোরবানি ওয়াজিব হবে। স্ত্রী ও বালেগ পুত্র, বালেগ কন্যা ধনী হলে তাদের নিজ থেকেই কোরবানি করা ওয়াজিব। কিন্তু নাবালেগ পুত্র, নাবালেগ কন্যা ধনী হলেও তাদের ওপর কোরবানি ওয়াজিব হবে না। স্বামী যদি স্ত্রীর প থেকে তার অনুমতিক্রমে কোরবানি আদায় করে তাহলে স্ত্রীর ওয়াজিব আদায় হয়ে যাবে। মুসাফিরের ওপর মুসাফিরি অবস্থায় কোরবানি ওয়াজিব হবে না।
কোরবানির সময়সীমা : ১০ জিলহজের ফজর থেকে ১২ জিলহজের সূর্য অস্ত যাওয়ার আগেই কোরবানি আদায় করতে হবে। এই তিন দিনের যে দিন ইচ্ছা সে দিনই কোরবানি করা যেতে পারে। তবে ঈদের নামাজের আগে কোরবানি করা ঠিক নয়।
কোরবানির পশু : বকরি, খাসি, ভেড়া, দুম্বা, গাভী, ষাঁর, বলদ, মহিষ, উটÑ এই কয় প্রকার জন্তুর দ্বারা কোরবানি করা যাবে। বকরি, খাসি, ভেড়া ও দুম্বা পূর্ণ এক বছরের কম বয়সের হলে তা দ্বারা কোরবানি আদায় হবে না। গরু-মহিষের বয়স কমপে দুই বছর এবং উটের বয়স পাঁচ বছর হতে হবে। কোরবানির পশু সুস্থ, সবল ও দৃষ্টিনন্দন হতে হবে। অন্ধ, কানহীন জন্তু কিংবা একটি কানের বা লেজের এক-তৃতীয়াংশ বা তদাপো বেশি কেটে গেছে, মূল থেকে ভেঙে যাওয়া শিংওয়ালা জন্তুর দ্বারা কোরবানি বৈধ হবে না।
কোরবানি কত নামে করা যাবে : গরু, মহিষ ও উটের েেত্র এক থেকে সাত নাম দেয়া যেতে পারে। অন্যান্য জন্তুর েেত্র এক নাম দেয়া যাবে। গরু, মহিষ ও উট ক্রয় করার আগে সাতজন ভাগিদার ঠিক করে নেয়া উত্তম। একা কোরবানি করার নিয়তে পশু ক্রয় করার পর অন্যদের শরিক করা জায়েজ হবে না।
কোরবানিদাতাদের নিয়ত : কোরবানি একমাত্র মহান আল্লাহর উদ্দেশ্যে হতে হবে। ভাগিদারদের কারো গোশত খাওয়ার বা লোক দেখানোর নিয়ত থাকলে কোরবানি গ্রহণযোগ্য হবে না।
হারিয়ে যাওয়া পশু : কোরবানির জীব হারিয়ে গেলে তৎপরিবর্তে অন্য পশু ক্রয় করার পর প্রথম পশুটি পাওয়া গেলে ক্রেতা মালেকে নিছাব হলে তার জন্য যেকোনো একটি কোরবানি করা ওয়াজিব হবে। যদি মালেকে নিছাব না হয় তবে উভয়টি কোরবানি করা ওয়াজিব হবে। একটি কোরবানি করার পর অপরটি ১২ জিলহজের পর পাওয়া গেলে গরিব লোকটি সেই পশুটিকে সদকা করে দেবে।
গোশত ভণ ও বণ্টন : কোরবানির পশুর গোশত পরিবার-পরিজন ও আত্মীয়স্বজন নিয়ে তৃপ্তি সহকারে ভণ করা যাবে। গোশত বণ্টনের মুস্তাহাব নিয়ম হচ্ছে তিন ভাগ করে এক ভাগ গরিবদের, এক ভাগ আত্মীয়স্বজন ও এক ভাগ নিজে রেখে দেয়া। নিজের প্রয়োজনে গরিবদের দান না করলেও কোরবানি আদায় হয়ে যাবে।
কোরবানির চামড়া ও হাড্ডি : কোরবানির চামড়ার প্রকৃত হকদার হচ্ছে এতিম-মিসকিন তথা গরিবেরা। বিক্রি করলে সম্পূর্ণ অর্থ দান করে দিতে হবে। পশু জবাইয়ের বিনিময় কিংবা বানানোর পারিশ্রমিক চামড়া বিক্রির পয়সা বা গোশত দ্বারা দেয়া যাবে না। মসজিদ নির্মাণ, মেরামত কিংবা অন্য কোনো নেক কাজে এই অর্থ দান করা যাবে না।
মৃত ব্যক্তির জন্য কোরবানি : মৃত্যুর আগে কেউ কোরবানির জন্য অছিয়ত করে গেলে তার অংশের সব গোশত দান করে দেয়া ওয়াজিব। তবে স্বীয় ইচ্ছায় মৃতকে সাওয়াব পৌঁছানোর উদ্দেশ্যে কোরবানি করা হলে ওই অংশের গোশত ইচ্ছা অনুযায়ী ভণ ও দান করা যাবে। ওয়াজিব হওয়া ব্যক্তি যদি স্বীয় নাম বাদ দিয়ে মৃতব্যক্তি বা অন্য কারো নামে কোরবানি করেন তবে তিনি ওয়াজিব ভঙ্গের দায়ে গোনাহগার হবেন।
কোরবানির সাথে আকিকা আদায় : একটি বড় পশুর মধ্যে কোরবানির সাথে এক বা একাধিক আকিকা করা যায়। কোরবানির গোশত যেমনিভাবে নিজে খাওয়া, গরিবকে বণ্টন করা, আত্মীয়স্বজনকে দেয়া বা সদকা করা যায়, তেমনি আকিকার েেত্রও করা যায়।
শেষ কথা : কোরবানি কবুলের জন্য প্রয়োজন হলো এমন আবেগ, অনুভূতি, প্রেম-ভালোবাসা ও ঐকান্তিকতারÑ যে আবেগ, অনুভূতি, প্রেম, ভালোবাসা ও ঐকান্তিকতা নিয়ে কোরবানি করেছিলেন হজরত ইব্রাহিম আ:। শুধু পশু জবাই করার নাম কোরবানি নয়, বরং কোরবানি হলো আল্লাহর জন্য নিজের সর্বস্ব বিলিয়ে দেয়ার এক দৃপ্ত শপথ।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:২৪

অপূর্ণ রায়হান বলেছেন: ++++++++++++

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.