নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমার বিবেক আমাকে যা শিক্ষা দেয় সেটাই প্রকাশ করার চেষ্টা করি
মেয়েছেলেরা সাধারণত একটু সরল মনের হয়ে থাকে। ঠিক তার ব্যতিক্রম নন ডেইজি ভাবী। জামাই বাংলাদেশ বিমানের স্টাফ। ঢাকা শহরে চারতলা বিল্ডিং এর মালিক। ২০০২ সাল থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত প্রায় পাঁচ বছর ওনাদের বাসায় ভাড়া থাকার দরুন একটা সুসম্পর্ক আজঅব্দি। আমার ঘরওয়ালী এবং বাড়িওয়ালী ডেইজি ভাবীর সংগে খুব ভাব। বিশেষ করে তাদের একটা এসোসিয়েশন রয়েছে যেখানে প্রায় ৭০ জনের মতো সদস্য। প্রতি মাসে তাদের একবার মিলনমেলা হয় কোন চাইনিজ রেষ্টুরেন্টে বা কারো বাসায় ঘটা করে খাওয়া দাওয়ার ভিতর। এই ৭০ জন প্রত্যেকে মাসে ২,০০০.০০ টাকা করে এসোসিয়েশনে জমা দেয় এবং মাসে দুইবার লটারীর মাধ্যমে দুইজনকে এই টাকা দেওয়া হয়। এভাবে তাদের ইউনিটি চলে আসছিল দীর্ঘ দিন যাবত। বিনা লাভের এই এসোসিয়েশন তাদের মাঝে দিয়েছে একটা একতা, সাম্য ও সঞ্চয়ের প্রত্যয়। লটারিতে যে টাকা পাবে তাকে একটু খেসারত দিতে হবে সবাইকে খাওয়ায়ে। লাভ বলতে একসাথে ৭০,০০০.০০ টাকা পেয়ে কিছু করা এবং লস বলতে পকেটের পয়সা খরচ করে ৭০ জনের উদর পূর্তী করা। অধিকাংশ সময় আমার বাসয় খাওয়া দাওয়ার অনুষ্ঠানটা হতো। সারাদিন বিয়ে বাড়ির উৎসবে আমার ঘর মুখরিত থাকত। আমি সন্ধায় বাসায় ফিরে দেখতাম ডাইনিং টেবিলে সাজানো সব আকর্ষনীয় খাবার দাবার। আমি অনেকটা কাবাবের হাড্ডির মতো সময় পার করতাম।
বলছি মাস দুয়েক আগের ঘটনা; জানতে পারলাম একটা এনজিওতে কিছু সংখ্যক মহিলা অফিসার নিবে। বেতন ৩০,০০০.০০ টাকা, তবে শর্ত হচ্ছে বোরখা পরে বিভিন্ন মাদ্রাসায় ভিজিট করতে হবে। এনজিওটি নাকি সৌদিআরব থেকে পরিচালিত। তবে এমন সুন্দর চাকরী পেতে হলে একটু ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। যেমন ধরুন প্রথমে আপনাকে ২০,০০০.০০ টাকা ঘুষ দিতে হবে এর পর হবে ট্রেনিং টিকে গেলে বাকি ২০,০০০.০০ টাকা। অর্থাৎ আপনাকে উক্ত চাকরী পাবার পর ৪০,০০০.০০ টাকা ঘুষ প্রদান করতে হবে। অফারটা ডেইজি ভাবীর মাধ্যমে সবার কানে মোবাইল নেটওয়ার্কের মতো পৌঁছে গেল। আমার ঘরওয়ালীকে চাকরী ছাড়া করেছি যখন আমার প্রথম সন্তান ভূমিষ্ট হয়। তার ভিতর চাকরী করার একটা আদম্য বাসনা এখনো কাজ করে। পারে না শুধু আমার জন্য। বুঝতে অসুবিধা হয় নাই যে ডেইজি ভাবীর অফার শুনে মাথার ভিতর সেই পুরানো পোকা ঘুর পাক খাচ্ছে। ভাবী সকলের নিকট অতি প্রিয় এবং বিশ্বস্ত বটে। ওনার কথা হচ্ছে টাকা দিবা আমাকে, তোমরা আমাকে চেন সুতরাং তোমাদের ভয় কিসের? আসলেইতো তাই, ওনার জামাই অঢেল টাকার মালিক সুতরাং ভয় কিসের?
