নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বিষফোঁড়া
নিচু তলার উকিল
'
চতুর্দিক হইতে ধেয়ে আসা বিষমাখা তীর যেইমাত্র শুভাশিস চ্যাটার্জীর বক্ষ ভেদিয়া বাহির হইয়া গেল ঠিক সেই লহমায় শ্যামদাস ভাবিয়াছিল অদ্য বুঝি আর রক্ষা নাই।
অদ্যাপি বিষফোঁড়াটার ব্যাপক বাড় বাড়িয়া গিয়াছে।গোদের উপর উহার জমিদারের ন্যায় বসিয়া থাকিবার ভঙ্গী বড্ড পীড়াদায়ক। সর্বক্ষণ টনটন করিয়া জ্বালাতন করিবার নিমিত্তেই বুঝি নিমকহারামির জন্ম হইয়াছে।
শ্যামদাস রাগে গিজগিজ করিয়া খানিক অভিসম্পাত দিতে দিতে বলিয়া উঠিলেন শালা নিমকহারামির জাত,তবে কিয়ৎকাল ব্যাপিয়া কি যানি কি ভাবিয়া শুয়োরদের উপর রাগারাগি শুরু করিয়া দিলেন!কি সব অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ উহা শ্রবণ হইলে প্রতিটি মনুষ্য জাতির কাঁধের উপর সার্বক্ষণিক নজরদারিতে ব্যস্ত থাকা মুনকিরনাকির ও যে পাপের চোটে খাতাপত্রর লইয়া হাপিত্যেশ পলায়ন করিবেন না তা কিন্তু হলফ করিয়া বলা যাইতেছেনা কিংবা বলাটা বড্ড অমূলকও নহে।
সদ্যজাত শুয়োরছানাটাও কি বজ্জাতের হাড্ডি হইয়া উঠিয়াছে। অদ্যাপি নোংরা আবর্জনায় ঘটা করিয়া প্রতি দিবসের তিন প্রহরে বাড়ন্ত নাসিকা ডুবিয়ে সুগন্ধ নিতে ব্যতিব্যস্ত হইয়া পড়িয়াছে।আনন খানার বিকৃতি ঘটাইয়া কচিকাঁচা দন্ত গুলির শক্তি পরীক্ষার নিমিত্তে উহার জন্মদাতা পিতার পশ্চাদ দেশে খপ করিয়া কামড় বসাইয়া দিলে ব্যথায় খানিক কুঁকড়ানোর মত করিয়া গোঙাইয়া উঠিলেন।নিজ সন্তানের উপর রক্তচক্ষু নিক্ষেপ করিয়া বলিয়া উঠিলেন কুত্তার বাচ্চা।সত্যি বলিতে উহা ঠিক কুত্তার বাচ্চাই বলিয়াছিল নাকি ভিন্ন কিছু তাহা কিন্তু শ্যামদাসের কর্ণগোচর হয়নি বেশ অস্পষ্ট হইয়া কর্ণে পৌঁছাতে পৌঁছাতে সমীরণে মিলিয়া গিয়াছিল।
ডোম জাতির বালক শুয়োয়ের পাল লইয়া অনত্র সরিয়া গেলে শ্যামদাস স্বস্তির নিশ্বাস ফেলিলেন। কিন্তু কোনক্রমেই শান্ত হইয়া বসিতে পারিলেন না। অদ্য জলজ্যান্ত একটি পক্ষ চলিয়া যাইবার প্রাক্কালেও বিষফোঁড়াটার লক্ষণ অতি উত্তম অনুভূত না হইবার দরুন গ্রামের একমাত্র বৈদ্য রঘুনাথের চৌদ্দ গোষ্ঠী উদ্ধার করিবার নিমিত্তে লোকসমাজের নিকট বলিয়া বেড়াইতে লাগিলেন এই যে রঘুনাথ একটা ভুয়া বৈদ্য, রোগ নির্ণয় করিবার কোনরূপ ক্ষমতা উহার নেই,সনাতন পদ্ধতিতে আর কতকাল ইত্যাদি ইত্যাদি।
এইরূপ বচনে গ্রামের সাধারণ জনগণ দুটি পক্ষে ভাগ হইয়া পড়িলেন।
এক পক্ষ বলিলেন রঘুনাথের দিন শেষ হইয়া আসিয়াছে। উহারা এইরূপ যুক্তি দেখাইতে লাগিলেন যে বিষফোঁড়ার চিকিৎসায় আধুনিক এলোপ্যাথিক ও উন্নততর যন্ত্রপাতির উন্মেষ ঘটিয়াছে কোনপ্রকার ব্যথা ছাড়াই বিষফোঁড়া কাটার মাধ্যমে বৈপ্লবিক উপশম লাভ করা সম্ভব। ইহা শুনিয়া অপরপক্ষ কিঞ্চিৎ আশার আলো দেখিলেন এই ভাবিয়া যে যাক শেষ অবধি বিষফোঁড়ার নির্দয় জ্বালার হস্ত হইতে নিস্তার পাইবার পথ বাহির হইয়াছে।
