নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
গ্রামের কোন গাছে যদি অনেকগুলা আম থাকে আর সেগুলো পাকার আগেই যদি হাওয়া হয়ে যায় অথবা কারো বেড়া দেওয়া সবজি ক্ষেতে যদি কোন ছাগলকে সবজি খেতে দেখা যায় কিংবা এই রকম আরও কোন প্রকার উল্টা-পাল্টা কিছু দেখা যায় তাহলে বুঝতে হবে কাজটা আর কারো নয়, টোপনের। পুরো গ্রামে দুষ্টুর হাড্ডি একটা। কাউকে শান্তি দিতে চায় না। প্রতিদিন বাড়িতে ৫/৬ টা করে নালিশ আসবেই তার নামে। ওর নালিশ শুনতে শুনতে কাহিল ওর বাবা-মা। তাই তো যারাই আসে নালিশ করতে সবাইকেই একই কথা বলে, ‘এরপর যদি উলটা-পাল্টা কিছু করে নালিশ করতে আসতে হবে না। ধামুর ধুমুর পিটুনি দিবেন।’ যারা নালিশ করতে আসে তাদের সাথে যদি আবার কিছু করে থাকে তাহলে দ্বিতীয়বার আর টোপনের বাড়ি গিয়ে নালিশ করতে যায় না, পিটুনিও দেয় না। দশ বছরের ওইটুকুন ছেলেকে কি আর পিটুনি দিবে। তাই সবাই হাল ছেড়ে দেয়। সুযোগ পেয়ে টোপন আরও দুষ্টামির মাথায় চরে বসে।
কয়দিন থেকে টোপনদের গ্রাম থেকে বাচ্চা উধাও হয়ে যাচ্ছে। এই নিয়ে তিনজন নিখোঁজ। কিভাবে যে উধাও হয়ে গেল এখন পর্যন্ত সুরাহা করা গেলনা। পুলিশ এসে তদন্ত করেও কিছু বের করতে পারলনা। টোপনকে নিয়ে ওর বাবা-মা তাই সেই চিন্তায় থাকে।এমনিতে তাদের ছেলে যেভাবে টো টো করে বেড়ায়। এত করে তাকে বলা হল গ্রামের অবস্থা ভাল না, স্থির হয়ে তাই ঘরে থাকতে।কিন্তু কে শোনে কার কথা?বাবা-মা একটু চোখের আড়াল হলেই টোপন বেরিয়ে পরে।
আজ টোপন এসেছে রতনদের আম বাগানে হানা দিতে। আমগুলো এখনও সেইভাবে পাকেনি।এমনিতেও ওর আধা কাঁচা-আধা পাকা আম খেতে ভাল লাগে।তাইতো আসা। আম পাড়ার পর যখন বাগান থেকে বের হবে তখন দেখা এক লোকের সাথে।গ্রামে আগে কখনও দেখেছে বলে মনে হয়না। টোপন ভাবল বাগান দেখাশোনার জন্য বোধ হয় লোকটিকে নতুন নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। টোপন তাই দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করতে যায়। কিন্তু তার আগেই লোকটা ওকে ডাক দিয়ে বসে। টোপনও থেমে যায়। লোকটা ওর কাছে এসে বলে, ‘তুমি এই গ্রামেই থাকো?’ টোপন মাথা নিচু করে আস্তে করে বলে, ‘জী’। লোকটা তখন টোপনকে বলে, ‘এইগুলা কি আম পেড়েছ তুমি? তোমাকে অন্য একটা বাগানের আম দেই চলো। ঐ বাগানের আম অনেক ভাল,অনেক বড়।’ হটাৎ করেই লোকটার এমন কথা শুনে মন আনন্দে ভরে উঠল টোপনের। সরল মনে লোকটির সাথে আম পারতে যায় টোপন। কিছু দূর যাওয়ার পর হটাৎ করে লোকটি একটি রুমাল দিয়ে ওর মুখ চেপে ধরে। অনেক ভাবে ছাড়াতে চেষ্টা করে টোপন। কিন্তু আস্তে আস্তে নিস্তেজ হয়ে যেতে থাকে টোপন। তারপর আর কিছুই মনে নেই ওর।
যখন জ্ঞান ফিরল নিজেকে তখন আবিষ্কার করলো একটা স্যাঁতস্যাঁতে রুমের ভেতর যেখানে সূর্যের আলো প্রায় পৌঁছায় না বললেই চলে। টোপন আশেপাশে তাকিয়ে দেখল রুমে সে একাই না, তার সমবয়সী অথবা তার চেয়ে ছোট আরও অনেক ছেলে-মেয়ে আছে। টোপন তখন বুঝল আসলে তাকে কিডন্যাপ করা হয়েছে, সেই সাথে এইটাও বুঝল গ্রাম থেকে যে বাচ্চা নিখোঁজ হয়েছে সেগুলো আসলে নিখোঁজ হয়নি, ওরই মতো কিডন্যাপ করা হয়েছে তবে।