অবশেষে আমার কানের কাছে মিন মিন করে প্রস্তাব এল।
-- একটা ভাল চাকরীর অফার আছে, বেতনও ভাল, তুমি অনুমতি দিলে চাকরীটা করতাম;;
---- কি চাকরী তোমায় খুঁজতেছে? শুনি;;
-- একটা বিদেশী এনজিও। ডিউটি হচ্ছে বোরখা পরে বিভিন্ন স্কুল ভিজিট করা। স্কুল মানে মাদ্রাসা আর কি;
-- তাই নাকি? তো অফিস কোথায়? কে দিবে চাকরী? চাকরীটা কি খুব জরুরী? জঙ্গী প্রশিক্ষন নয়তো আবার?
-- ওই তো, তোমাকে কিছু বললেই শুধু খোটা মেরে কথা বল; তুমিকি ভেবেছ আমার নিজের কোন চ্যানেল নাই?
--- আছে তো... বিরাট চ্যানেল। ৬০/৭০ জন্য অবলা মহিলাদের চ্যানেল !!
--- আমার ২০,০০০.০০ টাকা দরকার। আমাকে দুই মাসের জন্য ধার দাও এর পর বেতন পেলে দিয়ে দিব।
-- বেশ ভাল কথা; টাকা আমি দিব কিন্তু আমাকে অফিসটা দেখতে হবে।
--- তোমার অফিস দেখে কি হবে? ডেইজি ভাবি তার ৮/১০ জন আত্মীয়কে অলরেডী চাকরীতে ঢুকিয়ে দিয়েছে। তারা ট্রেনিং দিচ্ছে, সামনের মাসেই জয়েন।
-- তাই না কি? আমার গিন্নি কোথায় চাকরী করতে চায় সেটা দেখা আমার ঈমানী দায়িত্ব নয় কি?
--- তোমার শুধু বাড়াবাড়ি, টাকা চাচ্ছি দিলে দিবে না দিলে না দিবে। হুম....
--- যে লোক টাকা নিচ্ছে সে ডেইজি ভাবীর কি হয়?
-- খুব পরিচিত, ভাবী বলেছে টাকার জন্য সে জিম্মা, টাকা মার গেলে সে দিবে।
-- দেখ, ছোট ছেলেটা একটু চঞ্চল টাইপের, ওকে কাজের মেয়ের কাছে রেখে তুমি চাকরী করবে এটা কি ঠিক হবে?
--- ও ওওওও তার মানে আমরা মেয়েরা সারা দিন ঘরে বসে তোমাদের তিন বেলা রান্না করে খাওয়াব আর পোলাপান সামলাব আর তোমরা বসে বসে আরামে এদিক ওদিক ঘুরে বেড়াবা আর তিন বেলা রান্না করা ভাত গিলবা? আমাদের কোন শখ আল্লাদ নাই নাকি?
--- তা তো আছে........... কিন্তু একবার না দেখে যে আমি তোমাকে টাকা দিব না;;
-- থাক আমাকে টাকা দিতে হবে না; তোমার সংসারের ঘানি টানা ছাড়া আমার আর কি-ইবা করার আছে ?
--- ওকে, ঠিক আছে। ভাবীকে আমাদের বাসায় চা খেতে নিয়ে আস আমি কথা বলব তার সাথে।
এই পর্যন্ত কথা শেষ। আর কিছুই জানতাম না এই ব্যাপারে। হঠাৎ...
গতকাল আমাকে ঘরওয়ালী কি যেন একটা বলতে গিয়েও আবার বলছে না। মৃদু স্বরে একবার শুনলাম কি যেন বলল। ডেইজি ভাবীর যে কি অবস্থা !! কি যে অবস্থা....... আহ হা রে।
-- কেন কি হয়েছে? অসুখ বিসুখ নাকি?