এমতাবস্থায় রঘুনাথও দুই ওষ্ঠের কোণে ঈষৎ হাসির ঝড় তুলিয়া বলিয়া উঠিলেন"পুরানা চাইলে ভাতেই বাড়ে" কিন্তু বেশ কিছু দিবস পরেই গ্রামের অতীব দারিদ্র্য লোকজনের বিষফোঁড়ার আধিক্য বাড়িয়া গেলে আধুনিক চিকিৎসাশাস্ত্রে পাণ্ডিত্য অর্জনকারী ডাক্তারের নিকট উপস্থিত হইলেন।ডাক্তারের ফিসের পরিমাণ কর্ণগোচর হইলে উহাদের হাসি হাসি আনন গুলি পাংশুটে হইয়া উঠিল। তাহাদের জঠরে টান পড়িবার দরুন শান্তিতে বিষফোঁড়ার চিকিৎসা না লইয়া রঘুনাথের অনুপস্থিতি অনুভবে উহার নিকট ছুটিয়া আসিলেন।
রঘুনাথ ও নাছোড়বান্দা উহাদের উদ্দেশ্য বহুত কটুবাক্য শুনাইয়া দিয়া সেই সনাতন পদ্ধতিতেই চিকিৎসা শুরু করিয়া দিলেন।নিতান্তপক্ষে গরীব মানুষ হেতু উহারা রঘুনাথের কটুবাক্য বেশ হজম করিয়া লইলেন গরীবদের আবার কচুঘেঁচু হজম করিবার প্রখর শক্তি বিদ্যমান।
যাহাই হউক না কেন শেষ অবধি আধুনিক চিকিৎসার খরচের ফিরিস্তি শুনিয়া শ্যামদাসও দাঁত মুখ খিচিয়ে পলায়ন করিলেন।
অন্যান্যদের মত শ্যামদাসও উহার পশ্চাদ দেশের বিষফোঁড়ার জ্বালা সহ্য না করিবার ফলে সেই সনাতনের বিধিতেই ফিরিয়া আসিলেন।
রঘুনাথ যথারীতি বন জঙ্গলের বিভিন্ন গাছগাছালির শেকড়বাকড় তুলিয়া বাটনাতে ছেঁচিয়া একটা গাঢ় প্রলেপে রূপান্তর করিয়া শ্যামদাসকে লুঙ্গী উঠাইবার নির্দেশ দিলেন।
শ্যামদাস লজ্জায় আনন খানা কাছুমাছু করিলে রঘুনাথ জোর গলায় ধমক দিয়া বলিলেন"গরীবের আবার লজ্জা" উপায়ন্তর না দেখিয়া শ্যামদাস নিজের হস্তে নিজেরই পশ্চাদ দেশের কাপড় উঠিয়ে কুচকুচে কালো পশ্চাদ দেশ উন্মুক্ত করিয়া দিলেন।অতঃপর রঘুনাথ তার তৈরিকৃত ঔষধ উহার বিষফোঁড়ার উপর লেপিয়া দিতে দিতে বলিতে লাগিলেন"শ্যামদাসরে যাহাদের বিষফোঁড়া হইয়া থাকে সেই একমাত্র অনুধাবন করিতে পারে ইহার জ্বালা কত?অন্য মানুষ কি আর বুঝিতে পারে?"
শ্যামদাস ব্যথায় কুঁকড়াতে কুঁকড়াতে বলিয়া উঠিলেন ঠিকই রঘু কাকা বিষফোঁড়া জায়গা ছাড়িয়া অজায়গায় উঠিলে যে ইজ্জতের বারোটাও বাজিয়া যায় সেদিকে কি কাহারো খেয়াল আছে!
২৪ শে নভেম্বর, ২০১৭ সকাল ৮:১৩
নিচু তলাৱ উকিল বলেছেন: ঠিক বলেছেন,,গরীবের দিকে ফিরে চাওয়ার আর কি সময় আছে
২| ২৩ শে নভেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:১০
রাজীব নুর বলেছেন: বিষফোড়া ব্যপারটা কি?
এযুগেও কি এগুলো হয়?
২৪ শে নভেম্বর, ২০১৭ সকাল ৮:১৪
নিচু তলাৱ উকিল বলেছেন: গ্রাম অঞ্চলে গরীবদের জন্য ইহাই একমাত্র চিকিৎসা যে হারে ডাক্তারের ফিস বেড়েছে তাতে ইজ্জত গেলেও ইহাই ঢের ভাল
৩| ২৩ শে নভেম্বর, ২০১৭ রাত ৮:০৯
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
বিষফোঁড়া যায়গা ছাড়িয়া অযায়গায়
ওঠার কারণে আজ আমদের এত দূর্দশা।
কেউ যায়গা মতো থাকতে চায়না।
২৪ শে নভেম্বর, ২০১৭ সকাল ৮:১৫
নিচু তলাৱ উকিল বলেছেন: রাইট বলেছেন
©somewhere in net ltd.
১| ২৩ শে নভেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৫৯
গিয়াস উদ্দিন লিটন বলেছেন: সকলে শুধু বিষ ফোড়ার বিষটাই দেখে, সাথে যে গরিবের ইজ্জতটাও যায় সেটা কেউ খেয়াল করে না।