নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
চলিতেছে সার্কাস
নিচু তলার উকিল
১.
একদা একদিন এলাকায় সার্কাস আসিল।গ্রামের আনাচে কানাচে হৈ চৈ পড়িয়া গেল।টিকিটের মূল্য মাত্র চার টাকা।যাইবার একটা অদৃশ্য ইচ্ছা কাজ করিতে লাগিল।বরাবরই পিতাকে বড্ড ভয় পাইতুম।তদুপরি পিতাকে গিয়া বলিলুম"সার্কাস দেখিব"।পিতা উহা শ্রবণ করিবা মাত্র আমার দিকে ইয়া বড় চোখ করিয়া একবার তাকাইলেন।আমিও নাছোড়বান্দা, মাকে গিয়া বলিলুম। মা বলিল বাজান ও গুলা দেখিতে নাই আর ঘরেও তো কোন টাকা পয়সা নাই।কি আর করা অগ্যতা সার্কাস দেখিবার আশা একপ্রকার ছাড়িয়াই দিলুম।কিন্তু গ্রামের আনিস দার কথায় আবার ও ভাঙা মনটা চাঙা হইয়া উঠিল।এই আনিস দা গ্রামের প্রসিদ্ধ চোর বাটপারদের লিডার।হোক চোর বাটপার তারপরও উহা আমার কাছে বড্ড আপন মনে হইতে লাগিল।যথারীতি মাষ্টার দার সুপারি বাগানের সুপারি চুরি করিয়া দূর হাটে বিক্রি হইয়া কিছু টাকার আগমন ঘটিল।
২.
অতঃপর এক সন্ধ্যায় নানা বাড়ি যাইবার কথা বলিয়া সার্কাস দেখিতে গেলুম।
দি লায়ন সার্কাস,এই প্রথম দেখিতে আসিলুম বলিয়া নিজেকে খুব গর্বিত মনে হইতে থাকিল।
কিছুক্ষণ পর বাজনা শুরু হইল খড় বিছানো গদিতে বসিয়া চারিদিকে এক পলক দেখিতে লাগিলুম।হঠাৎ করিয়া মাষ্টার দাকে দোতলায় আবিষ্কার করিলুম।দেখিবামাত্র বুকটা কেমন ধড়পড় করিয়া উঠিল।কাহারেও কিছু না বলিয়া মাফলার খানা ভাল করিয়া পেঁচিয়ে নিলুম যাহাতে উনি চিনিতে না পারেন।
গান শুরু হইবার,সাথে সাথে একটা অর্ধ নগ্ন অল্প বয়সি মেয়ের আগমন ঘটিল।উহার আগমনে ছেলে বুড়ো তরুণ ছেলেরা,এমন জোরে হর্ষধ্বনি দিয়া উঠিল যাহাতে সাইক্লোন উঠিয়া উহার তোড় সারা প্যান্ডেলে জনতার চোখে মুখে গিয়া আছড়াইয়া পড়িল।
জনতা বিপুল উৎসাহে হাত তালি দিতে লাগিল।মেয়েটি এইবার কোমর দুলাইতে শুরু করিয়া দিল।শরীরে কি যে ঢেউ উঠিল যার দরুন সবাই কেমন নাচিতে থাকিল।উহাদের দেখা দেখি আমিও নাচিতে আরম্ভ করিলুম।কিছুক্ষণ পর একটা জোয়ান ছেলের আগমন ঘটিল।মেয়েটির সাথে উহাও শরীর দুলাইতে লাগিল।দুলাইতে দুলাইতে মেয়েটিকে এমন করিয়া নিচে শোয়াইয়া দিয়া ছেলেটি তাহার বুকের উপড়ে উঠিয়া পড়িল মনে হয় আজ উহার সমস্ত কামোন্মত্ততা সাঙ্গ করিয়া ছাড়িবে।বৃদ্ধ,জোয়ান,তরুণ রা বুনো উল্লাস করিতে লাগিল।আড়চোখে চাহিয়া দেখিলুম মাষ্টার দাও কেমন পা নাড়াইতেছে।কিন্তু এই বুনো উল্লাস কেনইবা মানুষ দের শরীরে ভর করে উহা বুঝিবার ব্যর্থ চেষ্টা করিলুম।যদিও উহা বুঝিতে পারিয়াছিলুম অনেক দিন বাদে।যখন আমার শরীরে হরমোনের আধিক্য বাড়িয়া গেল,বিশেষ অঙ্গ গুলোতে লোম দেখিতে পেলুম তখন নিজেকে অন্য গ্রহের বাসিন্দা মনে হইতে লাগিল।গলার স্বর ভাঙিয়া কেমন ফাটা বাঁশের মত হইয়া গেল।তবু যেন কোথায় এক চিলতে সুখ অনুভব হইতে লাগিল।এই হরমোনেই যে সেদিনকার বৃদ্ধ,তরুণ কে এক কাতারে দাড় করিয়ে দিয়েছিল আজ উহা হারে হারে টের পাইতে লাগিলুম।যথারীতি ম্যাজিক,বানর নাচ,এক চাকার সাইকেল,রিং খরগোশ,জোকারের অভিনয় দেখিয়া আনিস দার বাড়িতে রাত্রি যাপন করিলুম।
৩.