--- না, মানে.........তোমাকে বলব? তুমিতো আবার বেশী বেশী বলা শুরু করবা....... আসলে তোমাকে একটা চাকরীর কথা বলেছিলাম না?
-- হ্যা, মনে আছে ৩০,০০০.০০ টাকা বেতন, ডিউটি শুধু বোরখা পরে মাদ্রাসায় মাদ্রাসায় ভিজিট। আবার নতুন করে কি হয়েছে?
-- সেই লোক চাকরী দেবার কথা বলে ভাবীকে বিপদে ফেলে দিয়েছে। ভাবী ৮/১০ জন নিজের লোক ওখানে ঢুকিয়েছে। প্রত্যেকের কাছ থেকে ২০,০০০.০০ করে টাকা নিয়ে ওদের দিয়েছে।
--- তারপর? আগে বাড়ো...............
--- ওই এনজিও প্রায় ৫০০ জনের কাছে থেকে টাকা হাতিয়ে গায়েব হয়ে গেছে!!!!
---- তার মানে প্রায় এক কোটি টাকা? সর্বনাশ !!! তোমার ডেইজি ভাবীর এখন কি অবস্থা? তার ভাগে কত পড়ল এখন?
--- সেই ঘটনা নিয়ে সালিশ বিচার চলছে, যাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে তাদের ২,০০,০০০.০০ টাকা ফেরত দিতেই হবে। তা না হলে আত্মীয় স্বজন সবাই তাকে ভুল বুঝবে এবং সম্পর্কও রাখবে না। ভাবীর টেনশনে ঘুম হয় না। ভাই এসব জানে না, তাকে বললে ভাবীকে বাসা থেকে হয়তো বের কর দিবে।
-- কেন; জামাইয়ের কাছ থেকে টাকাটা নিয়ে চাকরী দেবার খেসারত স্বরূপ সবাইকে ফেরত দিয়ে দিক তাহলেইতো হল।
আমাকে যে বেশী কথা শুনিয়েছিলে এখন তার কি হবে? আগে একবার "যুবক" নামক এনজিওতে টাকা ডিপোজিট করার জন্য এই তাল করেছিলে, আমি রাজী ছিলাম না। এমনকি তোমার বান্ধবীরা সেখানে সবাই টাকা রাখছে আর তুমি রাখতে চাচ্ছ অথচ আমি রাজী হচ্ছি না তাই আমাকে কত কথা হজম করতে হয়েছিল। অবশেষে "যুবক' যখন সকল টাকা নিয়ে গায়েব হয়ে গিয়েছিল, মনে পড়ে তোমার বান্ধবীদের মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছিল না? সুতরাং ঘরের ভিতর যে নেতা তার কথাকে সর্বদা মেনে চলাই হচ্ছে তোমাদের উপর ফরজ যদি না উক্ত নেতা তোমাদের কোন খারাপ কাজের দিকে আহ্বান না করে। আমি শিখেছি কাউকে ট্রাপে ফেলতে চাইলে প্রথমেই তাকে লোভে আনতে হবে। এমন লোভ যে সে দিক বিদিক শূণ্য হয়ে যায়। অবশেষে সে বুঝতে পারে লোভে পাপ পাপে মৃত্যু।
লেখাটা সতর্কমূলক পোষ্ট হিসাবে দিলাম।
২৯ শে অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ১২:১৯
সুচিন্তিত মতবাদ বলেছেন: যে সংসারে মহিলা লিডার সেই সংসারের শান্তি একদিন নষ্ট হবেই। বেটার প্রথম থেকেই কন্ট্রোল করা।
©somewhere in net ltd.
১| ২৮ শে অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৩:৩১
বাংলার জামিনদার বলেছেন: ভাই এইসব লীডারি করতে গেলেই তো, সংসারে অশান্তি দেখা দেয়।