![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বাংলাদেশের রাজনিতী ঘৃনা করি। বন্ধু ভালবাসি । দেশকে ভালবাসি......।
১ম খণ্ড ঃ
পূর্ণিমার চাঁদের আলোতে সাগরের জলে পা ভিজিয়ে তাকিয়ে থাকব আকাশপানে, এই কাব্যিক ইচ্ছা নিয়ে আমরা ৪ জন ( আমি, মুনির, মাজহার ভাই, ফয়জুল রাব্বি) সেন্ট মার্টিন এর টানে যাত্রা শুরু করি। দীর্ঘ ১২ ঘণ্টা পর টেকনাফ গিয়ে শুনতে পাই ৩ নং সংকেত চলে তাই কেয়ারী সিন্দাবাদ সেন্ট মার্টিন যাবে না। আমি, মুনির, আর ফয়জুল রাব্বি ট্রলারে করে যেতে চাইলাম কিন্তু বাধ সাধলেন মাজহার ভাই। তাই বাধ্য হয়ে ঝলমলে রৌদ্রোজ্জ্বল আকাশে ৩ নং সংকেত দেয়ার জন্য আবহাওয়া অফিস কে মনে মনে হাজার খানেক কথা শুনিয়ে টেকনাফের হটেলেই নিজেদের জায়গা করে নেই। টেকনাফের রুফ টপ হোটেলের দুপুরের খাবার টা আমাদের জার্নির কষ্টটা ভুলিয়ে দিয়েছিল। বিকালে চলে যাই টেকনাফ বীচ দেখতে। ওইখানে গিয়ে বুঝতে পারি প্রচার ই প্রসার। কারন এই বীচ কোন অংশেই কুয়াকাটা কিংবা কক্সবাজারের বীচ গুলো থেকে কম সুন্দর না কিন্তু প্রচার নেই বলেই কেউ দেখতে যায় না। এই প্রথম কেন জানি ৩ নং সংকেত দেয়ার জন্য আবহাওয়া অফিস কে মাফ করে দিলাম। সাগরের ডাক আর উপেক্ষা করতে পারলাম না ছুটে গেলাম আছড়ে পড়া ঢেউ এর পানে। নিজেকে সমর্পণ করলাম সাগরের কাছে। একটু পরেই দেখি আমার দেখাদেখি অনেকেই পানিতে নেমে গেছে। এদের মাঝে চোখ আটকে যায় এক তরুণীর মাঝে। পানিতে ভিজে তার সৌন্দর্য যেন আরও বেশি প্রকট আকার ধারন করেছে। সাগরের ঢেউ এর গর্জন, অস্তগামী সূর্যের আলোয় রঙিন আকশ আর এর সাথে সুন্দরী তরুণীর যৌবনের আলোকছটা সব মিলিয়ে সন্ধ্যাটাকে জীবনের নোটবুকে সোনালি অক্ষরে লিখে রাখতে বাধ্য করল। ...............(চলবে)
আগের দিনের টেকনাফ বীচের সৃতি নিয়ে সকাল ৭ টায় সেন্ট মার্টিন এর উদ্দেশে যাত্রা শুরু করি। টেকনাফ থেকে কেয়ারীতে করে সরাসরি সেন্ট মার্টিন। কেয়ারিতে উঠে তা ছাড়ার জন্য অপেক্ষায় বসে না থেকে নাফ নদীর সৌন্দর্য ক্যামেরা বন্দিতে বেস্ত হয়ে গেলাম। শুধু একটা কারনে আমাদের ৪ ব্যাচেলার মন উসখুস করতে লাগল। যেদিকেই তাকাই খালি জুটি আর জুটি, আমার এক স্কুল ফ্রেন্ড দেখি তার বউ নিয়ে যাচ্ছে, পাহারাদার ছাড়া দেখি কোন ফুল গাছে নাই। এমন নিরামিষ ভ্রমনের চিন্তা করে যখন মন খারাপ করবো কিনা ভাবছি তখনই ৭ স্টারের আগমন। ৭ জনের মধ্যে ২ জন ছাড়া বাকিরা আসলেই যেন স্টার। তাৎক্ষনিক আমাদের ৪ মাথা এক হয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি তোমরা যেখানে আমরা সেখানে, মানে আর যাই করি এক হোটেলে উঠবোই। যাই হোক বাংলাদেশ আর মায়ানমার এর মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া নাফ নদীর