সার্কাস চলিতেছে,আবার ও যাইবার প্ল্যান হইয়াছিল।কিন্তু হঠাৎ শুনিতে পারিলুম সার্কাসের কত গুলো মেয়ে রাত্রের আঁধারে জোরপূর্বক কত গুলো ছেলের হাতে বলাৎকার হইয়াছে।ছোট বলিয়া ইহার কারণ, কেন,এসব প্রশ্ন চক্ষু লজ্জার ভয়ে কাহারেও করিতে পারিলুম না।বড় দাদাদের জলসায় আড়ি পাতার দরুন অনেক খানি বুঝিতে পারিলুম,কে এই কার্যাদি ঘটিয়েছে উহার অনুমান নির্ভর নাম খানাও জানিতে পারিয়াছিলুম বটে কাহাকেও বলিতে পারিলুম না।
৪.
এলাকায় চারিদিকে ফিসফাস কথা হইতে লাগিল।হাটে বাজারে,দোকানের খুপরি ঘরে, চায়ের কাপে সর্বত্র ইহাই আলোচনা চলিল কয়েক রাত্রি কয়েক দিন পর্যন্ত।
গ্রামের মাতব্বর মাষ্টার দা বলিয়া বেড়াইতে লাগিলেন গেলরে গেল সমাজ টা রসাতলে গেল।মানুষের বিবেক,মূল্যবোধ সব আজ ধুলোয় মিশিয়া গেল।মাষ্টার দার এত টা রাগ হইবার অদৃশ্য কারণ টাযে উহার বাগানের সুপারি চুরি ইহা বুঝিতে আমার বিন্দুমাত্র সন্দেহ রহিলনা।আমি চুপচাপ শুনিতে লাগিলুম।মাষ্টার দার সাথে কয়েকজন মুরব্বী তাল মিলাইয়া বলিতে লাগিল ছ্যাঃ ছ্যাঃ কি অধঃপতন?সার্কাসের মেয়েদের বলাৎকার করা।আর ঐ মেয়েরাও যানি কেমন চরিত্রের অর্ধনগ্ন হইয়া নাচানাচি নাউজুবিল্লাহ।আর সেই গুলোই কিনা মানুষ দল বাধিয়া দেখিতে যায়।ইহার একটা বিহিত হওয়া প্রয়োজন।আর এক মুরব্বী কথার উপর কথা চালাইয়া দিয়া বলিতে লাগিলেন গ্রামের কে কে এই সার্কাস দেখিতে গিয়াছে ইহার একটি তালিকা করা হোক।কি বলেন মাষ্টার দা?
৫.
মানুষ জন ক্রমাগত বাড়িয়া যাইতে থাকিল।কখন যে পিতা আসিয়া আমার পিঠে ঠাস ঠাস করিয়া অতি নির্দয় ভাবে দু চার কষাঘাত করিয়া দিল বুঝিতেই পারিলুম না।দৌড়াইতে দৌড়াতে দেখিতে পাইলুম মাষ্টার দা কিছুক্ষণ ভাবিয়া কি যানি বলিতে লাগিল উহা আর শ্রবণ করিতে পারিলুম না।
০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ৯:৫৭
নিচু তলাৱ উকিল বলেছেন: ধন্যবাদ দাদা,, আজকাল সেই সব দিন গুলোকে ভীষণ মিস করি।
২| ০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ৯:৪২
ইফতি সৌরভ বলেছেন: নিচু তলার উকিলের স্মৃতিকথা পড়িয়া আমিও সার্কাসের পুরানো দিনে হারিয়ে ফিরে গিয়েছিলাম। "দি লায়ন সার্কাসের" মজা কি আর আজকালকার মোবাইল টিপা পোলাপান পাবে? অনেক ভালো লাগল, হাসতে হাসতে পুলকিত হইলাম তাই প্রিয়তে রাখলাম
০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ৯:৫৯
নিচু তলাৱ উকিল বলেছেন: ঠিক তাই দাদা আজকাল কার পোলাপান মোবাইল টিপতে টিপতে তো ঘাড়ই বাঁকা করে ফেলতেছে তারা এসবের মজা বুঝবে কেমনে?
©somewhere in net ltd.
১| ০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৫৯
বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: আহা
বড়ই কষ্টের স্মৃতি ! দি লায়ন সার্কাস একবার দেখেছিলাম! আমাদের স্কুল মাঠে যেবার প্যান্ডেল করিয়াছিল
আহা বড়ই সূখের স্মৃতি!
+++