নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সিনেমাপ্রেমী । ট্র্যাভেলার । বইপোকা । রন্ধনশিল্পী

আলভী রহমান শোভন

খাই, দাই, ব্লগ লিখি ।

আলভী রহমান শোভন › বিস্তারিত পোস্টঃ

শিশুতোষ গল্পঃ হিংসা

১৮ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১১:৫০


ক্লাসের নতুন ছেলেটাকে আমি দু’চোখেও দেখতে পারিনা।কোন অজপাড়াগাঁ থেকে শহরে পড়াশোনা করতে এসেছে কে জানে?আর নামখানাও জব্বর। রইচ উদ্দিন মিয়া।আহা!নামের কি ছিরি!আজকালকার দিনের কোন ছেলের নাম যে এমন হতে পারে তা আমার জানা ছিল না।শুধু কি নাম?তার সাথে সাথে তার পোশাক-আশাক,কথাবার্তা,চাল-চলন সব কিছুতেই গেঁয়ো গেঁয়ো ভাব।মাথায় জবজবে করে তেল দিয়ে আসে,আবার গা থেকে কেমন যেন কাঁচা পেঁয়াজের মত গন্ধ আসে।আমি সব সময় চেষ্টা করি রইচের কাছ থেকে একশো হাত দূরে থাকতে।এমনিতেই আমি বরাবরই ক্লাসের ফার্স্ট বয়।আর তাই রইচের মত থার্ড ক্লাস টাইপ ছেলেপুলের সাথে মেলামেশা না করাই ভাল।

(দুই)
আজ স্কুলে আসতে একটু দেরি হয়ে গেছে।হবে নাই বা কেন?রাস্তা-ঘাটে যে জ্যাম।আধা ঘণ্টার পথ জ্যামের কারনে এক ঘণ্টা লেগে গেল।ক্লাসে ঢুকতেই হতাশই হতে হল আমাকে।দেরি করে আসার কারনে আমার প্রিয় ফার্স্ট বেঞ্চে অন্য কেউ বসে পড়েছে।আর কোথাও কোন সিট নেই,শুধু শেষের বেঞ্চের একটা সিট খালি। তাও আবার রইচের পাশে।আসলে ক্লাসের কেউ ওকে পছন্দ করে না বলে ওর পাশে কেউ বসতে চায়না।কিন্তু আজ নিরুপায় হয়ে আমাকে বসতে হচ্ছে।ওর পাশে বসতেই কাঁচা পেঁয়াজের মত সেই গন্ধটা আবার আমার নাকে এল।দম বন্ধ হবার উপক্রম হল আমার।আজকের প্রথম পিরিয়ড অংক।মফিজ টিচার ক্লাসে ঢুকে রোল কল করেই বোর্ডে কয়টা অংক দিয়ে করতে বললেন।আমি অংকের সমাধান করার চেষ্টা করছি।কিন্তু বুঝতে পারছি না আজ অংকগুলো করতে আমার এত সময় লাগছে কেন?বাসায় তো প্র্যাকটিস করেছিলাম।হঠাৎ কে যেন বলে উঠল,‘টিচার, হয়ে গেছে’।পাশ ফিরে দেখি সে আর কেউ নয়,রইচ উদ্দিন মিয়া।টিচার রইচকে বললেন,‘খাতাটা নিয়ে আসো,দেখে দেই’।আমি মনে মনে বললাম, ‘এহহ!রইচ আবার অংক করেছে।আমি ফার্স্ট বয় হয়ে অংক শেষ করতে পারলাম না, আর উনি কিনা শেষ করে ফেলেছে।নির্ঘাত সবগুলোর উত্তর ভুল।টিচারের কানমলা যখন খাবে তখন বুঝবে মজা।’কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে টিচার রইচের প্রশংসা শুরু করলেন।ওর পিঠ চাপড়ে দিয়ে বললেন, ‘বাহ!তোমাকে যতটা মেধাবী মনে করেছিলাম তুমি তো তার চেয়েও বেশী মেধাবী।ভালভাবে পড়াশুনা করো,সামনে আরও ভাল করবে।’ টিচারের কথা শুনে রইচ মৃদু হাসে।কিন্তু ওর সেই হাসি যেন আমার বুকে আগুন জ্বালিয়ে দিল।নাহ,আর সহ্য করা যায় না।তবুও আমি রাগ থেকে নিজেকে সংবরণ করে মনে মনে বলি,‘যতই ক্লাসে ভাল করুক না কেন,পরীক্ষাতে তো আমাকে টপকাতে পারবে না।এই রকম রইচ উদ্দিন কত্ত আসলো গেলো।কেউই টিকতে পারেনি আমার সাথে।