কিছক্ষন পর সেই লোকটি রুমে ঢুকল, টোপনের জ্ঞান ফিরতে দেখে ওর কাছে এসে বলল,‘বাড়ি ফিরতে চাস নাকি টুকরা টুকরা হয়ে বিদেশে যেতে চাস?’ টোপন আগে থেকেই জানত যে বাচ্চাদের ধরে ধরে বিদেশে পাচার করে তাদের কিডনিসহ অন্যান্য জিনিস বিক্রি করে দেওয়া হয় অনেক বেশী দামে। সেই কথা মনে হতেই টোপন হাউমাউ করে কান্না জুড়ে দিয়ে বলল, ‘বাড়ি ফিরতে চাই।’ লোকটি তখন বলল, ‘বাড়ি ঠিক মতো পৌঁছাতে হলে তো একটা দাম দিয়ে যেতে হবে। বাড়ির নাম্বার বল। তোর দাম এখন অন্তত পাঁচ লক্ষ টাকা।’ লোকটার কথা শুনে হড়হড় করে নাম্বার বলে দেয় টোপন। বাসায় লোকটা ফোন করেই অপর পক্ষ থেকে কিছু বলার আগেই হরবর করে বলে,‘আপনাদের ছেলে এখন আমাদের জিম্মায়। যদি ফেরত পেতে চান আগামি দশ ঘণ্টার ভেতর পাঁচ লক্ষ টাকা নিয়ে চলে আসবেন।’ এইটুকু বলেই কোন ঠিকানার কোথায় টাকা রেখে আসতে হবে সেটা বলে দেয় লোকটা, সেই সাথে এটাও বলে দেয় কোনভাবেই যেন পুলিশে খবর দেওয়া না হয়। তাহলে ছেলে আর আস্ত থাকবেনা।
লোকটা তার এক সহযোগীকে জায়গা মত পাঠিয়ে দেয়। সহযোগীও ঠিক মত জায়গায় গিয়ে ঘাপটি মেরে থাকে। একটু পর দেখল, এক লোক একটা পাটের ব্যাগ টোপলা করে রেখে চলে গেল। লোকটি দূরে চলে যেতেই সহযোগী লোকটি ব্যাগটি হাতে নেয়।ব্যাগটি হাতে নিতেই হটাৎ করে কে যেন পেছন থেকে জাপটে ধরল তাকে।চারপাশ থেকে আরও অনেক লোক এগিয়ে আসলো। তারা আসলে সাধারণ মানুষ নয়, তারা পুলিশ। শুধু সাধারণ মানুষের মত ছব্দবেশে ছিল । সহযোগী ধরা পড়ার পর ধরা পড়ল পুরো পাচারকারী দলটাই।
অবশেষে টোপন বাড়ি ফিরে এল। কয়েকদিন নিখোঁজ থাকার পর বাবা-মা তাকে পেয়ে আত্মহারা। ধীরে ধীরে সবাইকে জানালো কিভাবে সে শিশু পাচারকারীর হাতে পড়ে এবং পুলিশের কাছে ধরিয়ে দেয়। আসলে পাচারকারী লোকটা যখন টোপনের কাছে বাড়ির নাম্বার চায় টোপন তখন তাকে বাড়ির নাম্বার না দিয়ে পুলিশের নাম্বার বলে দেয় আর তাতেই হয়ে যায় আসল কাজ।
টোপনের এই বুদ্ধিমত্তার খবর ছড়িয়ে পড়ে ধীরে ধীরে। প্রায় প্রতিদিনই কোন না কোন টিভি চ্যানেল অথবা খবরের কাগজের লোক আসে ওর ইনটারভিউ নিতে। সামনের মাসে তার এই সাহসিকতার জন্য পুলিশ ডিপার্টমেনট থেকে অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হবে।
এত কিছু হয়ে যাওয়ার পরও টোপনের দুষ্টুমি কিন্তু কমেনি বরং বেড়েছে বহুগুণ। তবুও গ্রামের মানুষ কিছুই বলেনা ওকে। যে এত বড় একটা সাহসী কাজ করেছে, যার জন্য গ্রামটা সবার নজরে এসেছে তাকে আর কি বা বলবে?
২০ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১১:২০
আলভী রহমান শোভন বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকেও।
২| ২১ শে অক্টোবর, ২০১৫ ভোর ৪:১৭
আমিনুর রহমান বলেছেন:
একদম সাদামাটা। চেষ্টা করুন লিখতে লিখতেই ভালো কিছু লিখা হয়ে যাবে।
শুভ কামনা।
২১ শে অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ১১:৪৮
আলভী রহমান শোভন বলেছেন: মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ ।
©somewhere in net ltd.
১| ২০ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১১:১৭
প্রামানিক বলেছেন: ভাল লাগল। ধন্যবাদ