বুকে ঢেউ তুলে আমরা চলতে থাকি সেন্ট মার্টিন এর টানে। যাত্রা পথে কেয়ারির মাইক আমাদের জানিয়ে দিল সেন্ট মার্টিন ও নাফ নদী সম্পর্কে অনেক অজানা তথ্য। সেই সাথে একটা উপদেশ দিল, চিপস এর প্যাকেট, পানির বোতল এইসব যেন পানিতে কিংবা বীচে না ফেলি যা আমরা ৪ জন অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছিলাম। ৩ ঘণ্টা পর অবশেষে জেটিতে পা রাখলাম। কাঁচের মত পানি দেখে নিজেরা বেস্ত হয়ে পরলাম সৌন্দর্য অবলোকনে। আমাদের মুনির বেস্ত হয়েগেল মডেল হতে আর আমরা বেস্ত হলাম তাকে কেমেরাবন্দি করতে। যখন হুশ হল তখন দেখি জেটিতে খালি আমরা ৪ জন দাড়িয়ে। ৭ স্টারের নাম গন্ধ ও নাই।কি আর করা? নিজেদের থাকার জন্য একটা হোটেল ঠিক করে ফেললাম। বীচের সবচেয়ে কাছের টাতেই উঠলাম। রুমে সবকিছু রেখে বারান্দাতে দাড়াতেই দেখলাম রাখে আল্লাহ্ মারে কে। আমাদের ঠিক পাশের হোটেলেই ৭ স্টার রা তাদের জায়গা করে নিয়েছে। আহহহ মনটা খুশিতে নেচে উঠল। যাই হোক আমি আর ফয়জুল রাব্বি চাইলাম সমুদ্রের ডাকে সারা দিতে, কিন্তু মাজহার ভাই আর মুনির খাওয়ার জন্য উতলা হয়ে উঠল। কি আর করা দুই ভাগ হয়ে গেলাম। আমরা দুইজন ঝাপিয়ে পরলাম নীল স্বচ্ছ পানির মাঝে। একটু পরে দেখি মুনির ও আমাদের সঙ্গী। ঘণ্টা খানেক পর মাজহার ভাই আমাদের সাথে যোগ দিল। এর পর সমুদ্রের পানিতে আরও বেশি ঢেউ তুলে আর আমদের দৃষ্টিকে বিক্ষিপ্ত করে দিতে ৭ স্টার আমাদের সাথে সমুদ্রস্নানে যোগ দিল। জানলাম তারা নেপালি। আরও জানলাম তারা বেশ ভাল সাঁতার যানে। সাগরের অজস্র ভেঙে পরা ঢেউ, মাথার উপর নীল আকাশ, অনেক মানুষের প্রাণখোলা হাসিতে মুক্তির স্বাদ সেই সাথে স্বল্প বসনা নেপালি তরুণীদের জলকেলি দেখতে দেখতে কখন যে সূর্য অস্ত যাওয়ার জন্য পশ্চিম আকাশে হেলে পরেছে তা খেয়াল করিনি। অবশেষে সমুদ্রস্নান বাদ দিয়ে কোরাল পাথরের উপর দাড়িয়ে সূর্যাস্ত অবলোকন। ইতোমধ্যে পেটের মাঝে ইঁদুর দৌড় শুরু হয়ে গেছে। তাই হোটেলে গিয়ে প্রত্যেকে নিজের পছন্দ মত মাছ দেখিয়ে দিতেই তা আস্ত রান্না করে পরিবেশন করা হল আর আমরাও ঝাপিয়ে পরলাম মাছের উপর। রাতে দিল মোহাম্মাদ ভাইয়ের সহযোগিতায় বার-বি-কিউ খেয়ে চাদের আলোতে বীচের ঠাণ্ডা বালুতে খালি পায়ে যে পাগলামিটা করলাম তার বর্ণনা লিখে শেষ করা যাবে না। মুনির সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল গান জানা মেয়েকেই সে বিয়ে করবে আর এমন এক মুহুরতে তার কাঁধে মাথা রেখে গান শুনবে। আসলেই প্রকৃতি মানুষের মনে কতোটাই না গভীর ছাপ ফেলে। অবশেষে রাত ২ টায় হোটেলের উদ্দেশে হাটা শুরু করি। হয়তো সারারাত বীচেই থাকতাম কিন্তু পরের দিন যে আমাদের আরও যাত্রা বাকি আছে............। (চলবে)
©somewhere in net ltd.