(তিন)
পরীক্ষার রেজাল্ট দিবে।স্কুলে এসেছি তাই।সবার মাঝেই উৎকণ্ঠা,কি হবে,কি হবে।অবশ্য আমার মাঝে কোন টেনশন নেই।আমি পুরোপুরি আত্মবিশ্বাসী যে বরাবরের মত এবারও প্রথম হব।টিচার একে একে সবার রিপোর্ট কার্ড হাতে দিচ্ছেন।আমার কার্ডটা হাতে পেতেই বিস্ময়ের সীমা রইল না।কারন আমি সেকেন্ড হয়েছি।আমার এতদিনের রেকর্ড ভেঙ্গে গেল?আমি যদি সেকেন্ড হই তাহলে ফার্স্ট হয়েছে কে?একটু পর শুনি টিচার বলছেন,‘এইবারের পরীক্ষায় প্রথম হয়েছে রইচ উদ্দিন মিয়া।’কথাটা শুনতেই আমি জমে গেলাম।শেষকালে কিনা এই রইচের কাছে আমাকে হেরে যেতে হল?এই দুঃখ আমি কোথায় রাখি?স্কুল থেকে বের হতেই রইচের চোদ্দগুষ্টি উদ্ধার করছি আর রাস্তা পার হচ্ছি।কিন্তু আমার অসাবধানতায় আমাকে একটা মাইক্রোবাস চাপা দিয়ে চলে যায়।চারদিক তখন ধূসর মনে হচ্ছিলো।তারপর ধীরে ধীরে মিলিয়ে গেল সব।

(চার)
চোখ মেলতেই বোঝার চেষ্টা করলাম কোথায় আছি।তখনি মনে পড়ল অ্যাকসিডেন্টের কথা।তাকিয়ে দেখি আমি হাসপাতালের বেডে।আমার পাশে আব্বু আম্মু।আমাকে সজাগ হতে দেখেই আম্মু হাউমাউ করে কেঁদে দিল।একটু পর কান্না থামিয়ে আম্মু জানালো,আমি যখন অ্যাকসিডেন্ট করি রইচ তখন ঐ রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলো।আমাকে ঐ অবস্থায় দেখে কয়েকজন পথচারীর সহযোগিতায় হাসপাতালে নিয়ে আসে।তারপর আব্বু আম্মুকে খবর দেয়।–কথাটা শুনে নিজের ভেতর অনুশোচনার সৃষ্টি হয়।যেই রইচকে আমি ঘৃনা করতাম সেই রইচ আমার জীবন বাঁচালো?বিকালের দিকে রইচ এল আমাকে দেখতে। ইশারায় ওকে কাছে বসতে বললাম। ও বসল।ওকে বললাম,‘রইচ,আমাকে তুমি ক্ষমা করে দিয়ো।তোমাকে আমি অনেক হিংসা করেছি, ঘৃনার চোখে দেখেছি।’রইচ বলল,‘ছিঃছিঃ কি বল এই গুলা?এইখানে ক্ষমা চাওয়ার কি হল?বন্ধু কি কখনও বন্ধুর কাছে ক্ষমা চায়?’

(পাঁচ)
এখন আমার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু কে জানো?রইচ।ওর গা থেকে এখন আর পেঁয়াজের গন্ধ পাইনা।ওর হাসিটাও আর অসহ্য মনে হয়না।আমরা দুজন দুজনকে পড়াশুনা ও অন্যান্য ক্ষেত্রে সাহায্য করি।পরীক্ষাতে কখনো আমি আবার কখনো রইচ ফার্স্ট হয়।কিন্তু তাতে কিছু যায় আসে না।আমি ওকে হিংসাও করিনা।বন্ধুত্বে কি হিংসা থাকলে চলে?

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.